Thursday, May 10, 2018

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক?

হাদিস ছাড়া শুধু কুরআন অনুসরণ কতটুকু যৌক্তিক?
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি হল পাঁচটি যথাঃ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্যিকার কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই এবং সাক্ষ্য প্রদান করা যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রাসূল। সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, রমযান মাসে সাওম পালন করা এবং সামর্থ্য বান ব্যক্তির বাইতুল্লায় হজ্জ সম্পদান করা। [সহিহ বুখারি, হাদীস নম্বর ৮; সহিহ মুসলিম, হাদীস নম্বর ১৬]
ইসলামের এই পাঁচটি হল ইবাদতের মুল ভিত্তি, যার উপর ইসলাম দাড়িয়ে আছে। এর কোন একটি আমল সঠিকভাবে পালন করতে হলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানা ছাড়া আমল করা কখনও সম্ভব নয়।
ক। সালাতঃ সালাত মুসলমানের উপর সবচেয়ে বড় ফরয ইবাদত। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

وَقَرۡنَ فِى بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَـٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰۖ وَأَقِمۡنَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتِينَ ٱلزَّڪَوٰةَ وَأَطِعۡنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۚ ۥۤ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنڪُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرً۬ا (٣٣)
অর্থঃ নিজেদের গৃহ মধ্যে অবস্থান করো। এবং পূর্বের জাহেলী যুগের মতো সাজসজ্জা দেখিয়ে বেড়িও না৷ নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো৷ আল্লাহ তো চান, তোমাদের নবী পরিবার থেকে ময়লা দূর করতে এবং তোমাদের পুরোপুরি পাক-পবিত্র করে দিতে৷ [সূরা আল আহযাব, সূরা নম্বর ৩৩, আয়াত নম্বর ৩৩]
স্বজ্ঞানে সালাত ত্যাগ কারি ফাসিক ইহাতে কারো দ্বিমত নেই। তবে অনেক বিদ্বান সালাত ত্যাগ কারি কে কাফির বলেছেন। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হাদিস বা সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ ছাড়া আদায় করা সম্ভব নয়। কুরআনে শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত (মুজমাল) ভাবে সালাত কায়েমের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপর পক্ষে হাদিস বিস্তারিত (মুফাস্সাল) ভাবে বর্ণনা দিয়েছে।
হাদিস অস্বীকার করলে নামজ সম্পর্কে নিচের প্রশ্নেন কোন উত্তর আপনার কাছে নেই। যেমনঃ সালাত কার উপর ফরজ? কোন কোন সময় আদায় করতে হবে? ফরয সালাতের সময় কখন? যোহরের সময় কখন, আসর, মাগরিব ও এশার সময় কখন? দিনে-রাতে কত বার, কত রাকাত, কি পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে? কি কারনে সালাত বাতিল হয়। সুন্নাত সালাত কি নিয়মে? রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ কি নিয়মে এবং কখন কোন কিরাত ও দু’আ পাঠ করতে হবে ইত্যাদি কোন কিছুই কুরআনে উল্লেখ হয়নি।
