Monday, February 5, 2018

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত (দরূদ) পড়ার অর্থ, ফযিলত, পদ্ধতি ও স্থানসমূহ -১

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সালাত (দরূদ) পড়ার অর্থ, ফযিলত, পদ্ধতি ও স্থানসমূহ পার্ট এক


ভূমিকা
  إِنَّ الْحَمْدُ للهِ ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا ، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا ، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা তারই প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য চাই, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্টতা ও আমাদের কর্মসমূহের মন্দ পরিণতি থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই। আর যাকে গোমরাহ করেন তাকে হেদায়েত দেওয়ার কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। সালাত ও সালাম নাযিল হোক তার উপর, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবীদের উপর এবং যারা কিয়ামত অবধি এহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করেন তাদের উপর।
জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হল সময়।
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সমুদ্র খুব দ্রুত বয়ে যায়। কোথাও থেমে যায়না কিংবা কারও অপেক্ষা করে না। এটি সময়ের মেহেরবানী যে, সে অনবরত চলতে থাকে এবং আমাদেরকে জীবনের দুঃখ-দুর্দশা ও মুসিবত সহ্য করার উপযোগী করে তুলে। সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সে যে সময়কে কাজে লাগাতে পারে। আবহমান সময় মনের দুঃখের উৎকৃষ্ট উপশম। যদি সময় থেমে যায় তাহলে মনে হয় পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে থাকা অসম্ভব হবে। আর প্রত্যেক মানুষ দুঃখের স্বরূপ ও বিষণ্ণতার ভাস্কর্য মনে হবে।
আমরা যারা হাদিস অধ্যয়ন করি, পড়ি বা লিখি তারা, অবশ্যই নবীকুল শিরোমণি, মুত্তাকীদের ইমাম, সারা জাহানের জন্য রহমত, পাপীদের জন্য আল্লাহর অনুমতিক্রমে শাফা‘আতকারী এবং সত্য পথের প্রদর্শক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক নাম মুখ দিয়ে বার বার উচ্চারণ করে থাকি। সত্যবাদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের এক সাথী উবাই ইবনু কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে কতই না সত্য কথা বলেছেন যে, হে কা‘ব! যদি তুমি তোমার সম্পূর্ণ সময় আমার উপর দরূদ পড়ার জন্য ব্যয় করে দাও তাহলে তোমার দুনিয়া ও আখিরাতের দুশ্চিন্তা ও দুঃখের জন্য তা যথেষ্ট হবে।[1]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে স্বীয় কালাম সম্পর্কে বলেন,
﴿ٞۗ قُلۡ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ هُدٗى وَشِفَآءٞۚ ٤٤ ﴾ [فصلت: ٤٤]
“হে মুহাম্মদ! আপনি বলে দিন। ঈমানদারদের জন্য এই কুরআন হিদায়েত ও শিফা”।[2]
এই একই কথা নির্দ্বিধায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের ব্যাপারেও বলা যেতে পারে যে, ঈমানদারদের জন্য তা হল হিদায়েত ও শিফা। আল্লাহর নবীর উপর দরূদ পড়ার নির্দেশ তো আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। সুতরাং, নবীর উপর দরূদ পড়ার অর্থই আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন ও হুকুম পালন করা। আর নিঃসন্দেহে বলা যায় আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানা ও তার বাস্তবায়নই হল হিদায়েত। আল্লাহর কুরআন যেমন মানব জাতির জন্য শিফা, অনুরূপভাবে আল্লাহর রাসূলের হাদিসও মানব জাতির জন্য শিফা। এ বিষয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা রয়েছে। যেমন-
ইমাম রমাদী রাহিমাহুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে “তারীখে বাগদাদ” নামক গ্রন্থে লিখিত আছে: যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন বলতেন: আমাকে হাদিস পড়ে শুনাও কেননা তাতে রয়েছে শিফা। পাক ভারত উপমহাদেশে শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ এর পরিবারের ধর্মীয় অবদানের কথা কার অজানা?। তাঁর পিতা শাহ আব্দুর রহীম রাহিমাহুল্লাহ বলতেন: দ্বীনি খেদমতের যা সৌভাগ্য আমি অর্জন করেছি তা সব একমাত্র দরূদ শরীফের বরকতেই করেছি।
আল্লামা সাখাবী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল কাউলুল বদী’ গ্রন্থে অনেক মুহাদ্দিসের স্বপ্ন বর্ণনা করেছেন। যার দ্বারা প্রতিয়মান হয়, তাদের সবাইকে শুধুমাত্র এ কারণেই ক্ষমা করা হয়েছে যে তাঁরা হাদিস লেখার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের সাথে সাথে দরূদ পড়তেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার গুরুত্ব ও ফযীলত যে কত অপরিসীম তা আমরা চিন্তাই করতে পারি না। আমরা বিভিন্নভাবে আমাদের সময়কে অপচয় করে থাকি। যদি আমরা সময়কে অপচয় করে আল্লাহর নবীর উপর দরূদ পড়তে থাকি, তা আমাদের একদিন কাজে লাগবে।
এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের অভাব খুবই প্রকট। তবে এটি যেমনটা চিন্তনীয় বিষয় তার চেয়েও অধিক দুশ্চিন্তার বিষয় হল, আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমাদের সমাজে দরূদের নামে বিভিন্ন ধরনের কু-সংস্কার, বিদ‘আত, বানোয়াট ও উদ্ভট কথা-বার্তার প্রচলন। অনেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অতি ভক্তি প্রদর্শন করে এবং তাকে অধিক সম্মান দেখাতে গিয়ে তার সম্পর্কে এমন উদ্ভট কথা-বার্তা বলে থাকে, যা তার জন্য কখনোই প্রযোজ্য নয়। তিনি যে একজন আল্লাহর সৃষ্টি বা মাখলুক তাকে সে মর্যাদায় না রেখে অতি উৎসাহী কিছু লোক তাকে আল্লাহর মর্যাদায় পৌঁছে দেন। ফলে দেখা যায়, দরূদের নামে রাসূল সম্পর্কে এমন কিছু কথা রাসূলের শানে বলা হয়ে থাকে যা যথারীতি শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ জন্য দরূদ শরীফ সম্পর্কে কুরআন ও সূন্নাহের সঠিক ও বিশুদ্ধ দিক নির্দেশনা কি তা জানা থাকা খুবই জরুরী। এ বইটিতে দরূদ পড়ার ফযিলত, গুরুত্ব, দরূদ পাঠের নিয়ম ও দরূদের শব্দসমূহ কি তা কুরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের জীবন
এখানে একটি বিষয় জেনে থাকা খুবই জরুরী যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তার জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে। মূলত তার জীবন সম্পর্কে অস্পষ্টতা থাকার কারণ হল, এ সম্পর্কে হাদিস ও কুরআনে আসা নির্দেশনা সম্পর্কে সু-স্পষ্ট জ্ঞান না থাকা এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাদিস কুরআনে উল্লেখ না করা। তবে এ ক্ষেত্রে হাদিসে বা কুরআনে যতটুকু বর্ণনা পাওয়া যায়, তার উপর ঈমান আনা ও বিশ্বাস করাই একজন মুমিনের কাজ। সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কবর থেকে সালাম দাতার উত্তর দিয়ে থাকেন। কবরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শোনা এবং উত্তর প্রদান কিভাবে? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ ব্যাপারে এ কথা স্মরণ রাখা দরকার যে, ইহজীবন হিসেবে যেভাবে অন্য মানুষের উপর মৃত্যু আসে সেভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরও মৃত্যু এসেছে। কুরআন মজীদের কয়েকটি স্থানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ‘মৃত্যু’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
