Monday, November 27, 2017

ইবনু জুবায়র (রাঃ)’র রক্ত পান


ইবনু জুবায়র (রাঃ)’র রক্ত পান


‘‘জুহুর পাক (ছঃ) একবার সিঙ্গা লাগাইয়া আব্দুল্লাহ এবনে জোবায়ের (রাঃ)-কে বলিলেন, এই রক্তগুলি কোথাও পুতিয়া রাখ। তিনি আসিয়া আরজ করিলেন, হুজুর! পুতিয়া দিয়াছি। হুজুর (ছঃ) বলিলেরন, কোথায় পুতিয়াছ! তিনি বলিলেন, আমি উহা পান করিয়া ফেলিয়াছি। হুজুর (ছঃ) ফরমাইলেন, যে শরীরে আমার রক্ত প্রবেশ করিয়াছে তাহার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম কিন্তু
তোমার দ্বারা লোক ক্ষয় ও লোক দ্বারা তোমার ক্ষয় অনিবার্য। হুজুরে পাক (ছঃ) এ মলমুত্র রক্ত সব কিছুই পাক পবিত্র, কাজেই তাতে তর্কের অবকাশ নাই।’’  (ফাজায়েলে আমল, হেকায়েতে সাহাবা, ৭৪৫ পৃঃ)
‘‘একই ঘটনা আর একজন সহাবী আবূ সাঈদ খুদরীর পিতা মালিক বিন সালাম উহূদের যুদ্ধে নাবী (সাঃ) ক্ষতস্থানের রক্ত চুষে খেয়ে ফেললেন। ‘‘হুজুর (ছঃ) বলিলেন, যেই শরীরে আমার রক্ত ঢুকিয়াছে তাহাকে দোজখের আগুন স্পর্শ করিবে না।’ (ফাজায়েলে আমল, হেকায়েতে সাহাবা, ৭৪৬ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! তাবলীগী নিসাবের লেখকের উদ্ধৃতিহীন উল্লিখিত বক্তব্য দ্বারা নিম্নলিখিত বিষয় ফুটে উঠে।
১। রসূলুল্লাহ রক্ত এবং পেশাব ও পায়খানা কি পাক?
২। সাহাবায়ে কিরাম রসূলের রক্ত ও পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি পান করেছেন কি?
৩। রক্তপান করা হালাল, না হারাম কাজ?
৪। আল্লাহ যে রক্তকে হারাম করেছেন রসূলুল্লাহ (সাঃ) তা কোন পানকারী ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদ দেয়ার মাদ্যমে হালাল করতে পারেন কি?
৫। তাবলীগী নিসাব ফাযীলাতের কিতাব, না মাসা‘আলার কিতাব? নাকি তা কোন হারামকে পরোক্ষভাবে হলাল বানাবার কিতাব? এখন আমরা দেখব, কুরআন ও সহীহ হাদীসের বিধান কি? মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদের সূরা নাহলে ৪টি জিনিস হারাম করেছেন, তার মধ্যে একটি রক্ত, তিনি বলেন,

{إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ}

‘‘আল্লাহ তো কেবল মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর-গোশত এবং যা যবহকালে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের নাম নেয়া হয়েছে, তা হারাম করেছেন।(সূরা নাহল ১১৫, সূরা মায়িদাহ ৩)
এ আয়াত এবং কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় না যে, নাবী (সাঃ)’র রক্ত হারাম নয়। তাছাড়া মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

{قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلٰهٌ وَاحِدٌ}

‘‘ হে নাবী আপনি বলুন, অবশ্যই আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ! (পার্থক্য) আমার প্রতি ওয়াহী নাযিল হয়।’’  (সূরা আল কাহাফ ১১০)
বিষয়টি বুঝতে হলে সর্বপ্রথম এই আক্বীদাহ পোষণ করতে হবে যে, রসূল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন পার্থক্য এই যে, তিনি ছিলেন রসূল। যা উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।
এ ছাড়া অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘‘রসূল নিজ ইচ্ছাকৃত কিছু বলেন না, বরং ‘ওয়াহী’ হলেই তবে বলেন।’’ (সূরা নাজম ৩-৪)
সুতরাং রসূলুল্লাহ (সাঃ) যেহেতু মানুষ ছিলেন, সেহেতু মানুষের মলমূত্র নাপাক। রসূলুল্লাহ (সাঃ) পবিত্রতা অর্জন করার জন্য পায়খানা-পেশাব করার পর পানি, মাটি, কঙ্কর ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। (মুত্তাফাক্বুন ‘আলাইহ, মিশকাত হাঃ ৩৪২, ৩৩৬ পবিত্রতা অধ্যায়)
উল্লেখিত দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নাবী (সাঃ)’র রক্ত, পেশাব, পায়খানা পবিত্র ছিল বলে যে দাবী করা হয়েছে তার অসারতা বুঝা যায়। তাছাড়া শাইখ ফাজায়েলের কিতাবে উক্ত বিষয় উল্লেখ করে ফাঁপরে পড়েছেন যে, তিনি এ প্রসঙ্গে কোন মাস‘আলার উল্লেখ করবেন কিনা, না করলে উপায় নেই। তাই তিনি উক্ত ঘটনা উল্লেখের পর বিনা দলীলে লিখেছেন যে নাবী (সাঃ)’র পায়খানা ও পেশাব পাক। শেষের এই বাক্যটি লিখে শাইখ যাকারিয়া বুঝাতে চেয়েছেন যে, নাবী (সাঃ) রক্ত কেন, তাঁর (সাঃ)’র পেশাব এবং পায়খানাও পাক। অতএব তাঁর পেশাব এবং পায়খানাও পাক হবার কারণে তা খাওয়া চলত (আসতাগফিরুল্লাহ)। এখন প্রশ্ন ওঠে যে, রসূল (সাঃ)’র পেশাব ও পায়খান যদি পাক হত তার জন্য অযূ গোসল বা পবিত্রতা অর্জন অপরিহার্য ছিল কেন? বুঝা যাচ্ছে শাইখ নিজের পক্ষ থেকে বিধান তৈরি করে ইসলামের নামে চালিয়ে দিতে চেয়েছেন, অথচ মহান আল্লাহ সে অধিকার কাউকে দেননি। যেমন তিনি বলেন :

{أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ وَلَوْلاَ كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ}

‘‘এদের কি এমন কতকগুলো শরীক দেবতা আছে যারা এদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে এদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেত। নিশ্চয়ই যালিমদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’’  (সূরা আশ-শুরা ২১)
তাছাড়া রসূল সম্বন্ধে এ জাতীয় বিশ্বাস শিরকের পর্যায় উপনীত করে। কারণ শিরকের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে নাবী, রসূল, সৎ ব্যক্তি বা কারো সম্মান-মর্যাদার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। আল-কুরআনের ভাষায় এটিকে বলা হয় غلو ইংরেজীতে এর অর্থ করা হয়েছে Exceeding of proper bounds. সম্মান, মর্যাদা এবং ভক্তি-শ্রদ্ধার সীমালঙ্ঘন শিরকের দিকে ঠেলে দেয়ার অন্যতম কারণ। কুরআন মাজীদে দু’টি স্থানে মহান আল্লাহ غلو অর্থ বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি এরশাদ করেন :

{يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلا تَقُولُوا عَلَى اللهِ إِلاَّ الْحَقَّ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ فَآمِنُوا بِاللهِ وَرُسُلِهِ وَلاَ تَقُولُوا ثَلاثَةٌ انْتَهُوا خَيْراً لَكُمْ إِنَّمَا اللهُ إِلَهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَنْ يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَ(রাঃ)رْضِ وَكَفَى بِاللهِ وَكِيلاً}

‘‘হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করো না এবং আল্লাহর ব্যাপারে সঙ্গত বিষয় ছাড়া কথা বলো না। নিঃসন্দেহে মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর বাণী, যা তিনি মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং রূহ তাঁর কাছ থেকেই আগত। অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আন। আর এ কথা বলো না যে, আল্লাহ তিনের এক। এ কথা পরিহার কর। তোমাদের জন্য কল্যাণকর হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক ইলাহ। সন্তান হওয়া থেকে তিনি পবিত্র। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে সব তাঁরই জন্য, আর কর্ম বিধানে আল্লাহই যথেষ্ট।  (সূরা আন-নিসা ১৭১)

{قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلاَ تَتَّبِعُوا أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيراً وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ}

‘‘বল, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা নিজেদের ধর্মে বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করো না এবং তোমরা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে। আর তারা সঠিক-সরল পথ থেকে বিচ্যু হয়ে পড়েছে।  (সূরা আল-মায়িদাহ ৭৭)
এখানে লক্ষনীয় যে, প্রথম আয়াতে ‘সীমালঙ্ঘন’ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তারপর ঈসা বিন মারইয়ামকে আল্লাহর রসূল বলা হয়েছে। আল্লাহকে তিনের এক বলতে বারণ করা হয়েছে। আল্লাহই একমাত্র ইলাহ বলা হয়েছে। এতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে, সীমালঙ্ঘনই ঈসা বিন মারইয়ামকে ঘিরে বিভ্রান্ত আক্বীদার মূল কারণ।
দ্বিতীয় আয়াতে সীমালঙ্ঘন করতে বিষেধ করা হয়েছে। তারপর যারা ভ্রান্ত ও যারা ভ্রান্ত করে তাদের অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এতে বুঝা গেল যে, সীমালঙ্ঘন বা বাড়াবাড়িই হচ্ছে গোমরাহীর কারণ। পুরো কুরআন মাজীদ غلو তথা বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন বিষয়ক আয়াত এ দু'টোই। ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান-মর্যাদায় অতিরঞ্জন এক ভয়ানক মানসিক ব্যাধি যা মানুষকে শিরকের দিকে ঠেলে দেয়। আর এ কারণে রসূল (সাঃ) এ ধ্বংসাত্মক ব্যাধি থেকে উম্মাতকে সতর্ক ও সাবধান করে বলেছেন :

