সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য এবং দরূদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল, তার পরিবারবর্গ, তার সাথী ও তার সকল অনুসারীদের ওপর। অতঃপর,
“সহিহ হাদিসে কুদসি” গ্রন্থটি আমার নিকট বিশুদ্ধ প্রমাণিত হাদিসে কুদসির বিশেষ সংকলন। এখানে আমি সনদ ও ব্যাখ্যা ছাড়া হাদিসে কুদসিগুলো উপস্থাপন করেছি। হাদিসগুলো সূত্রসহ উল্লেখ করে হুকুম ও শব্দের জরুরী অর্থ বর্ণনা করে ক্ষান্ত হয়েছি। আল্লাহ আমার এ আমল কবুল করুন এবং এর দ্বারা সকল মুসলিমকে উপকৃত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব হাদিস আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করেছেন আলেমগণ সেগুলোকে “হাদিসে কুদসি” নামে অভিহিত করেছেন। আল্লাহর নাম “কুদ্দুস” এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এসব হাদিসকে ‘কুদসি’ বলা হয়। (“কুদ্দুস” অর্থ পবিত্র ও পুণ্যবান।)
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিবরিল আলাইহিস সালাম কুরআনুল কারিম নিয়ে অবতরণ করেছেন, কিন্তু হাদিসে কুদসি তিনি লাভ করেছেন কখনো জিবরিল, কখনো এলহাম, কখনো অন্য মাধ্যমে।
২. সম্পূর্ণ কুরআন মুতাওয়াতির সনদে বর্ণিত, কিন্তু হাদিসে কুদসি অনুরূপ নয়।
৩. কুরআনুল কারিমে ভুল অনুপ্রবেশ করতে পারে না, কিন্তু হাদিসে কুদসিতে কখনো কোন বর্ণনাকারী ধারণার বশবর্তী হয়ে বর্ণনা করার সময় ভুল করতে পারে।
৪. সালাতে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করতে হয়, কিন্তু হাদিস কুদসি তিলাওয়াত করা বৈধ নয়।
৫. কুরআনুল কারিম সূরা, আয়াত, পারা ও অংশ ইত্যাদিতে বিভক্ত, কিন্তু হাদিসে কুদসি অনুরূপ নয়।
৬. কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করলে সওয়াব রয়েছে, কিন্তু হাদিসে কুদসিতে অনুরূপ ফযিলত নেই।
৭. কুরআনুল কারিম কিয়ামত পর্যন্ত সর্বকালের জন্য মু‘জিযা।
৮. কুরাআনুল কারিম অস্বীকারকারী কাফের, কিন্তু হাদিসে কুদসি অস্বীকারকারী অনুরূপ নয়। (কারণ তার মনে হতে পারে যে, এটি দুর্বল)।
৯. হাদিসে কুদসির শুধু ভাব বর্ণনা করা বৈধ, কিন্তু কুরআনুল কারিমের ভাবকে কুরআন হিসেবে বর্ণনা করা বৈধ নয়; অনুরূপভাবে কুরআনের অর্থের তিলাওয়াতও বৈধ নয়।
এ হচ্ছে কুরআন ও হাদিসে কুদসির মধ্যে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ কতক পার্থক্য, এ ছাড়া উভয়ের আরো কিছু পার্থক্য রয়েছে।
আর সালাত ও সালাম আমাদের নবী, তার পরিবার ও তার সকল সাথীদের ওপর।
আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা ইব্ন আল-আদাভি
মিসর, দিকহিলিয়াহ, মুনিয়া সামনুদ
পাপ-পুণ্য লিখার নিয়ম ও আল্লাহর অনুগ্রহ
1- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ: إِذَا أَرَادَ عَبْدِي أَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً فَلَا تَكْتُبُوهَا عَلَيْهِ حَتَّى يَعْمَلَهَا، فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا بِمِثْلِهَا، وَإِنْ تَرَكَهَا مِنْ أَجْلِي، فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَعْمَلَ حَسَنَةً فَلَمْ يَعْمَلْهَا، فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً، فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَةِ ضِعْفٍ». (بخاري ومسلم) حديث صحيح
১. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা যখন কোন পাপ করার ইচ্ছা করে, তখন তোমরা তা লিখ না যতক্ষণ না সে তা করে। যদি সে তা করে সমান পাপ লিখ। আর যদি সে তা আমার কারণে ত্যাগ করে[1], তাহলে তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। আর যদি সে নেকি করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে তা করেনি, তার জন্য তা নেকি হিসেবে লিখ। অতঃপর যদি সে তা করে তাহলে তার জন্য তা দশগুণ থেকে সাতশো গুণ পর্যন্ত লিখ”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
2- عَنْ أَبُي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: إِذَا تَحَدَّثَ عَبْدِي بِأَنْ يَعْمَلَ حَسَنَةً فَأَنَا أَكْتُبُهَا لَهُ حَسَنَةً مَا لَمْ يَعْمَلْ، فَإِذَا عَمِلَهَا فَأَنَا أَكْتُبُهَا بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَإِذَا تَحَدَّثَ بِأَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً فَأَنَا أَغْفِرُهَا لَهُ مَا لَمْ يَعْمَلْهَا، فَإِذَا عَمِلَهَا فَأَنَا أَكْتُبُهَا لَهُ بِمِثْلِهَا», وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «قَالَتْ الْمَلَائِكَةُ: رَبِّ هذَا عَبْدُكَ يُرِيدُ أَنْ يَعْمَلَ سَيِّئَةً -وَهُوَ أَبْصَرُ بِهِ- فَقَالَ: ارْقُبُوهُ فَإِنْ عَمِلَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ بِمِثْلِهَا، وَإِنْ تَرَكَهَا فَاكْتُبُوهَا لَهُ حَسَنَةً، إِنَّمَا تَرَكَهَا مِنْ جَرَّايَ». ( مسلم ) صحيح
২. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা যখন নেকি করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য একটি নেকি লিখি যতক্ষণ সে না করে, যখন সে করে আমি তার দশগুণ লিখি। আর যখন সে পাপ করার ইচ্ছা করে আমি তার জন্য তা ক্ষমা করি যতক্ষণ সে না করে, অতঃপর যখন সে তা করে তখন আমি তার সমান লিখি”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “ফেরেশতারা বলে: হে আমার রব আপনার এ বান্দা পাপ করার ইচ্ছা করে, -যদিও আল্লাহ তাকে বেশী জানেন- তিনি বলেন: তাকে পর্যবেক্ষণ কর যদি সে করে তার জন্য সমান পাপ লিখ, যদি সে ত্যাগ করে তার জন্য তা নেকি লিখ, কারণ আমার জন্যই সে তা ত্যাগ করেছে।[2] [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
﴿ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ ﴾
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন”
3- عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ -رضي الله عنهما- قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: ﴿ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ ﴾، قَالَ: دَخَلَ قُلُوبَهُمْ مِنْهَا شَيْءٌ لَمْ يَدْخُلْ قُلُوبَهُمْ مِنْ شَيْءٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «قُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَسَلَّمْنَا» قَالَ: فَأَلْقَى اللَّهُ الْإِيمَانَ فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: ﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾ «قَالَ: قَدْ فَعَلْتُ» ﴿رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ ﴾ «قَالَ: قَدْ فَعَلْتُ» ﴿ وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا ﴾ [البقرة: ٢٨٦]]. «قَالَ: قَدْ فَعَلْتُ» ( مسلم ) صحيح
৩. ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যখন
﴿ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ ﴾
“আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন”[3] এ আয়াত নাযিল হলো, ইবন আব্বাস বলেন, তখন তাদের (সাহাবিদের) অন্তরে কিছু প্রবেশ করল যা পূর্বে তাদের অন্তরে প্রবেশ করিনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা বল: শুনেছি, আনুগত্য করেছি ও মেনে নিয়েছি”। তিনি বলেন: ফলে আল্লাহ তাদের অন্তরে ঈমান ঢেলে দিলেন এবং তিনি নাযিল করলেন:
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾
“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমি কবুল করেছি”।
﴿ وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ ﴾
“হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমি কবুল করেছি”।
﴿ وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا ﴾
“আর আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমি কবুল করেছি”। [সূরা বাকারা: (২৮৬)], মুসলিম, হাদিসটি সহিহ।
4- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ﴿لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤﴾ [البقرة: ٢٨٤] قَالَ: فَاشْتَدَّ ذَلِكَ عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ بَرَكُوا عَلَى الرُّكَبِ فَقَالُوا: أَيْ رَسُولَ اللَّهِ؟ كُلِّفْنَا مِنْ الْأَعْمَالِ مَا نُطِيقُ الصَّلَاةَ وَالصِّيَامَ وَالْجِهَادَ وَالصَّدَقَةَ وَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيْكَ هَذِهِ الْآيَةُ وَلَا نُطِيقُهَا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « أَتُرِيدُونَ أَنْ تَقُولُوا كَمَا قَالَ أَهْلُ الْكِتَابَيْنِ مِنْ قَبْلِكُمْ: سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا؟ بَلْ قُولُوا: (سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ) قَالُوا: سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ، فَلَمَّا اقْتَرَأَهَا الْقَوْمُ ذَلَّتْ بِهَا أَلْسِنَتُهُمْ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ فِي إِثْرِهَا: ﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ ﴾ [البقرة: ٢٨٥] فَلَمَّا فَعَلُوا ذَلِكَ نَسَخَهَا اللَّهُ تَعَالَى، فَأَنْزَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾ «قَالَ: نَعَمْ» ﴿ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ ﴾ «قَالَ: نَعَمْ» ﴿ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ ﴾
«قَالَ: نَعَمْ» ﴿ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ﴾ «قَال: نَعَمْ » ( مسلم ) صحيح
৪. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিল হল:
﴿ لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤ ﴾ [البقرة: ٢٨٤]
“আল্লাহর জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা রয়েছে যমীনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান”।[4] তিনি বলেন: এ আয়াত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের ওপর কঠিন ঠেকল, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসল, অতঃপর হাঁটু গেড়ে বসল। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল? আমাদেরকে কতক আমলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যা আমরা সাধ্য রাখি: সালাত, সিয়াম, জিহাদ ও সদকা; কিন্তু আপনার ওপর এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে অথচ আমরা তার সাধ্য রাখি না! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তোমরা কি সেরূপ বলতে চাও তোমাদের পূর্বে কিতাবওয়ালা দুটি দল [ইয়াহূদী ও নাসারারা] যেরূপ বলেছে: শুনলাম ও প্রত্যাখ্যান করলাম? বরং তোমরা বল: “আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল”। তারা বলল: আমরা শুনলাম, মেনে নিলাম, হে আমাদের রব আপনার ক্ষমা চাই, আপনার নিকটই আমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। যখন সকলে তা পড়ল, তাদের জবান দ্বিধাহীন তা উচ্চারণ করল। আল্লাহ তা‘আলা তার পশ্চাতে নাযিল করলেন:
﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥﴾ [البقرة: ٢٨٥]
“রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল”।[5] যখন তারা এর ওপর আমল করল, আল্লাহ তা রহিত করলেন, অতঃপর নাযিল করলেন:
﴿ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾
“আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যরে বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার জন্যই এবং সে যা কামাই করে তা তার উপরই বর্তাবে। হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না”। তিনি বলেন: হ্যাঁ।
﴿ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ ﴾
“হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন”। তিনি বলেন: হ্যাঁ।
﴿ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ ﴾
“হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই”। তিনি বলেন: হ্যাঁ।
﴿وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ﴾
“আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন”। তিনি বলেন: হ্যাঁ। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
যার নিয়ত নষ্ট তার জন্য জাহান্নাম
5- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ: قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ: جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ، وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ، وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ، قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ: عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ: هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّار، وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ: هُوَ جَوَادٌ: فَقَدْ قِيلَ، ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ» . ( مسلم والنسائي ) صحيح
৫. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “নিশ্চয় সর্বপ্রথম ব্যক্তি কিয়ামতের দিন যার ওপর ফয়সালা করা হবে, সে ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে আনা হবে, অতঃপর তাকে তার (আল্লাহর) নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেন: তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবে: আপনার জন্য জিহাদ করে এমনকি শহীদ হয়েছি। তিনি বলবেন: মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি এ জন্য জিহাদ করেছ যেন বলা হয়: বীর, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যে ইলম শিখেছে, শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন তিলাওয়াত করেছে, তাকে আনা হবে। অতঃপর তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেন: তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবে: আমি ইলম শিখেছ, শিক্ষা দিয়েছি ও আপনার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। তিনি বলবেন: মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি ইলম শিক্ষা করেছ যেন বলা হয়: আলেম, কুরআন তিলাওয়াত করেছ যেন বলা হয়: সে কারী, অতএব বলা হয়েছে। অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আরও এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সচ্ছলতা দিয়েছেন ও সকল প্রকার সম্পদ দান করেছেন, তাকে আনা হবে। তাকে তার নিয়ামতরাজি জানানো হবে, সে তা স্বীকার করবে। তিনি বলবেন: তুমি এতে কি আমল করেছ? সে বলবে: এমন খাত নেই যেখানে খরচ করা আপনি পছন্দ করেন আমি তাতে আপনার জন্য খরচ করি নাই। তিনি বলবেন: মিথ্যা বলেছ, তবে তুমি করেছ যেন বলা হয়: সে দানশীল, অতএব বলা হয়েছে, অতঃপর তার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হবে, তাকে তার চেহারার ওপর ভর করে টেনে-হিঁচড়ে অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। [মুসলিম ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
শির্কের ভয়াবহতা
6- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « قَالَ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنْ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي تَرَكْتُهُ وَشِرْكَه ». ( مسلم ) حسن
৬. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: শরীকদের মধ্যে অংশীদারির অংশ (শির্ক) থেকে আমিই অধিক অমুখাপেক্ষী, যে কেউ এমন আমল করল যাতে আমার সাথে অপরকে শরিক করেছে, আমি তাকে ও তার শির্ককে প্রত্যাখ্যান করি”।[6] [মুসলিম] হাদিসটি হাসান।
7- عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ -رضي الله عنه- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ», قَالُوا: وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ قَالَ: «الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ – إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمْ-: اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً » . ( أحمد ) صحيح
৭. মাহমুদ ইব্ন লাবিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শির্কে আসগর (ছোট শির্ক)। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল শির্কে আসগর কি? তিনি বললেন: “রিয়া (লোক দেখানো আমল), আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদেরকে (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেয়া হবে: তোমরা তাদের কাছে যাও যাদেরকে তোমরা দুনিয়াতে দেখাতে, দেখ তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কিনা”। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
8- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ، فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لَا تَعْصِنِي؟ فَيَقُولُ أَبُوهُ: فَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيكَ. فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ: يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِي أَنْ لَا تُخْزِيَنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَد؟ِ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: إِنِّي حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ: يَا إِبْرَاهِيمُ مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُلْتَطِخٍ فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ » . ( خ ) صحيح
৮. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন ইবরাহিম তার পিতা আযরের সাথে দেখা করবে, তার চেহারার ওপর থাকবে বিষণ্ণতা ও ধুলো-বালি (অবসাদ)। ইবরাহিম তাকে বলবে: আমি কি তোমাকে বলিনি আমার অবাধ্য হয়ো না? অতঃপর তার পিতা তাকে বলবে: আজ তোমার অবাধ্য হব না। অতঃপর ইবরাহিম বলবে: হে আমার রব, আপনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন যেদিন উঠানো হবে আমাকে অসম্মান করবেন না, আমার পতিত পিতার অপমানের চেয়ে বড় অপমান কি! অতঃপর আল্লাহ বলবেন: নিশ্চয় আমি কাফেরদের ওপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। অতঃপর বলা হবে: হে ইবরাহিম তোমার পায়ের নিচে কি? সে দেখবে তার পিতা আচমকা রক্ত-ময়লায় নিমজ্জিত হায়েনায় পরিণত হয়েছে, তখন তার পা পাকড়াও করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে”। [বুখারি] হাদিসটি সহিহ।
দুনিয়া ভর স্বর্ণ দ্বারা কাফেরের মুক্তি কামনা
9- عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ: لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ أَكُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ فَيَقُول:ُ نَعَمْ. فَيَقُولُ: أَرَدْتُ مِنْكَ أَهْوَنَ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ فِي صُلْبِ آدَمَ: أَنْ لَا تُشْرِكَ بِي شَيْئًا فَأَبَيْتَ إِلَّا أَنْ تُشْرِكَ بِي » . ( خ, م ) صحيح
৯. আনাস ইব্ন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের সবচেয়ে হালকা আযাবের ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন বলবেন: তোমার জন্য যদি দুনিয়াতে যা রয়েছে সব হয় তুমি কি তা মুক্তিপণ হিসেবে দিবে? সে বলবে: হ্যাঁ, তিনি বলবেন: আমি তোমার কাছে এরচেয়ে কম চেয়েছিলাম যখন তুমি আদমের ঔরসে ছিলে: আমার সাথে কোন বস্তুকে অংশীদার করবে না, কিন্তু তুমি আমার সাথে অংশীদার না করে ক্ষান্ত হওনি”। [বুখারি ও মুসলিম], হাদিসটি সহিহ।
অমুক নক্ষত্রের কারণে বৃষ্টি পেয়েছি বলা কুফরি
10- عن زيد بن خالد الجهني -رضي الله عنه- أنه قال: صلى لنا رسول الله صلى الله عليه وسلم صلاة الصبح بالحديبية -على إثر سماء كانت من الليلة- فلما انصرف أقبل على الناس فقال: « هل تَدْرُون ماذا قال ربكم؟» قالوا: الله ورسوله أعلم، قال: «أصبح من عبادي مؤمن بي وكافرٌ، فأمَّا من قال: مُطرْنا بفَضْل الله ورحْمتِهِ، فذلك مؤمنٌ بي وكافرٌ بالكواكب وأما من قال: بنوء كذا وكذا، فذلك كافرٌ بي ومؤمنٌ بالكواكب » . (خ، م, د, ن) صحيح