সালাতের জন্যে কি পদ্ধতিতে কি শব্দ উচ্চারণ করে আহ্বান করতে হবে? মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার জানাযা সালাত কি পড়তে হবে? জুমার সালাত কত রাকাত? খুদবা কে কখন দিবে? দু’ঈদের সালাত বলতে কি কিছু আছে? তাতে অতিরিক্ত তাকদির কখন দিতে হয়? কত রাকাত? এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীছ থেকেই জানতে হবে। এমন কি সালাত আদায়ের ব্যাপারে তাকে সরাসরি অনুসরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলেছেন, “তোমরা ঠিক সেই নিয়ম পদ্ধতিতে সালাত সম্পাদন কর, যেভাবে আমাকে সম্পাদন করতে দেখেছ।” (বুখারী)। সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানি তিনি জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এর নিকট থেকে সালাত ও সালাতের সময় সম্পর্কে জ্ঞান নিয়েছেন হাতে কলমে, যার কোন কিছুই কুরআনে উল্লেখ নেই।
অতএব সুন্নাহ ব্যতীত কুরআন মেনে চলা অসম্ভব, এ জন্যই অনেক ইসলামী মনীষীগণ ইসলাম জানা ও মানার ক্ষেত্রে কুরআনের আগে সুন্নাহকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত হল সাহাবায়ে কিরামের উপদেশাবলি, ইমাম আল খতীব আল বাগদাদী স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন, একদা সাহাবী ঈমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু কিছু ব্যক্তিসহ (শিক্ষার আসরে) বসে ছিলেন। শ্রোতাদের মধ্য হতে একজন বলে ফেললেন, আপনি আমাদেরকে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু শোনাবেন না। তিনি (সাহাবী) বললেন, নিকটে আস, অতঃপর বললেন, তুমি কি মনে কর, যদি তোমাদেরকে শুধু কুরআনের উপরই ছেড়ে দেয়া হয়? তুমি কি যোহরের সালাত চার রাকা’আত, আসর চার রাকাত, মাগরিব তিন রাক’আত, প্রথম দুই রাক’আতে কিরাত পাঠ করতে হয় ইত্যাদি সব কিছু কুরআনে খুঁজে পাবে? অনুরূপভাবে কাবার তাওয়াফ সাত চক্কর এবং সাফা মারওয়ার তাওয়াফ ইত্যাদি কি কুরআনে খুঁজে পাবে? অতঃপর বললেন: হে মানব সকল! তোমরা আমাদে ([সাহাবীদের) নিকট হতে সুন্নাহর আলোকে এ সব বিস্তারিত বিধি-বিধান জেনে নাও। আল্লাহর কসম করে বলছি! তোমরা যদি সুন্নাহ মেনে না চল, তাহলে অবশ্যই ভ্রষ্ট হয়ে যাবে।”
খ। যাকাত: যাকাত ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, (وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ ) তোমরা যাকাত আদায় কর। [সূরা বাকারা, সূরা নম্বর ২, আয়াত নম্বর ৮৩]
আল্লাহ তা‘আলা এখানে শুধু যাকাত আদায় এর মূল বিধান সংক্ষিপ্ত ভাবে বর্ণনা করেছেন। এর বিস্তারিতভাবে বিবরণ এসেছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে। হাদিস অস্বীকারগন কোন ক্রমেই যাকাতের বিধানের কোন বিবরণ হাদিসের সাহায্য ছাড়া পেশ করতে পারবেনা। যেমনঃ কোন ধরণের সম্পদ যাকাত দিতে হবে? কি পরিমাণ সম্পদ হল কি পরিমা যাকাত দিতে হবে? বছরে কত বার যাকাত দিতে হবে? নিজের উত্পাদিত ফসলের যাতাত হবে কি? হলে কি ফসলের পরিমাণ যাকাত বের করতে হবে? গৃহ পালিত পশু যেমনঃ উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির যাকাত আছে কি? স্বর্ণ-রৌপ্য বা অন্য কোন অলংকারের যাকাতের বিধান কি? হিসাব না করে মোটা অংকের টাকা দান করলেই যাকাত আদায় হবে? রমাযান শেষে যাকাতুল ফিতর দিতে হবে কি না? তার পরিমান কত? যাকে দিবে? ইত্যাদি শত শত প্রশ্নের উত্তর আছে হাদিসে। উদাহরণের জন্য একটা হাদিস উল্লখ করছি যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাতের বিভিন্ন সম্পদের নিসাবের পরিমান সম্পর্কে বলেছেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنْ التَّمْرِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنْ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ مِنْ الْإِبِلِ صَدَقَةٌ صحيح البخاري
আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের কম খেজুরে জাকাত নেই। পাঁচ উকিয়া এর কম রূপাতে জাকাত নেই। পাঁচ যাউদ এর কম উটে জাকাত নেই। [বুখারী ও মুসলিম]
