Tuesday, December 5, 2017

ওযূ ভঙ্গের কারণসমূহ [শেষ অংশ]

ওযূ ভঙ্গের কারণসমূহ [শেষ অংশ]


প্রথম অংশের পর......

৫। নিতম্ব স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হয় না:[1]
কেননা নিতম্বকে লিঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হয় না। লিঙ্গ ও নিতম্ব স্পর্শ করার ক্ষেত্রে সমতার কোন প্রমাণ না থাকায়, নিতম্বকে লিঙ্গের উপর কিয়াস করা যাবে না। যদি বলা হয় যে, উভয়টি নাপাক নির্গত হওয়ার স্থান? তাহলে বলা হবে যে, তা স্পর্শ করার ফলে ওযূ ভঙ্গের কোন কারণ পাওয়া যায় না। উপরন্তত্ম, নাপাক স্পর্শ করলে ওযূ নষ্ট হয় না, সুতরাং নাপাক বের হওয়ার স্থান স্পর্শ করলে কিভাবে ওযূ নষ্ট হবে?!! এটা ইমাম মালিক সাওরী ও আসহাবে রা‘য়ের অভিমত। ইমাম শাফেঈ এর বিরোধিতা করেছেন।
৬। উটের গোশত খাওয়ার ফলে ওযূ নষ্ট হওয়ার বিধান:

যে ব্যক্তি কাঁচা, পাকানো বা ভোনা করা উটের গোশত ভক্ষণ করবে, তার ওযূ করা ওযাজিব।
عن جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَأَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْغَنَمِ؟ قَالَ: «إِنْ شِئْتَ فَتَوَضَّأْ، وَإِنْ شِئْتَ فَلَا تَوَضَّأْ» قَالَ أَتَوَضَّأُ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ؟ قَالَ: «نَعَمْ فَتَوَضَّأْ مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ»
অর্থাৎ, জাবির বিন সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করল, আমি কি ছাগলের গোশত ভক্ষণ করলে ওযূ করব?  রাসূল (ﷺ) জবাবে বললেন, চাইলে করতে পার অথবা না পার। আমি কি উটের গোশত ভক্ষণ করলে ওযূ করব? রাসূল (ﷺ) জবাবে বললেন, হ্যাঁ উটের গোশত খেলে উযু কর।[2]
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، أَنَّ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ قَالَ تَوَضَّئُوا مِنْ لُحُومِ الْإِبِلِ، وَلَا تَتَوَضَّئُوا مِنْ لُحُومِ الْغَنَمِ
অর্থাৎ, বাররা বিন আযেব থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, উটের গোশত খেলে উযু কর এবং ছাগলের গোশত খেলে ওযূ কর না।[3]
এটা ইমাম আহমাদ, ইসহাক, আবূ খাসসামাহ, ইবনুল মুনযির এবং ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এর দু’টি অভিমতের একটি অভিমত। শাইখুল ইসলাম এমতটিকে পছন্দ করেছেন। ইবনে উমার ও জাবের ইবনে সামুরাহ থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অপর পক্ষে জমহুর বিদ্বান তথা আবূ হানীফা, মালিক শাফেঈ, সাওরী ও সালাফদের একটি দলের মতে, উটের গোশত খাওয়ার ফরে ওযূ ওয়াজিব হয় না। বরং এ ক্ষেত্রে ওযূ করা মুস্তাহাব।[4] 
কেননা জাবের বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে,
كَانَ آخِرُ الْأَمْرَيْنِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ تَرْكَ الْوُضُوءِ مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ
অর্থাৎ, রাসূল (স:) এর দু‘টি কাজের সর্বশেষ কাজ ছিল যে, তিনি রান্না করা খাবারের পর ওযূ করতেন না।[5]  তারা বলেন, মহানাবী (ﷺ) এর সাধারণ বাণী- ‘‘مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ’’ উটের গোশতকেও শামিল করে। আর ‘উটের গোশমত খেলে ওযূ করতে হবে’  মর্মে বর্ণিত হাদীসটি মাসূখ হয়ে যাওয়ার প্রমাণ রয়েছে।

