সালাত সম্পরকে গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় কিছু প্রশ্ন তার উত্তর
প্রশ্ন ১. রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ এর পর
রুকুতে আর কি পড়তে হয় ? ২. দুই সিজদার
মাঝে আল্লাহুম্মাগফিরলীর এর পর
কি পড়তে হয় ? ৩. রুকু ও সিজদা’য়
পড়া হয়ে থাকে যে দোয়া গুলো সেগুলো কি ?
৪. তারাবী’র সালাতে চার রাকাআত পর
সুবহানা যিল মুলকি ওয়া মালাকুতি…… এর
দোয়া থাকলে জানাবেন । ৫. আমাদের
এলাকার লোকেরা বিশ লাখ নেকী’র
দোয়া পড়ছে এর কোন সহীহ
ভিত্তি আছে কি ? ৬. ফজর ও মাগরিবের
সালাতের পর সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত
পড়ার কোন হাদীস আছে কি ?
রুকুতে আর কি পড়তে হয় ? ২. দুই সিজদার
মাঝে আল্লাহুম্মাগফিরলীর এর পর
কি পড়তে হয় ? ৩. রুকু ও সিজদা’য়
পড়া হয়ে থাকে যে দোয়া গুলো সেগুলো কি ?
৪. তারাবী’র সালাতে চার রাকাআত পর
সুবহানা যিল মুলকি ওয়া মালাকুতি…… এর
দোয়া থাকলে জানাবেন । ৫. আমাদের
এলাকার লোকেরা বিশ লাখ নেকী’র
দোয়া পড়ছে এর কোন সহীহ
ভিত্তি আছে কি ? ৬. ফজর ও মাগরিবের
সালাতের পর সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত
পড়ার কোন হাদীস আছে কি ?
উত্তরঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে মোট
৭টি স্থানে দুয়া করতেন ।
সালাতে যেই
৭টি স্থানে দুয়া করা যায়ঃ
১. সানাঃ তাকবীর তাহরীমার আল্লাহু
আকবার বলে বুকে হাত বাঁধার পরে,
সালাত শুরুর
দিকে সানা হিসেবে দুয়া পড়া যায় ।
এখানে নিজের
পছন্দমতো যেকোনো দুয়া করা যায়না,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই
দুয়াগুলো করেছেন শুধু সেই দুয়াগুলোই
করা যাবে । আর
এইখানে দুয়াটা আরবীতেই করতে হবে ।
প্রচলিত ভাষায় আমরা যাকে সানা বলি,
সহীহ হাদীসে এখানে অন্য
আরো সানা আছে, যেই
সানাতে দুয়া আছে ।
সানা হিসেবে আমরা যেটা পড়ি এর
পরিবর্তে ঐ দুয়ার সানা পড়া যাবে ।
বরং অনেক আলেম সহীহ বুখারী ও সহীহ
মুসলিমে বর্ণিত সানার ঐ
দুয়াটাকে বেশি ভালো বলে মত
দিয়েছেন। আপনি নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
সানা হিসেবে দুয়াটার অর্থের
দিকে লক্ষ্য করুন, তাহলে বুঝবেন কত সুন্দর
দুয়া এটা । অলসতা করে মুখস্থ না করার
কারণে আপনি মহামূল্যবান এই
দুয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । চিন্তা করুন
এতো সুন্দর ভাষায় আল্লাহর
কাছে নিজের গুনাহ থেকে মাফ
চেয়ে সালাত শুরু করলে আল্লাহ
তা’আলা সেই সালাতকে কত
বেশি পছন্দ করবেন ! তাই প্রিয় মুসলিম
ভাই ও বোনেরা অলসতা বাদ দিয়ে কষ্ট
করে এই দুয়াটা মুখস্থ
করে মাঝে মাঝে পড়ার চেষ্ট করবেন ।
যখন সময় কম থাকে বা অলসতা লাগে তখন
ছোট যেটা “সুবহা’নাকা আল্লাহুম্মা…”
এটা / এর চেয়ে উত্তম
“ইন্নি অয়াহযাহতু…” পড়লেন আর যখন সময়,
ইচ্ছা, শক্তি-সামর্থ্য আছে বা এমনিতেই
একবার তোওবা করার
ইচ্ছা সানা হিসেবে এই দুয়াটা পড়লেন ।
দুয়াটা হচ্ছেঃ
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑَﺎﻋِﺪْ ﺑَﻴْﻨِﻲ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﺎﻋَﺪْﺕَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﻤَﺸْﺮِﻕِ
