"""""""""""""""""""""'"'"'"'"'"''"
[আবূ দাউদ-১৬৭২, নাসাঈ-২৫৬৬, আদাবুল মুফরাদ-২১৬]
আমার তিনটি মেয়ে, কোন ছেলে নেই। শুনেছি, আমার মৃত্যুর পর আমার মেয়ের দুইয়ের তিন ভাগ সম্পত্তি পাবে এবং বাকী পাবে আমার ভাই। অথচ সে আমার ভাই হলেও, সে আমার দুশমন। আমি চাই না, সে আমার কোন সম্পত্তি পাক। এখন কি আমি আমার সব সম্পত্তি আমার মেয়েদের নামে লিখে দিতে পারি?
আপনার সম্পত্তি কে পাবে, আর কে পাবে না, তাতে আপনার ইচ্ছা নেই। সে ইচ্ছা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্র। আর বিধানে সে যা পাবে, তাতে বাদ সাধবার অধিকার আপনার নেই। মহান আল্লাহ মীরাসের ভাগ বণ্ঠনের বিধান দেওয়ার পর বলেছেন,
“এসব আল্লাহ্র নির্ধারিত সীমা। আর যে আল্লাহ ও রাসূলের অনুগত হয়ে চলবে, আল্লাহ তাকে বেহেশেত স্থান দান করবেন; যার নীচে নদী সমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং এ মহা সাফল্য। পক্ষান্তরে যে আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্য হবে এবং তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে, আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা দায়ক শাস্তি।” (নিসাঃ ১৩-১৪)
সুতরাং আপনার ভাই আপনার দুশমন হলেও আল্লাহ্র ইচ্ছায় সে আপনার সম্পত্তির ভাগ পাবে। অবশ্য সে যদি কাফের বা মুশরিক হয়, তাহলে সে আল্লাহর বিধানে মুসলিমের নিকট থেকে কোন অংশ পাবে না। ৬১৩ (ইবনে উষাইমীন)
আমি বৃদ্ধ মানুষ। আমার ভয় হয়, আমার মৃত্যুর পর জমি সম্পত্তি নিয়ে ছেলেরা ঝগড়া ঝামেলা করবে। সুতরাং আমি কি এখন আমার স্থাবর অস্থাবর সকল অর্থ সম্পত্তি মীরাসের ভাগ বণ্ঠন অনুযায়ী প্রতেকের নামে লিখে দিতে পারি?
আপনার এ কাজ ঠিক হবে না। কারণ আপনি জানেন না যে, কে কখন মারা যাবে। হতে পারে আপনার কোন ওয়ারেসেরই আপনি ওয়ারেস হবেন। সুতরাং আপনার মৃত্যুর পর আপনার ছেলে মেয়েরা শরয়ী মীরাস অনুযায়ী বিলি বণ্ঠন করে নেবে। তারা ঝগড়া করলে আপনার দোষ হবে না। আপনি তাঁদেরকে ঝগড়া না করতে অসিয়ত করুন। কারো নামে কিছু লিখে না দিয়ে সব নিজের নামেই রাখুন। ৬১২ (ইবনে উষাইমীন)
এক মহিলার দুধ বেটা ছাড়া আর কেউ নেই। সে মারা গেলে কি ঐ বেটা তার ওয়ারেস হবে?
না। কারণ দুধ পান করলে দুধের আত্নীয়তা কায়েম হয় ঠিকই, কিন্তু মীরাসের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয় না। সুতরাং সেই মহিলার সম্পত্তি বায়তুল মালে জমা হবে।৬১১ (ইবনে উষাইমীন)
কোন স্ত্রীর স্বামী নিখোঁজ হলে করণীয় কি?
কোন মহিলার স্বামী নিখোঁজ হলে নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে পূর্ণ চার বছর অপেক্ষা করার পর আর চার মাস দশ দিন স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত পালন করে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। এই নির্ধারিত সময়ের পূর্বে তার বিবাহ হারাম। বিবাহের পর তার পূর্বস্বামী ফিরে এলে তার এখতিয়ার হবে; স্ত্রী ফেরত নিতে পারে অথবা মোহর ফেরত নিয়ে তাকে ঐ স্বামীর জন্য ত্যাগ করতেও পারে। ৬০৯ (মানারুস সাবীল ২/৮৮ পৃঃ)
স্ত্রী চাইলে আর নতুনভাবে বিবাহ আকদের প্রয়োজন নেই। কারণ, স্ত্রী তারই এবং দ্বিতীয় আকদ তার ফিরে আসার পর বাতিল। তবে তাকে ফিরে নেওয়ার পূর্বে ঐ স্ত্রী (এক মাসিক) ইদ্দত পালন করবে। ৬১০ (ইউঃ ২/৭৬৬) গর্ভবতী হলে প্রসবকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর সে সময়ে দ্বিতীয় স্বামী থেকে পর্দা ওয়াজেব হয়ে যাবে।
বিদেশে থাকা অবস্থায় বিধবা হলে মহিলা কোথায় ইদ্দত পালন করবে?