এই একটি হাদিসে যাকাতের নিসাব সম্পর্কে কয়েকটি ধারণা পাওয়া গেল। এভাবে কুরআনের হুকুমকে হাদিস ব্যাখ্যা করে উম্মতের আমল কে যথাযথ পালনের ব্যাবস্তা করছে।
গ। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡڪُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِڪُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ (١٨٣)
অর্থঃ হে ঈমানদাগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরয করা হয়েছিল ৷ এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী সৃষ্টি হয়ে যাবে। [সূরা বাকারা, সূরা নম্বর ২, আয়াত নম্বর ১৮৩]
আমরা জানি প্রতিটি হাদিস গ্রন্থে সিয়ামের উপর আলাদ আলাদা অধ্যায় রচনা করা হইয়াছে। সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে, আর কুরআনে শুধু সংক্ষিপ্ত বিধানাবলী বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রমাযান মাস কিভাবে শুরু হবে? সাওম অবস্থায় কি কি নিষিদ্ধ? ফরয সাওমের নিয়ম কি? নফল সাওমের নিয়ম কি? ইত্যাদি বিষয়গুলি বিস্তারিত আলোচনা কুরআনে নেই। পক্ষান্তরে সাওম সম্পর্কীয় যাবতীয় বিধি-বিধান যেমন- চাঁদ দেখেই সাওম শুরু করতে হবে আবার চাঁদ দেখেই সাওম শেষ হবে, এবং কি করলে সাওম সুন্দর হয়, কি করলে নষ্ট হয় ইত্যাদি বিষয়গুলি সবিস্তারে সুন্নায় আলোচনা করা হয়েছে।
ঘ। হজ্জ্ব পালন করা একটি ফরজ আমল্ আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلاً۬‌ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ ٱلۡعَـٰلَمِينَ (٩٧)
অর্থঃ মানুষের মধ্য থেকে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ রাখে, তারা যেন এই গৃহের হজ্জ সম্পন্ন করে, এটি তাদের ওপর আল্লাহর অধিকার ৷ আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন৷ [সুরা আল ইমরান, সূরা নম্বর ৩, আয়াত নম্বর ৯৭]
হজ্জের বিধান কুরআন মাজিদে সংক্ষিপ্ত ভাবে এসেছে, এর বিস্তারিত বর্ণনা যেমনঃ জীবনে কয়বার হজ্জ ফরয? ইহরাম কখন, কোথায় কিভাবে বাধতে হবে? কাবা ঘরের তওয়াফ কিভাবে, কয়বার করতে হবে? কিভাবে কতবার সাফা মারোওয়া সাঈ করতে হবে। আরাফাতের ময়দানে কখন ও কতক্ষন অবস্থান করবে, সেখানের কি আমল করতে হবে? মুজদালিফায় কি দিনের বেলায় না রাতের বেলায় অবস্থান করবে? মিনার আমল কি? সেখানে কত দির থাকতে হবে? হজ্জের সাথে কুরবানী ও মাথার চুল কাটার সম্পর্ক কি? ইত্যাদি ইত্যাদি শত শত প্রশ্নের একমাত্র সমাধান হাদিস আর হাদিস। কুরআন মাজিদে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়নি বরং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে সকল ক্ষেত্রের সকল সুন্নাত, ওয়াজিব ও ফরযসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজের সকল কর্মক্ষেত্রে সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন: لتأخُذُوْا عَنِّى مَنَاسِكَكُم “তোমরা আমার নিকট হতে তোমাদের হজ্জের বিধি বিধান শিখে নাও।
ইসলামের মৌলিক ইবাদাত ছাড়াও এমন অনেক ইবাদত আছে যা কুরআনের নির্দোশ কিন্তু হাদিসের সাহায্য ছাড়া জানা যায় না বা পালন করা যায় না।
যেমনঃ
চুরির শাস্তিঃ চুরির শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
وَٱلسَّارِقُ وَٱلسَّارِقَةُ فَٱقۡطَعُوٓاْ أَيۡدِيَهُمَا جَزَآءَۢ بِمَا كَسَبَا نَكَـٰلاً۬ مِّنَ ٱللَّهِ‌ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ۬ (٣٨)