 ﴿ إِنَّكَ مَيِّتٞ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ ٣٠ ﴾ [الزمر: ٣٠]
“হে মুহাম্মদ! আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন এবং তারাও (কাফের-মুশরিকরাও) মৃত্যু বরণ করবে”।[3] সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿ وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٞ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُۚ أَفَإِيْن مَّاتَ أَوۡ قُتِلَ ٱنقَلَبۡتُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَٰبِكُمۡۚ وَمَن يَنقَلِبۡ عَلَىٰ عَقِبَيۡهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيۡ‍ٔٗاۗ وَسَيَجۡزِي ٱللَّهُ ٱلشَّٰكِرِينَ ١٤٤ ﴾ [ال عمران: ١٤٤]
“আর মুহাম্মদ রাসূল ছাড়া আর কিছু নয়, তাঁর আগেও অনেক রাসূল চলে গেছেন। তা হলে কি তিনি যদি মারা যান কিংবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুত: কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ আল্লাহ তাদের ছাওয়াব দান করবেন”।[4] সূরা আম্বিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন,
﴿ وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٖ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَٰلِدُونَ ٣٤ ﴾ [الانبياء: ٣٤]
‘আপনার পূর্বেও আমি কোনো মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হবে?[5]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন:
«مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّداً فَإِنَّ مُحَمَّداً قَدْ مَاتَ»
‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ মুহাম্মদের ইবাদত করত তারা যেন জেনে রাখে, তিনি মারা গেছেন।’[6]
 কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাকে গোসল দেওয়া হয়েছে, কাফন পরানো হয়েছে, জানাযার সালাত  আদায় করা হয়েছে এবং কয়েক মন মাটির নীচে কবরে দাফন করা হয়েছে। সুতরাং, এটা একেবারেই নিঃসন্দেহ বলা যায় যে, ইহকালীন জীবন হিসেবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন। তবে তাঁর বরযখী জীবন, সকল নবী-রাসূল, শহীদ, অলি এবং নেককার লোকদের চেয়ে অনেক অনেক পরিপূর্ণ। বরযখী জীবন সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত, এই জীবনটি মৃত্যুর পূর্বে পৃথিবীর জীবনের মতও নয় এবং কিয়ামতের পরের জীবনের মতও নয়। আসলে সেই জীবনের বাস্তবতা কি? তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,
﴿وَلَا تَقُولُواْ لِمَن يُقۡتَلُ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتُۢ ۚ بَلۡ أَحۡيَآءٞ وَلَٰكِن لَّا تَشۡعُرُونَ ١٥٤﴾ [البقرة: ١٥٤]
“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাঁদের মৃত বলও না। বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা বুঝ না”।[7] যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বরযখী জীবন সম্পর্কে অকাট্যভাবে ঘোষণা করে দিলেন যে, বরযখী জীবনের ধরণ সম্পর্কে তোমাদের কোনো বোধ নেই, সেহেতু এ ব্যাপারে আমাদের জন্যেও যুক্তির ঘোড়া দৌড়ানো কোনো ক্রমেই উচিত নয়। এরূপ যুক্তি পেশ করা মোটেও ঠিক হবে না যে, যখন সালামও শুনেন এবং তার উত্তরও দিয়ে থাকেন তাহলে সেই জীবন দুনিয়াবি জীবন থেকে ভিন্ন হবে কেন? অথবা যখন তিনি সালাম শুনেন তাহলে অন্য কথা-বার্তা শুনবেন না কেন? ইত্যাদি। আসলে আমাদের ঈমানের চাহিদা হল, যা কিছু আমাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাকে কোনো রকম কমবেশ না করে সম্পূর্ণভাবে মেনে নেওয়া। যে ব্যাপারে চুপ থেকেছেন সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়ার পরিবর্তে চুপ থাকা। এটাই হল স্বীয় দ্বীন-ঈমান বাঁচানোর নিরাপদ উপায়। অন্যথায় আমরা যদি আমাদের জ্ঞানের বাইরে এবং আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ে কোনো দিক নির্দেশনা দেননি সে বিষয়ে মাথা ঘামাই তা হলে আমরা পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হব। যারা আল্লাহ ও তার রাসূল যে সব বিষয়গুলো স্পষ্ট করেননি সে সব বিষয়গুলো সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করেন তাদের আল্লাহ তা‘আলা কঠিন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسۡ‍ُٔولٗا ٣٦﴾ [الاسراء: ٣٦]
“আর যে বিষয়ে তোমার জানা নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তঃকরণ-এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে”।[8]
এছাড়াও আল্লাহ রাসূলের নির্দেশিত বিষয়সমূহের প্রতি হুবহু ঈমান না এনে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ খুঁজে বেড়ায় এবং যুক্তির ঘোড়া দোড়ায় তাদের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ ٱبۡتِغَآءَ ٱلۡفِتۡنَةِ وَٱبۡتِغَآءَ تَأۡوِيلِهِۦۖ وَمَا يَعۡلَمُ تَأۡوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُۗ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧ ﴾ [ال عمران: ٧]
“ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্য-বিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ব, তারা বলে, আমরা এ গুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে”।[9]
একটি বাতিল আকীদা-বিশ্বাস ও তার খণ্ডন: বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্ন ভাষায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেছেন,
 « إِنَّ لِلَّهِ فِي الْأَرْضِ مَلَائِكَةً  سَيَّاحِينَ، يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلَامَ »
“আল্লাহ তা‘আলা কিছু মালাইকাহ তথা ফেরেশতাদের দায়িত্ব দিয়েছেন যে, তারা যেন পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় এবং যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ-সালাম পাঠ করে, তাদের দরূদ ও সালাম তাঁর কাছে পৌঁছায়”।[10]
এই হাদীসের পরিষ্কার অর্থ হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা কবর শরীফে উপস্থিত থাকেন। আর সর্বস্থানে উপস্থিত ও সর্বদর্শী হন না। বাস্তবে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বস্থানে উপস্থিত ও সর্বদর্শী হতেন তাহলে ফেরেশতা নির্ধারণ করে তাঁর কাছে দরূদ-সালাম পৌঁছানোর কি প্রয়োজন ছিল? কোনো কোন হাদীসে স্পষ্টভাবে এ কথাও পাওয়া যায় যে, ফেরেশতাগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটাও বলে দেন যে, এই দরূদ-সালাম প্রেরণ করেছেন অমুকের ছেলে অমুক। এর দ্বারা এ কথাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলেমুল গায়েব ছিলেন না। কারণ, যদি তিনি গায়েব জানতেন তাহলে ফেরেশতাদের বলতে হত না দরূদ ও সালাম প্রেরণকারী কে?।