যে ঘরে থাকা অবস্থায় স্বামী মারা গেছে, সে ঘরেই ইদ্দত পালন করতে হবে। অবশ্য সেখানে যদি দেখাশোনা করার কেউ না থাকে, তাহলে শ্বশুরবাড়ি অথবা মায়ের বাড়িতে ফিরে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারবে। ৬০৭ (লাজনাহ দায়েমাহ)
ইদ্দত পালনের সময়ে কি বিধবাকে সাদা কাপড়ই পড়তে হবে?
ইদ্দত পালনের জন্য কোন নির্দিষ্ট রঙের লেবাস নেই। যে লেবাসে সৌন্দর্য আছে, তা বর্জন করে সাদাসিধা লেবাস পড়তে হবে। যে সাদা রঙের কাপড়ে সৌন্দর্য আছে, তাও পরা যাবে না।
ইদ্দত পালন করার সময় কি ঘড়ি পরা যায়?
কেবল সময় দেখার উদ্দেশ্যে পরা যায়। জরুরী না হলে না পরাই উত্তম। যেহেতু তা অলঙ্কারের মতো। ৬০৫ (লাজনাহ দায়েমাহ)
যে মহিলা স্বামী মরার ইদ্দত আছে, সে মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না?
ইদ্দতে থাকা বিধবাকে সরাসরি বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া বৈধ নয়। অবশ্য আভাসে ইঙ্গিতে বিয়ের কথা জানানোতে দোষ নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ আর তোমরা যদি আভাসে ইঙ্গিতে উক্ত রমণীদেরকে বিবাহের প্রস্তাব দাও অথবা অন্তরে তা গোপন রাখ, তাতে তোমাদের দোষ হবে না। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তাদের সম্বন্ধে আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথা বার্তা গোপনে তাদের নিকট কোন অঙ্গীকার করো না; নির্দিষ্ট সময়ে (ইদ্দত)পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ কার্য সম্পন্ন করার সংকল্প করো না। আর জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের মনোভাব জানেন। অতএব তাকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, বড় সহিষ্ণু।” (বাকারাহঃ ২৩৫)
স্বামী মারা গেলে এবং গর্ভে দুই মাস এর বাচ্চা থাকলে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবে, নাকি প্রসব হওয়া পর্যন্ত আরো প্রায় ৭ মাস ইদ্দত পালন করবে?
গর্ভবতীর ইদ্দত শেষ হবে প্রসবের পর; যদিও তা তুলনামূলক লম্বা। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “ গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।” (ত্বালাক্বঃ ৪)
একই কারণে গর্ভের শেষের দিকে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ইদ্দত মাত্র কয়েক ঘণ্টা হতে পারে।
ইদ্দত যদি মহিলার গর্ভে সন্তান আছে কি না, তা দেখার জন্য হয়, তাহলে স্বামী ছেড়ে এক দেড় বছর মায়ের বাড়িতে থাকার পর যে মহিলাকে স্বামী তালাক দেয়, তাঁকেও কি অতিরিক্ত তিন মাসিক অথবা মাসিক না হলে তিন মাস ইদ্দত পালন করতে হবে?
আসলে ইদ্দত শুরু হবে তালাকের পর থেকে। ইতিপূর্বে সে স্বামীর সাথে বহু দিন যাবৎ মিলন না করে থাকলেও বিধান এটাই যে, তালাক হওয়ার পর নির্ধারিত ইদ্দত পালন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“”তালাকপ্রাপ্তা (বর্জিতা) নারীগণ তিন রজঃস্রাব কাল প্রতীক্ষায় থাকবে। (অর্থাৎ বিবাহ করা থেকে বিরত থাকবে) (বাকারাহঃ ২২৮)
বিবাহের পর স্বামীর সাথে বাসর বা মিলন হওয়ার আগেই যদি স্বামী মারা যায়, তাহলে কি ইদ্দত পালন করতে হবে? ঐ স্ত্রী কি তার ওয়ারেস হবে?