إياكم والغلو فإنما أهلك من كان قبلكم الغلو

‘তোমরা বাড়াবাড়ির ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন করবে। কেননা এ বাড়াবাড়িই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করে দিয়েছে।, (আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)
এ ভক্তি-শ্রদ্ধার সীমালঙ্ঘনই খ্রিষ্টানদের ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টাতায় নিক্ষেপ করেছিল ফলে তারা আল্লাহর বান্দাহ ও নাবী ঈসা (‘আ.)-কে মানুষ ও নাবীর সামীনা থেকে বের করে নিয়ে ইলাহ তথা প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহর মত তারও উপাসনা শুরু করেছে। এ অতিরঞ্জনের কারণেই আহলে কিতাবরা আল্লাহর স্থালে আহবার ও রুহবান তথা জ্ঞানী ও দরবেশদেরকে রব বানিয়েছে। ভক্তি-শ্রদ্ধার আতিশয্যেই বুযুর্গ লোকদেরকে তাদের মূল অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে আরো উপরে তাদের অধিষ্ঠিত করা হয়। তাদের ব্যাপারে এ ধারণা পোষণ করা হয় যে, তারা উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন। তারা যেমন কারো কল্যাণ করতে পারেন, আবার তাকে বিপদমুক্তও করতে পারেন। এ বিশ্বাসেই মানুষ তাদের কাছে ফরিয়াদ ও প্রার্থনা করে যেমনটি করে আল্লাহর কাছে , বিপদ মুক্তির জন্য তাদের সাহায্য চায় যেমনটি চায় আল্লহর কাছে, তাদের কবরগুলোক তারা তাদের প্রয়োজন পূরণের আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছে। (যে আক্বীদা-বিশ্বাস নাবী (সাঃ) সম্পর্কে নিসাবের লেখক শাইখও করে থাকে। যা আমরা পূর্বেউল্লেখ করেছি আর একটু পরেই উল্লেখ করছি)। তাই ভক্তি-শ্রদ্ধার এ বাড়াবাড়ি অতীত ও বর্তমান মুসলিম উম্মাহর জন্য এক ভয়াবহ বিপদ, যা অতীতেও তাদের বিভিন্ন ধরনের শিরকের আবর্তে নিক্ষেপ করেছে এবং এখনো করছে। দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বশ্রেষ্ঠ নাবী ইমামুল মুরসালীন, রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে মানা ঈমানের অনিবার্য দাবী। ইসলামের মূলভিত্তি শাহাদাতাইন মানে দু’টি বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়া। তার দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। তাঁর রিসালাতে বিশ্বাস, তাঁকে মানা, তাকে সর্বোত্তম আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা ইমান ও ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তাকে ঘিরেই সম্মন-মর্যাদা এবং ভক্তি-শ্রদ্ধার সীমালঙ্ঘন ও অতিরঞ্জনের সম্ভবনা সবচেয়ে বেশি। কোন অবস্থাতেই যেন তাঁকে তাঁর সম্মান-মর্যদার মূল অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে আল্লাহর সাথে শরীক করা না হয়। তাই আল্লাহ বলেছেন :

{قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلٰهٌ وَاحِدٌ}

‘‘বল, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওয়াহী করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র একজনই।  (সূরা আল-কাহাফ ১১০)

{قُلْ لاََ أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللهِ وَلا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلاَ أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلاَّ مَا يُوحَى إِلَيَّ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الأَعْمَى وَالْبَصِيرُ أَفَلا تَتَفَكَّرُونَ}

‘‘বল, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে রয়েছে আল্লাহর ভান্ডারসমূহ। আমি গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয়ে অবগত নই। আমি এমনও বলি না যে, আমি মালাক (ফেরেশতা)। আমি তো শুধু আমার কাছে প্রেরিত ওয়াহীর অনুসরণ করি। তুমি বল, অন্ধ ও দৃষ্টিসম্পন্ন কি সমান হতে পারে।? তোমরা কি চিন্তা কর না।’’  (সূরা আল-আন‘আম ৫০)