দু’ ভাবে এ কথার জবাব দেয়া যায়। [6]
১ম মতঃ জবির বর্ণিত হাদীসটি আম। আর ‘উটের গোশত ভক্ষণের ফলে ওযূ নষ্ট হবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি খাস। আম হাদীস খাস হাদীসের উপর ব্যবহার করা হয়। ফলে খাস হওয়ার দলীল পাওয়ার কারণে আম হাদীস থেকে উক্ত বিধান বের হয়ে যাবে। সুতরাং, উভয় হাদীসের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হওয়ার কারণে ‘উটের গোশত ভক্ষণের ফলে ওযূ নষ্ট হবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীসটিকে মানসূখ বলা যাবে না।
২য় মতঃ উটের গোশত খাওয়ার ফলে ওযূ করার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা খাস নির্দেশ। চাই তা আগুণে পাকানো হোক বা না হোক। শুধু আগুণে পাকানোর কথা বলা হয়নি। সুতরাং, শুধু পাকানো উটের গোশত খেলেই যে ওযূ নষ্ট হবে, বিষয়টি এমন নয়। বরং উটের গোশতের বিধানটার আগুনে পাকানো খাবার খেলে ওযূ নষ্ট হবে অথবা হবে না এমন যে দু‘টি বিধান রয়েছে, তা থেকে বহির্ভূত। 

কেউ কেউ বলেন: হাদীসে উল্লেখিত ওযূ দ্বারা হাত ধোয়া উদ্দেশ্য। এ কথা গ্রহণযোগ্য নয়।[7] কেননা মহানাবী (ﷺ) এর বাণীতে যে ওযূর কথা বর্ণিত হয়েছে, তাতে শুধু সালাতের ওযূর কথাই বলা হয়েছে। আবার সহীহ মুসলিমে জাবের বিন সামুরাহ এর হাদীসে ‘উটের গোশত খেলে ওযূ করতে হয়’ বিধানটিকে ‘উট বাঁধার স্থানে সালাত আদায় করতে হয়’ এই বিধানের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ‘উট বাঁধার স্থানে  সালাত আদায় করা’ ও ‘ছাগল বাঁধার স্থানে  সালাত আদায় করা’ র বিধানের মাঝে পার্থক্য হয়ে গেছে। সুতরাং, এতে নিশ্চিতভাবে বুঝা যায় যে, এটা সালাতের ওযূ। 
বিশুদ্ধ মতামত হলো:
উটের গোশত ভক্ষণ করলে সর্বাবস্থায় ওযূ ওয়াজিব। এজন্য ইমাম নববী (রাহি.) মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থের (১/৩২৮ পৃ: কল‘আজী) বলেন, এই মতামতটিই দলীলের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী, যদিও জমহুর বিদ্বান এর বিপরীত মত পেশ করেছেন।

২টি সতর্কবাণী:
১ম: ইমাম নববী (রাহি.) মুসলিমের শারহ এর ১/৩২ পৃ: উটের গোশত খাওয়ার ফলে ওযূ না করার মাতামতটিকে চার খলীফা (রা.) এর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। এ দাবীর পেছনে কোন দলীল নেই এবং এ ব্যাপারে তাদের পর্যন্ত কোন সনদ জানা যায় না । এ ভুল দাবীর ব্যাপারে সতর্ক করে ইবনে তাইমিয়া্যাহ (রাহি.) বলেন, খোলাফায়ে রাশেদ্বীনসহ জমহুর ছাহাবা উটের গোশত খাওয়ার পর ওযূ করতেন না বলে যারা বর্ণনা করেছেন তারা তাদের প্রতি ভুল দাবী উত্থাপন করেছেন। মূলতঃ ‘আগুণে পাকানো খাবার খেয়ে তারা ওযূ করতেন না’ এ আম বর্ণনা কে কেন্দ্র করেই তারা এই ভুল ধারণা পোষণ করেছেন।[8]
২য়ঃ একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা যার কোন ভিত্তি নেইঃ[9]
সর্বসাধারণের কাছে একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ রয়েছে, যা জ্ঞান পিপাষু ছাত্র সমাজ শুনলে উটের গোশত খাওয়ার পর ওযূ করা আবশ্যক মনে করবে। ঘটনাটি হল, একদা মহানাবী (ﷺ) এক দল সাহাবাদের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। অতঃপর তাদের একজনের কাছ থেকে তিনি গন্ধ অনুভব করছিলেন, ফলে ব্যক্তিটি মানুষের মাঝে দাঁড়াতে লজ্জাবোধ করছিল। মূলতঃ ব্যক্তিটি উটের গোশত খেয়েছিল। ফলে মহানাবী (ﷺ) তাকে বললেন, যে ব্যক্তি উটের গোশত খাবে সে ওযূ করবে। অতঃপর উটের গোশত খেয়েছিল এমন একদল ব্যক্তিবর্গ দাঁড়িয়ে গেল এবং তারা সবাই ওযূ করল। এই ঘটনাটি সনদগতভাবে দুর্বল এবং মতনগত ভাবে মুনকার।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