হ্যাঁ, ঐ স্ত্রীকে ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীগন চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে।” (বাকারাহঃ ২৩৪)
এখানে মহান আল্লাহ আমভাবে সকল স্ত্রীর প্রতিই একই নির্দেশ দিয়েছেন। আর আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেছেন, “যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও কিয়ামতের প্রতি ঈমান রাখে, তার পক্ষে স্বামী ছাড়া অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নয়। তার স্বামীর জন্য সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে।” ৬০২ (বুখারী ও মুসলিম)
এখানে মহানবী (সঃ) আমভাবে সকল স্ত্রীর প্রতিই একই নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ মীরাসের আয়াতেও আম নির্দেশ আছে। সুতরাং সে স্বামীর (এক চতুর্থাংশ সম্পত্তির) ওয়ারেশ হবে; যদি অন্য কোন বাধা না থাকে। ৬০৩ (ইবনে বায)
গ্রন্থঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
অধ্যায়ঃ বিবাহ ও দাম্পত্য
গর্ভস্থ ভ্রুন যদি গর্ভচ্যুত হয়, তাহলে কি গর্ভবতীর ইদ্দতকাল শেষ হয়ে যাবে?
ভ্রুন ভূমিষ্ঠ হলেই গর্ভবতীর ইদ্দত শেষ হয়ে যাবে। (সাদী) যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “ গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত।” (ত্বালাক্বঃ ৪)
স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর স্বামী হটাৎ মারা যায়। ঐ স্ত্রীকে কি ইদ্দত পালন করতে হবে? ঐ স্ত্রী কি তার ওয়ারেস হবে?
যে তালাকে স্ত্রী প্রত্যনয়ণযোগ্য থাকে সেই (রজয়ী) তালাক পাওয়া অবস্থায় স্ত্রীকে শোকপালনের ইদ্দত পালন করতে হবে এবং স্বামীর ওয়ারেসও হবে। কারণ পূর্বেই মতোই। পক্ষান্তরে বায়েন বা খোলা তালাক পাওয়ার ইদ্দতে অথবা ফাসখের ইদ্দতে থাকলে স্ত্রীকে শোকপালনের ইদ্দত পালন করতে হবে না এবং সে স্বামীর ওয়ারেসও হবে না। ৬০১ (ইবনে উষাইমীন)
কোন পড়ুয়া ছাত্রীর স্বামী মারা গেলে সে কীভাবে ইদ্দত পালন করবে? তার কি বিদ্যালয়ে যাওয়া বৈধ হবে?
অন্যান্য মহিলাদের মতো তার জন্যও স্বগৃহে ইদ্দত পালন করা তাতে সকল প্রকার সৌন্দর্য ও সুগন্ধি বর্জন করা জরুরী। অবশ্য নিজের একান্ত প্রয়োজনে বাইরে যেতে পারে। সুতরাং দিনের বেলায় সে বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস করে আসতে পারে। ৬০০ (লাজনাহ দায়েমাহ)
অবশ্য ইদ্দতের ভিতরে হজ্জ সফরে যেতে পারে
রজয়ী তালাক দিয়ে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় স্ত্রী যদি ফিরতে না চায়, তাহলেও কি সে স্ত্রী থাকবে?
রজয়ী তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের মধ্যে দু’জনকে সাক্ষী রেখে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলে সে স্ত্রীই থাকবে, যদিও সে ফিরতে রাজী না হয়।৫৯৬ (লাজনাহ দায়েমাহ) তালাকের পর এমন স্বামীর সাথে স্ত্রী সংসার করতে না চাইলে খোলা তালাক নিতে পারে।
স্ত্রীকে তালাক দিয়ে পুনরায় ফিরে পেতে চাইলে করণীয় কি?