১০. যায়েদ ইব্ন খালেদ আল-জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে হুদায়বিয়ায় ফজর সালাত আদায় করলেন রাতের বৃষ্টি শেষে,[7] যখন সালাত শেষ করলেন লোকদের দিকে ফিরলেন এবং বললেন: “তোমরা কি জান তোমাদের রব কি বলেছেন?” তারা বলল: আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন। তিনি বলেছেন: “আমার কতক বান্দা ভোর করেছে আমার ওপর ঈমান অবস্থায়, আর কতক বান্দা ভোর করেছে আমার সাথে কুফরি অবস্থায়। অতএব যে বলেছে: আমরা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় বৃষ্টি লাভ করেছি, সে আমার ওপর বিশ্বাসী ও নক্ষত্রের (প্রভাব) অস্বীকারকারী। আর যে বলেছে: অমুক অমুক নক্ষত্রের কারণে, সে আমাকে অস্বীকারকারী ও নক্ষত্রে বিশ্বাসী”। [বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসায়ি], হাদিসটি সহিহ।
11- عن أبي هريرة -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: « ألمَ تَرَوْا إلى ما قال ربُّكم؟ قال: ما أنعَمْتُ على عبادي من نعمةٍ إلا أصْبَح فريقٌ منهم بها كافرين يقولون: الكواكبُ وبالكواكبِ » . ( م, ن ) صحيح
১১. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “তোমরা কি লক্ষ্য কর না তোমাদের রব কি বলেছেন? তিনি বলেছেন: আমি আমার বান্দাদের যখনই কোন নিয়ামত দেই, তখনই এ ব্যাপারে তাদের একটি দল অকৃতজ্ঞ (কাফের) হয়েছে। তারা বলে: নক্ষত্রই এবং নক্ষত্রের কারণে (তারা তা প্রাপ্ত হয়েছে)”। [মুসলিম ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
তাওহীদের ফযিলত
12- عن أبي ذر -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « يقول الله عز وجل: من جاء بالحسنَةَ فَلَهُ عَشْرُ أمثالها وأزِيدُ، ومن جاء بالسَّيِّئة فَجَزاؤه سيئة مثْلها أو أغْفِرُ، ومن تقرَّب مني شبرًا تقربت منه ذراعًا, ومن تقرَّب مني ذراعًا تقربت منه باعًا، ومن أتاني يمشي أتيته هرولة، ومن لقيني بقراب الأرض خَطيئَة لا يُشْرِكُ بي شيئًا لقيته بمثلها مغفرة ». ( م, حم, جه ) صحيح
১২. আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ বলেন: যে একটি নেকি নিয়ে আসবে তার জন্য তার দশগুণ এবং আমি আরও বেশি বৃদ্ধি করব। যে একটি পাপ নিয়ে আসবে তার বিনিময় সমান একটি পাপ অথবা আমি ক্ষমা করব। যে এক বিঘত আমার নিকটবর্তী হবে আমি একহাত তার নিকটবর্তী হব। যে এক হাত আমার নিকটবর্তী হবে আমি তার এক বাহু নিকটবর্তী হব। যে আমার নিকট হেঁটে আসবে আমি তার নিকট দ্রুত যাব। যে দুনিয়া ভর্তি পাপসহ আমার সাথে সাক্ষাত করে, আমার সাথে কাউকে শরিক না করে, আমি তার সাথে অনুরূপ ক্ষমাসহ সাক্ষাত করব”। [মুসলিম, আহমদ ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
13- عن أبي سعيد الخدري -رضي الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «ما مجادلُة أحدِكم في الحقِّ يكون له في الدُّنيا بأشدِّ مجادلةَ من المؤمنين لربهم في إخوانهم الذين أدْخِلُوا النار، قال: يقولون: ربنا إخوانُنا كانوا يُصلُّون معنا ويَصُومون معنا ويحجُّون معنا فأدْخَلْتَهُمُ النار. قال: فيقول: اذهبوا فأخرجوا من عرفْتُم منهم. قال: فيأتونهم فيعرفونهم بصورهم فمنهم من أخَذَته النَّارُ إلى أنصاف ساقَيْه، ومنهم من أخَذَتْهُ إلى كَعْبَيْه فيخرجونهم فيقولون: ربَّنا قد أخْرجَنْا من أمرتنا، قال: ويقول: أخْرِجوا من كان في قلبه وزْنُ دينارٍ من الإيمان، ثم قال: من كَاَنَ في قلبه وزنُ نصف دينار، حتى يقول: من كان في قلبه وزن ذرةٍ » . ( ن, جه ) صحيح
১৩. আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দাবি নিয়ে দুনিয়াতে তোমাদের যেমন ঝগড়া হয়, তা মুমিনগণ কর্তৃক তাদের ভাইদের সম্পর্কে যাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হয়েছে, তাদের রবের সাথে ঝগড়ার চেয়ে অধিক কঠিন নয়।[8] তিনি বলেন: তারা বলবে: হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত ও আমাদের সাথে হজ করত, কিন্তু আপনি তাদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি বলেন: আল্লাহ বলবেন: যাও তাদের থেকে যাকে তোমরা চিনো তাকে বের কর। তিনি বলেন: তাদের নিকট তারা আসবে, তাদের চেহারা দেখে তাদেরকে তারা চিনবে, তাদের কাউকে আগুন পায়ের গোছার অর্ধেক খেয়ে ফেলেছে। কাউকে পায়ের টাকনু পর্যন্ত খেয়ে ফেলেছে, তাদেরকে তারা বের করবে অতঃপর বলবে: হে আমাদের রব, যাদের সম্পর্কে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা বের করেছি। তিনি বলেন: আল্লাহ বলবেন: বের কর যার অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। অতঃপর বলবেন: যার অন্তরে অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। এক সময় বলবেন: যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ ঈমান রয়েছে”। [নাসায়ি ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
আহলে তাওহীদকে জাহান্নাম থেকে বের করা
14- عن أبي سعيد الخدري -رضي الله عنه- عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: « يدخل أهل الجنة الجنةَ وأهْلُ النَّارِ النارَ، ثم يقول الله تعالى: أَخرجوا من كان في قلبه مثقال حبة من خردل من إيمان، فيخرجون منها قد اسودوا فيلقون في نهر الحياَ -أو الحياة- فينبُتُون كما تنبت الحبةُ في جانب السيَّل، ألم تر أنها تخرج صفراءَ مُلتوية؟ » . ( خ, م ) صحيح
১৪. আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতিরা জান্নাতে ও জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: বের কর যার অন্তরে সর্ষে পরিমাণ ঈমান রয়েছে, ফলে তারা সেখান থেকে বের হবে এমতাবস্থায় যে কালো হয়ে গেছে, অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টির নহর অথবা সঞ্জীবনী নহরে নিক্ষেপ করা হবে, ফলে তারা নতুন জীবন লাভ করবে যেমন নালার কিনারায় ঘাস জন্মায়। তুমি দেখনি তা হলুদ আঁকাবাঁকা গজায়?”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
বেতাকার হাদিস ও লাইলাহা ইল্লাল্লাহুর ফযিলত
15- عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ -رضي الله عنهما- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ سَيُخَلِّصُ رَجُلاً مِنْ أُمَّتِي عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، فَيَنْشُرُ عَلَيْهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ سِجِلاًّ، كُلُّ سِجِلٍّ مِثْلُ مَدِّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَتُنْكِرُ مِنْ هَذَا شَيْئًا؟ أَظَلَمَكَ كَتَبَتِي الْحَافِظُونَ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ. فَيَقُولُ: أَفَلَكَ عُذْرٌ؟ فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ، فَيَقُولُ: بَلَى إِنَّ لَكَ عِنْدَنَا حَسَنَةً فَإِنَّهُ لَا ظُلْمَ عَلَيْكَ الْيَوْمَ فَتَخْرُجُ بِطَاقَةٌ فِيهَا: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، فَيَقُولُ: احْضُرْ وَزْنَكَ. فَيَقُولُ: يَا رَبِّ مَا هَذِهِ الْبِطَاقَةُ مَعَ هَذِهِ السِّجِلَّاتِ؟ فَقَالَ: إِنَّكَ لَا تُظْلَمُ، قَالَ: فَتُوضَعُ السِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ، وَالْبِطَاقَةُ فِي كَفَّةٍ فَطَاشَتْ السِّجِلَّاتُ وَثَقُلَتْ الْبِطَاقَةُ، فَلَا يَثْقُلُ مَعَ اسْمِ اللَّهِ شَيْءٌ » . ( ت, حم, جه ) صحيح
১৫. আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সবার সামনে নাজাত দিবেন, তার সামনে নিরানব্বইটি দফতর খোলা হবে, প্রত্যেক দফতর চোখের দৃষ্টি পরিমাণ লম্বা। অতঃপর তিনি বলবেন: তুমি এর কিছু অস্বীকার কর? আমার সংরক্ষণকারী লেখকরা তোমার ওপর যুলম করেছে? সে বলবে: না, হে আমার রব। তিনি বলবেন: তোমার কোন অজুহাত আছে? সে বলবে: না, হে আমার রব। তিনি বলবেন: নিশ্চয় আমার নিকট তোমার একটি নেকি রয়েছে, আজ তোমার ওপর কোন যুলম নেই, অতঃপর একটি বেতাকা/কার্ড বের হবে, যাতে রয়েছে:
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
তিনি বলবেন: তোমার (কাজের) ওজন প্রত্যক্ষ কর। সে বলবে: হে আমার রব এতগুলো দফতরের সাথে একটি কার্ড কি (কাজে আসবে)? তিনি বলবেন: নিশ্চয় তোমার ওপর যুলম করা হবে না। তিনি বলেন: অতঃপর সবগুলো দফতর এক পাল্লায় ও কার্ডটি অপর পাল্লায় রাখা হবে, ফলে দফতরগুলো ওপরে উঠে যাবে ও কার্ডটি ভারী হবে। আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন জিনিস ভারী হবে না”। [তিরমিযি, আহমদ ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
আল্লাহর রহমতের প্রশস্ততা
16- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: « سَبَقَتْ رَحْمَتِي غَضَبِي ». ( م ) صحيح.
১৬. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আমার রহমত আমার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশকারীদের প্রতি হুশিয়ারি
17- قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «كَانَ رَجُلَانِ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ مُتَوَاخِيَيْنِ، فَكَانَ أَحَدُهُمَا يُذْنِبُ وَالْآخَرُ مُجْتَهِدٌ فِي الْعِبَادَةِ، فَكَانَ لَا يَزَالُ الْمُجْتَهِدُ يَرَى الْآخَرَ عَلَى الذَّنْبِ فَيَقُولُ أَقْصِرْ فَوَجَدَهُ يَوْمًا عَلَى ذَنْبٍ، فَقَالَ لَهُ: أَقْصِرْ. فَقَالَ: خَلِّنِي وَرَبِّي أَبُعِثْتَ عَلَيَّ رَقِيبًا؟ فَقَالَ: وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لَكَ أَوْ لَا يُدْخِلُكَ اللَّهُ الْجَنَّةَ، فَقَبَضَ أَرْوَاحَهُمَا فَاجْتَمَعَا، عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَقَالَ لِهَذَا الْمُجْتَهِدِ: أَكُنْتَ بِي عَالِمًا؟ أَوْ كُنْتَ عَلَى مَا فِي يَدِي قَادِرًا، وَقَالَ لِلْمُذْنِبِ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ بِرَحْمَتِي، وَقَالَ لِلْآخَرِ: اذْهَبُوا بِهِ إِلَى النَّارِ؟ ». ( د ) حسن
১৭. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “বনি ইসরাইলে দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজন পাপ করত, দ্বিতীয়জন খুব ইবাদত গুজার ছিল। ইবাদত গুজার তার বন্ধুকে সর্বদা পাপে লিপ্ত দেখত, তাই সে বলত বিরত হও, একদিন সে তাকে কোন পাপে লিপ্ত দেখে বলে: বিরত হও। সে বলল: আমাকে ও আমার রবকে থাকতে দাও, তোমাকে কি আমার ওপর পর্যবেক্ষক করে পাঠানো হয়েছে? ফলে সে বলল: আল্লাহর কসম আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না, অথবা তোমাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর তাদের উভয়ের রূহ কবজ করা হল এবং তারা উভয়ে আল্লাহর দরবারে একত্র হল। তিনি ইবাদত গুজারকে বলেন: তুমি কি আমার ব্যাপারে অবগত ছিলে? অথবা আমার হাতে যা রয়েছে তার ওপর তুমি ক্ষমতাবান ছিলে? আর পাপীকে তিনি বলেন: যাও আমার রহমতে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। আর অপর ব্যক্তির জন্য বলেন: তাকে নিয়ে জাহান্নামে যাও[9]? [আবু দাউদ] হাদিসটি হাসান।
18- عَنْ جُنْدَبٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَدَّثَ: «أَنَّ رَجُلاً قَالَ وَاللَّهِ لَا يَغْفِرُ اللَّهُ لِفُلَانٍ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ: مَنْ ذَا الَّذِي يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَنْ لَا أَغْفِرَ لِفُلَانٍ، فَإِنِّي قَدْ غَفَرْتُ لِفُلَانٍ وَأَحْبَطْتُ عَمَلَك» أَوْ كَمَا قَالَ. (م) صحيح
১৮. জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জনৈক ব্যক্তি বলেছে আল্লাহর কসম আল্লাহ অমুককে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: কে সে আমার ওপর কর্তৃত্ব করে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম আর তোমার আমল বিনষ্ট করলাম[10]”। অথবা যেরূপ তিনি বলেছেন। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
19- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ إِنْسَانًا ثُمَّ خَرَجَ يَسْأَلُ فَأَتَى رَاهِبًا فَسَأَلَهُ فَقَالَ لَهُ: هَلْ مِنْ تَوْبَةٍ؟ قَالَ: لَا فَقَتَلَهُ، فَجَعَلَ يَسْأَلُ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: ائْتِ قَرْيَةَ كَذَا وَكَذَا فَأَدْرَكَهُ الْمَوْتُ فَنَاءَ بِصَدْرِهِ نَحْوَهَا، فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلَائِكَةُ الْعَذَابِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي وَأَوْحَى اللَّهُ إِلَى هَذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وَقَالَ: قِيسُوا مَا بَيْنَهُمَا، فَوُجِدَ إِلَى هَذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ” . (خ, م ) صحيح
১৯. আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “বনি ইসরাইলে এক লোক ছিল যে নিরানব্বই জন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, অতঃপর জানার জন্য বের হল, এক সংসারবিরাগীর নিকট আসল, তাকে জিজ্ঞাসা করল ও তাকে বলল: কোন তওবা আছে কি? সে বলল: না, ফলে তাকেও হত্যা করল। অতঃপর সে লোকদের জিজ্ঞেস করতে থাকল, তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল: তুমি অমুক অমুক গ্রামে আস, (রাস্তায়) তাকে মৃত্যু পেয়ে বসল, সে বক্ষ দ্বারা ঐ গ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করল। তার ব্যাপারে রহমত ও আযাবের ফেরেশতাগণ তর্কে লিপ্ত হল। আল্লাহ তা‘আলা এ জনপদকে নির্দেশ করলেন যে, নিকটবর্তী হও, আর এ জনপদকে নির্দেশ করলেন যে, দূরবর্তী হও। অতঃপর আল্লাহ বললেন: উভয় জনপদের দূরত্ব পরিমাপ কর। দেখা গেল এ জনপদের দিকে সে এক বিঘত বেশী অগ্রসর, তাই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হল”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে বলা নিষেধ
20- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رضي الله عنه- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا سَمِعْتُمْ رَجُلاً يَقُولُ: هَلَكَ النَّاسُ، فَهُوَ أَهْلَكُهُمْ، يَقُولُ اللَّهُ: إِنَّهُ هُوَ هَالِكٌ». (حم) حسن
২০. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমরা কোন ব্যক্তিকে বলতে শোন: মানুষ ধ্বংস হয়ে গেছে, তাহলে সেই অধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত[11]। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: নিশ্চয় সে ধ্বংসপ্রাপ্ত”। [আহমদ] হাদিসটি হাসান।
আল্লাহর ভয়ের ফযিলত
21- عَنْ حُذَيْفَةَ -رضي الله عنه- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كَانَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ يُسِيءُ الظَّنَّ بِعَمَلِهِ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِذَا أَنَا مُتُّ فَخُذُونِي فَذَرُّونِي فِي الْبَحْرِ فِي يَوْمٍ صَائِفٍ فَفَعَلُوا بِهِ فَجَمَعَهُ اللَّهُ ثُمَّ قَالَ: مَا حَمَلَكَ عَلَى الَّذِي صَنَعْتَ؟ قَالَ مَا حَمَلَنِي إِلَّا مَخَافَتُكَ فَغَفَرَ لَهُ » . (خ, ن ) صحيح
২১. হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্বে এক ব্যক্তি ছিল, সে তার নিজের (যে সকল খারাপ কাজ করেছে সে সকল) আমলের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করত (যে তাকে কঠোর শাস্তি পেতে হবে), তাই সে তার পরিবারকে বলল: আমি যখন মারা যাব আমাকে গ্রহণ করবে, (এবং আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে নিবে) অতঃপর প্রবল ঝড়ের দিন আমাকে সমুদ্রে ছিটিয়ে দিবে, তারা তার সাথে অনুরূপ করল। আল্লাহ তাকে (মৃত্যুর পর) একত্র করলেন, অতঃপর বললেন: কিসে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে যা তুমি করেছে? সে বলল: তোমার ভয় ব্যতীত কোন বস্তু আমাকে উদ্বুদ্ধ করে নি, ফলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন”। [বুখারি ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
22- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم : « أَنَّهُ ذَكَرَ رَجُلاً فِيمَنْ سَلَفَ -أَوْ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ- قَالَ كَلِمَةً يَعْنِي أَعْطَاهُ اللَّهُ مَالاً وَوَلَدًا فَلَمَّا حَضَرَتْ الْوَفَاةُ قَالَ لِبَنِيهِ: أَيَّ أَبٍ كُنْتُ لَكُمْ؟ قَالُوا: خَيْرَ أَبٍ. قَالَ: فَإِنَّهُ لَمْ يَبْتَئِرْ -أَوْ لَمْ يَبْتَئِزْ- عِنْدَ اللَّهِ خَيْرًا، وَإِنْ يَقْدِرْ اللَّهُ عَلَيْهِ يُعَذِّبْهُ، فَانْظُرُوا إِذَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِي حَتَّى إِذَا صِرْتُ فَحْمًا فَاسْحَقُونِي -أَوْ قَالَ:فاسهكوني- فَإِذَا كَانَ يَوْمُ رِيحٍ عَاصِفٍ فَأَذْرُونِي فِيهَا» فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « فَأَخَذَ مَوَاثِيقَهُمْ عَلَى ذَلِكَ وَرَبِّي فَفَعَلُوا ثُمَّ أَذْرَوْهُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ فَقَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: كُنْ. فَإِذَا هُوَ رَجُلٌ قَائِمٌ. قَالَ اللَّهُ: أَيْ عَبْدِي مَا حَمَلَكَ عَلَى أَنْ فَعَلْتَ مَا فَعَلْتَ؟ قَالَ: مَخَافَتُكَ -أَوْ فَرَقٌ مِنْكَ- قَالَ: فَمَا تَلَافَاهُ أَنْ رَحِمَهُ عِنْدَهَا » وَقَالَ مَرَّةً أُخْرَى: « فَمَا تَلَافَاهُ غَيْرُهَا » .( خ, م ) صحيح
২২. আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: “তিনি পূর্বের জনৈক ব্যক্তির উল্লেখ করলেন- অথবা তোমাদের পূর্বের- তিনি একটি বাক্য বললেন অর্থাৎ আল্লাহ তাকে সম্পদ ও সন্তান দান করেছেন, যখন তার মৃত্যু উপস্থিত হল সে তার সন্তানদের বলল: আমি তোমাদের কেমন পিতা ছিলাম? তারা বলল: উত্তম পিতা। সে বলল: সে তো আল্লাহর নিকট কোন কল্যাণ জমা করেনি, আল্লাহ যদি তাকে পান[12] অবশ্যই শাস্তি দিবেন। তোমরা এক কাজ কর, আমি যখন মারা যাব আমাকে জ্বালাও, যখন আমি কয়লায় পরিণত হব আমাকে পিষ অথবা বলেছেন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেল, অতঃপর যখন প্রচণ্ড ঝড়ের দিন হবে আমাকে তাতে ছিটিয়ে দাও”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: সে এ জন্য তাদের থেকে ওয়াদা নিলো, আমার রবের কসম, তারা তাই করল, অতঃপর প্রচণ্ড ঝড়ের দিন ছিটিয়ে দিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন: ‘কুন’ (হও), ফলে সে দণ্ডায়মান ব্যক্তিতে পরিণত হল। আল্লাহ বললেন: হে আমার বান্দা কিসে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে, যে তুমি করেছ যা করার? সে বলল: তোমার ভয়- অথবা তোমার থেকে পলায়নের জন্য- তিনি বললেন: আল্লাহর দয়া ব্যতীত তার অন্য কিছু তাকে উদ্ধার করে নি। আরেকবার বলেন: রহম ব্যতীত অন্য কিছু তার নসিব হয়নি”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
23- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « قَالَ رَجُلٌ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ: فَإِذَا مَاتَ فَحَرِّقُوهُ وَاذْرُوا نِصْفَهُ فِي الْبَرِّ وَنِصْفَهُ فِي الْبَحْرِ، فَوَاللَّهِ لَئِنْ قَدَرَ اللَّهُ عَلَيْهِ لَيُعَذِّبَنَّهُ عَذَابًا لَا يُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِنْ الْعَالَمِينَ، فَأَمَرَ اللَّهُ الْبَحْرَ فَجَمَعَ مَا فِيهِ وَأَمَرَ الْبَرَّ فَجَمَعَ مَا فِيهِ، ثُمَّ قَال:َ لِمَ فَعَلْتَ؟ قَالَ: مِنْ خَشْيَتِكَ وَأَنْتَ أَعْلَمُ، فَغَفَرَ لَهُ » . ( خ, م, ن ) صحيح
২৩. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জনৈক ব্যক্তি যে কখনো ভাল কাজ করেনি বলেছে: যখন সে মারা যায়, তাকে জ্বালাও, অতঃপর তার অর্ধেক স্থলে ও অর্ধেক সমুদ্রে ছিটিয়ে দাও, আল্লাহর কসম, যদি আল্লাহ তার নাগাল পান তাহলে তিনি এমন শাস্তি দিবেন, যা জগতের কাউকে দিবেন না। অতঃপর আল্লাহ সমুদ্রকে নির্দেশ করলেন, ফলে সে তার মধ্যে যা ছিল জমা করল, এবং স্থলকে নির্দেশ করলেন ফলে সে তার মধ্যে যা ছিল জমা করল। অতঃপর বললেন: তুমি কেন করেছ? সে বলল: তোমার ভয়ে, তুমিই ভাল জান। ফলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন”। [বুখারি, মুসলিম ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