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয় এরূপ দরূদ ও সালাম
এমনিতেই বর্তমানে দ্বীনে ইসলামে বিদ‘আতের সংযোগ দৈনন্দিন জীবনের নিয়মে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিশেষভাবে যিকির-আযকার ও দো‘আ অযীফার বেলায় মানুষের মনগড়া এবং সূন্নাহ বিরুদ্ধ অনেক বস্তু সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে মাসনূন দো‘আ ও যিকির যেন ভুলে যাওয়া অধ্যায় হয়ে গেছে। অনেক মনগড়া ও গায়রে মাসনূন দরূদ-সালাম সমাজে প্রচলিত হয়ে পড়েছে। যেমন- দরূদে তাজ, দরূদে তুনাজ্জীনা, দরূদে হাজারী, দরূদে নারীয়া ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে প্রত্যেকটির পড়ার নিয়ম ও সময় ভিন্ন ভিন্ন বলা হয়েছে। আবার এগুলোর অনেক উপকারের কথাও বিভিন্ন বই পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে। উল্লেখিত বিভিন্ন নামে লিখিত এ সকল দরূদসমূহের একটিরও কোনো শব্দ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। কাজেই এগুলো পড়ার নিয়ম এবং এগুলোর উপকারের কথা বাতিল হবে বৈকি।
শরীয়তে মনগড়া ও গায়রে মাসনূন কাজের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসগুলো প্র্রত্যেক মুসলিমের দৃষ্টিতে থাকা উচিত, যেন এই সংক্ষিপ্ত ও অতি মূল্যবান জীবনে ব্যয় কৃত সময়, সম্পদ এবং অন্যান্য যোগ্যতা কিয়ামতের দিন ধ্বংস না হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
 «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ» (رواه البخاري ومسلم)؛
‘যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো কাজ করেছে যার ভিত্তি শরীয়তে নেই, সেই কাজ প্ররিত্যজ্য।[11] অর্থাৎ, আল্লাহর কাছে এই কাজের কোনো ছাওয়াব পাওয়া যাবে না। অন্য এক হাদীসে তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহীর ঠিকানা হল জাহান্নাম।”[12]
এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত ঘটনাটি খুবই শিক্ষণীয় হবে বলে মনে করি। ঘটনাটি এরূপ যে,
” جاء ثلاثة رهط إلى بيوت أزواج النبي (صلى الله عليه وسلم) يسألون عن عبادة النبي (صلى الله عليه وسلم)، فلما أخبروا كأنهم تقالوها، فقالوا: وأين نحن من رسول الله (صلى الله عليه وسلم)؟ قد غفر له ما تقدم من ذنبه وما تأخر. فقال أحدهم: أما أنا، فأنا أصلي الليل أبدا، وقال آخر: أصوم الدهر ولا أفطر. وقال آخر: أنا أعتزل النساء فلا أتزوج أبدا! فجاء رسول الله (صلى الله عليه وسلم) إليهم، فقال: أنتم الذين قلتم كذا وكذا؟ أما والله إني لأخشاكم لله، وأتقاكم له، ولكني أصوم وأفطر، وأصلي وأرقد، وأتزوج النساء، فمن رغب عن سنتي فليس مني “.
أخرجه البخاري (3 / 411) والبيهقي (7 / 77)
তিন ব্যক্তি নবী পত্নীগণের কাছে আসলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদাতের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। যখন তাদের বলা হল, তখন তারা সেটা কম মনে করল। তারপর তারা বলল, কোথায় আমরা আর কোথায় রাসূল? তাঁর তো পূর্বের ও পরের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তারপর তাদের থেকে একজন বলল, আমি এখন থেকে সারা রাত সালাত পড়ব এবং মোটেও বিশ্রাম নেব না। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, আমি এখন থেকে সব সময় ছিয়াম পালন করব আর কখনো ছাড়ব না। তৃতীয় ব্যক্তি কলল, আমি কখনো বিয়ে করব না। নারীদের থেকে অনেক দূরে থাকব। যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে জানতে পারলেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, সব চেয়ে বেশী পরহেজগার, আমি রাত্রে সালাতও পড়ি আবার ঘুমাইও, ছিয়ামও পালন করি আবার ছেড়েও দেই এবং আমি মহিলাদের বিয়েও করি। সুতরাং মনে রেখ, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাবে তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।[13]
পাঠকবৃন্দ! একটু চিন্তা করুন। উল্লেখিত হাদীসে তিন ব্যক্তি তাদের ধারণা মতে নেক কাজ করা এবং বেশী ছাওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে এরূপ ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু তাদের নিয়ম নিজেদের বানানো এবং সূন্নাহ বিরূদ্ধ ছিল বিধায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কথার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। দরূদ ও সালামের ব্যাপারেও সমান কথা হবে।
মনগড়া ও সুন্নাহ বিরূদ্ধ দরূদ ও সালামের জন্য সব রকমের মেহনত, প্রচেষ্টা অকেজো ও উপকারশূন্য। বরং খুব বেশী সম্ভব যে হয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অসন্তুষ্টি এবং রাগের বড় কারণ হবে। সুতরাং, আপনারা সে দরূদ পাঠ করুন যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। মনে রাখবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মুখ থেকে বের হওয়া একটি শব্দ পৃথিবীর সকল ওলী বুজর্গ এবং সৎলোকদের বানানো কালাম অপেক্ষা অনেক অনেক মূল্যবান ও শ্রেষ্ঠ হবে।
আমি এ রিসালাটিতে দরূদ শরীফের মাসায়েল লেখার সময় হাদিসগুলো নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহীহ এবং হাসান এর মাপকাঠি স্থিতিশীল রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি কারও নজরে কোনো দুর্বল হাদিস ধরা পড়ে তাহলে আমাকে জানানোর অনুরোধ রইল।
رَبَّنَاتَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ وَتُبْ عَلَيْنَاَ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوابُ الرَّحِيْمُ
সালাত {দরূদ} এর অর্থ ও ব্যাখ্যা
কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের স্বীয় রাসূলের উপর দরূদ পড়ার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦ ﴾ [الاحزاب : ٥٦]
“আল্লাহ তা‘আলা নবীর উপর সালাত পেশ করেন। আর তাঁর মালাক তথা ফেরেশতাগণ নবীর জন্য আল্লাহর কাছে সালাত পেশ করেন। অতএব হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরাও নবীর উপর সালাত ও সালাম প্রেরণ কর”।[14]
اللهُــــــــــــمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّـدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّـدٍ كَمَـا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْـمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْـمَ  إِنَّكَ حَمِيْـدٌ مَجِيْـدٌ .اللهُــــــــــــمَّ باَرِكْ عَلَى مُحَمَّـدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّـدٍ كَمَـا باَرَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْـمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْـمَ إِنَّكَ حَمِيْـدٌ مَجِيْـدٌ .