ﻭَﺍﻟْﻤَﻐْﺮِﺏِ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻧَﻘِّﻨِﻲ ﻣِﻦْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ ﻛَﻤَﺎ ﻳُﻨَﻘَّﻰ ﺍﻟﺜَّﻮْﺏُ
ﺍﻟْﺄَﺑْﻴَﺾُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪَّﻧَﺲِ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﺴِﻠْﻨﻲ ﻣِﻦْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻱَ، ﺑِﺎﻟﺜَّﻠْﺞِ
ﻭَﺍﻟْﻤﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﺒَﺮَﺩِ .
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বাইয়ি’দ
বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-
ইয়া কামা বা-‘আদতা বাইনাল
মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব । আল্লা-
হুম্মা নাক্কিনী মিন খাত্বা-ইয়া-
ইয়া কামা ইয়ুনাক্কাস্ ছাওবুল আবইয়াদু
মিনাদ দানাস । আল্লা-হুম্মাগসিলনী মিন
খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিস্সালজি ওয়াল মা-’ই
ওয়াল বারাদ ।
অর্থঃ হে আল্লাহ ! আপনি আমার
এবং আমার গুনাহসমূহের মাঝে এমন দূরত্ব
সৃষ্টি করুন যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন পূর্ব
ও পশ্চিমের মাঝে । হে আল্লাহ !
আপনি আমাকে আমার গুনাহসমূহ
থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন,
যেমন সাদা কাপড়
ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয় ।
হে আল্লাহ ! আপনি আমাকে আমার
পাপসমূহ বরফ, পানি ও মেঘের শিলাখণ্ড
দ্বারা ধৌত করে দিন ।”
{বুখারীঃ ৭৪৪, মুসলিমঃ ৫৯৮}
২. দুয়া কুনুতঃ কিরাত শেষ
করে রুকুতে যাবার আগে দুয়া কুনুত
পড়া সুন্নত । বিতির সালাতে ও
সাময়িকভাবে ফজরের ফরজ সালাতেও
(মুসলিমদের বিপদ আপদ থেকে বাঁচার
জন্য, অত্যাচারী কাফেরদের বদদুয়া করার
জন্য অথবা উম্মাহর বিশেষ প্রয়োজন এমন
সময়ে) দুয়া কুনুত পড়া সহীহ হাদীস
দ্বারা প্রমানিত । সবচাইতে সহীহ ও
অর্থের দিক থেকে বেশি সুন্দর
যে দুয়া কুনুত সেটা হচ্ছেঃ
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻫْﺪِﻧِﻲ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻫَﺪَﻳْﺖَ، ﻭَﻋَﺎﻓِﻨِﻲ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﻋَﺎﻓَﻴْﺖَ،
ﻭَﺗَﻮَﻟَّﻨِﻲ ﻓِﻴﻤَﻦْ ﺗَﻮَﻟَّﻴْﺖَ، ﻭَﺑَﺎﺭِﻙْ ﻟِﻲ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺃَﻋْﻄَﻴْﺖَ، ﻭَﻗِﻨِﻲ ﺷَﺮَّ
ﻣَﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ؛ ﻓَﺈِﻧَّﻚَ ﺗَﻘْﻀِﻲ ﻭَﻻَ ﻳُﻘْﻀَﻰ ﻋَﻠَﻴْﻚَ، ﺇِﻧَّﻪُ ﻻَ ﻳَﺬِﻝُّ ﻣَﻦْ
ﻭَﺍﻟَﻴْﺖَ، [ ﻭَﻻَ ﻳَﻌِﺰُّ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَﻳْﺖَ ] ، ﺗَﺒﺎﺭَﻛْﺖَ ﺭَﺑَّﻨﺎ ﻭَﺗَﻌَﺎﻟَﻴْﺖَ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান
হাদাইতা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-
ফাইতা ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান
তাওয়াল্লাইতা ওয়াবা-রিক
লী ফীমা আ‘ত্বাইতা ওয়াক্বিনী শাররা মা ক্বাদাইতা ফাইন্নাকা তাক্ব্দ্বী ওয়ালা ইউক্ব্দ্বা ‘আলাইকা।
ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মাও ওয়া-লাইতা,
[ওয়ালা ইয়া‘ইয্যু মান ‘আ-দাইতা।] তাবা-
রক্তা রব্বানা ওয়া তা‘আ-লাইতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ !
আপনি যাদেরকে হেদায়াত করেছেন
তাদের মধ্যে আমাকেও হেদায়াত দিন,
আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান
করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও
নিরাপত্তা দিন, আপনি যাদের
অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের
মধ্যে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ করুন,
আপনি আমাকে যা দিয়েছেন
তাতে বরকত দিন ।
আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার
অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন ।
কারণ আপনিই চূড়ান্ত ফয়সালা দেন,
আপনার বিপরীতে ফয়সালা দেওয়া হয়
না । আপনি যার সাথে বন্ধুত্ব করেছেন
সে অবশ্যই অপমানিত হয়
না [এবং আপনি যার
সাথে শত্রুতা করেছেন সে সম্মানিত হয়
না।] আপনি বরকতপূর্ণ হে আমাদের রব্ব !
আর আপনি সুউচ্চ-সুমহান ।”
{সুনান গ্রন্থকারগণ, আহমাদ, দারামী ও
বাইহাকী এ হাদীসটি সংকলন করেছেন
। আবু দাউদঃ ১৪২৫, তিরমিযীঃ ৪৬৪,
নাসাঈঃ ১৭৪৪, ইবন মাজাহঃ ১১৭৮,
আহমাদঃ ১৭১৮, দারামীঃ ১৫৯২,
হাকিমঃ ৩/১৭২, বাইহাকীঃ ২/২০৯ । আর
দু’ ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ
বাইহাকীর । শায়খ আলবানীর
মতে হাদীসটি সহীহঃ ইরওয়াউল
গালীলঃ ২/১৭২ ।}
দেখা যাচ্ছে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই
দুয়াটি অনেক গুলো হাদীস গ্রন্থেই
উল্লেখ করা হয়েছে । এ থেকে এর
মর্যাদা বোঝা যাচ্ছে । দুয়া কুনুতের
দুয়াটা আরবীতেই করতে হবে ।
৩. রুকু
থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েঃ রুকু
থেকে দাঁড়িয়ে “রাব্বানা ওয়া লাকাল
হামদ , হামদান কাছিরান ,
ওয়া তাইয়েবান , ওয়া মুবারাকান”
৪. রুকুতে দুয়া করা যায়ঃ নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুর
মাঝেও দুয়া করতেন ।
তবে রুকুতে নিজে থেকে কোন
দুয়া করা নিষিদ্ধ । শুধুমাত্র নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
রুকুতে যেই দুয়া করেছেন সেই
দুয়া করা যাবে । রুকুতে নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই
দুয়া করেছেন তাহলঃ
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আ’নহা বলেন
যেঃ সুরা নাসর নাযিল হওয়ার পর
থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কখনো এই
দুয়া পড়া ছাড়া সালাত পড়তে দেখিনি ।
ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ
উচ্চারণঃ সুবহা’নাকা আল্লা-
হুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহা’মদিকা আল্লা-
হুম্মাগফিরলী ।
অর্থঃ হে আল্লাহ ! তুমি আমাদের রব্ব ।
তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করি, তোমার
প্রশংসা সহকারে । হে আল্লাহ !
তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ।
সুবহা’নাকা – পবিত্রতা ঘোষণা করছি,
রাব্বানা – হে আমাদের রব্ব, ওয়া = এবং,
বিহা’মদিকা = প্রশংসা সহকারে, আল্লা-
হুম্মা = হে আল্লাহ ! আল্লা-হুম্মা +
মাগফিরলী = আল্লা-হুম্মাগফিরলী,
আল্লা-হুম্মা = হে আল্লাহ ! মাগফিরলি =
তুমি আমাকে ক্ষমা করো ।
এই দুয়া রুকু এবং সিজদা দুই জায়গাতেই
পড়া যায়, ১/৩ করে । এই দুয়া পড়ার
আগে তাসবীহগুলো পড়ে নিতে হবে ।
{দুয়াটার রেফারেন্স হলোঃ সহীহ
মুসলিম ৯৬৯}
৫.
সিজদাতে দুয়া করাঃ সিজদা হলো দুয়া কবুলের
সবচেয়ে উত্তম সময় । রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
বলেছেন, “বান্দা যখন
সিজদা করে সে তখন তার রব্বের
সবচেয়ে নিকটে পৌঁছে যায় । অতএব
তোমরা ঐ সময় বেশি বেশি দুয়া করো”
অন্য হাদীসে এসেছে,
“তোমরা সিজদাতে দুয়া করতে চেষ্টা করো,
আশা করা যায় তোমাদের দুয়া কবুল
করা হবে ।”
{মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪}
সিজদাতে দুয়া করার নিয়মঃ
অনেকের মনে প্রশ্ন
আছে বা বিষয়টা ভুল বুঝেছেন । তাই
বিস্তারিত বলা হলো ।
প্রশ্নঃ আমি কোন সিজদাতে দুয়া করবো,
সালাতের
মধ্যে সিজদাতে নাকি আলাদা সিজদা করতে হবে দুয়া করার
জন্য ?
উত্তরঃ যে কোনো সালাতের
মধ্যে সিজদাতে দুয়া করা যাবে ।
দুয়া করার জন্য সালাত ব্যতীত শুধু
সিজদা করা জায়েজ নয় । শুধুমাত্র কুরআন
তেলাওয়াতের সিজদাহ ও শুকরিয়ার
সিজদাহ ছাড়া, সালাত ব্যতীত শুধু
সিজদাহ করা বৈধ নয় ।
প্রশ্নঃ ফরজ
সালাতে দুয়া করতে পারবো নাকি সুন্নত/
নফল সালাতের
সিজদাতে দুয়া করতে হবে ?
উত্তরঃ যে কোনো সালাতের
সিজদাতে দুয়া করা যাবে, সেটা ফরজ
হোক আর নফল সুন্নত হোক, কারণ,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
আমভাবে সিজদাতে দুয়া করতে বলেছেন,
তিনি শুধুমাত্র নফল সুন্নতে করার জন্য আর
ফরজ সালাতে না করার জন্য – এইরকম
ভাগ করে দিয়ে যাননি । তাই, এই
কথা বলার কারো অধিকার নাই, ফরজ
সালাতে করা যাবেনা । যে এই রকম
করবে সে কোনো দলীল ছাড়াই শরীয়ত
বানানোর দায়ে অভিযুক্ত হবে ।
(শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বাজ এই
ফতোয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন)।
প্রশ্নঃ কিভাবে দুয়া করতে হবে ?