যিকিরের ফযিলত ও নেক আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা
24- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَال رسول الله صلى الله عليه وسلم : « يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي، وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلَإٍ ذَكَرْتُهُ فِي مَلَإٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ بِشِبْرٍ تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا، وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا، وَإِنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً » . (خ, م, ت, جه ) صحيح
২৪. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমার সম্পর্কে আমার বান্দার ধারণা মোতাবেক আমি।[13] আমি তার সাথে থাকি[14] যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে আমি তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি। যদি সে আমাকে মজলিসে স্মরণ করে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি। যদি সে আমার নিকট এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার নিকট একহাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার নিকট একহাত অগ্রসর হয় আমি তার নিকট একবাহু অগ্রসর হই। যদি সে আমার নিকট আসে হেঁটে আমি তার নিকট যাই দ্রুত”। [বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
25- عَنْ أبي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ قَالَ: إِذَا تَلَقَّانِي عَبْدِي بِشِبْرٍ تَلَقَّيْتُهُ بِذِرَاعٍ، وَإِذَا تَلَقَّانِي بِذِرَاعٍ تَلَقَّيْتُهُ بِبَاعٍ، وَإِذَا تَلَقَّانِي بِبَاعٍ أَتَيْتُهُ بِأَسْرَعَ» . (م) صحيح
২৫. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ বলেছেন: আমার বান্দা যখন এক বিঘত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি তার সাথে সাক্ষাত করি একহাত এগিয়ে। যখন সে একহাত এগিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করে আমি একবাহু এগিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করি। যখন সে আমার সাথে সাক্ষাত করে একবাহু এগিয়ে আমি তার নিকট আসি আরও দ্রুত পদক্ষেপে”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
26- عَنْ شُرَيْحٍ قَال: سَمِعْتُ رَجُلاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ قُمْ إِلَيَّ أَمْشِ إِلَيْكَ وَامْشِ إِلَيَّ أُهَرْوِلْ إِلَيْكَ» . (حم) صحيح
২৬. শুরাইহ্ রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে বনি আদম, তুমি আমার দিকে দাঁড়াও আমি তোমার দিকে চলব, তুমি আমার দিকে চল আমি তোমার দিকে দ্রুত পদক্ষেপে যাব”। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
27- عن معقل بن يسار -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : “يقولُ ربُّكم تبارك وتعالى: يا ابنَ آدم تَفَرَّغْ لعبادتي أملأ قلبَك غنًى، وأملأ يديك رزقًا، يا ابن آدم لا تباعد مني فأمْلأ قَلبَك فقرًا، وأملأ يديك شُغْلاً». (ك) صحيح لغيره
২৭. মা‘কাল ইব্ন ইয়াসার থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের রব বলেন: হে বনি আদম, তুমি আমার ইবাদতের জন্য মনোনিবেশ করো, আমি তোমার অন্তরকে সচ্ছলতায় ভরে দেব, তোমার হাত রিজিক দ্বারা পূর্ণ করে দেব। হে বনি আদম, তুমি আমার থেকে দূরে যেয়ো না, ফলে আমি তোমার অন্তর অভাবে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দু’ হাতকে কর্মব্যস্ত করে দেব”। [হাকেম] হাদিসটি সহিহ লি গায়রিহি।
যিকির ও নেককারদের সঙ্গের ফযিলত
28- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطُّرُقِ يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَنَادَوْا: هَلُمُّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ » قَالَ: « فَيَحُفُّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا قَالَ: فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ عز وجل -وَهُوَ أَعْلَمُ مِنْهُمْ- مَا يَقُولُ عِبَادِي؟ قَالُوا: يَقُولُونَ: يُسَبِّحُونَكَ وَيُكَبِّرُونَكَ وَيَحْمَدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ قَالَ: فَيَقُولُ: هَلْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ مَا رَأَوْكَ قَالَ: فَيَقُولُ: وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً، وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيدًا، وَتَحْمِيدًا وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيحًا، قَالَ: يَقُولُ: فَمَا يَسْأَلُونِي؟ قَالَ يَسْأَلُونَكَ الْجَنَّةَ، قَالَ: يَقُولُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصًا، وَأَشَدَّ لَهَا طَلَبًا، وَأَعْظَمَ فِيهَا رَغْبَةً، قَالَ: فَمِمَّ يَتَعَوَّذُونَ؟ قَالَ: يَقُولُونَ: مِنْ النَّارِ، قَالَ: يَقُولُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَا وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا، قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْهَا، كَانُوا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَارًا وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً، قَالَ: فَيَقُولُ: فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ، قَالَ: يَقُولُ مَلَكٌ مِنْ الْمَلَائِكَةِ: فِيهِمْ فُلَانٌ لَيْسَ مِنْهُمْ إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ، قَالَ: هُمْ الْجُلَسَاءُ لَا يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ ». (خ) صحيح
২৮. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর কতক ফেরেশতা রয়েছে তারা যিকিরকারীদের তালাশে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। যখন কোন কওমকে আল্লাহর যিকিরে মশগুল দেখে তারা একে অপরকে আহ্বান করে: তোমাদের লক্ষ্যের দিকে আস”। তিনি বলেন: “অতঃপর তাদেরকে তারা নিজেদের ডানা দ্বারা দুনিয়ার আসমান পর্যন্ত ঢেকে নেয়। তিনি বলেন: অতঃপর তাদের রব তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, -অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জানেন- আমার বান্দাগণ কি বলে? ফেরেশতারা বলে: তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার বড়ত্ব ঘোষণা করছে, আপনার প্রশংসা করছে ও আপনার মর্যাদা ঘোষণা করছে। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ বলেন: তারা কি আমাকে দেখেছে? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: না, আল্লাহর কসম, তারা আপনাকে দেখেনি। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ বলেন: যদি তারা আমাকে দেখত কেমন হত? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: যদি তারা আপনাকে দেখত তাহলে আরও কঠিন ইবাদত করত, অধিক মর্যাদা ও প্রশংসার ঘোষণা করত, অধিক তসবিহ পাঠ করত। তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: তারা আমার নিকট কি চায়? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়? তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: তারা কি জান্নাত দেখেছে? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: না, হে রব, তারা জান্নাত দেখে নি। তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: যদি তারা জান্নাত দেখত কেমন হত? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তার জন্য তারা আরো অধিক আগ্রহী হত, অধিক তলবকারী হত ও তার অধিক আশা পোষণ করত। তিনি বলেন: তারা কার থেকে পানাহ চায়? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: জাহান্নাম থেকে। তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: না, আল্লাহর কসম, হে রব তারা জাহান্নাম দেখেনি। তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: যদি তারা জাহান্নাম দেখত কেমন হত? তিনি বলেন: ফেরেশতারা বলে: যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে তার থেকে অধিক পলায়ন করত, তাকে অধিক ভয় করত। তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: তোমাদের সাক্ষী রাখছি আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তিনি বলেন: তাদের এক ফেরেশতা বলে: তাদের মধ্যে অমুক রয়েছে যে তাদের দলের নয়, সে অন্য কাজে এসেছে। তিনি বলেন: তারা এমন জমাত যাদের কারণে তাদের সাথীরা মাহরুম হয় না”। [বুখারি] হাদিসটি সহিহ।
29- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ: أَنَا مَعَ عَبْدِي إِذَا هُوَ ذَكَرَنِي وَتَحَرَّكَتْ شَفَتَاهُ”. (حم, جه) صحيح
২৯. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি আমার বান্দার সাথেই আছি[15] যখন সে আমাকে স্মরণ করে ও তার দুই ঠোট নড়ে”। [আহমদ, ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
30- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ -رضى الله عنهما- أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا قَالَ الْعَبْدُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، قَالَ: يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ، وَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ، قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَا شَرِيكَ لَهُ قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَلَا شَرِيكَ لِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، قَالَ: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا لِيَ الْمُلْكُ وَلِيَ الْحَمْدُ، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، قَال: صَدَقَ عَبْدِي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِي» . (جه, ت, عبد, حب) صححه الشيخ الألباني
৩০. আবু হুরায়রা ও আবু সায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছেন, তিনি বলেছেন: “বান্দা যখন বলে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ তিনি বলেন: আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমিই মহান। বান্দা যখন বলে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ তিনি বলেন: আমার বান্দা ঠিক বলেছে, একলা আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই। বান্দা যখন বলে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَا شَرِيكَ لَهُ তিনি বলেন: আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমার কোন শরীক নেই। বান্দা যখন বলে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ তিনি বলেন: আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, রাজত্ব আমার, আমার জন্যই প্রশংসা। বান্দা যখন বলে: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، তিনি বলেন: আমার বান্দা ঠিক বলেছে, আমি ছাড়া কোন হক ইলাহ নেই, আমার তৌফিক ব্যতীত পাপ থেকে বিরত থাকা ও ইবাদত করার ক্ষমতা নেই”। [ইব্ন মাজাহ, তিরমিযি, ইব্ন হুমাইদ ও ইব্ন হিব্বান] শায়খ আলবানি হাদিসটি সহিহ বলেছেন।
তওবা ও ইস্তেগফারের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা
31- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِنَّ عَبْدًا أَصَابَ ذَنْبًا -وَرُبَّمَا قَالَ: أَذْنَبَ ذَنْبًا- فَقَال: رَبِّ أَذْنَبْتُ -وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَبْتُ فَاغْفِرْ لِي- فَقَالَ رَبُّهُ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي، ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ أَصَابَ ذَنْبًا -أَوْ أَذْنَبَ ذَنْبًا- فَقَالَ: رَبِّ أَذْنَبْتُ -أَوْ أَصَبْتُ- آخَرَ فَاغْفِرْهُ. فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي. ثُمَّ مَكَثَ مَا شَاءَ اللَّهُ ثُمَّ أَذْنَبَ ذَنْبًا -وَرُبَّمَا قَالَ: أَصَابَ ذَنْبًا- قَالَ: قَالَ: رَبِّ أَصَبْتُ -أَوْ قَالَ: أَذْنَبْتُ- آخَرَ فَاغْفِرْهُ لِي. فَقَالَ: أَعَلِمَ عَبْدِي أَنَّ لَهُ رَبًّا يَغْفِرُ الذَّنْبَ وَيَأْخُذُ بِهِ؟ غَفَرْتُ لِعَبْدِي ثَلَاثًا فَلْيَعْمَلْ مَا شَاءَ » . ( خ, م ) صحيح
৩১. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “কোন বান্দা পাপে লিপ্ত হল, অথবা বলেছেন: কোন পাপ করল। অতঃপর বলে: হে আমার রব আমি পাপ করেছি, অথবা বলে: পাপে লিপ্ত হয়েছি আমাকে ক্ষমা করুন। তার রব বলেন: আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহ যে পরিমাণ চান সে বিরত থাকে। অতঃপর পাপে লিপ্ত হয় অথবা পাপ সংগঠিত করে, অতঃপর বলে: হে আমার রব, আমি দ্বিতীয় পাপ করেছি অথবা দ্বিতীয় পাপে লিপ্ত হয়েছি, আপনি তা ক্ষমা করুন। আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমার বান্দাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর আল্লাহর যে পরিমাণ চান সে বিরত থাকে। অতঃপর কোন পাপ করে অথবা বলেছেন: পাপে লিপ্ত হয়। তিনি বলেন: সে বলে: হে আমার রব আমি পাপ করেছি অথবা পাপে লিপ্ত হয়েছি আবারও, আপনি আমার জন্য তা ক্ষমা করুন। আল্লাহ বলেন: আমার বান্দা কি জানে তার রব রয়েছে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন ও তার জন্য পাকড়াও করেন? আমি আমার বান্দাকে তিনবারই ক্ষমা করে দিলাম, সে যা চায় আমল করুক”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
32- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: « إِنَّ إِبْلِيسَ قَالَ لِرَبِّهِ: بِعِزَّتِكَ وَجَلَالِكَ لَا أَبْرَحُ أُغْوِي بَنِي آدَمَ مَا دَامَتْ الْأَرْوَاحُ فِيهِمْ، فَقَالَ اللَّهُ: فَبِعِزَّتِي وَجَلَالِي لَا أَبْرَحُ أَغْفِرُ لَهُمْ مَا اسْتَغْفَرُونِي » ( حم ) صحيح
৩২. আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “ইবলিস তার রবকে বলেছে: আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি বনি আদমকে ভ্রষ্ট করতেই থাকব যতক্ষণ তাদের মধ্যে রূহ থাকে। আল্লাহ বলেন: আমার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম, আমি তাদের ক্ষমা করতে থাকব যতক্ষণ তারা আমার নিকট ইস্তেগফার করে”। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
33- عَنْ عَلِيِّ بْنِ رَبِيعَةَ قَالَ: شَهِدْتُ عَلِيًّا -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- وَأُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الرِّكَابِ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ، فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى ظَهْرِهَا، قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ، ثُمَّ قَالَ: ﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣﴾ ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ -ثُمَّ ضَحِكَ- فَقِيلَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ؟ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَعَلَ كَمَا فَعَلْتُ ثُمَّ ضَحِكَ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ؟ قَالَ: «إِنَّ رَبَّكَ يَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهِ إِذَا قَالَ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرِي». ( د, ت, حم ) صحيح
৩৩. আলি ইব্ন রাবিয়াহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আলিকে দেখেছি: “একটি চতুষ্পদ জন্তু আনা হল যেন সে তাতে আরোহণ করে, তিনি যখন তার ওপর নিজ পা রাখলেন বললেন: بِسْمِ اللَّهِ যখন তার পিঠে স্থির বসলেন বললেন: الْحَمْدُ لِلَّهِ، অতঃপর বললেন:﴿سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣﴾
“পবিত্র-মহান সেই সত্তা যিনি এগুলোকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আর আমরা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না”।[16] অতঃপর: الْحَمْدُ لِلَّهِ তিনবার, اللَّهُ أَكْبَرُ তিনবার বললেন, অতঃপর বললেন:
سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
(“আপনি কতই-না পবিত্র, নিশ্চয় আমি আমার নিজের নফসের উপর যুলুম করেছি, সুতরাং আমাকে ক্ষমা কুরন, নিশ্চয় আপনি ব্যতীত কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না”)
অতঃপর হাসলেন, বলা হল: হে আমিরুল মুমেনিন কি জন্য হাসলেন? তিনি বললেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি করেছেন যেরূপ আমি করেছি, অতঃপর তিনি হেসেছেন। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল কি জন্য হাসলেন? তিনি বললেন: “তোমার রব তার বান্দাকে দেখে আশ্চর্য হন, যখন সে বলে আমার পাপ ক্ষমা করুন, সে জানে আমি ব্যতীত কেউ পাপ ক্ষমা করবে না”। [আবু দাউদ, তিরমিযি ও আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
আল্লাহর সাক্ষাত যে পছন্দ করে আল্লাহ তার সাক্ষাত পছন্দ করেন
34- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: قَالَ اللَّهُ: « إِذَا أَحَبَّ عَبْدِي لِقَائِي أَحْبَبْتُ لِقَاءَهُ، وَإِذَا كَرِهَ لِقَائِي كَرِهْتُ لِقَاءَهُ » . ( خ ) صحيح البخاري
৩৪. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আমার বান্দা যখন আমার সাক্ষাত পছন্দ করে আমি তার সাক্ষাত পছন্দ করি। যখন সে আমার সাক্ষাত অপছন্দ করে আমি তার সাক্ষাত অপছন্দ করি”। [বুখারি] হাদিসটি সহিহ।
বান্দার জন্য আল্লাহর মহব্বতের নিদর্শন
35- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَن النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ عَبْدًا نَادَى جِبْرِيلَ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبَّهُ فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، فَيُنَادِي جِبْرِيلُ فِي أَهْلِ السَّمَاءِ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِيِ الْأَرْضِ » . ( خ ) صحيح
৩৫. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মহব্বত করেন জিবরিলকে ডেকে বলেন: আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব তুমি তাকে মহব্বত কর ফলে জিবরিল তাকে মহব্বত করেন। অতঃপর জিবরিল আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করেন: আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব তোমরা তাকে মহব্বত কর ফলে আসমানবাসীরা তাকে মহব্বত করে, অতঃপর জমিনে তার জনপ্রিয়তা রাখা হয়”। [বুখারি] হাদিসটি সহিহ।
36- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : « إِنَّ اللَّهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَقَالَ: إِنِّي أُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبَّهُ ». قَالَ: «فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، ثُمَّ يُنَادِي فِي السَّمَاءِ فَيَقُولُ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلَانًا فَأَحِبُّوهُ فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ » قَالَ: « ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ الْقَبُولُ فِي الْأَرْضِ، وَإِذَا أَبْغَضَ عَبْدًا دَعَا جِبْرِيلَ فَيَقُولُ: إِنِّي أُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضْهُ » قَالَ: «فَيُبْغِضُهُ جِبْرِيلُ ثُمَّ يُنَادِي فِي أَهْلِ السَّمَاءِ إِنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ فُلَانًا فَأَبْغِضُوهُ » قَالَ: فَيُبْغِضُونَهُ ثُمَّ تُوضَعُ لَهُ الْبَغْضَاءُ فِي الْأَرْضِ » . ( م ) صحيح