অর্থঃ চোর-পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন, উভয়ের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কর্মফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ৷ আল্লাহর শক্তি সবার ওপর বিজয়ী এবং তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ৷ [সূরা আল-মায়িদাহ, সূরা নম্বর ৫, আয়াত নম্বর ৩৮]
চোরের হাত করতে হবে কুরআনে আছে। কিন্তু কি পরিমাণ সম্পদ চুরি করলে হাত কাটা যাবে। আর কি পরিমাণে হাত কাটা যাবে না, তার বিবরণ হাদীছ থেকে নিতে হবে। কেননা ১ টাকা চুরি করা আর ১ লক্ষ টাকা চুরি করার অপরাধ কিন্তু একই। উভয় ক্ষেত্রে ব্যক্তি চোর সাব্যস্ত হবে। কিন্তু শাস্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই এক সমান হবে না। তাছাড়া হাত কাটলে কি পরিমাণ কাটতে হবে? কব্জি থেকে, না কনুই থেকে, না সম্পূর্ণ হাত কাটতে হবে? না কি কুরআনে বর্ণিত দুহাত কাটতে হবে। দু’হাত নয় বরং এক হাত। আর সমগ্র উম্মত এ ব্যাপারেও একমত যে, প্রথমবার চুরি করলে ডান হাত কাটতে হবে । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “খেয়ানতকারীর হাত কাটা হবে না,” এ থেকে জানা যায়, খেয়ানত বা আত্মসাৎ ইত্যাদি চুরির পর্যায়ভুক্ত নয় । বরং চুরি বলতে এমন কাজ বুঝায় যার মাধ্যমে মানুষ একজনের ধন সম্পদ তার নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ থেকে বের করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে ।
তাই এ আয়াতে চুরি করা বা চোর শব্দটি আম বা ব্যাপক অর্থে এসেছে, অর্থাৎ চুরি করলেই তার হাত কাটতে হবে। চাই নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ চুরি করুক বা তার চেয়ে কম করুক, অনুরূপভাবে সংরক্ষিত সম্পদ হতে চুরি করুক বা অসংরক্ষিত সম্পদ হতে চুরি করুক, মোট কথা কুরআনের আয়াতে এমন আম বা ব্যাপকভাবে নির্দেশ এসেছে যাতে প্রমাণিত হয় যে, যে কোন চোর যে ভাবেই চুরি করুক না কেন সকল ক্ষেত্রে সকল চোরের হাত কাটতে হবে।
অথচ বিধানটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করেছেন। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক চতুর্থাংশ দিনার সমপরিমাণ বা ততোধিক সম্পদ চুরি করা ছাড়া কোন চোরের হাত কাটা যাবে না। ( মুসলিম, হাদিস ১৩২২, নাসায়ী, হাদিস: ৪৯৪৬)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই সাথে এরূপ নির্দেশও দিয়েছেন যে, একটি ঢালের মূল্যের চেয়ে কম পরিমাণ চুরি করলে হাত কাটা যাবে না। [আবু দাউদ, হাদীস নম্বর ১৭১০]
তাহলে এই বিধানটি কার্যকর করতে হলে অবশ্যই হাদিসের আলোকে সুদ্ধান্ত নিতে হবে। সরাসরি কুরআন থেকে নেয়া যাবে না।
বিহহের ক্ষেতেঃ
সূরা নিসার ২৩ আয়াতে মহান আল্লাহ ১৪ প্রকারের নারীদের সাথে বিবাহ হারাম বলে উল্লেখ করেছেন। এর পরের আয়াতে তিনি বলেন,
۞ وَٱلۡمُحۡصَنَـٰتُ مِنَ ٱلنِّسَآءِ إِلَّا مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَـٰنُڪُمۡ‌ۖ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ عَلَيۡكُمۡ‌ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَآءَ ذَٲلِڪُمۡ أَن تَبۡتَغُواْ بِأَمۡوَٲلِكُم مُّحۡصِنِينَ غَيۡرَ مُسَـٰفِحِينَ‌ۚ