আবুল আলীয়া রহ. বলেন, ‘আল্লাহর সালাত তার নবীর উপর’ এ কথাটির অর্থ, ফেরেশতাদের নিকট নবীর প্রশংসা করা। আর নবীর উপর ‘ফেরেশতাদের সালাত’ এ কথাটির অর্থ, নবীর জন্য দো‘আ করা। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ফেরেশতারা আল্লাহর নবীর উপর সালাত পড়ে এ কথাটির অর্থ হল, তারা বরকতের জন্য দো‘আ করে। ইমাম তিরমিযি রহ. সুফিয়ান সাওরী সহ বিভিন্ন আহলে ইলম থেকে বর্ণনা নকল করেন, তারা বলেন, ‘সালাতুর রব’ এ কথার অর্থ, রহমত, আর ‘সালাতুল মালায়েকা’ এ কথার অর্থ, ক্ষমা চাওয়া।
এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তার স্বীয় বান্দাদেরকে উর্ধ্ব জগতে তার প্রিয় বান্দা ও নবীর যে কত বড় মর্যাদা তা জানিয়ে দেওয়া- আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তার নিকটতম ফেরেশতাদের নিকট তার প্রশংসা করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা জমীনের অধিবাসীদের নির্দেশ দেন তারাও যেন, তার নবীর উপর সালাত ও সালাম পড়ে। যাতে আসমান ও জমীন উভয় জগতের অধিবাসী আল্লাহর নবীর উপর সালাত ও সালাম পেশ করার বিষয়ে একত্র হয়।
কারও কারও মতে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তা‘আলার সালাত পাঠের অর্থ হল, রহমত অবতীর্ণ করা। আর ফেরেশতাগণ ও মুসলিমদের সালাত পাঠের অর্থ হল, তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে রহমতের দো‘আ করা[15]। এ মতের সপক্ষে তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করে থাকেন:   
 عَنْ أَبِى هٌرَيْرَةَ رَضِى اللهٌ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم قَالَ الْمَلاَئِكَةُ تُصَلَّى عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِى مُصَلاَّهُ الَّذِي صَلَّى فِيْهِ مَالَمْ يُحْدِثْ ، تَقُولُ : اللَّهَمَّ اغْفِرْ لَهُ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ . (رواه البخارى فى صحيحه ، كتاب الصلاة ، باب الحدث فى المسجد(
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি তার ছালাতের স্থানে যতক্ষণ বসে থাকবে ততক্ষণ তার ওযু না ভাঙ্গা পর্যন্ত মালাকরা অর্থাৎ ফেরেশতারা তার উপর সালাত পড়তে থাকে। তারা বলে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ তার প্রতি দয়া কর।[16]
তাছাড়া অন্য হাদীসেও এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: قال قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم: )إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى مَيَامِنِ الصُّفُوفِ . (رواه أبوداود، صحيح سنن أبى داؤد للألبانى، الجزء الأول.(
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর মালাকগণ কাতারের ডান পাশের লোকদের উপর সালাত প্রেরণ করেন।[17]
[তবে যারা এ মতের বিরোধিতা করেন, তাঁরা বলেন, কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে ‘সালাত’ অর্থ ‘দো‘আ’ এসেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর রাসূলের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘সালাত’ এর অর্থ রহমত বা দো‘আ করা নয়। বরং আল্লাহ কর্তৃক তার কাছে যারা আছেন তাদের কাছে তার নবীকে সম্মান ও সুনামের সাথে উল্লেখ করা[18]। (সম্পাদক)]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ার বিধান
নবীর উপর দরূদ পড়ার বিধান-হুকুম সম্পর্কে আলেমদের একাধিক মত রয়েছে-
এক. কাযী আয়াদ্ব রহ. ও ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন, জীবনে একবার দরূদ পড়া ওয়াজিব। চাই তা সালাতের মধ্যে হোক অথবা সালাতের বাইরে হোক। যেমন-তাওহীদের কালিমা জীবনে একবার বলা ওয়াজিব।
দুই. বেশি বেশি করে দরূদ পড়া ওয়াজিব। যত বেশি পড়তে পারে ততই সাওয়াব হবে। তাতে সংখ্যা নির্ধারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।
তিন. যখন আল্লাহর রাসূলের নাম উল্লেখ করা হয়, তখন তার উপর দরূদ পড়া ওয়াজিব।
চার. শুধু মাত্র সালাতের শেষ বৈঠকে দরূদ পড়া ওয়াজিব।
পাঁচ. দরূদ পড়া মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। এ বিষয়ে উল্লিখিত মতামত ছাড়াও আরও বিভিন্ন মতামত রয়েছে। এ সংক্ষিপ্ত বইতে সবগুলো একত্র করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। 
সকল নবীদের উপর দরূদ পাঠ করা
দরূদ শুধু নবীদের জন্য খাস। নবী ছাড়া আর কারো জন্য দরূদ পড়ার কোনো বিধান নেই। সুতরাং শুধু নবীদের জন্যই দরূদ পাঠ করা উচিত। নবী ছাড়া অন্য মুসলিমদের জন্য দো‘আ ইস্তেগফার করাই ইসলামী শরীয়তের বিধান।
عَنْ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِى اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ قَالَ:لاَ تُصَلُّوْا صَلاَةً عَلَى أَحَدٍ إِلاَّ عَلَى النَّبِىِّ وَلَكِنْ يُدْعَى لِلْمسْلِمِيْنَ وَالمُسْلِمَاتِ بِالاسْتِغْفَارِ. (صحيح ، رواه إسماعيل القاضى فى فضل الصَّلاةِ عَلى النبى فضل الصلاة على النبي).
ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবী ব্যতীত অন্য কারও জন্য দরূদ পাঠ করো না। তবে মুসলিম নর-নারীর জন্য ইস্তেগফারের মাধ্যমে দো‘আ করা যেতে পারে।[19]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পড়ার লাভ ও ফযীলত
এক- একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তা‘আলা দশবার দরূদ পাঠ করেন, দশটি গুণাহ্ ক্ষমা করেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। প্রমাণ-
عَنْ أَنَسٍ رَضِى اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم: مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيْئَاتٍ وَرُفِعَتْ لَهُ عَشَرُ دَرَجَاتٍ .(صحيح ، رواه النسائى ، صحيح سنن النسائى للألبانى الجزء الأول(
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন, তার দশটি গুণাহ্ ক্ষমা করবেন, আর তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।[20]
দুই- বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নৈকট্য লাভের কারণ:
عَنْ ابنِ مَسْعُودٍ رَضِى اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم: أَوْلَى النَّاسِ بِى يَوْمَ القِيَامَةِ أَكْثَرهُمْ عَلَىَّ صَلاَةً . (صحيح ، رواه الترمذى ، مشكاة المصابيح تحقيق الألبانى الجزء الأول(
  ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী আমার নিকটতম হবে সেই ব্যক্তি, যে আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়ে।[21]
তিন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা এবং তাঁর জন্য জান্নাতে উত্তম মর্যাদা প্রার্থনা করা কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশে ধন্য হওয়ার বড় কারণ।
 عَنْ عَبْدِاللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِى اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : مَنْ صَلَّى عَلَىَّ أَوْسَأَلَ لِيَ الْوَسِيْلَةَ حَقَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ. (صحيح، رواه إسماعيل القاضِي في فضل الصلاةِ عَلى النبى صلي الله عليه وسلم، فضل الصلاة على النبى للألبانى  . (
আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়বে অথবা আমার জন্য উসীলা (জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা)-র দো‘আ করবে তার জন্য আমি কিয়ামতের দিন অবশ্যই সুপারিশ করব।[22]
চার- দরূদ শরীফ গুনাহ ক্ষমা হওয়া এবং সকল দুঃখ-কষ্ট ও বিষন্নতা থেকে মুক্তি অর্জনের উপায়:
عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ رَضِى اللهُ عَنْهُ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ! إِنِّى أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِي ؟ قَالَ: مَا شِئتَ .قُلْتُ: الرُّبْعَ .قَالَ: مَاشِئْتَ ، فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ. فَالثُّلُثَيْنِ. قَالَ:مَاشِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌلَكَ. قُلْتُ:أَجْعَلُ لَكَ صَلاَتِي كُلَّهَا. قَالَ: إِذَاً تُكْفَى هَمُّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ . (حسن ، رواه الترمذي ، صحيح سنن الترمذى للألبانى الجزء الثانى (
“উবাই ইবনু কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করি। আমি কত সময় দরূদ পড়ব? তিনি বললেন: যত তোমার মন চায়। আমি বললাম, চতুর্থাংশ? তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, আমি আপনার জন্য পুরো সময়েই দরূদ পড়ব। তিনি বললেন: তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং তোমার পাপ ক্ষমা হবে।[23]
পাঁচ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহ তা‘আলা দরূদ পাঠ করেন আর তাঁকে সালামদাতার উপর শান্তি বর্ষণ করেন।