৩৬. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে মহব্বত করেন জিবরিলকে ডাকেন, অতঃপর বলেন: আমি অমুককে মহব্বত করি অতএব তুমি তাকে মহব্বত কর। তিনি বলেন: “ফলে জিবরিল তাকে মহব্বত করে, অতঃপর সে আসমানে ঘোষণা করে: আল্লাহ অমুককে মহব্বত করেন অতএব তোমরা তাকে মহব্বত কর, ফলে আসমানবাসী তাকে মহব্বত করে”। তিনি বলেন: “অতঃপর জমিনে তার জন্য গ্রহণযোগ্যতা রাখা হয়। পক্ষান্তরে যখন তিনি কোন বান্দাকে অপছন্দ করেন জিবরিলকে ডাকেন অতঃপর বলেন: আমি অমুককে অপছন্দ করি অতএব তুমি তাকে অপছন্দ কর”। তিনি বলেন: “ফলে জিবরিল তাকে অপছন্দ করে, অতঃপর সে আসমানবাসীদের মধ্যে ঘোষণা দেয়, আল্লাহ অমুককে অপছন্দ করে অতএব তোমরা তাকে অপছন্দ কর”। তিনি বলেন: ফলে তারা তাকে অপছন্দ করে, অতঃপর জমিনে তার জন্য নিন্দা রাখা হয়”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
মুসলিমদেরকে মহব্বত ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
37- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلَانًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ. أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ؟ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي قَالَ: يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلَانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ، أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي؟ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي قَالَ: يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ قَالَ: اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلَانٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي ». ( م ) صحيح
৩৭. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হে বনি আদম আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমাকে দেখনি, সে বলবে: হে আল্লাহ আপনাকে কিভাবে দেখব, অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেন: তুমি জান না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল তুমি তাকে দেখনি, তুমি জান না যদি তাকে দেখতে আমাকে তার নিকট পেতে? হে বনি আদম আমি তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিলাম তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি, সে বলবে: হে আমার রব, আমি কিভাবে আপনাকে খাদ্য দিব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেন: তুমি জান না আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল তুমি তাকে খাদ্য দাওনি, তুমি জান না যদি তাকে খাদ্য দিতে তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে। হে বনি আদম, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে পানি দাওনি, সে বলবে: হে আমার রব কিভাবে আমি আপনাকে পানি দেব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেন: আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল তুমি তাকে পানি দাওনি, মনে রেখ যদি তাকে পানি দিতে তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
প্রতিবেশীদের সাক্ষী ও তাদের প্রশংসার ফযিলত
38- عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ فَيَشْهَدُ لَهُ أَرْبَعَةٌ أَهْلُ أَبْيَاتٍ مِنْ جِيرَانِهِ الْأَدْنَيْنَ إِلَّا قَالَ: قَدْ قَبِلْتُ فِيهِ عِلْمَكُمْ فِيهِ وَغَفَرْتُ لَهُ مَا لَا تَعْلَمُونَ » ( حم ) حسن لغيره
৩৮. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখনই কোন মুসলিম মারা যায় অতঃপর তার প্রতিবেশীর নিকটতম চার ঘর তার জন্য সাক্ষ্য দেয়, তার সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন: তার সম্পর্কে তোমাদের জানা আমি কবুল করলাম, আর যা তোমরা জান না আমি ক্ষমা করে দিলাম”। [আহমদ] হাদিসটি হাসান লি গায়রিহি।
দুনিয়া-আখিরাতে মুমিনের দোষ আল্লাহর গোপন করা
39- عَنْ صَفْوَانَ بْنِ مُحْرِزٍ الْمَازِنِيِّ، قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا أَمْشِي مَعَ ابْنِ عُمَرَ ( آخِذٌ بِيَدِهِ إِذْ عَرَضَ رَجُلٌ فَقَالَ: كَيْفَ سَمِعْتَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ فِي النَّجْوَى؟ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ يُدْنِي الْمُؤْمِنَ فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ وَيَسْتُرُهُ، فَيَقُولُ: أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ أَيْ رَبِّ حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوبِهِ وَرَأَى فِي نَفْسِهِ أَنَّهُ هَلَكَ قَالَ: سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ، فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الْكَافِرُ وَالْمُنَافِقُونَ فَيَقُولُ الْأَشْهَادُ: هَؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ ». ( خ, م ) صحيح
৩৯. সাফওয়ান ইব্ন মুহরিয আল-মাযেনি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা আমি ইব্ন ওমরের সাথে তার হাত ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এলো। অতঃপর সে বলল: ‘নাজওয়া’ (গোপন কথা) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কি বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের নিকটবর্তী হবেন অতঃপর তার ওপর পর্দা ফেলে তাকে ঢেকে নিবেন এবং বলবেন: মনে পড়ে অমুক পাপ, মনে পড়ে অমুক পাপ? সে বলবে: হ্যাঁ, হে আমার রব, অবশেষে সে যখন তার সকল পাপ স্বীকার করবে এবং নিজেকে মনে করবে যে, সে ধ্বংস হয়ে গেছে, আল্লাহ বলবেন: তোমার ওপর দুনিয়াতে এসব গোপন রেখেছি আজ আমি তা তোমার জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি। অতঃপর তাকে তার নেক আমলের দফতর দেয়া হবে, পক্ষান্তরে কাফের ও মুনাফিক সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে: এরা তাদের রবের ওপর মিথ্যারোপ করেছিল, জেনে রেখ জালেমদের ওপর আল্লাহর লা‘নত”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
মুমিনের ফযিলত
40- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ: إِنَّ عَبْدِي الْمُؤْمِنَ عِنْدِي بِمَنْزِلَةِ كُلِّ خَيْرٍ يَحْمَدُنِي وَأَنَا أَنْزِعُ نَفْسَهُ مِنْ بَيْنِ جَنْبَيْهِ» . ( حم ) حسن
৪০. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমার মুমিন বান্দা আমার নিকট এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত, যেখানে সে সকল কল্যাণের হকদার, সে আমার প্রশংসা করে এমতাবস্থায় আমি তার দু’পাশ থেকে তার রূহ কব্জা করি”। [আহমদ] হাদিসটি হাসান।
গরিবকে সুযোগ দেয়া ও ক্ষমা করার ফযিলত
41- عَنْ حُذَيْفَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «تَلَقَّتْ الْمَلَائِكَةُ رُوحَ رَجُلٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَقَالُوا: أَعَمِلْتَ مِنْ الْخَيْرِ شَيْئًا؟ قَالَ: لَا، قَالُوا: تَذَكَّرْ. قَالَ: كُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَآمُرُ فِتْيَانِي أَنْ يُنْظِرُوا الْمُعْسِرَ وَيَتَجَوَّزُوا عَنْ الْمُوسِرِ قَالَ: قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلّ: تَجَوَّزُوا عَنْهُ». ( خ,م ) صحيح
৪১. হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্বেকার জনৈক ব্যক্তির রূহের সাথে ফেরেশতারা সাক্ষাত করে বলে: তুমি কি কোন কল্যাণ করেছ? সে বলে: না, তারা বলেন: স্মরণ কর। সে বলে: আমি মানুষদের ঋণ দিতাম, অতঃপর আমার যুবকদের বলতাম তারা যেন গরিবকে সুযোগ দেয় ও ধনীর বিলম্বিতা ক্ষমা করে”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
42- عَنْ أَبِي مَسْعُودٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «حُوسِبَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مِنْ الْخَيْرِ شَيْءٌ إِلَّا أَنَّهُ كَانَ يُخَالِطُ النَّاسَ، وَكَانَ مُوسِرًا فَكَانَ يَأْمُرُ غِلْمَانَهُ أَنْ يَتَجَاوَزُوا عَنْ الْمُعْسِرِ» قَالَ: «قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: نَحْنُ أَحَقُّ بِذَلِكَ مِنْهُ تَجَاوَزُوا عَنْهُ». ( م ) صحيح
৪২. আবু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্বের জনৈক ব্যক্তিকে জেরা করা হয়েছে, কিন্তু তার কোন কল্যাণ পাওয়া যায়নি, সে ছিল ধনী, মানুষের সাথে লেনদেন করত, আর তার লোকদের বলত, যেন গরিবকে ক্ষমা করে”। তিনি বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বললেন: তার চেয়ে আমি ক্ষমা করার অধিক হকদার, তাকে ক্ষমা কর”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
43- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-: عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ رَجُلاً لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ، وَكَانَ يُدَايِنُ النَّاسَ فَيَقُولُ لِرَسُولِه: خُذْ مَا تَيَسَّرَ وَاتْرُكْ مَا عَسُرَ وَتَجَاوَزْ، لَعَلَّ اللَّهَ تَعَالَى أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا، فَلَمَّا هَلَكَ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ: هَلْ عَمِلْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ قَالَ: لَا إِلَّا أَنَّهُ كَانَ لِي غُلَامٌ وَكُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَإِذَا بَعَثْتُهُ لِيَتَقَاضَى قُلْتُ لَهُ: خُذْ مَا تَيَسَّرَ وَاتْرُكْ مَا عَسُرَ وَتَجَاوَزْ لَعَلَّ اللَّهَ يَتَجَاوَزُ عَنَّا، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: قَدْ تَجَاوَزْتُ عَنْكَ». ( ن ) حسن
৪৩. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জনৈক ব্যক্তি কোনো কল্যাণ করেনি, সে মানুষকে ঋণ দিত, অতঃপর তার দূতকে বলত: যা সহজ গ্রহণ কর, যা কষ্টের তা ত্যাগ কর ও ছাড় দাও। হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। যখন সে মারা গেল, আল্লাহ তাকে বললেন: তুমি কোন কল্যাণ করেছ? সে বলে: না, তবে আমার এক কর্মচারী ছিল, আমি মানুষকে ঋণ দিতাম, যখন আমি তাকে উসুল করার জন্য প্রেরণ করেছি তাকে বলেছি: যা সহজ হয় গ্রহণ কর, যা কষ্টকর ত্যাগ কর ও ক্ষমা কর, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ বলবেন: আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম”। [নাসায়ি] হাদিসটি হাসান।
আল্লাহর অলিদের সাথে দুশমনি করার পাপ
44- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْب،ِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْه،ِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِه،ِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّه،ُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ». ( خ ) صحيح
৪৪. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যে আমার অলির সাথে দুশমনি করবে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করেছি। আমার বান্দার ওপর আমি যা ফরয করেছি আমার নিকট তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন বস্তু দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করেনি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে অবশেষে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি আমি তার কানে পরিণত যা দ্বারা সে শ্রবণ করে। তার চোখে পরিণত হই যা দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে, তার পায়ে পরিণত হই যা দ্বারা সে হাঁটে[17]। যদি সে আমার নিকট চায় আমি তাকে অবশ্যই দিব, যদি সে আমার নিকট পানাহ চায় আমি তাকে অবশ্যই পানাহ দিব। আমার করণীয় কোন কাজে আমি দ্বিধা করি না যেমন দ্বিধা করি মুমিনের নফসের সময়, সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আমি তার কষ্টকে অপছন্দ করি”। [বুখারি] হাদিসটি সহিহ।
আল্লাহর জন্য মহব্বতের ফযিলত
45- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي، الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي».( م ) صحيح
৪৫. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন: আমার বড়ত্বের জন্য মহব্বতকারীরা কোথায়, আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করব, যখন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া নেই”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
46- عَنْ أَبِي مُسْلِمٍ الْخَوْلَانِيِّ عَنْ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَحْكِي عَنْ رَبِّهِ يَقُولُ: «الْمُتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ» قَالَ: فَخَرَجْتُ حَتَّى لَقِيتُ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ فَذَكَرْتُ لَهُ حَدِيثَ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ فَقَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَحْكِي عَنْ رَبِّهِ -عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ: «حَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ، وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَبَاذِلِينَ فِيّ،َ وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلْمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ، وَالْمُتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ». (حم ) صحيح بمجموع طرقه
৪৬. আবু মুসলিম খাওলানি রাহিমাহুল্লাহ, মু‘আয ইব্ন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি: “আল্লাহর নিমিত্তে মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ায় নুরের মিম্বারে অবস্থান করবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না”। তিনি বলেন: (মু‘আযের কাছ থেকে) বের হয়ে উবাদাহ ইব্ন সামেতের সাথে দেখা করি, আমি তাকে মু‘আয ইব্ন জাবালের হাদিস বলি: তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি: “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে খরচকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে সাক্ষাতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আল্লাহর জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ার নিচে নূরের মিম্বারে অবস্থান করবে, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না”। [আহমদ] এ হাদিসটি সব ক’টি সনদের বিবেচনায় সহিহ।
47- عن معاذ بن جبل -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: « قال الله عز وجل: المتحابون في جلالي لهم منابر من نور يغبطهم النبيون والشهداء». (ت) حسن
৪৭. মুয়ায ইব্ন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য নূরের মিম্বার রয়েছে, যাদের সাথে ঈর্ষা করবে নবী ও শহীদগণ”। [তিরমিযি] হাদিসটি হাসান।
জান্নাত কষ্ট ও জাহান্নাম প্রবৃত্তি দ্বারা আবৃত
48- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّةَ قَالَ لِجِبْرِيلَ: اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا. فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا، ثُمَّ حَفَّهَا بِالْمَكَارِهِ ثُمَّ قَالَ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا، فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ، فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَدْخُلَهَا أَحَدٌ، قَال:َ فَلَمَّا خَلَقَ اللَّهُ النَّارَ قَالَ يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَا يَسْمَعُ بِهَا أَحَدٌ فَيَدْخُلُهَا، فَحَفَّهَا بِالشَّهَوَاتِ ثُمَّ قَالَ: يَا جِبْرِيلُ اذْهَبْ فَانْظُرْ إِلَيْهَا فَذَهَبَ فَنَظَرَ إِلَيْهَا ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: أَيْ رَبِّ وَعِزَّتِكَ لَقَدْ خَشِيتُ أَنْ لَا يَبْقَى أَحَدٌ إِلَّا دَخَلَهَا». ( د, ت, ن, حم ) حسن
৪৮. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন জিবরিলকে বলেছেন: যাও তা দেখ। সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলল: হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে প্রবেশ ব্যতীত থাকবে না। অতঃপর তা কষ্ট দ্বারা ঢেকে দিলেন। অতঃপর বললেন: হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলল: হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে কেউ প্রবেশ করবে না। তিনি বলেন: আল্লাহ যখন জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন বলেছেন, হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলল: হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম, তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে কখনো প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি তা প্রবৃত্তি দ্বারা ঢেকে দিলেন অতঃপর বললেন: হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলল: হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে প্রবেশ ব্যতীত কেউ বাকি থাকবে না”। [আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি ও আহমদ] হাদিসটি হাসান।
নেক বান্দাদের জন্য তৈরি কিছু নিয়ামতের বর্ণনা
49- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم «قَالَ اللَّهُ تَبَارَك وتعَالى: أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ». ( خ، م ) صحيح
৪৯. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য তৈরি করেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার কল্পনা হয়নি”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
জান্নাতবাসীদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি
50- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ لِأَهْلِ الْجَنَّةِ: يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ، فَيَقُولُونَ: لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِي يَدَيْك،َ فَيَقُولُ: هَلْ رَضِيتُمْ؟ فَيَقُولُونَ: وَمَا لَنَا لَا نَرْضَى يَا رَبِّ، وَقَدْ أَعْطَيْتَنَا مَا لَمْ تُعْطِ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، فَيَقُولُ أَلَا أُعْطِيكُمْ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُونَ: يَا رَبِّ وَأَيُّ شَيْءٍ أَفْضَلُ مِنْ ذَلِكَ؟ فَيَقُولُ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي فَلَا أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا». ( خ, م ) صحيح
৫০. আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতিদের বলবেন: হে জান্নাতিগণ, তারা বলবে: সদা উপস্থিত হে আমাদের রব, আপনার সন্তুষ্টিবিধানে আমি সদা সচেষ্ট, সকল কল্যাণ আপনার হাতে। তিনি বলবেন: তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবে: হে আমাদের রব আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন যা আপনার মখলুকের কাউকে দেননি! তিনি বলবেন: আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম দিব না? তারা বলবে: হে রব এর চেয়ে উত্তম কোন বস্তু? তিনি বলবেন: আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করছি এরপর কখনো তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হব না”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
51- عن جابر -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «إذا دَخَلَ أَهْلُ الجَنَّةِ الجَنَّة قال الله جَلَّ وعَلَا: أَتَشْتَهُوْنَ شَيئًا؟ قالوا: رَبَّناَ وَمَا فْوقَ ما أَعْطيتَنْا؟ فيقول: بل رِضَايَ أَكْبَر». ( حب ) إسناده صحيح
৫১. জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তোমরা কিছু চাও? তারা বলবে: হে আমাদের রব, আপনি আমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম কি? তিনি বলবেন: বরং আমার সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়”। [ইব্ন হিব্বান] হাদিসটির সনদ সহিহ।
জান্নাতিদের তাদের প্রার্থিত বস্তু প্রদান করা
52- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَوْمًا يُحَدِّثُ -وَعِنْدَهُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ-: «أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اسْتَأْذَنَ رَبَّهُ فِي الزَّرْع.ِ فَقَالَ لَهُ: أَوَلَسْتَ فِيمَا شِئْتَ؟ قَالَ: بَلَى وَلَكِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَزْرَعَ، فَأَسْرَعَ وَبَذَرَ فَتَبَادَرَ الطَّرْفَ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَاؤُهُ وَاسْتِحْصَادُهُ وَتَكْوِيرُهُ أَمْثَالَ الْجِبَالِ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: دُونَكَ يَا ابْنَ آدَمَ فَإِنَّهُ لَا يُشْبِعُكَ شَيْءٌ». فَقَالَ الْأَعْرَابِيُّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ لَا تَجِدُ هَذَا إِلَّا قُرَشِيًّا أَوْ أَنْصَارِيًّا فَإِنَّهُمْ أَصْحَابُ زَرْعٍ، فَأَمَّا نَحْنُ فَلَسْنَا بِأَصْحَابِ زَرْعٍ. فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . (خ) صحيح
৫২. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কথা বলছিলেন, -তার নিকট গ্রামের এক ব্যক্তি ছিল-: “জান্নাতিদের জনৈক ব্যক্তি তার রবের নিকট কৃষির জন্য অনুমতি চেয়েছে। আল্লাহ তাকে বললেন: তুমি কি তাতে নেই যা চেয়েছ? সে বলল: অবশ্যই, তবে আমি কৃষি করতে চাই। সে দ্রুত চাষ করল, বীজ বপন করল, চোখের পলকে তার চারা গজাল, কাণ্ড সোজা হল, ফসল কাঁটার সময় হল এবং তার স্তূপ হল পাহাড়ের ন্যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হে বনি আদম তুমি এসব গ্রহণ কর, কারণ কোন জিনিস তোমাকে তৃপ্ত করবে না। গ্রামের লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল এ ব্যক্তি কুরাইশি বা আনসারি ব্যতীত কেউ নয়, কারণ তারা কৃষি করে, কিন্তু আমরা কৃষক নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন”। [বুখারি] হাদিসটি সহিহ।
জান্নাতের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী
53- عَنْ الْمُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- رْفَعُهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً؟ قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ فَيُقَالُ لَهُ: ادْخُلْ الْجَنَّةَ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ؟ فَيُقَالُ لَهُ: أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا؟ فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ لَكَ ذَلِكَ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ فَقَالَ فِي الْخَامِسَة:ِ رَضِيتُ رَبِّ، قَالَ: رَبِّ فَأَعْلَاهُمْ مَنْزِلَةً؟ قَالَ: أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِي وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَر» قَالَ: وَمِصْدَاقُهُ فِي كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: ﴿فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ ١٧﴾ . (م) صحيح
৫৩. মুগিরা ইব্ন শু‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মরফূ[18] হিসেবে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “মুসা আলাইহিস সালাম তার রবকে জিজ্ঞাসা করেন জান্নাতিদের নিম্ন স্তর কি? তিনি বলেন: সে ব্যক্তি যে জান্নাতিদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে, তাকে বলা হবে: জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে: হে আমার রব কিভাবে, অথচ লোকেরা তাদের স্থানে পৌঁছে গেছে, তাদের হক তারা গ্রহণ করেছে? তাকে বলা হবে: তুমি কি সন্তুষ্ট যে তোমার জন্য দুনিয়ার বাদশাহদের রাজত্বের ন্যায় রাজত্ব হোক? সে বলবে: হে আমার রব, আমি সন্তুষ্ট। তিনি বলবেন: তোমার জন্য তা, এবং তার সমান, তার সমান ও তার সমান, পঞ্চম বারে বলল: হে আমার রব আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করেন: হে আমার রব, তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী? তিনি বললেন: তাদেরকে আমি চেয়েছি, আমি নিজ হাতে তাদের সম্মান রোপণ করেছি ও তার ওপর মোহর এঁটে দিয়েছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং মানুষের অন্তরে কল্পনা হয়নি। তিনি বলেন: কুরআনে তার নমুনা হচ্ছে:
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ ١٧ ﴾ [السجدة : ١٧]
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে”।[19] [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি
54- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنِّي لَأَعْلَمُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْهَا وَآخِرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولاً الْجَنَّةَ: رَجُلٌ يَخْرُجُ مِنْ النَّارِ حَبْوًا فَيَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَهُ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ فَيَأْتِيهَا، فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى لَهُ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ قَالَ: فَيَأْتِيهَا فَيُخَيَّلُ إِلَيْهِ أَنَّهَا مَلْأَى، فَيَرْجِعُ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ وَجَدْتُهَا مَلْأَى، فَيَقُولُ اللَّهُ لَهُ: اذْهَبْ فَادْخُلْ الْجَنَّةَ فَإِنَّ لَكَ مِثْلَ الدُّنْيَا وَعَشَرَةَ أَمْثَالِهَا -أَوْ إِنَّ لَكَ عَشَرَةَ أَمْثَالِ الدُّنْيَا- قَالَ: فَيَقُولُ: أَتَسْخَرُ بِي أَوْ أَتَضْحَكُ بِي وَأَنْتَ الْمَلِكُ؟» ،قال: لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، قَالَ: فَكَانَ يُقَالُ: ذَاكَ أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً. ( خ, م ) صحيح
৫৪. আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে: জনৈক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন: যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবে: হে আমার রব আমি তা পূর্ণ পেয়েছি, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেন: যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি বলেন: সে জান্নাতে আসবে তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবে: হে আমার রব, আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রয়েছে, -অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার দশগুণ জান্নাত রয়েছে,- তিনি বলেন: সে বলবে: হে আমার রব আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি বাদশাহ?” তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি হাসতে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেন: তখন বলা হত: এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
55- عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى الله عليه وسلم قَالَ: «آخِرُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ رَجُلٌ فَهْوَ يَمْشِي مَرَّةً، وَيَكْبُو مَرَّةً، وَتَسْفَعُهُ النَّارُ مَرَّةً، فَإِذَا مَا جَاوَزَهَا الْتَفَتَ إِلَيْهَا، فَقَالَ: تَبَارَكَ الَّذِي نَجَّانِي مِنْكِ لَقَدْ أَعْطَانِي اللَّهُ شَيْئًا مَا أَعْطَاهُ أَحَدًا مِنْ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ. فَتُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ الشَّجَرَةِ فَلِأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا وَأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ لَعَلِّي إِنَّ أَعْطَيْتُكَهَا سَأَلْتَنِي غَيْرَهَا فَيَقُولُ: لَا يَا رَبِّ وَيُعَاهِدُهُ أَنْ لَا يَسْأَلَهُ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذِرُهُ؛ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْه،ِ فَيُدْنِيهِ مِنْهَا فَيَسْتَظِلُّ بِظِلِّهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَائِهَا، ثُمَّ تُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ هِيَ أَحْسَنُ مِنْ الْأُولَى فَيَقُول:ُ أَيْ رَبِّ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ لِأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا وَأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا، فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ أَلَمْ تُعَاهِدْنِي أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَهَا؟ فَيَقُولُ: لَعَلِّي إِنْ أَدْنَيْتُكَ مِنْهَا تَسْأَلُنِي غَيْرَهَا فَيُعَاهِدُهُ أَنْ لَا يَسْأَلَهُ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذِرُه؛ُ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْهِ، فَيُدْنِيهِ مِنْهَا فَيَسْتَظِلُّ بِظِلِّهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَائِهَا ثُمَّ تُرْفَعُ لَهُ شَجَرَةٌ عِنْدَ بَابِ الْجَنَّةِ هِيَ أَحْسَنُ مِنْ الْأُولَيَيْنِ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ؟ أَدْنِنِي مِنْ هَذِهِ لِأَسْتَظِلَّ بِظِلِّهَا وَأَشْرَبَ مِنْ مَائِهَا لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا، فَيَقُول:ُ يَا ابْنَ آدَمَ أَلَمْ تُعَاهِدْنِي أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَهَا؟ قَالَ بَلَى يَا رَبِّ هَذِهِ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهَا وَرَبُّهُ يَعْذِرُهُ؛ لِأَنَّهُ يَرَى مَا لَا صَبْرَ لَهُ عَلَيْهَا فَيُدْنِيهِ مِنْهَا، فَإِذَا أَدْنَاهُ مِنْهَا فَيَسْمَعُ أَصْوَاتَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْخِلْنِيهَا، فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ مَا يَصْرِينِي مِنْك؟َ أَيُرْضِيكَ أَنْ أُعْطِيَكَ الدُّنْيَا وَمِثْلَهَا مَعَهَا؟ قَالَ يَا رَبِّ أَتَسْتَهْزِئُ مِنِّي وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟» فضَحِكَ ابْنُ مَسْعُودٍ فَقَالَ: أَلَا تَسْأَلُونِي مِمَّ أَضْحَكُ؟ فَقَالُوا: مِمَّ تَضْحَكُ؟ قَالَ: هَكَذَا ضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم , فَقَالُوا: مِمَّ تَضْحَكُ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «مِنْ ضِحْكِ رَبِّ الْعَالَمِينَ حِينَ قَالَ: أَتَسْتَهْزِئُ مِنِّي وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ؟ فَيَقُولُ: إِنِّي لَا أَسْتَهْزِئُ مِنْكَ وَلَكِنِّي عَلَى مَا أَشَاءُ قَادِرٌ». (م) صحيح
৫৫. ইব্ন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশ করবে এমন ব্যক্তি, যে একবার চলবে একবার হোঁচট খাবে, একবার আগুন তাকে ঝলসে দিবে, যখন সে তা অতিক্রম করবে তার দিকে ফিরে তাকাবে, অতঃপর বলবে: বরকতময় সে সত্তা যিনি আমাকে তোমার থেকে নাজাত দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে এমন বস্তু দান করেছেন যা পূর্বাপর কাউকে দান করেন নি। অতঃপর তার জন্য একটি গাছ জাহির করা হবে, সে বলবে: হে আমার রব আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন, যেন তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি ও তার পানি পান করতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হে আদম সন্তান যদি আমি তোমাকে এটা দান করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু তলব করবে। সে বলবে: না, হে আমার রব, তাকে ওয়াদা দিবে যে এ ছাড়া কিছু তলব করবে না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য সম্ভব হবে না। তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, ফলে সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার জন্য অপর গাছ জাহির করা হবে, যা পূর্বের তুলনায় অধিক সুন্দর। সে বলবে: হে আমার রব, আমাকে এর নিকটবর্তী করুন, যেন তার পানি পান করতে পারি ও তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি, এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেন: হে বনি আদম তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? তিনি বলবেন: আমি যদি তোমাকে এর নিকটবর্তী করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু চাইবে, ফলে সে তাকে ওয়াদা দিবে যে, অন্য কিছু চাইবে না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও তার পানি পান করবে। অতঃপর তার সামনে জাহির করা হবে একটি গাছ জান্নাতের দরজার মুখে, যা পূর্বের দু’টি গাছ থেকে অধিক সুন্দর। সে বলবে: হে আমার রব, আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন আমি তার ছায়া গ্রহণ করব ও তার পানি পান করব, এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেন: হে বনি আদম তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? সে বলবে: অবশ্যই হে আমার রব, এটাই আর কিছু চাইব না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তিনি তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, যখন তার নিকটবর্তী করা হবে সে জান্নাতিদের আওয়াজ শুনবে, সে বলবে: হে আমার রব, আমাকে তাতে প্রবেশ করান, তিনি বলবেন: হে বনি আদম, কিসে তোমার থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দিবে? তুমি কি সন্তুষ্ট যে আমি তোমাকে দুনিয়া ও তার সাথে তার সমান দান করি? সে বলবে: হে আমার রব আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি দু’জাহানের রব? ইব্ন মাসউদ হেসে দিলেন, তিনি বললেন: তোমরা আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ না আমি কেন হাসছি? তারা বলল: কেন হাসছেন? তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ হেসেছেন। তারা (সাহাবিরা) বলল: হে আল্লাহর রাসূল কেন হাসছেন? তিনি বললেন: আল্লাহর হাসি থেকে যখন সে বলল: আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি দু’ জাহানের রব? তিনি বললেন: আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, তবে আমি যা চাই করতে পারি”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
56- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، أَنَّ النَّاسَ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «هَلْ تُضَارُّونَ فِي الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ؟» قَالُوا: لَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «فَإِنَّكُمْ تَرَوْنَهُ كَذَلِكَ، يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ: مَنْ كَانَ يَعْبُدُ شَيْئًا فَلْيَتْبَعْهُ، فَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الشَّمْسَ الشَّمْسَ، وَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الْقَمَرَ الْقَمَر،َ وَيَتْبَعُ مَنْ كَانَ يَعْبُدُ الطَّوَاغِيتَ الطَّوَاغِيتَ، وَتَبْقَى هَذِهِ الْأُمَّةُ فِيهَا شَافِعُوهَا -أَوْ مُنَافِقُوهَا شَكَّ إِبْرَاهِيمُ – فَيَأْتِيهِمْ اللَّهُ فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ فَيَقُولُونَ: هَذَا مَكَانُنَا حَتَّى يَأْتِيَنَا رَبُّنَا فَإِذَا جَاءَنَا رَبُّنَا عَرَفْنَاهُ، فَيَأْتِيهِمْ اللَّهُ فِي صُورَتِهِ الَّتِي يَعْرِفُونَ فَيَقُولُ: أَنَا رَبُّكُمْ فَيَقُولُونَ: أَنْتَ رَبُّنَا فَيَتْبَعُونَهُ، وَيُضْرَبُ الصِّرَاطُ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ، فَأَكُونُ أَنَا وَأُمَّتِي أَوَّلَ مَنْ يُجِيزُهَا, وَلَا يَتَكَلَّمُ يَوْمَئِذٍ إِلَّا الرُّسُلُ، وَدَعْوَى الرُّسُلِ يَوْمَئِذٍ: اللَّهُمَّ سَلِّمْ سَلِّمْ وَفِي جَهَنَّمَ كَلَالِيبُ مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَان،ِ هَلْ رَأَيْتُمْ السَّعْدَان؟» قَالُوا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ, قَال:َ « فَإِنَّهَا مِثْلُ شَوْكِ السَّعْدَانِ غَيْرَ أَنَّهُ لَا يَعْلَمُ مَا قَدْرُ عِظَمِهَا إِلَّا اللَّهُ، تَخْطَفُ النَّاسَ بِأَعْمَالِهِمْ؛ فَمِنْهُمْ الْمُوبَقُ بَقِيَ بِعَمَلِهِ، وَمِنْهُمْ الْمُخَرْدَلُ أَوْ الْمُجَازَى أَوْ نَحْوُه،ُ ثُمَّ يَتَجَلَّى حَتَّى إِذَا فَرَغَ اللَّهُ مِنْ الْقَضَاءِ بَيْنَ الْعِبَادِ، وَأَرَادَ أَنْ يُخْرِجَ بِرَحْمَتِهِ مَنْ أَرَادَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ أَمَرَ الْمَلَائِكَةَ أَنْ يُخْرِجُوا مِنْ النَّارِ مَنْ كَانَ لَا يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا مِمَّنْ أَرَادَ اللَّهُ أَنْ يَرْحَمَهُ مِمَّنْ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَيَعْرِفُونَهُمْ فِي النَّارِ بِأَثَرِ السُّجُودِ، تَأْكُلُ النَّارُ ابْنَ آدَمَ إِلَّا أَثَرَ السُّجُودِ، حَرَّمَ اللَّهُ عَلَى النَّارِ أَنْ تَأْكُلَ أَثَرَ السُّجُود،ِ فَيَخْرُجُونَ مِنْ النَّارِ قَدْ امْتُحِشُوا فَيُصَبُّ عَلَيْهِمْ مَاءُ الْحَيَاةِ، فَيَنْبُتُونَ تَحْتَهُ كَمَا تَنْبُتُ الْحِبَّةُ فِي حَمِيلِ السَّيْلِ، ثُمَّ يَفْرُغُ اللَّهُ مِنْ الْقَضَاءِ بَيْنَ الْعِبَادِ، وَيَبْقَى رَجُلٌ مِنْهُمْ مُقْبِلٌ بِوَجْهِهِ عَلَى النَّارِ هُوَ آخِرُ أَهْلِ النَّارِ دُخُولاً الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ اصْرِفْ وَجْهِي عَنْ النَّارِ فَإِنَّهُ قَدْ قَشَبَنِي رِيحُهَا وَأَحْرَقَنِي ذَكَاؤُهَا, فَيَدْعُو اللَّهَ بِمَا شَاءَ أَنْ يَدْعُوَهُ، ثُمَّ يَقُولُ اللَّهُ: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ أَعْطَيْتُكَ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَنِي غَيْرَهُ فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهُ، وَيُعْطِي رَبَّهُ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ مَا شَاءَ فَيَصْرِفُ اللَّهُ وَجْهَهُ عَنْ النَّارِ، فَإِذَا أَقْبَلَ عَلَى الْجَنَّةِ وَرَآهَا سَكَتَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَيْ رَبِّ قَدِّمْنِي إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ. فَيَقُولُ اللَّهُ لَه:ُ أَلَسْتَ قَدْ أَعْطَيْتَ عُهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ أَنْ لَا تَسْأَلَنِي غَيْرَ الَّذِي أُعْطِيتَ أَبَدًا، وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ وَيَدْعُو اللَّهَ حَتَّى يَقُولَ: هَلْ عَسَيْتَ إِنْ أُعْطِيتَ ذَلِكَ أَنْ تَسْأَلَ غَيْرَهُ فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ لَا أَسْأَلُكَ غَيْرَهُ، وَيُعْطِي مَا شَاءَ مِنْ عُهُودٍ وَمَوَاثِيقَ فَيُقَدِّمُهُ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ، فَإِذَا قَامَ إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ انْفَهَقَتْ لَهُ الْجَنَّةُ فَرَأَى مَا فِيهَا مِنْ الْحَبْرَةِ وَالسُّرُورِ فَيَسْكُتُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَسْكُتَ، ثُمَّ يَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَدْخِلْنِي الْجَنَّةَ فَيَقُولُ اللَّهُ: أَلَسْتَ قَدْ أَعْطَيْتَ عُهُودَكَ وَمَوَاثِيقَكَ أَنْ لَا تَسْأَلَ غَيْرَ مَا أُعْطِيتَ، فَيَقُولُ: وَيْلَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مَا أَغْدَرَكَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ لَا أَكُونَنَّ أَشْقَى خَلْقِكَ فَلَا يَزَالُ يَدْعُو حَتَّى يَضْحَكَ اللَّهُ مِنْهُ، فَإِذَا ضَحِكَ مِنْهُ قَالَ لَهُ: ادْخُلْ الْجَنَّةَ، فَإِذَا دَخَلَهَا قَالَ اللَّهُ لَهُ: تَمَنَّهْ، فَسَأَلَ رَبَّهُ وَتَمَنَّى حَتَّى إِنَّ اللَّهَ لَيُذَكِّرُهُ يَقُولُ: كَذَا وَكَذَا حَتَّى انْقَطَعَتْ بِهِ الْأَمَانِيُّ قَالَ اللَّهُ: ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ». قَالَ عَطَاءُ بْنُ يَزِيدَ: وَأَبُو سَعِيدٍ لْخُدْريُّ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ، لَا يَرُدُّ عَلَيْهِ مِنْ حَدِيثِهِ شَيْئًا, حَتَّى إِذَا حَدَّثَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: «ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ». قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ: وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ مَعَهُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ قَالَ أَبُو هُرَيْرَة:َ مَا حَفِظْتُ إِلَّا قَوْلَهُ: ذَلِكَ لَكَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ، قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ: أَشْهَدُ أَنِّي حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَوْلَهُ: «ذَلِكَ لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ». قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: فَذَلِكَ الرَّجُلُ آخِرُ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولاً الْجَنَّةَ. ( خ, م ) صحيح