আর (যুদ্ধের মাধ্যমে) তোমাদের অধিকারভুক্ত হয়েছে এমন সব মেয়ে ছাড়া বাকি সমস্ত সধবাই তোমাদের জন্য হারাম। এ হচ্ছে আল্লাহর আইন৷ এ আইন মেনে চলা তোমাদের জন্য অপরিহার্য গণ্য করা হয়েছে ৷ এদের ছাড়া বাদ বাকি সমস্ত মহিলাকে অর্থ–সম্পদের মাধ্যমে লাভ করা তোমাদের জন্য হালাল গণ্য করা হয়েছে৷ তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে, অবাধ যৌন লালসা তৃপ্ত করতে পারবে না৷ [সূরা নিসা, সূরা নম্বর ৪, আয়াত নম্বর ২৪]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আলুসী বলেন, “এ আয়াতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, পূর্ববর্তী আয়াতে যে সমস্ত নারীদের বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে তারা ব্যতীত অন্য সকল নারীকে পৃথক পৃথক অথবা একসাথে বিবাহ করা বৈধ”।
অতএব কুরআনুল করীমের এ হুকুমটি হল আম বা ব্যাপক যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উল্লেখিত ব্যক্তি ও নিয়ম ছাড়া অন্য সকল ব্যক্তি [নারী] ও নিয়মে বিবাহ করা বৈধ। মূলত, এ ব্যাপক হুকুমে বৈধ হলেও হাদিস দ্বারা একটি বিশেষ হুকুমকে নির্দিষ্ট করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন মহিলাকে তাঁর ফুপীসহ এবং কোন মহিলাকে তার খালা সহ একত্রে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন”। [সহীহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৫১০৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নম্বর ১৪০৮]
বিবিহিত স্ত্রীর ফুফু অথবা খালাকে বিবাহ করা কি বৈধ? বিধানটির বিবরণ কুরআনে নেই কিন্তু আছে হাদিসে। সুতরাং, এ হাদিস দ্বারা কুরআনের ব্যাপক বৈধতা হুকুমের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট হুকুমকে অবৈধ বলে খাস করা হল। এ হাদিস না হলে কুরআনের আম [ব্যাপক] হুকুমের দ্বারা কোন মহিলাকে তার ফুপীসহ এবং কোন মহিলাকে তার খালাসহ একত্রে বিবাহ করা বৈধ ছিল। কিন্তু হাদিস সে ব্যাপকতার মধ্য হতে এ খাস [নির্দিষ্ট] হুকুমটিকে অবৈধতার বিধান দিয়েছে। কারণ হাদিসও আল্লাহ তা’আলার ওহীর অন্তর্ভুক্ত। অতএব, প্রমাণিত হয় সুন্নাহ্ হল কুরআনের পরিপূরক, সুন্নাহ ছাড়া শুধু কুরআন দ্বারাই ইসলাম পূর্ণভাবে মানা সম্ভব নয়।
কসর সালাতঃ
কসর সালাত সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
وَإِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِى ٱلۡأَرۡضِ فَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَقۡصُرُواْ مِنَ ٱلصَّلَوٰةِ إِنۡ خِفۡتُمۡ أَن يَفۡتِنَكُمُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓاْ‌ۚ إِنَّ ٱلۡكَـٰفِرِينَ كَانُواْ لَكُمۡ عَدُوًّ۬ا مُّبِينً۬ا (١٠١)
অর্থঃ আর যখন তোমরা সফরে বের হও তখন নামায সংক্ষেপ করে নিলে কোন ক্ষতি নেই৷ (বিশেষ করে) যখন তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফেররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে৷ কারণ তারা প্রকাশ্য তোমাদের শত্রুতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে৷ [সুরা নিসার, সূরা নম্বর ৪, আয়াত নম্বর ১০১]
‘যাহেরী’ ও ‘খারেজী’ ফিকাহর অনুসারীরা এ বাক্যের যে অর্থ গ্রহণ করে থাকে তা হচ্ছে, কসর কেবল যুদ্ধাবস্থার জন্য আর শান্তির অবস্থায় যে সফর করা হয় তাতে কসর করা কুরআন বিরোধী। কিন্তু নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতের মাধ্যমে হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত উমর (রা) এই একই সন্দেহটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে সামনে পেশ করলে তিনি এর জবাবে বলেন, অর্থাৎ ”এই নামাযে কসর করার অনুমতিটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পুরস্কার। আল্লাহ তোমাদের এই পুরস্কার দান করেছেন। কাজেই তোমরা এ পুরস্কারটি গ্রহণ করো”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শান্তি ও ভয় উভয় অবস্থায়ই সফরের নামযে কসর করেছেন। একথা প্রায় ‘মুতাওয়াতির’ বা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্র পরম্পরায় বর্ণিত হাদীসের মধ্যমে প্রমাণিত সত্য। ইবনে আব্বাস (রা) সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন: ”নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা থেকে মক্কার দিকে বের হলেন। সে সময় একমাত্র রবুল আলামীন ছাড়া আর কারোর ভয় ছিল না। কিন্তু তিনি নামায দুই রাকআত পড়লেন”।
সফর অবস্থায় শত্রুর ভয় থাকলে সালাতকে কসর করতে বলা হয়েছে। অথচ তার বাস্তর আমল হল তিনি শান্তি ও ভয় উভয় অবস্থায়ই সফরের নামযে কসর করেছেন। তাহলে বলুন এই আয়াতের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কৃত ব্যাখ্যা হাদিসের উপরই আমল করতে হবে।
উত্তারাধীকারি আইনঃ আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
يُوصِيكُمُ ٱللَّهُ فِىٓ أَوۡلَـٰدِڪُمۡ‌ۖ لِلذَّكَرِ مِثۡلُ حَظِّ ٱلۡأُنثَيَيۡنِ‌ۚ
অর্থঃ তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ পুরুষদের অংশ দুজন মেয়ের সমান৷ [সূরা নিসা, সূরা নম্বর ৪, আয়াত নম্বর ১১]
মীরাসের ব্যাপারে এটি প্রথম ও প্রধান মৌলিক বিধান যে, পুরুষদের অংশ হবে মেয়েদের দ্বিগুণ। যেহেতু পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে শরীয়াত পুরুষদের ওপর অর্থনেতিক দায়িত্বের বোঝা বেশী করে চাপিয়ে এবং অনেকগুলো অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মেয়েদেরকে মুক্তি দিয়েছে,তাই মীরাসের ব্যাপারে মেয়েদের অংশ পুরুষদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম রাখা হবে, এটিই ছিল ইনসাফের দাবী। এ আয়াতের ব্যাপক ভাষা হতে বুঝা যায় যে, প্রতিটি পিতা-মাতা স্বীয় সন্তানদেরকে রেখে যাওয়া সম্পদের ওয়ারিশ বানাতে পারে। অনুরূপভাবে সকল প্রকার সন্তান পিতা-মাতার সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারে। মূলত, হাদিস উক্ত ব্যাপক বিষয়টিকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, অর্থাৎ শুধু পিতা হলেই সন্তানকে ওয়ারিশ বানাতে পারবে না, অনুরূপ সন্তান হলেই পিতা-মাতার ওয়ারিশ হতে পারবে না, বরং কতগুলো বাধা রয়েছে, সে সব বাধামুক্ত পিতা-পুত্ররাই শুধু ওয়ারিশ বানাতে পারবে এবং ওয়ারিশ হতে পারবে। পবিত্র কুরআনে উক্ত বাধাসমূহ আলোকপাত করা হয়নি বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদিসে উক্ত বাধাসমূহ আলোকপাত করা হয়েছে, বাধাসমূহ নিম্নরূপ:
১. রিসালাতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমরা (নবী-রাসূল) কাউকে কোন ওয়ারিশ বানাই না বরং যা রেখে যাই তা সাধারণ দান। [সহীহ বুখারি, হাদীস নম্বর ৪০৩৫]
অর্থাৎ নবী-রাসূলগণ কাউকে ওয়ারিছ বানান না এবং তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পদের কেউ ওয়ারিশ হওয়ার দাবী করতে পারে না।
২. ধর্মের ভিন্নতাঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন মুসলমান কাফির এর ওয়ারিশ হতে পারে না অনুরূপভাবে কোন কাফির মুসলমানের ওয়ারিশ হতে পারে না। [সহীহ বুখারি, হাদীস নম্বর ৬৭৬৪]
অর্থাৎ সন্তান যদি মুসলমান হয় তাহলে কাফির পিতার ওয়ারিশ হতে পারবে না, অথবা সন্তান যদি কাফির হয় তাহলে মুসলমান পিতার ওয়ারিশ হতে পারবে না ,অনুরূপভাবে পিতা-মাতাও সন্তানদের ওয়ারিশ বানাতে পারবে না।