একই সঙ্গে তিন বা ততোধিক বার অথবা একবার তালাক দিলে তা এক তালাক রজয়ী হয়। তাকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। ইদ্দত পার হয়ে গেলে স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। তারপরেও তাকে পেতে চাইলে নতুনভাবে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু নিয়মিত তিন তালাক দেওয়ার পর সে সুযোগ আর থাকে না। অবশ্য সে মহিলার অন্যত্র বিবাহ হলে, অতঃপর স্বামী তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিলে অথবা মারা গেলে ইদ্দতের পর আগের স্বামী তাকে পূর্ণবিবাহ করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “ অতঃপর উক্ত স্ত্রীকে যদি সে (তৃতীয়) তালাক দেয়, তবে সে পর্যন্ত না ঐ স্ত্রী অন্য স্বামীকে বিবাহ করবে, তার পক্ষে সে বৈধ হবে না। অতঃপর ঐ দ্বিতীয় স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় এবং যদি উভয় মনে করে যে, তারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে, তাহলে তাদের (পুনর্বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে) ফিরে আসায় কোন দোষ নেই। এ সব আল্লহর নির্ধারিত সীমারেখা, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ ঐগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।” (বাকারাহঃ ২৩০)
জ্ঞাতব্য যে, এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে ‘হালালা-বিবাহ’ দিয়ে স্ত্রী হালাল করা বৈধ নয়। যেহেতু তাতে স্ত্রী হালাল হয় না।
সতর্কতার বিষয় যে, তালাকের বিষয় যে, তালাকের বিষয়টি সকল ক্ষেত্রে এক রকম নয়। সুতরাং সে ক্ষেত্রে স্থানীয় কাযীর সহযোগিতা প্রয়োজন।
স্ত্রীর মাসিক অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম। কিন্তু কোন সময় মাসিক থাকলেও তালাক দেওয়া যায়?
তিন সময় মাসিক থাকলেও তালাক দেওয়া যায়।
(১) তার সাথে মিলন না হয়ে থাকলে।
(২) গর্ভাবস্থায় মাসিক অব্যাহত থাকলে।
(৩) খোলা তালাক হলে। ৫৯৪ (বুখারি, মুসলিম)
স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করেছে বলে কি প্রথম স্ত্রীর তালাক চাওয়া বৈধ; যদিও বৈধভাবে শরীয়তসম্মত বিবাহ হয়।
শরীয়তের শর্ত মেনে দুজনকেই সুখী রাখতে পারলে প্রথমার তালাক চাওয়া বৈধ নয়। যেমন দ্বিতীয়ার জন্যও বৈধ নয় প্রথমাকে তালাক দিতে স্বামীকে চাপ দেওয়া।
মহানবী (সঃ) বলেন, “যে স্ত্রীলোক অকারণে তার স্বামীর নিকট থেকে তালাক চাইবে, সে স্ত্রীলোকের জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যাবে।” ৫৯২ (আবূ দাঊদ ২২২৬, তিরমিযী ১১৮৭, ইবনে মাজাহ ২০৫৫ নং, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী ৭/৩১৬, সহীহুল জামে ২৭০৬ নং)
নবী (সঃ) বলেন, “কোন মহিলা তার বোনের (সতীনের) তালাক চাইবে না; যাতে সে তার পাত্রে যা আছে, তা ঢেলে ফেলে দেয়। (এবং একাই স্বামী প্রেমের অধিকারীনী হয়)” ৫৯৩ (আবূ দাঊদ ২২২৬, তিরমিযী ১১৮৭, ইবনে মাজাহ ২০৫৫ নং, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী ৭/৩১৬, সাহীহুল জামে ২৭০
স্বামী ছয় মাস স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক না রাখলে আপনা আপনি তালাক হয়ে যায় কি?
শরীয়তে আপনা আপনি তালাক বলে কোন কথা নেই। তালাক দিতে হয়, না হয় নিতে হয়। উভয় পক্ষ সম্মত থাকলে ছয় মাস কেন, ছয় বছরও দূরে থাকতে পারে। অবশ্য স্বামী নিখোঁজ হয়ে গেলে, সে কথা ভিন্ন। নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে পূর্ণ চার বছর অপেক্ষা করার পর আর চার মাস দশদিন স্বামী মৃত্যুতে ইদ্দত পালন করে স্ত্রী দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করতে পারে। ‘লিআন’ হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীর মাঝে আপনা আপনি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তদনুরূপ বিবাহ অবৈধ প্রমাণিত হলে, স্বামী স্ত্রীর একজন মুরতাদ হয়ে গেলে সাথে সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
আমি স্ত্রীকে বলেছিলাম, ‘তুমি তোমার দোলাভাইয়ের বাড়ী গেলে তোমাকে তালাক।’ অতঃপর সে আমার কথা মানেনি, সে তার দুলাভাইয়ের বাড়ী গেছে। এখন কি তালাক হয়ে যাবে? এখন আমার করণীয় কি?