৫৬. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, লোকেরা বলল: হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “চৌদ্দ তারিখের রাতে চাঁদ দেখায় তোমরা কি সন্দেহ (বা মতবিরোধ) কর?” তারা বলল: না, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: “তোমরা আল্লাহকে সেভাবে (স্পষ্ট) দেখবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সকল মানুষকে জমা করে বলবেন: যে যে বস্তুর ইবাদত করত সে যেন তার পিছু নেয়, ফলে যে সূর্যের ইবাদত করত সে সূর্যের অনুগামী হবে। যে চাঁদের ইবাদত করত সে চাঁদের অনুগামী হবে। যে তাগুতের ইবাদত করত সে তাগুতের অনুগামী হবে। শুধু এ উম্মত অবশিষ্ট থাকবে, তাতে থাকবে তার সুপারিশকারীগণ –অথবা তার মুনাফিকরা, বর্ণনাকারী ইবরাহিম সন্দেহ পোষণ করেছেন[20], অতঃপর তাদের নিকট আল্লাহ এসে বলবেন: আমি তোমাদের রব, তারা বলবে: আমরা এখানে অবস্থান করছি যতক্ষণ না আমাদের রব আমাদের নিকট আসেন, যখন আমাদের রব আসবেন আমরা তাকে চিনব, ফলে আল্লাহ সে রূপে তাদের নিকট আসবেন যে রূপে তারা তাকে চিনে। অতঃপর তিনি বলবেন: আমি তোমাদের রব, তারা বলবে: আপনি আমাদের রব, অতঃপর তারা তার অনুগামী হবে। আর জাহান্নামের পৃষ্ঠদেশে পুলসিরাত কায়েম করা হবে, আমি এবং আমার উম্মত সর্বপ্রথম তা অতিক্রম করব। সে দিন রাসূলগণ ব্যতীত কেউ কথা বলবে না। সে দিন রাসূলগণের বাণী হবে: আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম। জাহান্নামে রয়েছে সা‘দানের[21] কাঁটার ন্যায় হুক, তোমরা সা‘দান দেখেছ?” তারা বলল: হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন: “তা সা‘দানের কাঁটার ন্যায়, তবে তার বিশালত্বের পরিমাণ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। সে মানুষদেরকে তাদের আমল অনুযায়ী ছো মেরে নিয়ে নিবে। তাদের কেউ ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ আমলের কারণে (জাহান্নামের শুরুতে) রয়ে গেছে, তাদের কেউ টুকরো হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত অথবা সাজা প্রাপ্ত অথবা তার অনুরূপ। অতঃপর তিনি জাহির হবেন, অবশেষে যখন বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হবেন ও জাহান্নামীদের থেকে নিজ রহমতে যাকে ইচ্ছা বের করার ইচ্ছা করবেন ফেরেশতাদের নির্দেশ দিবেন যে, জাহান্নাম থেকে বের কর আল্লাহর সাথে যে কোন বস্তু শরীক করত না, যাদের ওপর আল্লাহ রহম করার ইচ্ছা করেছেন এবং যারা সাক্ষী দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক ইলাহ নেই। তারা জাহান্নামে তাদেরকে সেজদার আলামত দ্বারা চিনবে। আগুন বনি আদমকে সেজদার জায়গা ব্যতীত খেয়ে ফেলবে। সেজদার জায়গা ভক্ষণ করা জাহান্নামের ওপর আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। তারা জাহান্নাম থেকে বের হবে এমতাবস্থায় যে পুড়ে গেছে, তাদের ওপর সঞ্জীবনী পানি ঢালা হবে, ফলে তারা গজিয়ে উঠবে যেমন গজিয়ে উঠে প্রবাহিত পানির সাথে আসা উর্বর মাটিতে শস্যের চারা। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হবেন। অবশেষে শুধু এক ব্যক্তি জাহান্নামের ওপর তার চেহারা দিয়ে অগ্রসর হয়ে থাকবে, সেই জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জাহান্নামী। সে বলবে: হে আমার রব, আমার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিন, কারণ সে আমার চেহারা বিষাক্ত করে দিয়েছে, তার লেলিহান আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। অতঃপর সে আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে, আল্লাহ যেভাবে তার দো‘আ করা পছন্দ করেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেন: এমন হবে না তো যদি তোমাকে তা দান করি তুমি আমার নিকট অন্য কিছু চাইবে? সে বলবে: না, তোমার ইজ্জতের কসম, এ ছাড়া আপনার নিকট কিছু চাইব না। সে তার রবকে যা ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার দিবে, ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ করবে ও তা দেখবে, চুপ থাকবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান। অতঃপর বলবে: হে আমার রব আমাকে জান্নাতের দরজার পর্যন্ত অগ্রসর করুন। আল্লাহ তাকে বলবেন: তুমি কি আমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকার দাওনি যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তা ছাড়া অন্য কিছু আমার নিকট কখনো চাইবে না? হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবে: হে আমার রব, এবং আল্লাহকে ডাকবে, অবশেষে আল্লাহ বলবেন: এমন হবে না তো যদি তা দেই অপর বস্তু তুমি চাইবে? সে বলবে: না, তোমার ইজ্জতের কসম তা ছাড়া কিছু চাইব না, এবং যত ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার প্রদান করবে, ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার নিকট দাঁড়াবে তার জন্য জান্নাত উন্মুক্ত হবে, সে তার নিয়ামত ও আনন্দ দেখবে, অতঃপর চুপ থাকবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান, অতঃপর বলবে: হে আমার রব আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, আল্লাহ বলবেন: তুমি কি ওয়াদা ও অঙ্গিকার দাওনি আমি যা দিয়েছি তা ছাড়া কিছু চাইবে না? তিনি বলবেন: হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবে: হে আমার রব আমি তোমার হতভাগা মখলুক হতে চাই না, সে ডাকতে থাকবে অবশেষে তার কারণে আল্লাহ হাসবেন। যখন হাসবেন তাকে বলবেন: জান্নাতে প্রবেশ কর, যখন সে তাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ তাকে বলবেন: চাও, সে তার নিকট চাইবে ও প্রার্থনা করবে, এমনকি আল্লাহও তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন: এটা, ওটা অবশেষে যখন তার আশা শেষ হয়ে যাবে আল্লাহ বলবেন: এগুলো তোমার জন্য এবং এর অনুরূপও তার সাথে”। আতা ইব্ন ইয়াযিদ বলেন: আবু সায়িদ খুদরি আবু হুরায়রার সাথেই ছিল, আবু হুরায়রার হাদিসের কোন অংশ তিনি প্রত্যাখ্যান করেননি, অবশেষে যখন আবু হুরায়রা বললেন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “এগুলো তোমার জন্য এবং এর সমান এর সাথে”। আবু সায়িদ খুদরি বললেন: “এবং তার সাথে তার দশগুণ হে আবু হুরায়রা। আবু হুরায়রা বললেন: আমার শুধু মনে আছে: “এগুলো এবং এর সাথে তার অনুরূপ”। আবু সায়িদ বললেন: আমি সাক্ষী দিচ্ছে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার বাণী: “এগুলো তোমার জন্য এবং তার সমান দশগুণ” খুব ভাল করে স্মরণ রেখেছি। আবু হুরায়রা বললেন: এ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
57- عَنْ أَبِي ذَرٍّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنِّي لَأَعْرِفُ آخِرَ أَهْلِ النَّارِ خُرُوجًا مِنْ النَّارِ وَآخِرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ دُخُولاً الْجَنَّةَ، يُؤْتَى بِرَجُلٍ فَيَقُولُ: سَلُوا عَنْ صِغَارِ ذُنُوبِهِ وَاخْبَئُوا كِبَارَهَا فَيُقَالُ لَهُ: عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا، عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فِي يَوْمِ كَذَا وَكَذَا، قَالَ فَيُقَالُ لَه:ُ فَإِنَّ لَكَ مَكَانَ كُلِّ سَيِّئَةٍ حَسَنَةً قَالَ: فَيَقُولُ: يَا رَبِّ لَقَدْ عَمِلْتُ أَشْيَاءَ مَا أَرَاهَا هَا هُنَا». قَالَ: فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ضَحِكَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ. ( ت, م ) صَحِيحٌ
৫৭. আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্ত সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে। এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেন: তার ছোট পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর, বড় পাপগুলো গোপন রাখ, অতঃপর তাকে বলা হবে: তুমি অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ, অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ। তিনি বলেন: অতঃপর তাকে বলা হবে: তোমার জন্য প্রত্যেক পাপের পরিবর্তে একটি করে নেকি। তিনি বলেন: অতঃপর সে বলবে: হে আমার রব আমি অনেক কিছু করেছি এখানে তা দেখছি না”। তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি হাসতে, এমনকি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। [মুসলিম ও তিরমিযি] হাদিসটি সহিহ।
শহীদদের ফযিলত
58- عَنْ مَسْرُوقٍ قَال:َ سَأَلْنَا عَبْدَ اللَّهِ (هو ابن مسعود -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-) عَنْ هَذِهِ الْآيَة:ِ ﴿وَلَاتَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾ قَالَ: أَمَا إِنَّا قَدْ سَأَلْنَا عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «أَرْوَاحُهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيلُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَسْرَحُ مِنْ الْجَنَّةِ حَيْثُ شَاءَتْ ثُمَّ تَأْوِي إِلَى تِلْكَ الْقَنَادِيلِ فَاطَّلَعَ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ اطِّلَاعَةً فَقَالَ: هَلْ تَشْتَهُونَ شَيْئًا؟ قَالُوا: أَيَّ شَيْءٍ نَشْتَهِي؟ وَنَحْنُ نَسْرَحُ مِنْ الْجَنَّةِ حَيْثُ شِئْنَا، فَفَعَلَ ذَلِكَ بِهِمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا رَأَوْا أَنَّهُمْ لَنْ يُتْرَكُوا مِنْ أَنْ يُسْأَلُوا قَالُوا: يَا رَبِّ نُرِيدُ أَنْ تَرُدَّ أَرْوَاحَنَا فِي أَجْسَادِنَا حَتَّى نُقْتَلَ فِي سَبِيلِكَ مَرَّةً أُخْرَى، فَلَمَّا رَأَى أَنْ لَيْسَ لَهُمْ حَاجَةٌ تُرِكُوا». ( م, ن, جه) صحيح
৫৮. মাসরুক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি:
﴿وَلَاتَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত। তাদেরকে রিযক দেয়া হয়”।[22] তিনি বলেন: জেনে রেখ, আমরাও এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তাদের রূহসমূহ সবুজ পাখির পেটে, যার জন্য রয়েছে আরশের সাথে ঝুলন্ত প্রদীপ, সে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করে, অতঃপর উক্ত প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। একদা তাদের দিকে তাদের রব দৃষ্টি দেন অতঃপর বলেন: তোমরা কিছু চাও? তারা বলবে: আমরা কি চাইব, অথচ আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করি? এভাবে তাদেরকে তিনবার জিজ্ঞাসা করবেন, যখন তারা দেখবে যে কোন কিছু চাওয়া ব্যতীত তাদেরকে নিস্তার দেয়া হবে না, তারা বলবে: হে রব আমরা চাই আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায় শহীদ হতে পারি। যখন তিনি দেখবেন যে তাদের কোন চাহিদা নেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হবে”। [মুসলিম, নাসায়ি ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
59- عن شقيق أن ابن مسعود -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- حدثه: «أن الثمانية عشر الذين قتلوا من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم يَوم بدرٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي الْجَنَّةِ فِي طَيْرٍ خُضْرٍ تَسْرَحُ فِي الْجَنَّةِ، قَالَ: فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ طَلَعَ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ إطِّلاعَةً، فَقَالَ: يَا عِبَادِي، مَاذَا تَشْتَهُونَ؟ قَالُوا: يَا رَبَّنَا، مَا فَوْقَ هَذَا شَيْءٌ، قَالَ: فَيَقُولُ: عِبَادِي، مَاذَا تَشْتَهُونَ؟ فَيَقُولُونَ فِي الرَّابِعَةِ: تَرُدُّ أَرْوَاحَنَا فِي أَجْسَادِنَا فَنُقْتَلُ كَمَا قُتِلْنَا ” (حب ) والصحيح (طب) و(الهيثمي) موقوف صحيح
৫৯. শাকিক রহ. থেকে বর্ণিত, ইব্ন মাসউদ তাকে বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঠারো জন সাহাবি যারা বদরের দিন শহীদ হয়েছিল, আল্লাহ তাদের রুহগুলো জান্নাতে সবুজ পাখির পেটে রেখেছেন যে জান্নাতে বিচরণ করে। তিনি বলেন: তারা এভাবেই ছিল, এক সময় তোমার রব তাদের দিকে দৃষ্টি দেন, অতঃপর বলেন: “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা বলল: হে আমাদের রব এর ওপরে কি আছে? তিনি বলেন: অতঃপর তিনি বলবেন: “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা চতুর্থবার বলবে: আপনি আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন আমরা শহীদ হতে পারি যেমন শহীদ হয়েছি”। [ইব্ন হিব্বান] হাদিসটি মওকুফ ও সহিহ।
60- عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «يُؤْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ كَيْفَ وَجَدْتَ مَنْزِلَكَ؟ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ خَيْرَ مَنْزِلٍ, فَيَقُولُ: سَلْ وَتَمَنَّ، فَيَقُولُ: أَسْأَلُكَ أَنْ تَرُدَّنِي إِلَى الدُّنْيَا فَأُقْتَلَ فِي سَبِيلِكِ عَشْرَ مَرَّات،ٍ لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ». ( ن, حم, ك ) صحيح
৬০. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাতি এক ব্যক্তিকে আনা হবে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হে বনি আদম তোমার স্থান কি রকম পেয়েছ? সে বলবে: হে আমার রব সবচেয়ে উত্তম। তিনি বলবেন: চাও, আশা কর। সে বলবে: তোমার নিকট প্রার্থনা করছি তুমি আমাকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দাও, যেন তোমার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হতে পারি, যেহেতু সে শাহাদাতের মর্যাদা প্রত্যক্ষ করবে”। [নাসায়ি, আহমদ ও হাকেম] হাদিসটি সহিহ।
61- عَنْ أبي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «انْتَدَبَ اللَّهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ -لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا إِيمَانٌ بِي وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي- أَنْ أُرْجِعَهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيمَةٍ أَوْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ، وَلَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي مَا قَعَدْتُ خَلْفَ سَرِيَّةٍ وَلَوَدِدْتُ أَنِّي أُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ, ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ ثُمَّ أُحْيَا ثُمَّ أُقْتَلُ». ( خ, م, ن, جه ) صحيح
৬১. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তার দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেন, যে তার রাস্তায় বের হয়, -যাকে আমার প্রতি ঈমান ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত কোন জিনিস বের করেনি-, আমি তাকে অতিসত্বর তার পাওনা সওয়াব অথবা গনিমত দেব অথবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হত, তাহলে আমি কোন যুদ্ধ থেকে পিছপা হতাম না। আমি চাই আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর আমি শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হবে অতঃপর আমি শহীদ হব”। [বুখারি, মুসলিম, নাসায়ি ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
62- عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يُؤْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَل:َّ يَا ابْنَ آدَمَ كَيْفَ وَجَدْتَ مَنْزِلَكَ؟ فَيَقُولُ: يَا رَبِّ خَيْرَ مَنْزِلٍ فَيَقُولُ: سَلْ وَتَمَنَّهْ، فَيَقُولُ: مَا أَسْأَلُ وَأَتَمَنَّى إِلَّا أَنْ تَرُدَّنِي إِلَى الدُّنْيَا فَأُقْتَلَ فِي سَبِيلِكَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ». ( حم ) صحيح
৬২. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কিয়ামতের দিন জান্নাতি এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেন: হে বনি আদম তোমার স্থান কেমন পেয়েছ? সে বলবে: সবচেয়ে উত্তম, অতঃপর তিনি বলবেন: চাও, আশা কর। সে বলবে: এ ছাড়া আমি কি চাইব ও কি আশা করব যে, আপনি আমাকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দিন, অতঃপর আপনার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হই, যেহেতু সে শাহাদাতের ফজিলত প্রত্যক্ষ করবে”। [আহমদ] হাদিসটি সহিহ।
63- عَنْ ابْنِ عُمَرَ -رضي الله عنهما- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا يَحْكِي عَنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَالَ: «أَيُّمَا عَبْدٍ مِنْ عِبَادِي خَرَجَ مُجَاهِدًا فِي سَبِيلِي؛ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي ضَمِنْتُ لَهُ أَنْ أُرْجِعَهُ بِمَا أَصَابَ مِنْ أَجْرٍ وَغَنِيمَةٍ وَإِنْ قَبَضْتُهُ أَنْ أَغْفِرَ لَهُ وَأَرْحَمَهُ وَأُدْخِلَهُ الْجَنَّة». ( حم, ن ) صحيح لغيره
৬৩. ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: “আমার যে কোন বান্দা আমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে আমার রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়, আমি তার জন্য জিম্মাদার যে আমি তাকে তার পাওয়া সওয়াব ও গনিমত পৌঁছে দেব, যদি তাকে মৃত্যু দেই তাহলে তাকে ক্ষমা করব, তাকে রহম করব ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব”। [আহমদ ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ লি গায়রিহি।
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾
আয়াতের শানে নুযূল
64- عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ -رضي الله عنهما- قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «لَمَّا أُصِيبَ إِخْوَانُكُمْ بِأُحُدٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ تَرِدُ أَنْهَارَ الْجَنَّةِ، تَأْكُلُ مِنْ ثِمَارِهَا، وَتَأْوِي إِلَى قَنَادِيلَ مِنْ ذَهَبٍ مُعَلَّقَةٍ فِي ظِلِّ الْعَرْش،ِ فَلَمَّا وَجَدُوا طِيبَ مَأْكَلِهِمْ وَمَشْرَبِهِمْ وَمَقِيلِهِم،ْ قَالُوا: مَنْ يُبَلِّغُ إِخْوَانَنَا عَنَّا أَنَّا أَحْيَاءٌ فِي الْجَنَّةِ نُرْزَقُ لِئَلَّا يَزْهَدُوا فِي الْجِهَادِ وَلَا يَنْكُلُوا عِنْدَ الْحَرْبِ؟ فَقَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ: أَنَا أُبَلِّغُهُمْ عَنْكُمْ». قَالَ: فَأَنْزَلَ اللَّهُ : ﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ. ( د, حم ) حسن
৬৪. আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন তোমাদের ভাইয়েরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন, আল্লাহ তাদের রুহগুলো সবুজ পাখির পেটে রাখেন, তারা জান্নাতের নহরসমূহ বিচরণ করে, তার ফল ভক্ষণ করে এবং আরশের ছায়ার নিচে ঝুলন্ত স্বর্ণের প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। যখন তারা নিজেদের সুস্বাদু খাদ্য-পানীয় এবং সুন্দর বিছানা গ্রহণ করল, বলল: আমাদের হয়ে আমাদের ভাইদেরকে কে পৌঁছাবে যে, আমরা জান্নাতে জীবিত, আমাদেরকে রিযক দেয়া হয়, যেন তারা জিহাদ থেকে পিছপা না হয় এবং যুদ্ধের সময় ভীরুতা প্রদর্শন না করে? আল্লাহ তা‘আলা বললেন: আমি তোমাদের হয়ে তাদেরকে পৌঁছে দেব”। তিনি বলেন: অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ.