৩. হত্যা ঘটিত কারণঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির কোন সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারবে না। [আহমদ, হাদীস নম্বর ৩৪৬, ইবনু মাজাহ্, হাদীস নম্বর ২৬৪৫]
অর্থাৎ হত্যাকারী যদি সন্তান হয় আর নিহত ব্যক্তি যদি পিতা-মাতা হয় তাহলে হত্যাকারী সন্তান স্বীয় পিতা-মাতার পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিশ হতে পারবে না।
অতএব পবিত্র কুরআনে পিতা-মাতাকে স্বীয় সন্তানদের ওয়ারিশ বানানোর যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সে বিধানটি ব্যাপক, যাহা হতে হাদিসে উল্লেখিত তিনটি বিষয় রিসালাত, ধর্মের ভিন্নতা ও হত্যা খাস, অর্থাৎ ইহা ওই আম হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এ তিনটি ক্ষেত্রে কোন পিতা-মাতার অঢেল সম্পদ থাকলেও স্বীয় সন্তানদের ওয়ারিশ বানাতে পারবে না।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যাবহারঃ
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন তা পরিধানের ও নির্দেশ দিয়েছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلۡفَوَٲحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡہَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡىَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ
অর্থঃ (হে মুহাম্মাদ) তাদেরকে বলে দাও, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে যেসব সৌন্দর্য সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো কে হারাম করেছে? আর আল্লাহর দেয়া পবিত্র জিনিসগুলো কে নিষিদ্ধ করেছে? [সূরা আরাফ, সূরা নম্বর ৭, আয়াত নম্বর ৩২]
অথচ সহিহ হাদিসে এসেছে পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যাবহার করা হারাম করা হয়েছে। এধরণেরে আরও অসংখ্য অগণিত বিষয় আছে যা কুরআনকে সামনে রেখে, তার ব্যাখ্যা হাদীছ থেকেই জেনে নিতে হবে।
নেষা জাতীয় খাবারঃ মদ পান করা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
(٨٩) يَـٰٓأَيُّہَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَـٰمُ رِجۡسٌ۬ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَـٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ (٩٠)
অর্থঃ ঈমানদারগণ ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকালাপ ৷ এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে৷ [সুরা মায়েদা, সূরা নম্বর ৫, আয়াত নম্বর ৯০]
কুরআনে মদ্যপান হারাম করা হয়েছে এতে কারো কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু হেরোইন, আফিম, গাঁজা ইয়াবা ইত্যাদি মাদকদ্রব্য কুরআনের কোন আয়াতের মাধ্যমে হারাম করবেন? এ সম্পর্কে কুরআনে কিছু্‌ই বলা হয়নি। হাদীছের মূলনীতির মাধ্যমে তা হারাম হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আর আমি প্রত্যেকটি নেশা সৃষ্টিকারী জিনিস ব্যবহার করতে নিষেধ করছি”। তিনি হাদীসে আর ও স্পষ্ট বলেছেন, “প্রত্যেকটি নেশা সৃষ্টিকারী জিনিস মদ ও এবং প্রত্যেকটি নেশা সৃষ্টিকারী বস্তু হারাম। তাঁর এ নির্দেশের মাধ্যমে নেশা সৃষ্টিকারী প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর ব্যাপ্ত করে দিয়েছেন। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জুমার খুতবায় মদের সংজ্ঞা এভাবে দেন, “মদ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝায় যা বুদ্ধিকে বিকৃত করে ফেলে ।”