عَنْ عَبْدِالرَّحْمَنِ بْنِ عَوفٍ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: خَرَجَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم حَتّي دَخَلَ نَخْلاً فَسَجَدَ فَأَطَالَ السُّجُوْدَ حَتَّى خَشِيْتُ أَنْ يَكُوْنَ اللهُ قَدْ تَوَفَّاهُ ، قَالَ: فَجِئْتُ أَنْظُرُ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ : مَالَكَ؟ فَذَكَرْتُ لَهُ ذَلِكَ. قَالَ: فَقَالَ: إِنَّ جِبْرِيْلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ قَالَ لِى: أَلاَ أُبَشِّرُكَ أَنَّ اللهَ عَزَّوَجَلَّ يَقُوْلُ لَكَ مَنْ صَلَّى عَلَيْكَ صَلاَةً صَلَّيْتُ عَلَيْهِ وَمَنْ سَلَّمَ عَلَيْكَ سَلَّمْتُ عَلَيْه. (صحيح ، رواه أحمد ، فضل الصلاة على النبى للألبانى (
“আব্দুর রহমান ইবন ‘আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে এক খেজুর বাগানে প্রবেশ করলেন। অতঃপর দীর্ঘক্ষণ সেজদা করলেন। এমন কি আমাদের ভয় হল তাঁর কোনো মৃত্যু হয়ে গেল নাকি। আমি তাঁকে দেখতে আসলাম তখন তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন: তোমার কি হল? আমি তাঁকে আমাদের ভয়ের কথা ব্যক্ত করলাম। তারপর তিনি বললেন: জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে বললেন: আমি কি আপনাকে এই সু-সংবাদ দেব না যে, আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: “যে ব্যক্তি আপনার উপর দরূপ পাঠ করবে, আমি তার উপর দরূদ পাঠ করব। আর যে ব্যক্তি আপনাকে সালাম করবে আমি তার উপর শান্তি নাযিল করব”।[24]
ছয়- সকাল-বিকাল দশবার করে দরূদ পড়া, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশ অর্জনের বড় কারণ।
عَنْ أَبِى الدَّرْداءِ رضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : مَنْ صَلَّي عَلَيَّ حِيْنَ يُصْبِحُ عَشْرًا وَحِيْنَ يُمْسِي عَشْرًا أَدْرَكَتْهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ . (حسن ، رواه الطبراني ، صحيح الجامع الصغير للألبانى (
“আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর সকালে দশ বার দরূদ পড়বে এবং সন্ধ্যায় দশবার দরূদ পড়বে, সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে ধন্য হবে।[25]
নয়- দরূদ পাঠ করা দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ।
দো‘আ করা আগে ও পরে দরূদ পাঠ করা দ্বারা দো‘আ কবুল হয়। আর যদি দরূদ পাঠ করা না হয়, তাহলে দো‘আ কবুল হয় না।
 عَنْ عَبْدِاللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ أُصَلّي وَالنَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم وَأَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِي اللهُ عَنْهُمَا مَعَهُ ، فَلَمَّا جَلَسْتُ بَدَأْتُ بِالثَّنَاءِ عَلَي اللهِ ثُمَّ الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِىِّ صلي الله عليه وسلم ثُمَّ دَعَوْتُ لِنَفْسِي فَقَالَ النَّبِىُّ صلي الله عليه وسلم : سَلْ تُعْطَهْ ، سَلْ تُعْطَهْ . (حسن ، رواه الترمذي ، صحيح سنن الترمذى للألبانى الجزء الأول (
“আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সাথে ছিলেন। যখন আমি বসলাম তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করলাম। অতঃপর নিজের জন্য দো‘আ করলাম। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর, তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে।[26]
নয়- দরূদ পাঠকারীকে আল্লাহ তা‘আলা দশবার স্মরণ করেন।
যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করেন।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم قَال :مَنْ صَلَّي عَلَيَّ وَاحِدَةً صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ عَشْرًا . (رواه مسلم ، كتاب الصلاة على النبى صلي الله عليه وسلم(
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দশবার দরূদ পাঠ করেন।[27]
 দশ- একবার দরূদ পাঠকারীর উপর আল্লাহ তা‘আলা দশবার দরূদ পাঠ করেন। আর একবার সালামকারীর উপর দশটি শান্তি বর্ষণ করেন। প্রমাণ:
عَنْ أَبِى طَلْحَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ أنَّه قال قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم ,جَاء ذَاتَ يَوْمٍ وَالْبُشْرَى فِي وَجْهِهِ فَقُلْنَا إِنَّا لَنَرَى البُشْرَى فِى وَجْهِكَ فَقَالَ : إِنَّهُ أَتَانِى الْمَلَكُ جِبْرِيْلُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ رَبَّكَ يَقُوْلُ أَمَا يُرَضِيْكَ صلي الله عليه وسلم أَنَّهُ لاَيُصَلِّي عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا, وَلاَ يُسَلِّمْ عَلَيْكَ أَحَدٌ إِلاَّ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ عَشْرًا . (حسن ، رواه النسائي ، صحيح سنن النسائى للألبانى الجزء الأول (
“আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন। তখন তাঁর চেহারা আনন্দে উজ্জ্বল ছিল। আমরা বললাম, আমরা আপনার চেহারাতে আনন্দের নিদর্শন দেখছি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে এ কথার সুসংবাদ দিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন, যে ব্যক্তি আপনার উপর দরূদ পড়বে আমি তার উপর দশবার দরূদ পাঠ করব। আর যে ব্যক্তি আপনাকে একবার সালাম করবে আমি তার উপর দশটি শান্তি বর্ষণ করব।[28]
এগার- একবার দরূদ পাঠ করলে আমল নামায় দশটি পূণ্য লেখা হয়।
 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : مَنْ صَلَّي عَلَيَّ مَرَّةً وَاحِدَةً كَتَبَ اللهُ لَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ . (رَوَاهُ إِسْمَاعِيْلُ الْقَاضِيُّ فِي فَضْلِ الصَّلاَةِ عَلَي النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم(
 “আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশটি ছাওয়াব লিখে দেন।”[29]
বারো- যতক্ষণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা হয়, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকেন।
عَنْ عَامِرِ بْنِ رَبِيْعَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَال: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم يَقُوْلُ: مَا مِنْ عَبْدٍ يُصَلِّي عَلَيَّ إِلاَّ صَلَّتْ عَلَيْهِ الْمَلاَئِكَةُ مَا صَلَّي عَلَيَّ فَلْيُقِلَّ أَوْ لَيُكْثِرْ. )رَوَاهُ إِسْمَاعِيْل الْقَاضِي فِى فَضْلِ الصَّلاَةِ عَلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم(
“আমের ইবনু রাবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর দরূদ পাঠ করে, তখন সে যতক্ষণ পড়তে থাকবে ততক্ষণ ফিরিশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকে, অতএব কম বেশ পড়া তার ইচ্ছাধীন ব্যাপার।[30]
আব্দুল্লাহ মাসউদ হতে একটি মারফু হাদিসে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“إن أولى الناس بي يوم القيامة أكثرهم علي صلاة”. وحسنه الترمذي وصححه ابن حبان
“কিয়ামতের দিন সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি সে হবে যে আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পড়বে। তিরমিযী হাদিসটি হাসান বলেছেন এবং ইবনে হিব্বান সহীহ বলেছেন”।[31]
তেরো : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম দাতার সালামের উত্তর দান করেন।
عَنْ أِبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلاَّ رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوْحِي حَتَّي أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ . (حسن ، رواه أبوداود ، فضل الصلاة على النبى للألبانى)
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি আমাকে সালাম করে তখন আল্লাহ তা‘আলা আমার রূহ ফিরিয়ে দেন এবং আমি তার সালামের উত্তর দেই।”[32]
বিঃ দ্রঃ- বিভিন্ন হাদীসে দরূদ পাঠের প্রতিদান ভিন্ন ধরণের বর্ণিত আছে। তা বাস্তবে পাঠকারীর ইখলাস, ঈমান ও পরহেজগারী এবং নিয়তের উপর নির্ভরশীল। যার এখলাস যত বেশি হবে, সে সাওয়াব ও তত বেশি পাবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ শরীফ পাঠ করার গুরুত্ব
এক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনে দরূদ পড়া:
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে যে ব্যক্তি দরূদ পড়ে না তার জন্য তিনি বদ-দো‘আ করেছেন। প্রমাণ:
  عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ: رَسُولَ اللهِ  صلي الله عليه وسلم: رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذَكََرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ ثُمَّ انْسَلَخَ قَبْلَ أَنْ يُغْفَرَ لَهُ ، وَرَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ أَدْرَكَ عِنْدَهُ أَبْوَاهُ الْكِبَرَ فَلَمْ يُدْخِلاَهُ الْجَنَّةَ . (صحيح ، رواه الترمذي ، صحيح سنن الترمذى للألبانى الجزء الثالث. (
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। সে ব্যক্তি লাঞ্ছিত হোক যার কাছে রমযান মাস আসল কিন্তু সে নিজের পাপ ক্ষমা করাতে পারল না। আর সে ব্যক্তিও লাঞ্চিত হোক যে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল, কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না।[33]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর দরূদ না পড়লে তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ-দোআ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে যে ব্যক্তি দরূদ পড়ে না তার জন্য জিবরীল আলাইহিস সালাম বদ-দো‘আ করেছেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলেছেন।
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ: رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم: أُحْضُرُوْا الْمِنْبَرَ، فَحَضَرْنَا فَلَمَّا ارْتَقَى الدَّرَجَةَ قَالَ: آمِيْنَ ، ثُمَّ ارْتَقَي الدَّرجَةَ الثَّانِيَةَ فَقَالَ: آمِيْنَ ، ثُمَّ ارْتَقَي الدَّرَجَةَ الثَّالِثَةَ فَقَالَ :آمِيْنَ ، فَلَمَّا فَرَغَ نَزَلَ عَنْ الْمِنْبَرِ قَالَ: فَقُلْنَا لَهُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صلي الله عليه وسلم لَقَدْ سَمِعْنَا مِنْكَ الْيَوْمَ شَيْئُا مَا كُنَّا نَسْمَعُهُ. قَالَ: إِنَّ جِبْرِيْلَ عَرَضَ لِي فَقَالَ: بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ ، فَقُلْتُ: آمِيْنَ ، فَلَمَّا رَقِيْتُ الثَّالِثَةَ قَالَ: بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ الْكِبَرَأَوْ أَحَدَهُمَا فَلَمْ يُدَخِلاَهَ الْجَنَّةَ. فَقُلْتُ: آمِيْنَ. (صحيح ، رواه الحاكم ، فضل الصلاة على النبى للألبانى)
 “কা‘ব ইবনু উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম স্তরে চড়লেন তখন বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন, তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা আপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনও শুনিনি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বলল, যে ব্যক্তি রমযান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হল না সে বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হল কিন্তু সে আপনার উপর দরূদ পড়ল না, সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম, তখন তিনি বললেন, যে পিতা-মাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন।[34]
দুই. যে ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ে না সে প্রকৃত কৃপণ:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর যে দরূদ পড়ে না তাকে তিনি কৃপণ বলে আখ্যায়িত করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর সাথে সাথে তার উপর দরূদ পড়তে হবে। প্রমাণ:
عنْ عَلِيِّ رَضِي اللهُ عَنْهُ  قَالَ : قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : الْبَخِيْلُ الَّذِي مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ. ( صحيح ، رواه الترمذي ، صحيح سنن الترمذى الجزء الثالث)
“আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি প্রকৃত কৃপণ, যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না।[35]
عَنْ أَبِي ذر رَضِي اللهُ عَنْهُ  أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم قَالَ : إِنَّ أَبْخَلَ النَّاسِ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ . رواه أسماعيل القاضي في فضل الصلاة على النبي صلي الله عليه وسلم ، فضل الصلاة على النبى للألبانى)
“আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সেই ব্যক্তি বড় কৃপণ, যার কাছে আমার নাম নেওয়া হল, কিন্তু সে আমার উপর দরূদ পড়ল না।[36]
عن أبي ذر – رضي الله عنه – قال: «خرجت ذات يوم فأَتَيتْتُ رسولَ الله – صلى الله عليه وآله وسلم – قال: «ألا أخبركم بأبخل الناس؟» قالوا: «بلى يا رسول الله».قال: «مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلّ عَلَيَّ فَذّلِكَ أبخَلُ النَّاسِ» (صحيح رواه ابن أبي عاصم في كتاب الصلاة).
“আবু যর রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ঘর থেকে বের হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলে, তিনি আমাকে বলেন, আমি কি তোমাদের সত্যিকার কৃপণ ব্যক্তি কে সে সম্পর্কে বলে দেব? সাহাবীরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, সেই সত্যিকার কৃপণ যার সামনে আমার নাম আলোচনা করা হল, অথচ সে আমার উপর দরূদ পাঠ করল না।
তিন. দরূদ না পড়া অনুতাপের কারণ হয়:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ না করা কিয়ামতের দিন অনুতাপের কারণ হবে। প্রমাণ:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : مَا قَعَدَ قَوْمٌ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُرُوْا فِيْهِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَيُصلُّوا عَلَى النَّبيِّ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَإِنْ دَخَلُوْا الْجَنَّةَ للثَّوَابِ . ( صحيح ، رواه أحمد وابن حبان والحاكم والخطيب، سلسلة الأحاديث الصحيحة للألبانى الجزء الأول(
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মজলিসে লোকেরা আল্লাহর যিকির করে না এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়ে না, সেই মজলিস কিয়ামতের দিন তাদের জন্য অনুতাপের কারণ হবে। যদিও নেক আমলের কারণে জান্নাতে চলে যায়।[37]
যখন কোথাও মজলিস বা অনুষ্ঠান হবে, তখন তাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া ও আল্লাহর যিকির করা খুবই জরুরী। অন্যথায় তা আমাদের জন্য অনুতাপ ও পরিতাপের কারণ হবে।
চার. দরূদ পাঠ করা জান্নাতের পথকে সুগম করে:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ না করা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হবে। প্রমাণ:
عَنْ ابْنِ عَبّاسٍ رَضِى الله عَنْهُ قَالَ : قَالَ: رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : مَنْ نَسِيَ الصَّلاةَ عَلَيَّ خَطِىءَ طَرِيْقَ الْجَنَّةِ . )صحيح ، رواه ابن ماجه ، صحيح سنن ابن ماجة الجزء الأول.(
“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়া ভুলে যাবে সে জান্নাতের রাস্তা ভুলে যাবে।[38]
পাঁচ. দরূদ দো‘আ কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত:
যে দো‘আর পূর্বে দরূদ পড়া হয় না সেই দো‘আ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। দো‘আ করার পূর্বে অবশ্যই দুরূদ পড়তে হবে।
عَنْ اَنسِ رضى اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ: رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم : كُلُّ دُعَاءٍ مَحْجُوْبٌ حَتَّى يُصَلّى عَلَى النَّبِىِّ صلي الله عليه وسلم. (حسن ، رواه الطبرانى ، سلسلة الأحاديث الصحيحة للألبانى الجزء الخامس(
“আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যতক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পড়া হবে না ততক্ষণ দো‘আ কবুল করা হয় না।[39]
দরূদ শরীফের মাসনূন শব্দসমূহ
আমাদের দেশে নবী সা. এর উপর দরূদ পড়ার বিভিন্ন শব্দ পাওয়া যার অধিকাংশই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বা স্বীকৃত কোনো দরূদ নয়। এগুলো সবই মনগড়া, বানানো ও জাল হাদিসের বৃত্তিতে আমাদের কাছে পৌছেছে। সুতরাং, এ সব মনগড়া, বানানো ও জাল দরূদ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত দরূদের অনুসরণ করতে হবে। নিম্নে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত দরূদের শব্দগুলো দেওয়া হল-
(১)
عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِي رَضِي اللهُ عَنْهُ أَنَّهُمْ قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ الله صلي الله عليه وسلم كَيْفَ نُصَلّي عَلَيْكَ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلي الله عليه وسلم :قُوْلُوا: اللَّهُم صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وذُرِّيَتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مَحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذرِّيَتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلَ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ. (صحيح ، رواه البخاري، كتاب الأنبياء ، باب قول الله تعالى واتخذ الله ابراهيم خليلا( .