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না[23]। আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [আবু দাউদ ও আহমদ] হাদিসটি হাসান।
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾
আয়াতের আরেকটি শানে নুযূল
65- جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ -رضي الله عنهما- يَقُولُ: لَقِيَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ لِي: «يَا جَابِرُ مَا لِي أَرَاكَ مُنْكَسِرًا؟» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ اسْتُشْهِدَ أَبِي قُتِلَ يَوْمَ أُحُدٍ وَتَرَكَ عِيَالاً وَدَيْنًا, قَالَ: «أَفَلَا أُبَشِّرُكَ بِمَا لَقِيَ اللَّهُ بِهِ أَبَاكَ؟» قَالَ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: «مَا كَلَّمَ اللَّهُ أَحَدًا قَطُّ إِلَّا مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ، وَأَحْيَا أَبَاكَ فَكَلَّمَهُ كِفَاحًا فَقَالَ: يَا عَبْدِي تَمَنَّ عَلَيَّ أُعْطِكَ قَالَ: يَا رَبِّ تُحْيِينِي فَأُقْتَلَ فِيكَ ثَانِيَةً. قَالَ الرَّبُّ عَزَّ وَجَلَّ: إِنَّهُ قَدْ سَبَقَ مِنِّي (أَنَّهُمْ إِلَيْهَا لَا يُرْجَعُونَ( قَالَ: وَأُنْزِلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: ﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾». ( ت, جه ) صحيح لشواهده
৬৫. জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে দেখা করে আমাকে বলেন: “হে জাবের কেন তোমাকে বিষণ্ণ দেখছি? আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল আমার পিতা উহুদের দিন শাহাদাত বরণ করেন, তিনি অনেক সন্তান ও ঋণ রেখে গেছেন। তিনি বললেন: “আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিব না তোমার পিতার সাথে আল্লাহ কি নিয়ে সাক্ষাত করেছেন?” জাবের বলেন, আমি বললাম: অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন: আল্লাহ পর্দার আড়াল ব্যতীত কারো সাথে কখনো কথা বলেননি, কিন্তু তোমার পিতাকে জীবিত করে তার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। তিনি বলেন: হে আমার বান্দা আমার নিকট চাও আমি তোমাকে দিব। জবাবে তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন: হে আমার রব আমাকে জীবিত করুন, আমি দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায় শহীদ হব। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: আমার সিদ্ধান্ত পূর্বে চূড়ান্ত হয়ে গেছে যে, মৃতদের দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করা হবে না। তিনি বলেন: এবং এ আয়াত নাযিল করা হল:
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ ١٦٩﴾ [ال عمران: ١٦٩]
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না”।[24] [তিরমিযি ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি অন্যান্য শাহেদ তথা সমার্থের বর্ণনার কারণে সহিহ।
মুমূর্ষু হালত, রুহ বের হওয়া ও জীবন সায়ান্নে মুসলিম-কাফিরের অবস্থার বর্ণনাসহ মহান হাদিস
66- عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي جِنَازَةِ رَجُلٍ مِنْ الْأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ صلى الله عليه وسلم وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ وَكَأَنَّ عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرَ وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ فِي الْأَرْضِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ: «اسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا» ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنْ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنْ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مَلَائِكَةٌ مِنْ السَّمَاءِ بِيضُ الْوُجُوهِ كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ الشَّمْسُ، مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ, ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ عَلَيْهِ السَّلَام حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ اللَّهِ وَرِضْوَانٍ» قَالَ: «فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فِي السِّقَاء،ِ فَيَأْخُذُهَا فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ» قَالَ: «فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ -يَعْنِي بِهَا عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلَائِكَة-ِ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذَا الرُّوحُ الطَّيِّبُ فَيَقُولُونَ: فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتَّى يَنْتَهُوا بِهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَسْتَفْتِحُونَ لَهُ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ، وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ، فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ، وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ، وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى» قَالَ: «فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ، فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاء:ِ أَنْ صَدَقَ عَبْدِي، فَافْرِشُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنْ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، قَالَ فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا، وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ، قَالَ: وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ حَسَنُ الثِّيَابِ طَيِّبُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ لَهُ: مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالْخَيْرِ؟ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ فَيَقُولُ: رَبِّ أَقِمْ السَّاعَةَ حَتَّى أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي وَمَالِي» قَالَ: «وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنْ الدُّنْيَا، وَإِقْبَالٍ مِنْ الْآخِرَةِ نَزَلَ إِلَيْهِ مِنْ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ مَعَهُمْ الْمُسُوحُ، فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَيَقُول:ُ أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ اخْرُجِي إِلَى سَخَطٍ مِنْ اللَّهِ وَغَضَبٍ، قَالَ فَتَفَرَّقُ فِي جَسَدِهِ فَيَنْتَزِعُهَا كَمَا يُنْتَزَعُ السَّفُّودُ مِنْ الصُّوفِ الْمَبْلُولِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ، فَيَصْعَدُونَ بِهَا فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى مَلَإٍ مِنْ الْمَلَائِكَةِ إِلَّا قَالُوا: مَا هَذَا الرُّوحُ الْخَبِيثُ: فَيَقُولُونَ: فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانَ يُسَمَّى بِهَا فِي الدُّنْيَا حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ، فَلَا يُفْتَحُ لَهُ» ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : ﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ﴾ فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى فَتُطْرَحُ رُوحُهُ طَرْحًا» ثُمَّ قَرَأَ: ﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ﴾ فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي. فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي. فَيَقُولَانِ لَه:ُ مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي. فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنْ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ، فَافْرِشُوا لَهُ مِنْ النَّار،ِ وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ قَبِيحُ الثِّيَابِ مُنْتِنُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُوءُكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ فَيَقُولُ: مَنْ أَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ فَيَقُول:ُ رَبِّ لَا تُقِمْ السَّاعَةَ». ( حم, د ) صحيح
৬৬. বারা ইব্ন আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক আনসারির জানাজায় বের হলাম, আমরা তার কবরে পৌঁছলাম, তখনো কবর খোঁড়া হয়নি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসলেন আমরা তার চারপাশে বসলাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে, তার হাতে একটি লাকড়ি ছিল তিনি মাটি খুড়তে ছিলেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে বললেন: “তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও, দুইবার অথবা তিনবার (বললেন)”। অতঃপর বললেন: “নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া প্রস্থান ও আখেরাতে পা রাখার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয় তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন, যেন তাদের চেহারা সূর্য। তাদের সাথে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে, অবশেষে তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায়। অতঃপর মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম এসে তার মাথার নিকট বসেন, তিনি বলেন: হে পবিত্র রুহ তুমি আল্লাহর মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির প্রতি বের হও”। তিনি বললেন: “ফলে রুহ বের হয় যেমন মটকা/কলসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি তা গ্রহণ করেন, যখন গ্রহণ করেন চোখের পলক পরিমাণ তিনি নিজ হাতে না রেখে তৎক্ষণাৎ তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন ও সুগন্ধির মধ্যে রাখেন, তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘ্রাণ বের হয় যা দুনিয়াতে পাওয়া যায়”। তিনি বললেন: “অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে ওঠে, তারা যখনই অতিক্রম করে তাকে সহ ফেরেশতাদের কোন দলের কাছ দিয়ে তখনই তারা বলে, এ পবিত্র রুহ কে? তারা বলে: অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে সুন্দর নামে ডাকে যে নামে দুনিয়াতে তাকে ডাকা হত, তাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে, তার জন্য তারা আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করেন, তাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, তাকে প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তীরা পরবর্তী আসমানে অভ্যর্থনা জানিয়ে পৌঁছে দেয়, এভাবে তাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহ বলেন: আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে দাও, কারণ আমি তা (মাটি) থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানে তাদেরকে ফেরৎ দেব এবং সেখান থেকেই তাদেরকে পুনরায় উঠাব”। তিনি বলেন: “অতঃপর তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, এরপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসাবে অতঃপর বলবে: তোমার রব কে? সে বলবে: আল্লাহ। অতঃপর তারা বলবে: তোমার দ্বীন কি? সে বলবে: আমার দ্বীন ইসলাম। অতঃপর বলবে: এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবে: তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর তারা বলবে: কিভাবে জানলে? সে বলবে: আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য জ্ঞান করেছি। অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে ঘোষণা দিবে: আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তিনি বলেন: ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তিনি বলেন: তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবে: সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে তার, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। সে তাকে বলবে: তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে? সে বলবে: আমি তোমার নেক আমল। সে বলবে: হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি”। তিনি বলেন: “আর কাফের বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান ও আখেরাতে যাত্রার সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করে, তাদের সাথে থাকে ‘মুসুহ’ (মোটা-পুরু কাপড়), অতঃপর তারা তার নিকট বসে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত, অতঃপর মালাকুল মউত আসেন ও তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর বলেন: হে খবিস নফস, আল্লাহর গোস্বা ও গজবের জন্য বের হও। তিনি বলেন: ফলে সে তার শরীরে ছড়িয়ে যায়, অতঃপর সে তাকে টেনে বের করে যেমন ভেজা উল থেকে (লোহার) সিক বের করা হয়[25], অতঃপর সে তা গ্রহণ করে, আর যখন সে তা গ্রহণ করে চোখের পলকের মুহূর্ত হাতে না রেখে ফেরেশতারা তা ঐ ‘মোটা-পুরু কাপড়ে রাখে, তার থেকে মৃত দেহের যত কঠিন দুর্গন্ধ দুনিয়াতে হতে পারে সে রকমের দুর্গন্ধ বের হয়। অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে উঠে, তাকেসহ তারা যখনই ফেরেশতাদের কোন দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে, এ খবিস রুহ কে? তারা বলে: অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম ধরে যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়াতে ডাকা হত, এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হয়, তার জন্য দরজা খুলতে বলা হয়, কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না”। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেন:
﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠﴾ [الاعراف: ٤٠]
“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে”।[26] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: তার আমলনামা জমিনে সর্বনিম্নে সিজ্জিনে লিখ, অতঃপর তার রুহ সজোরে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন:
﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ ٣١﴾ [الحج : ٣١]
“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোন জায়গায় নিক্ষেপ করল”।[27] তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসে ও তাকে বসায়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে: তোমার রব কে? সে বলে: হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলে: তোমার দ্বীন কি? সে বলে: হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলে: এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলে: হা হা আমি জানি না, অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, সে মিথ্যা বলেছে, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার দরজা জাহান্নামের দিকে খুলে দাও, ফলে তার নিকট তার তাপ ও বিষ আসবে এবং তার ওপর তার কবর সংকীর্ণ করা হবে যে, তার পাঁজরের হাড় একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে। অতঃপর তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক ও দুর্গন্ধসহ এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবে: তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, এ হচ্ছে তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত। সে বলবে: তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই নিয়ে আসে? সে বলবে: আমি তোমার খবিস আমল। সে বলবে: হে রব কিয়ামত কায়েম কর না”। [আহমদ ও আবু দাউদ] হাদিসটি সহিহ।
জান্নাত ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
67- عَنْ عِيَاضِ بْنِ حِمَارٍ الْمُجَاشِعِيِّ-رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ-، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ذَاتَ يَوْمٍ فِي خُطْبَتِهِ: « أَلَا إِنَّ رَبِّي أَمَرَنِي أَنْ أُعَلِّمَكُمْ مَا جَهِلْتُمْ مِمَّا عَلَّمَنِي يَوْمِي هَذَا: كُلُّ مَالٍ نَحَلْتُهُ عَبْدًا حَلَالٌ، وَإِنِّي خَلَقْتُ عِبَادِي حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ، وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمْ الشَّيَاطِينُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ، وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ، وَأَمَرَتْهُمْ أَنْ يُشْرِكُوا بِي مَا لَمْ أُنْزِلْ بِهِ سُلْطَانًا، وَإِنَّ اللَّهَ نَظَرَ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَمَقَتَهُمْ عَرَبَهُمْ وَعَجَمَهُمْ إِلَّا بَقَايَا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، وَقَالَ: إِنَّمَا بَعَثْتُكَ لِأَبْتَلِيَكَ وَأَبْتَلِيَ بِكَ، وَأَنْزَلْتُ عَلَيْكَ كِتَابًا لَا يَغْسِلُهُ الْمَاءُ تَقْرَؤُهُ نَائِمًا وَيَقْظَانَ، وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أُحَرِّقَ قُرَيْشًا, فَقُلْتُ: رَبِّ إِذًا يَثْلَغُوا رَأْسِي فَيَدَعُوهُ خُبْزَةً، قَالَ: اسْتَخْرِجْهُمْ كَمَا اسْتَخْرَجُوكَ، وَاغْزُهُمْ نُغْزِكَ وَأَنْفِقْ فَسَنُنْفِقَ عَلَيْكَ، وَابْعَثْ جَيْشًا نَبْعَثْ خَمْسَةً مِثْلَهُ، وَقَاتِلْ بِمَنْ أَطَاعَكَ مَنْ عَصَاكَ، قَالَ: وَأَهْلُ الْجَنَّةِ ثَلَاثَةٌ ذُو سُلْطَانٍ مُقْسِطٌ مُتَصَدِّقٌ مُوَفَّقٌ، وَرَجُلٌ رَحِيمٌ رَقِيقُ الْقَلْبِ لِكُلِّ ذِي قُرْبَى وَمُسْلِمٍ، وَعَفِيفٌ مُتَعَفِّفٌ ذُو عِيَالٍ. قَالَ: وَأَهْلُ النَّارِ خَمْسَةٌ: الضَّعِيفُ الَّذِي لَا زَبْرَ لَهُ الَّذِينَ هُمْ فِيكُمْ تَبَعًا لَا يَبْتَغُونَ أَهْلاً وَلَا مَالاً، وَالْخَائِنُ الَّذِي لَا يَخْفَى لَهُ طَمَعٌ وَإِنْ دَقَّ إِلَّا خَانَهُ، وَرَجُلٌ لَا يُصْبِحُ وَلَا يُمْسِي إِلَّا وَهُوَ يُخَادِعُكَ عَنْ أَهْلِكَ وَمَالِكَ وَذَكَرَ الْبُخْلَ أَوْ الْكَذِبَ وَالشِّنْظِيرُ الْفَحَّاشُ » . ( م ) صحيح