অবাধ্য বউকে বাধ্য করার জন্য তালাকের হুমকি দেওয়া যায়, কিন্তু তাকে জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার সংকল্প না থাকলে তালাক দিয়ে ফেলতে হয় না। তবুও নিয়ত যদি জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার এবং তালাক দেওয়ার থাকে, তাহলে তালাক হয়ে যাবে। ইদ্দতের মধ্যে তাকে যথা নিয়মে ফিরিয়ে নিতে হবে। পক্ষান্তরে তাকে কেবল সক্তভাবে বাধা দেওয়ার নিয়ত থাকলে এবং তালাকের নিয়ত আদৌ না থাকলে তালাক হবে না। বরং তার মান হবে কসমের। সে ক্ষেত্রে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।
গ্রন্থঃ দ্বীনী প্রশ্নোত্তর
অধ্যায়ঃ বিবাহ ও দাম্পত্য
আমি মায়ের বাড়িতে ছিলাম। স্বামী বলেছিল, ‘আজ তুমি বাড়ী না ফিরলে, তোমাকে তালাক।’ আমি বাড়ী ফিরতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার ভাই জেদ ধরে আমাকে ফিরতে দিল না। এখন আমার কি তালাক হয়ে গেছে?
যদি আপনার ভাইয়ের আপনাকে জোরপূর্বক আটকে রাখার কথা সত্য হয়, তাহলে তালাক হবে না। ৫৯১ (মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম) পড়ন্ত স্বামীর মনে তালাকের নিয়ত না থাকলে এবং কেবল তাকীদ উদ্দেশ্য হলে তাকে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।
কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তুমি অমুকের বাড়ী গেলে তোমাকে তালাক।’ অতঃপর স্ত্রী তা অমান্য করে অমুকের বাড়ী চলে গেলে তালাক হয়ে যাবে কি?
তালাক নির্ভর করছে স্বামীর নিয়তের উপর। স্বামীর উদ্দেশ্যে যদি সত্যই তালাক দেওয়ার থাকে, তাহলে তালাক হয়ে যাবে। তালাকের নিয়ত না থাকলে এবং স্ত্রী যাতে অমুকের বাড়ী না যায়, সে ব্যপারে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে থাকলে তালাক হবে না। তবে সে ক্ষেত্রে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে। ৫৯০ (ইবনে জিবরীন)
বিয়ে পড়ানোর পর স্বামী স্ত্রীর দেখা সাক্ষাৎ হওায়ার আগেই যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহলে স্ত্রী কি মোহর পাওয়ার অধিকার রাখে?
মোহর বাধা হলে অর্ধেক মোহর পাবে। বাধা না হলে কিছু খরচ পত্র পাবে। আর তার কোন ইদ্দত নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“ যদি স্পর্শ করবার পূর্বে স্ত্রীদের তালাক দাও, অথচ মোহর পূর্বেই ধার্য করে থাক, তাহলে নির্দিষ্ট মোহরের অর্ধেক আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি স্ত্রী অথবা যার হাতে বিবাহ বন্ধন, সে যদি মাফ করে দেয়, (তাহলে আলাদা কথা।) অবশ্য তোমাদের মাফ করে দেওয়াই আত্নসংযমের নিকটতর। তোমরা নিজেদের মধ্যে সহানুভূতি (ও মর্যাদার) কথা বিস্মৃত হয়ো না। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ তার সাম্যক দ্রষ্টা। (বাকারাহঃ ২৩৭)”
“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বিশ্বাসী রমণীদেরকে বিবাহ করার পর ওদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্য তাদের কোন পালনীয় ইদ্দত নেই। সুতরাং তোমরা ওদেরকে কিছু সামগ্রী প্রদান কর এবং সৌজন্যের সাথে ওদেরকে বিদায় কর।” (আহযাবঃ ৪৯)
তালাক স্বামীর হাতে দেওয়া হল কেন? স্ত্রী তালাক নিতে পারে দিতে পারেনা কেন?
যেহেতু পুরুষ মহিলার তুলনায় জ্ঞানে পাকা, ক্রোধের সময় বেশী ধৈর্যশীল। নচেৎ স্ত্রীর হাতেও তালাক থাকলে সামান্য ঝামেলাতেই সে ‘তোমাকে তালাক’ বলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে থাকত। যেমন অনেক মহিলা সামান্য কিছু হলেই রেগে বলে বসে, ‘আমাকে তালাক দাও’, ‘আমি তোমার ভাত খাব না’ ইত্যাদি।
স্বামীর নিকট থেকে কখন তালাক নেওয়া বৈধ এবং কখন ওয়াজেব?