এ ছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ও মূলনীতি বর্ণনা করেছেনঃ “যে জিনিসের বেশী পরিমাণ নেশা সৃষ্টি করে তার সামান্য পরিণামও হারাম। (আবু দাউদ)
কাজেই হাদিসের মুলনীতি অনুসারে হেরোইন, আফিম, গাঁজা, ইয়াবা ইত্যাদি মাদকদ্রব্য হারাম করা হয়েছে।
মৃত প্রাণী খাওয়াঃ
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনুল করিমে বলেন,
حُرِّمَتۡ عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَيۡتَةُ وَٱلدَّمُ وَلَحۡمُ ٱلۡخِنزِيرِ وَمَآ أُهِلَّ لِغَيۡرِ ٱللَّهِ بِهِۦ وَٱلۡمُنۡخَنِقَةُ وَٱلۡمَوۡقُوذَةُ وَٱلۡمُتَرَدِّيَةُ وَٱلنَّطِيحَةُ وَمَآ أَكَلَ ٱلسَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيۡتُمۡ
অর্থঃ তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়াছে মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোশ্‌ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব, তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করে দিয়েছো সেটি ছাড়া৷ [সুরা মায়েদা, সূরা নম্বর ৫, আয়াত নম্বর ৩]
কুরআন বলছে মৃত প্রাণী খওয়া হারাম। কিন্তু হাদীছ বলছে পানির মাছ মৃত হলেও তা খাওয়া হালাল। কুরআনে পশুকুলের মধ্যে শুধু শুকরকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বাদর, বাঘ, সিংহ, বানর, ভাল্লুক, সাপ, পোকা মাকড়, কিট পতঙ্গ, ঈগল চিল, শকুন ইত্যাদি হারাম হওয়ার ব্যাপারে হাদীছে মূলনীতি বেঁধে দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে, “দাঁত দ্বারা শিকার করে এরকম সকল হিংস্র পশু হারাম। আর থাবা দিয়ে শিকার করে এমন প্রত্যেক পাখি হারাম।” [বুখারী ও মুসলিম]
যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসকে অপবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করবে, আর ধারণা করবে তার উপর আমল করা অবৈধ এবং শুধু এককভাবে আল-কুরআনের উপর আমল করবে বলে মনে করে, তবে সেই ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে। কারণ, সে শরী‘য়তের মূলনীতিমালার দ্বিতীয় উৎসকে অস্বীকার করেছে, আর তা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস। তার অবস্থা এমন যেন সে বলে, তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করো না, বরং শুধু আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য কর। আর সেই ধারাবাহিকতায় ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করে নি, কেননা আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং সে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যও করে নি এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যও করে নিা কারণ মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ ٧ [الحشر: ٧]
অর্থঃ রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে, তা থেকে বিরত থাক এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। [সূরা হাশর, সূরা নম্বর ৫৯, আয়াত নম্বর ৭]
মন্তব্যঃ কাজেই হাদিস অস্বীকার করার মত দৃষ্টতা দেখান কোন মুমিনের জন্য ভাল পরিনাম বহন করবেনা। তার এ কাজ ও বিশ্বাস তাকে মুসলিম ও ইসলাম থেকে বের করে দিবে। আর আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তরভূক্ত হবে এতে কোন প্রকার সন্ধেহ বা সংশয় নেই।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