৬৭. ইয়াদ ইব্ন হিমার আল-মুজাশি থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তার খুতবায় বলেছেন: “জেন রেখ আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না, যা তিনি আজকের এ দিনে আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন: আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা হালাল। নিশ্চয় আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি শির্ক মুক্ত-একনিষ্ঠ, অতঃপর তাদের নিকট শয়তান এসে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত করেছে। তাদের ওপর সে হারাম করেছে যা আমি তাদের জন্য হালাল করেছি। সে তাদেরকে নির্দেশ করেছে যেন আমার সাথে শরীক করে, যার সপক্ষে কোন দলিল নাযিল করা হয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ জমিনে বাসকারীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন অতঃপর তাদের আরব অনারব সবাইর প্রতি তাঁর ক্রোধ আসে, অবশিষ্ট কতক কিতাবি[28] ব্যতীত। তিনি আরও বলেন: তোমাকে প্রেরণ করেছি তোমাকে পরীক্ষা করব ও তোমার দ্বারা তাদের পরীক্ষা করব এ জন্য। আমি তোমার ওপর এক কিতাব নাযিল করেছি, যা পানি ধুয়ে ফেলবে না, ঘুমন্ত ও জাগ্রত সর্বাবস্থায় তুমি তা তিলাওয়াত করবে। আর নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি কুরাইশদের জ্বালিয়ে দেই। আমি বললাম: হে আমার রব তাহলে তো তারা আমার মাথা থেঁতলে দিবে, অতঃপর রুটি বানিয়ে ছাড়বে। তিনি বললেন: তাদেরকে বের কর যেমন তারা তোমাকে বের করেছে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করব, খরচ কর নিশ্চয় আমরা তোমার ওপর খরচ করব। তুমি বাহিনী প্রেরণ কর, আমি তার সমান পাঁচগুণ প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করেছে তাদের নিয়ে যুদ্ধ কর তাদের সাথে যারা তোমার অবাধ্য হয়েছে। তিনি বলেন: জান্নাতিরা তিন প্রকার: (ক). ন্যায়পরায়ণ, সদকাকারী ও তাওফিকপ্রাপ্ত বাদশাহ। (খ). সকল আত্মীয় ও মুসলিমের জন্য দয়াশীল ও নরম হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি। (গ). অধিক সন্তান-সন্তুতিসম্পন্ন সৎ ও পবিত্র ব্যক্তি। তিনি বলেন: জাহান্নামীরা পাঁচ প্রকার: (ক). দুর্বল, যার বিচারিক বিবেক নেই, যারা তোমাদের মধ্যে অনুসারী, যারা সন্তান ও সম্পদ আশা করে না। (খ). খিয়ানতকারী, যার খিয়ানত গোপন থাকে না, সামান্য বস্তু হলে তাতেও সে খিয়ানত করে। (গ). এমন ব্যক্তি যে সকাল-সন্ধ্যা তোমার পরিবার ও সম্পদে ধোকা প্রদানে লিপ্ত। (ঘ). তিনি কৃপণতা অথবা মিথ্যার উল্লেখ করেছেন। (ঙ). দুরাচারী অশ্লীল ব্যক্তি”। [মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
68- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «تَحَاجَّتْ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتْ النَّارُ: أُوثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِينَ وَالْمُتَجَبِّرِينَ، وَقَالَتْ الْجَنَّةُ: مَا لِي لَا يَدْخُلُنِي إِلَّا ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ، قَالَ اللَّهُ -تَبَارَكَ وَتَعَالَى- لِلْجَنَّةِ: أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي، وَقَالَ لِلنَّارِ: إِنَّمَا أَنْتِ عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا مِلْؤُهَا، فَأَمَّا النَّارُ فَلَا تَمْتَلِئُ حَتَّى يَضَعَ رِجْلَهُ فَتَقُولُ: قَطْ قَطْ قَطْ فَهُنَالِكَ تَمْتَلِئُ وَيُزْوَى بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ وَلَا يَظْلِمُ اللَّهُ -عَزَّ وَجَلَّ- مِنْ خَلْقِهِ أَحَدًا، وَأَمَّا الْجَنَّةُ فَإِنَّ اللَّهَ -عَزَّ وَجَلَّ- يُنْشِئُ لَهَا خَلْقًا ». ( خ, م ) صحيح
৬৮. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “জান্নাত ও জাহান্নাম তর্ক করেছে, অতঃপর জাহান্নাম বলল: আমাকে অহংকারী ও দাম্ভিক দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলল: আমার কি দোষ, আমার এখানে দুর্বল ও পতিত ব্যতীত কেউ প্রবেশ করবে না! আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে বলেন: তুমি আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা আমি রহম করব। জাহান্নামকে বলেন: তুমি আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা আমার বান্দাদের থেকে আমি শাস্তি দিব। তোমাদের দু’টির প্রতিটিই পূর্ণ হতে হবে (অর্থাৎ উভয়কে পূর্ণ করা হবে)। জাহান্নাম পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না তাতে আল্লাহর পা রাখা হয়, তখন সে বলবে: কত্ কত্ কত্, তখনি জাহান্নাম পূর্ণ হবে এবং তার এক অংশ অপর অংশে ঢুকে যাবে, আল্লাহ তার কোন মখলুককে যুলম করবেন না। আর জান্নাতের জন্য আল্লাহ নতুন মখলুক সৃষ্টি করবেন”। [বুখারি ও মুসলিম] হাদিসটি সহিহ।
দুনিয়ার সুখ ও দুঃখ আখেরাতে মূল্যহীন
69- عَنْ أَنَسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ كَانَ بَلَاءً فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فَيَقُولُ: اصْبُغُوهُ صَبْغَةً فِي الْجَنَّةِ فَيَصْبُغُونَهُ فِيهَا صَبْغَةً، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ أَوْ شَيْئًا تَكْرَهُهُ؟ فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ مَا رَأَيْتُ شَيْئًا أَكْرَهُهُ قَطُّ، ثُمَّ يُؤْتَى بِأَنْعَمِ النَّاسِ كَانَ فِي الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَيَقُولُ: اصْبُغُوهُ فِيهَا صَبْغَةً، فَيَقُولُ: يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ؟ قُرَّةَ عَيْنٍ قَطُّ، فَيَقُولُ: لَا وَعِزَّتِكَ مَا رَأَيْتُ خَيْرًا قَطُّ وَلَا قُرَّةَ عَيْنٍ قَطُّ» . ( حم, م, جه ) صحيح
৬৯. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী কষ্টভোগকারী জান্নাতিকে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি বলবেন: জান্নাতে তাকে ভালভাবে ঢোকাও, ফলে তাকে তারা ভালভাবে জান্নাতে ঢুকাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হে বনি আদম, তুমি কখনো কষ্ট অথবা তোমার অপছন্দ কিছু দেখেছ? সে বলবে: না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো আমার অপছন্দ বস্তু দেখিনি। অতঃপর দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী সুখভোগকারী জাহান্নামীকে হাজির করা হবে, অতঃপর তিনি বলবেন: তাকে ভালভাবে জাহান্নামে ডুবাও, অতঃপর তিনি বলবেন: হে বনি আদম, তুমি কখনো কল্যাণ ও আরামদায়ক বস্তু দেখেছ? সে বলবে: না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো কল্যাণ ও আরামদায়ক বস্তু দেখেনি”। [মুসলিম, আহমদ ও ইব্ন মাজাহ] হাদিসটি সহিহ।
কিয়ামতের দৃশ্য
70- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: « يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: يَا آدَمُ، فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ فِي يَدَيْكَ، فَيَقُولُ: أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ. قَالَ: وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟ قَالَ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ فَعِنْدَهُ يَشِيبُ الصَّغِيرُ، (وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ( , قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَأَيُّنَا ذَلِكَ الْوَاحِدُ؟ قَالَ: «أَبْشِرُوا؛ فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلاً، وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفًا، ثُمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ»، فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّةِ»، فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّةِ», فَكَبَّرْنَا فَقَالَ: «مَا أَنْتُمْ فِي النَّاسِ إِلَّا كَالشَّعَرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَبْيَضَ أَوْ كَشَعَرَةٍ بَيْضَاءَ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَسْوَدَ » . (خ, م, ن ) صحيح
৭০. আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: হে আদম, সে বলবে: সদা উপস্থিত এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা, কল্যাণ কেবল তোমার হাতেই। তিনি বলবেন: জাহান্নামী দল বের কর। তিনি বলবেন: জাহান্নামী দল কোনটি? তিনি বলবেন: প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই জন, তখনি ছোটরা বার্ধক্যে উপনীত হবে। সকল গর্ভবতী তার গর্ভ পাত করবে, তুমি দেখবে মানুষরা মাতাল, অথচ তাদের সাথে মাতলামি নেই, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন। তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল আমাদের থেকে সে একজন কে? তিনি বললেন: “সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের থেকে একজন ও ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি বলেন: যার হাতে আমার নফস তার কসম করে বলছি: আমি আশা করি তোমরা জান্নাতিদের এক চতুর্থাংশ হবে”। আমরা তাকবীর বলে উঠলাম। তিনি বললেন: “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের এক তৃতীয়াংশ হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেন: “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেন: “মানুষের ভিতরে তোমরা সাদা ষাঁড়ের গায়ে একটি কালো চুলের ন্যায়, অথবা কালো ষাঁড়ের গায়ের একটি সাদা চুলের ন্যায়”। [বুখারি, মুসলিম ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিয়ামতের দিন তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে
71- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ نَرَى رَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: «هَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الشَّمْسِ فِي الظَّهِيرَةِ لَيْسَتْ فِي سَحَابَةٍ؟ قَالُوا: لَا. قَالَ: فَهَلْ تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ لَيْسَ فِي سَحَابَةٍ؟ قَالُوا: لَا. قَالَ: « فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ رَبِّكُمْ إِلَّا كَمَا تُضَارُّونَ فِي رُؤْيَةِ أَحَدِهِمَا، قَالَ: فَيَلْقَى الْعَبْدَ، فَيَقُولُ: أَيْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالْإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ، فَيَقُولُ: بَلَى. قَالَ: فَيَقُولُ: أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلَاقِيَّ؟ فَيَقُولُ: لَا. فَيَقُولُ: فَإِنِّي أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي، ثُمَّ يَلْقَى الثَّانِيَ، فَيَقُولُ: أَيْ فُلْ أَلَمْ أُكْرِمْكَ وَأُسَوِّدْكَ وَأُزَوِّجْكَ وَأُسَخِّرْ لَكَ الْخَيْلَ وَالْإِبِلَ وَأَذَرْكَ تَرْأَسُ وَتَرْبَعُ، فَيَقُولُ: بَلَى أَيْ رَبِّ، فَيَقُولُ: أَفَظَنَنْتَ أَنَّكَ مُلَاقِيَّ؟ فَيَقُولُ: لَا. فَيَقُولُ: فَإِنِّي أَنْسَاكَ كَمَا نَسِيتَنِي، ثُمَّ يَلْقَى الثَّالِثَ، فَيَقُولُ: لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ، فَيَقُولُ: يَا رَبِّ آمَنْتُ بِكَ وَبِكِتَابِكَ وَبِرُسُلِكَ وَصَلَّيْتُ وَصُمْتُ وَتَصَدَّقْتُ وَيُثْنِي بِخَيْرٍ مَا اسْتَطَاعَ، فَيَقُولُ: هَاهُنَا إِذًا، قَالَ: ثُمَّ يُقَالُ لَهُ: الْآنَ نَبْعَثُ شَاهِدَنَا عَلَيْكَ، وَيَتَفَكَّرُ فِي نَفْسِهِ: مَنْ ذَا الَّذِي يَشْهَدُ عَلَيَّ، فَيُخْتَمُ عَلَى فِيهِ، وَيُقَالُ لِفَخِذِهِ وَلَحْمِهِ وَعِظَامِهِ: انْطِقِي فَتَنْطِقُ فَخِذُهُ وَلَحْمُهُ وَعِظَامُهُ بِعَمَلِهِ وَذَلِكَ لِيُعْذِرَ مِنْ نَفْسِهِ وَذَلِكَ الْمُنَافِقُ وَذَلِكَ الَّذِي يَسْخَطُ اللَّهُ عَلَيْهِ » . (م،د) صحيح
৭১. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “তারা বলল: হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বললেন: “তোমরা কি ভর দুপুরে মেঘ মুক্ত আকাশে সূর্য দেখায় সন্দেহ কর? তারা বলল: না। তিনি বললেন: তোমরা কি চৌদ্দ তারিখের রাতে মেঘহীন আকাশে চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর? তারা বলল: না। তিনি বললেন: তার সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার নফস, তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করবে না, যেমন তোমরা সন্দেহ কর না সূর্য-চাঁদ কোনো একটি দেখার ক্ষেত্রে। তিনি বলেন: আল্লাহ বান্দার সাথে সাক্ষাত করবেন অতঃপর বলবেন: হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে নেতৃত্ব দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি কি তোমাকে সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবে: অবশ্যই। তিনি বলেন: অতঃপর তিনি বলবেন: তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবে: না। অতঃপর তিনি বলবেন: নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করবেন এবং বলবেন: হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে নেতৃত্ব দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি কি তোমাকে সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবে: অবশ্যই হে আমার রব। তিনি বলেন: অতঃপর তিনি বলবেন: তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবে: না। অতঃপর তিনি বলবেন: নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করবেন, তাকেও অনুরূপ বলবেন, সে বলবে: হে আমার রব আমি তোমার ওপর, তোমার কিতাব ও রাসূলদের ওপর ঈমান এনেছি, সালাত আদায় করেছি, সিয়াম পালন করেছি, সদকা করেছি, সে ইচ্ছামত গুণাগুণ বর্ণনা করবে। তিনি বলবেন: তাহলে অপেক্ষা কর, তিনি বলেন: অতঃপর তাকে বলা হবে: এখন আমি তোমার বিপক্ষে আমার সাক্ষী উপস্থিত করছি। সে অন্তরে চিন্তা করবে আমার বিপক্ষে কে সাক্ষী দিবে, তখন তার মুখে কুলুপ এঁটে দেয়া হবে, এবং তার রান, গোস্ত ও হাড্ডিকে বলা হবে: কথা বল, ফলে তার রান, গোস্ত ও হাড্ডি তার আমলের বর্ণনা দিবে। আর এটা এ জন্যে যে, যেন সে লোক আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করতে না পারে, সে হচ্ছে মুনাফিক, তার ওপরই আল্লাহর অসন্তুষ্টি আরোপ হবে”। [মুসলিম ও আবু দাউদ] হাদিসটি সহিহ।
72- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- قَال:َ كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَضَحِكَ فَقَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مِمَّ أَضْحَكُ؟» قَالَ: قُلْنَا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: «مِنْ مُخَاطَبَةِ الْعَبْدِ رَبَّهُ يَقُولُ: يَا رَبِّ أَلَمْ تُجِرْنِي مِنْ الظُّلْمِ؟» قَالَ: «يَقُولُ: بَلَى» قَالَ: «فَيَقُولُ: فَإِنِّي لَا أُجِيزُ عَلَى نَفْسِي إِلَّا شَاهِدًا مِنِّي» قَالَ: «فَيَقُولُ: كَفَى بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ شَهِيدًا وَبِالْكِرَامِ الْكَاتِبِينَ شُهُودًا» قَالَ: «فَيُخْتَمُ عَلَى فِيهِ فَيُقَالُ لِأَرْكَانِهِ انْطِقِي» قَالَ: «فَتَنْطِقُ بِأَعْمَالِهِ» قَالَ: «ثُمَّ يُخَلَّى بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَلَام» قَالَ: «فَيَقُولُ: بُعْدًا لَكُنَّ وَسُحْقًا فَعَنْكُنَّ كُنْتُ أُنَاضِلُ» . ( م, ن ) صحيح
৭২. আনাস ইব্ন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম, তিনি হঠাৎ হাসলেন। তিনি বললেন: “তোমরা জান কেন হেসেছি?”, তিনি বলেন: আমরা বললাম: আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন: “(আমি হেসেছি) বান্দার তার রবকে পাল্টা প্রশ্ন করা থেকে। সে বলবে: হে আমার রব, আপনি কি আমাকে যুলম থেকে নাজাত দেননি?” তিনি বলেন: “আল্লাহ বলবেন: অবশ্যই”। তিনি বলেন: “অতঃপর সে বলবে: আমার বিপক্ষে আমার অংশ ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী মানি না”। তিনি বলেন: “আল্লাহ্ বলবেন: সাক্ষী হিসেবে আজ তোমার জন্য তুমিই যথেষ্ট, আর দর্শক হিসেবে কিরামুন কাতেবিন যথেষ্ট”। তিনি বলেন: “অতঃপর তার মুখে মোহর এঁটে দেয়া হবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হবে, বল”। তিনি বলেন: “ফলে অঙ্গসমূহ তার আমলের বর্ণনা দিবে”। তিনি বলেন: “অতঃপর সে বলবে: তোমরা দূর হও, নিপাত যাও তোমরা, তোমাদের পক্ষেই তো আমি সংগ্রাম করতাম”। [মুসলিম ও নাসায়ি] হাদিসটি সহিহ।
সংকলন : আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা আল-আদাভি
অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
No comments:
Post a Comment