যখন স্বামী এমন কাজ করবে, যা কবীরা গোনাহ এবং তা কুফরী নয়, বুঝানোর পরও মানতে চাইবে না, তখন তালাক নেওয়া বৈধ। যেমন ব্যভিচার, মদ্যপান ইত্যাদি। কিন্তু সে কাজ করার ফলে মানুষ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়, তার সাথে সংসার করা বৈধ নয়। তউবা না করলে সে ক্ষত্রে তালাক নেওয়া ওয়াজেব। যেমন মাযার যাওয়া, শিরক করা, দ্বীন, আল্লাহ বা তার রাসুলকে গালি দেওয়া, নামায ত্যাগ করা ইত্যাদি। ৫৮৯ (ইবনে উষাইমীন)
যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীকে বলে, ‘আমি তোমার নিকট থেকে আল্লাহ্র পানাহ চাচ্ছি’ তাহলে কি তাকে স্ত্রী রূপে রাখা যাবে?
স্ত্রী যদি স্বামী থেকে আল্লাহ্র পানাহ চাইলে আল্লাহর নামের তা’যীম করে তাকে তা দেওয়া ওয়াজেব। মহানবী (সঃ) বলেছেন, “কেউ আল্লহর আশ্রয় প্রার্থনা করলে, তাকে আশ্রয় দাও। আর যে আল্লাহ্র নামে যাঞ্চা করবে, তাকে দান কর।”(আবূ দাঊদ, নাসাঈ) তার এক স্ত্রী তার নিকট আল্লাহ্র পানাহ চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি বিশাল সত্তার পানাহ চেয়েছ। সুতরাং তুমি তোমার মায়ের বাড়ী চলে যাও।’ ৫৮৮ (বুখারী ৫২৫৪ নং)
একজন স্বামী তার স্ত্রীকে মা বলে ‘যিহার’ করেছে। অতঃপর তাকে তালাক দিয়েছে। তাকে কি ‘যিহারের’ কাফফারা আদায় করতে হবে?
তালাক দেওয়ার পর যিহারের কাফফারা আদায় করতে হবে না। যেহেতু সে তার স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না। মহান আল্লাহ বলেন,
“যারা নিজেদের স্ত্রীর সাথে যিহার করে এবং পরে তাদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাহলে (এর প্রায়শ্চিত্ত)একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসের মুক্তিদান। এর দ্বারা তোমাদেরকে সদুপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন।” (মুজাদালাহঃ ৩)
সুতরাং স্ত্রীকে স্পর্শ না করতে হলে, কাফফারা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
কোন হতভাগা স্বামী স্ত্রীকে ‘তুই আমার মা বা মায়ের মত’ বললে ‘যিহার’ হয়। কিন্তু যদি কোন হতভাগী স্ত্রী ‘তুমি আমার বাপ বা বাপের মত’ বলে। তাহলে তার বিধান কি?
এ ক্ষেত্রে মহিলার পক্ষ থেকে যিহার হবে না। কেবল মহিলাকে কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে। ৫৮৭ (ইবনে বায)
অনেক পুরুষ আছে, যাঁদের কন্যা সন্তান হলে স্ত্রীকে দোষ দেয়, তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় হলে তো রেহাই নেই। এমন পুরুষদের ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কি?
নিঃসন্দেহে এমন আচরণ বর্তমানের পণ ও যৌতূক প্রথার করাল গ্রাসের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় দুর্বল ঈমানের মানুষ দ্বারা ঘটে থাকে। আর যে স্বামী কন্য প্রসব করার জন্য স্ত্রীকে দায়ী করে, তার জ্ঞানও দুর্বল। কারণ, বীজ তো তারই। জমির দোষ কি? তাছাড়া কন্যা তার জন্য ভালো হবে না মন্দ, তাই বা সে জানল কি করে? সমাজে দেখা যায় যে, কত কন্যার পিতামাতা সুখী এবং কত পুত্রের পিতা মাতা চিরদুঃখী। তাহলে আল্লাহ্র উপর ভরসা রেখে তার দেওয়া ভাগ ও ভাগ্য নিয়ে কি সন্তষ্ট হওয়া উচিৎ নয়?
পরন্ত কন্যা সন্তান অপছন্দ করা জাহেলী যুগের আচরণ। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“তাকে সে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্নগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে, তা কতই না নিকৃষ্ট।” (নাহলঃ ৫৯)
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...