“আবু হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার উপর দরূদ পড়ব কিভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা বল ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা বারাকতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে বরকত অবতীর্ণ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং সুপ্রশংসিত।[40]
(২)
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ رَضِي اللهُ عَيْهُ فَقَالَ: أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً سَمِعْتُها مِنْ النّبى صلي الله عليه وسلم ؟ فَقُلْتُ بَلَى فَأَهْدِهَا لِي! فَقَالَ: سَأَلْنَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ الصَّلاَةُ عَلَيْكُمْ أَهْلِ الْبَيْتِ فَإِنَّ اللهَ قَدْ عَلَّمَنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ ؟ قُولُوْا :اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ, اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ. ( صحيح ، رواه البخاري  كتاب الأنبياء ، باب قول الله تعالى واتخذ الله ابراهيم خليلا(.
“আব্দুর রহমান ইবনু আবি লায়লা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমার সাথে কা‘ব ইবনু উজরার সাক্ষাৎ হল, তিনি বললেন: আমি কি সেই হাদিয়াটুকু তোমার কাছে পৌঁছাব না যা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি? আমি বললাম, অবশ্যই আপনি আমাকে সেই হাদিয়া দেন। তারপর বললেন: আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি এবং আহলে বাইতের উপর কিভাবে সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা বলে দিয়েছেন। তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। ‘আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা কারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর, নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[41]
(৩)
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرٍو رَضِي اللهُ عَنْهُ أَتَي رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم رَجُلٌ حَتّى جَلَسَ بَيْنَ يَدَيْهِ, فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم أَمَّا السَّلاَمُ عَلَيْكَ فَقَدْ عَرَفَنَاهُ, وَأَمَّا الصَّلاَةُ فَأَخْبِرْنَا بِهَا كَيْفَ نُصَلِّى عَلَيْكَ؟ فَصَمَتَ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم حَتَّى وَدَدْنَا أَنَّ الرَّجُلَ الَّذِى سَأَلَهُ لَمْ يَسْأَلْهُ. ثُمَّ قَالَ: إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَي فَقُوْلُوا: اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَبىّ الأُمِيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ. (حسن ، رواه إسماعيل القاضي في فضل الصلاة علي النبي صلي الله عليه وسلم ، فضل الصلاة على النبى للألبانى.(
“উকবা ইবনু আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এসে বসল এবং বলল: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা আমরা জানি। তবে আপনার উপর কিভাবে সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তা আমাদের বলে দিন। তখন তিনি চুপ থাকলেন এমনকি আমরা ভাবলাম যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না করত তাহলে অনেক ভাল হত। তারপর তিনি বললেন: তোমরা আমার উপর সালাত পাঠ করার জন্য বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন্নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিরক্ষর নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[42]
(৪)
عَنْ أَبِيِ مَسْعُوْدٍ الأَنْصارِيِّ رَضِي اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: أَتَانَا رَسُولُ للهِ صلي الله عليه وسلم فِي مَجْلِسِ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ فَقَالَ لَهُ بَشِيْرُ بْنُ سَعْدٍ: أَمَرَنَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ نُصَلِّيَ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ؟ فَسَكَتَ رَسُولُ اللهِ صلي الله عليه وسلم  حَتَّى تَمَنَّيْنَا أَنَّهُ لَمْ يَسْأَلْهُ ثُمَّ قَالَ: قُوْلُوْا : الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آل إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ فَي الْعَالَمِيْنَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَالسَّلاَمُ كَمَا عَلَمتمْ. ] صحيح ، رواه مسلم ، كتاب الصلاة ، باب الصلاة على النبى بعد التشهد .[
“আবু মাসউদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা সা‘দ ইবনু উবাদার মজলিসে আমাদের কাছে আসলেন। তখন বশীর ইবনু সা‘দ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা আপনার উপর দরূদ পড়ি। আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তখন তিনি চুপ থাকলেন এমনকি আমরা ভাবলাম যদি প্রশ্নকারী প্রশ্ন না করত তাহলে অনেক ভাল হত। তারপর তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ফিল আলামীনা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে পৃথিবীতে দিয়েছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[43]
(৫)
عَنْ أَبِي سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم هذَا التَّسْلِيْمُ فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ؟ قَالَ: قُوْلُوْا : الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَي آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَي آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ . (رواه البخاري ، كتاب التفسير ، باب قول الله تعالى إن الله وملائكته يصلون على النبى.(
“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাম তো আমাদের জানা আছে। তবে আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তখন তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা, কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার বান্দা এবং রাসূল মুহাম্মদ এর উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম এর উপর।[44]
(৬)
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: لَقِيَنِي كَعْبُ بْنُ عُجْرَةَ رَضِي اللهُ عَيْهُ فَقَالَ: أَلاَ أُهْدِي لَكَ هَدِيَّةً ؟ خرج علينا رسول الله فقلنا قد عرفنا كيف نسلم عليك فكيف نصلي عليك ؟ قال : قُولُوْا:اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ َعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ, اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ. (صحيح ، رواه مسلم ، كتاب الصلاة ، باب الصلاة على النبى بعد التشهد .(
“আব্দুর রহমান ইবনু আবি লায়লা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার সাথে কা‘ব ইবনু উজরার সাক্ষাত হল, তিনি বললেন: আমি কি তোমাকে একটি হাদিয়া দেব না? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনাকে কিভাবে সালাম জানাব তা আমরা জানি। তবে আপনার উপর কিভাবে সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। ‘আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[45]
(৭)
عَنْ أَبِي سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِى اللهُ عَنْهُ قَالَ : قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم السَّلاَمُ عَلَيْكَ قَدْ عَرَفْنَاهُ فَكَيْفَ الصَّلاَةُ عَلَيْكَ؟ قَالَ: قُوْلُوا : الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلِى إِبْرَاهِيْمَ . (صحيح ، رواه النسائي ، صحيح سنن النسائى الجزء الأول.(