উত্তরঃ আপনি স্বাভাবিক ভাবে সালাত
পড়বেন, সিজদাতে যাবেন, সিজদার
তাসবীহ গুলো যেমন
“সুবহা’না রাব্বিইয়াল আ’লা” ৩/৫/৭ বার
অবশ্যই আরবীতে পড়বেন । সিজদার
তাসবীহ পড়া হলে আপনি দুয়া করবেন ।
আরবী জানলে আরবীতে,
না জানলে নিজের ভাষাতে ।
প্রশ্নঃ সালাতে দুনিয়াবী কোনো কল্যান
প্রার্থনা করা যাবে ?
উত্তরঃ হ্যা, যাবে যদি সেটা হারাম
কোনো কিছু না হয়ে থাকে । আমাদের
দেশের অনেক হুজুর
বলে সালাতে দুনিয়ার কোনো কিছু
চাইলে সালাত ভেঙ্গে যাবে, এই কথার
কোনো দলীল নেই, কোনো দলীল নেই
। এটা একটা মনগড়া ফতোয়া ।
স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সালাতের
মধ্যে দুনিয়ার কল্যান চেয়েছেন, যেমন
২ সিজদার মাঝখানে তিনি বলতেন
“হে আল্লাহ তুমি আমাকে রিযিক দান
করো” – রিযিক দুনিয়া না আখেরাতের
বিষয় আশা করি সকলেই জানেন ।
আর রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
দুয়া করতে তিনি দুনিয়ার কোনো কিছু
চাইতে না করেননি । সুতরাং এর
পরে কারো ক্ষমতা নেই, না করার ।
প্রশ্নঃ ফরজ
সালাতে জামাতে দুয়া করা যাবে ?
উত্তরঃ হ্যা যাবে, যদি সিজদার তাসবীহ
পড়ার পরে ইমাম সাহবে যথেষ্ঠ সময় দেন
তাহলে করা যাবে । আর যদি সময় কম
থাকে তাহলে আগে সিজদার তাসবীহ
পড়তে হবে ।
৬. দুই সিজদার
মাঝখানে বসা অবস্থায়ঃ এখানে নিজের
পছন্দমতো যেকোনো দুয়া করা যায়না,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই
দুয়াগুলো করেছেন শুধু সেই দুয়াগুলোই
করা যাবে । আর
এইখানে দুয়াটা আরবীতেই করতে হবে ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল
যে কোনো সালাতের দুই সিজদার
মাঝখানে বসা অবস্থায় এই
দুআটি করতেনঃ
ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ، ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ
উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ
ফিরলি ।
অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা,
হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর ।
{আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ,
দুয়াটা সহীহ}
এই ছোট্ট দুয়াটা পড়ে আল্লাহর
কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস
করা ঠিকনা । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০
থেকে ১০০ বার তোওবা করতেন ।
আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার
মাঝখানে এই দুয়াটা পড়ার অভ্যাস
গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত
করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর
কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে । আল্লাহর
ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায়
হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত
তোওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা চাওয়া)।
এছাড়া আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ، ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨِﻲ، ﻭَﺍﻫْﺪِﻧِﻲ، ﻭَﺍﺟْﺒُﺮْﻧِﻲ، ﻭَﻋَﺎﻓِﻨِﻲ،
ﻭَﺍﺭْﺯُﻗْﻨِﻲ، ﻭَﺍﺭْﻓَﻌْﻨِﻲ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী,
ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী,
ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী ।
অর্থঃ হে আল্লাহ !
আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার
প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক
পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত
ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন,
আমাকে নিরাপত্তা দান করুন,
আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার
মর্যাদা বৃদ্ধি করুন” ।
{হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান
গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন । আবূ
দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন
মাজাহঃ ৮৯৮ । শায়খ আলবানির
মতে হাদীস সহীহ}
৭. দুয়া মাসুরাঃ তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু)
ও দুরুদের পরে, সালাম ফিরানোর
আগে দুয়া মাসুরা (হাদীসে বর্ণিত
দুয়াগুলো) ও নিজের
পছন্দমতো দুয়া করা যায়। ফরয সালাতের
শেষ বৈঠকের দুয়া আল্লাহ বেশি কবুল
করেন ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল,
‘কোন দো‘আ সর্বাধিক শোনা (কবুল করা)
হয় ?’ তিনি বললেন, “রাত্রির
শেষভাগে এবং ফরয সালাত সমূহের
শেষাংশে” ।
{তিরমিযী ৩৪৯৯, ইমাম তিরমিযী ও শায়খ
আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ}
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়
দুয়া মাসুরা হচ্ছে ৪টি বিষয়
থেকে আশ্রয় চাওয়ার দুয়া ।
কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব,
দুনিয়ার ফেতনা ও মৃত্যুর সময়ের ফেতনা ও
দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ
থাকার জন্য দুয়া মাসুরাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই
গুলো থেকে বাঁচার জন্য ফরজ, নফল
বা সুন্নত, যেকোনো সালাতে তাশাহুদ
ও দুরুদের পরে সালাম ফিরানোর
আগে এই দুয়া পড়তে বলেছেন ।
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧِّﻲْ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺍﻟْﻘَﺒْﺮِ، ﻭَﻣِﻦْ ﻋَﺬَﺍﺏِ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ،
ﻭَﻣِﻦْ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺤْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﻤَﻤَﺎﺕِ، ﻭَﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻓِﺘْﻨَﺔِ ﺍﻟْﻤَﺴِﻴْﺢِ
ﺍﻟﺪَّﺟَّﺎﻝِ .
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন
আ’যাবিল ক্বাবরি ওয়া মিন
আ’যাবি জাহান্নাম, ওয়ামিন ফিতনাতিল
মাহ’ইয়া ওয়াল্ মামাতি, ওয়ামিন
সাররি ফিতনাতিল্ মাসীহি’দ্-দাজ্জাল
।
অর্থঃ হে আল্লাহ !
তুমি আমাকে কাবরের আযাব
থেকে রক্ষা করো,আমাকে জাহান্নামের
আযাব, এবং দুনিয়ার ফিৎনা ও মৃত্যুর
ফেতনা এবং দাজ্জালের
ফিৎনা থেকে রক্ষা করো ।
{বুখারী ২১০২, মুসলিম ১/৪১২, হিসনুল
মুসলিম, পৃষ্ঠা – ৯০}
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
দুয়া মাসুরা হিসেবে এই
দুয়াটা পড়তে সবচেয়ে বেশি জোর
দিয়েছেন । এছাড়া আরো অনেক
দুয়া মাসুরা আছে অথবা আরবীতে অন্য
দুয়া গুলো এইখানে পড়তে পারবেন
ইনশাআল্লাহ্ । এছাড়া কুরআন
অথবা হাদীসে বর্ণিত অন্য দুয়াগুলো,
রাব্বানা আতিনা…রাব্বির
হামহুমা কামা…আল্লাহুম্মা ইন্নি আস
আলুকাল জান্নাতে…এইরকম নিজের জন্য,
মাতাপিতার জন্য, যেকোনো মুসলিমের
জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোন
হালাল ও কল্যানকর কিছু চাওয়া যাবে ।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে এই
৭টি স্থানে নিজে দুয়া করেছেন
এবং সাহাবীদেরকেও
দুয়া করতে বলেছেন ।
{প্রশ্নঃ ১ , ২ , ৩ এর উত্তর শেষ}
*** প্রশ্নঃ ৪ , ৫ ও ৬ এর উত্তর ***
৪ । তারাবী’র সালাতে চার রাকাআত
পর সুবহানা যিল মুলকি ওয়া মালাকুতি……
এ রকম কোন দুয়া নেই ।
৫ । দুয়া’টা বিদ’আত ।
৬ ।
তিরমিযীতে আছে তবে হাদীসটা সহীহ
না ।সংগৃহীত
No comments:
Post a Comment