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাম তো আমাদের জানা আছে। তবে আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তখন তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা, কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ এর উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম এর উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম এর উপর।[46]
(৮)
عَنْ أَبِي سَعِيْدٍ الخُدْرِيِّ قَالَ: قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم هَذَا السَّلاَمُ عَلَيْكَ قَدْ عَرَفْنَاهُ فَكَيْف الصَّلاَةُ ؟ قَالَ: قُوْلُوْا: الَّلَهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ. ( صحيح ، رواه ابن ماجة ، صحيح سنن ابن ماجة الجزءالأول .(
“আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাম তো আমাদের জানা আছে। তবে আমরা কিভাবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ পাঠ করব? তখন তিনি বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন আব্দিকা ওয়া রাসুলিকা, কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা, ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা’।
হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মদ এর উপর এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীম এর উপর। আর মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম এর উপর।[47]
(৯)
عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِي اللهُ عَنْهُ أَنَّهُمْ قَالُوْا: يَا رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم أُمِرْنَا بِالصَّلاَةِ عَلَيْكَ فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ ؟ فقال : قُوْلُوا: الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ فِي الْعَالَمِيْنَ,إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ. (صحيح ، رواه ابن ماجة ، صحيح سنن ابن ماجة  الجزء الأول(
“আবু হুমাইদ সা‘য়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদেরকে আপনার উপর দরূদ পড়ার আদশ দেওয়া হয়েছে। আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আযওয়াজিহী ওয়া যুররিয়্যাতিহী কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ফিল আলামীনা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে দরূদ পাঠ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের উপর। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পত্নীগণ ও সন্তানদের প্রতি এমনভাবে বরকত অবতীর্ণ কর যেমনভাবে করেছ ইব্রাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[48]
(১০)
عَنْ زَيْدِ بْنِ خَارِجَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَالَ: أَنَا سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَقَالَ:  صَلُّوْا عَلَيَّ وَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَآءِ وَقُوْلُوْا: الَّلهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ . (صحيح ، رواه النسائي ، صحيح سنن النسائى الجزء الأول).
“যায়েদ ইবনু খারিজাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন: তোমরা আমার উপর দরূদ পড় এবং অনেক বেশী চেষ্টা করে দো‘আ’ কর। এভাবে বল: ‘আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন’।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর।[49]
(১১)
عَنْ مُوْسَى بْنِ طَلْحَةَ رَضِي اللهُ عَنْهُ قَال: أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ خَارِجَةَ قَالَ:قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلي الله عليه وسلم قَدْ عَلِمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ ؟ قَالَ صَلُّوْا عَلَيَّ وَقُوْلُوْا:الَّلهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَآلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ. ( صحيح ، رواه أحمد ، فضل الصلاة على النبى للألبانى(
“মুসা ইবনু ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যায়েদ ইবনু খারিজাহ আমাকে বললেন যে, তিনি বলেছেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে কিভাবে সালাম করব তা আমারা জানি। তবে আপনার উপর সালাত তথা দরূদ কিভাবে পাঠ করব? তখন তিনি বললেন: তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করতঃ বল: ‘আল্লাহুম্মা বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিন ওয়া ‘আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা ‘আলা ইবরাহীমা ওয়া আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ’।
অর্থাৎ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর এমনভাবে বরকত দাও যেমনভাবে দিয়েছ ইব্রাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয় তুমি মহান এবং প্রশংসিত।[50]রেফারেন্স সমুহ, [1] তিরমিযী: ২৪৫৭।
[2] সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৪৪
[3] সূরা ঝুমার, আয়াত: ৩০
[4] আলে ইমরান: ১৪৪
[5] সুরা আম্বিয়া: ৩৪
[6] বুখারি, হাদিস: ৩৪৬৭
[7] সূরা বাকারা, আয়াত: ১৫৪
[8] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬
[9] সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৭
[10] আহমদ, হাদিস: ৩৬৬৬, নাসায়ী, হাদিস: ৩/৩৪ দারিমী ইত্যাদি
[11] বুখারী: ২৫৫০, মুসলিম: ১৭১৮
[12] ইবনু মাজাহ: ৪১
[13] বুখারি: ৪১১/৩, মুসলিম: ১২৯/৪
[14] সূরা আহযাব, আয়াত: ৫৬
[15] তবে ইবনুল কাইয়্যেম তার জালাউল আফহাম গ্রন্থে এ মতটিকে শক্তভাবে খণ্ডন করেন।
[16]  বুখারী, হাদিস: ৬৫৯
[17] আবুদাউদ, হাদিস: ৬৭৬ ইবনে মাজাহ: ১০০৫। (অন্য শব্দে হাসান)
[18] বিস্তারিত দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেমের লেখা গ্রন্থ জালাউল আফহাম। [সম্পাদক]
[19] ইসমাঈল আল্ কাযী, হাদিস: ৭৫, (সহীহ)
[20] নাসায়ী, হাদিস: ১২৩০। (সহীহ)
[21] তিরমিযী, হাদিস: ৯২৩.। সহীহ
[22] ইসমাঈল আল-কাযী, হাদিস: ৫০ (সহীহ)
[23] তিরমিযী, হাদিস: ১৯৯৯।(হাদিসটি হাসান)
[24] আহমদ, হাদিস: ৭ (সহীহ)
[25] ত্বাবরানী, হাদিস: ৬২৩৩ (হাদিসটি হাসান)
[26] তিরমিযী, হাদিস: ৪৮৬ (হাসান)
[27] মুসলিম, হাদিস: ৪০৮
[28] নাসায়ী, হাদিস: ১২১৬ (হাসান)
[29] ইসমাঈল আলকাযী। (হাদিসটি সহীহ)
[30] ইবনু মাজাহ।
[31] ইবনু হিব্বান, হাদিস: ৯১১, তিরমিযি: ৪৮৪
[32] আবুদাউদ, হাদিস: ৬ (হাসান)
[33] তিরমিযী: হাদিস: ২৮১০ (সহীহ)
[34] হাকিম: হাদিস-১৯। (সহীহ)
[35] তিরমিযী, ২৮১১। (সহীহ)
[36] ঈসমাঈল আল- কাযী: ৩৭। (সহীহ)
[37] আহমদ, ইবনু হিব্বান, হাকিম, খতীব ৭৬। (হাদিসটি সহীহ)
[38] ইবনু মাজাহ: ৭৪০। (হাদিসটি সহীহ)
[39] ত্বাবরানী: ২০৩৫। (হাসান)
[40] বুখারী, হাদিস: ৩৩৬৯
[41] বুখারী, হাদিস: ৩৩৭০।
[42] ইসমাঈল কাযী, হাদিস: ৫৯ (হাসান)
[43] মুসলিম, হাদিস: ৪০৫।
[44] বুখারী, হাদিস: ৪৭৯৮
[45] মুসলিম, হাদিস: ৪০৬ ।
[46] নাসায়ী, হাদিস: ১২২৬।(সহীহ)
[47] ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৭৩৬। (সহীহ)
[48] ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৭৩৮ । (সহীহ)
[49] নাসায়ী, হাদিস: ১২২৫ (সহীহ)
[50] মুসনাদু আহমদ, হাদিস: ৬৮। (সহীহ)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