{قُلْ لاَ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعاً وَلَا ضَرّاً إِلاَّ مَا شَاءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ إِنْ أَنَا إِلاَّ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ}

‘‘বল, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধন ও অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, তবে আল্লাহ যা চান। আর আমি যদি গায়েব তথা অদৃশ্য বিষয় জানতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করতে পারতাম কোন অমঙ্গ আমাকে স্পর্শ করতে পারত না। আমি তো শুধু ঈমানদার গোষ্ঠীর জন্য একজন ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতা।’’           (সূরা আ‘রাফ ১৮৮)
রসূল (সাঃ) নিজেও নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছন। আনাস থেকে বর্ণিত, রসূল (সাঃ) বলেছেন :

أنا محمد بن عبد الله ورسوله والله ما أحب أن ترفعونى فوق منزلتى التى انزلني الله عزوجل

‘আমি ‘আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ। আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল। আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ আমাকে যে মর্যদা দিয়েছেন, তোমরা আমাকে তাঁর উপরে উঠাও তা আমি পছন্দ করি না।   (মুসনাদে আহদাম)
‘উমার (সাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূল (সাঃ) বলেছেন :

لا تطرونى كما أطرت النصارى ابن مريم إمنا  عبد الله فقولوا عبد الله ورسوله

‘খ্রিষ্টানরা মারইয়াম পুত্রকে নিয়ে যেভাবে অতিরঞ্জন করেছে তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে অতিরঞ্জন করো না। আমি তো শুধু আল্লাহর একজন বান্দা। তাই তোমরা (আমার ক্ষেত্রে বল যে,) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল।  (সহীহুল বুখারী)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! এতক্ষণ আপনারা লক্ষ্য করেছেন শাইখুল হাদীস সাহেব নাবীকে নিয়ে কেমন বাড়াবাড়ি করেছেন। তাঁর রক্ত, পায়খানা, পেশাবকে পত্রি করতে গিয়ে তিনি যে ফাতওয়া দিয়েছেন তা কুরআন-হাদীসের সাথে সংঘর্ষশীল। আর ফাতওয়ার বিষয়টি স্পর্শকাতর সে বিষয়ে আলোচনার পর আমরা দেখাব নাবীকে নিয়ে তিনি আরো কত বাড়াবাড়ি করেছেন ইসলামে ফাতওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম, ফাতওয়ার এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন শুধু তিনিই করতে পারেন, যার এ বিষয়ে পান্ডিত্য ও যোগ্যতা আছে। শুধুমাত্র পান্ডিত্য থাকলেই চলবে না, থাকতে হবে আল্লাহর ভয়। কেননা যিনি ফাতাওয়া দেন তিনি মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে লোকদের জানান যে, এটি বৈধ আর এটি ধৈ নয়। তিনি মানুষকে হালাল-হারাম সম্পর্কে অবহিত করেন।
মহান আল্লাহ বলেন :

{وَلا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللهِ الْكَذِبَ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللهِ الْكَذِبَ لا يُفْلِحُونَ}

‘‘তোমাদের মুখ যেসব মিথ্যা রচনা করে, তার ভিত্তিতে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বলো না যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে তারা সফলকাম হবে না।’’  (সূরা আন-নাহল ১১৬)
এ কারণেই অতীতের স্বনামধন্য ইসলামী ব্যক্তিত্বগণ ফাতাওয়া প্রদানকে ভয় পেতেন। ফাতওয়া দেয়ার মত কাউকে পাওয়া না গেলে খুবই প্রয়োজনের সময় ছাড়া তারা ফাতওয়া দিতেন না।
কিন্তু বর্তমান সময়ে ফাতওয়া যেন প্রতিযোগিতার একটি ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অবতরণ করে অনেকে খ্যাতি অর্জনের চেষ্টা করছে, এমনকি কেউ কেউ আল্লাহকে অসুন্তুষ্ট করে হলেও মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। যেমনটি ঘটেছে শায়খের ক্ষেত্রে, যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। তিনি একজন মুহাদ্দিসের হাদীরে সিদ্ধান্তকেও স্বীয় মাযহাবের লোকদের খুশি করার জন্য হাদীস বিরোধী ফাতওয়া দিয়েছেন। এ ধরণের লোকদের পুরস্কার হিসেবে ‘যুগের মুজতাহিদ’ শাইখুল হাদীস ইত্যাদি উপাদিতে ভূষিত করে তাদেরকে আরো উৎসাহিত করা হচ্ছে। অথচ উচিৎ ছিল তাদেরকে উপদেশ প্রদান এবং আল্লাহর ভয় দেখানো। দ্বীনের ইমামত মানে দ্বীনী নেতৃত্ব, গভীর ‘ইলম ও পান্ডিত্য, নেক ‘আমাল, হাক্বের প্রকাশ ও বাতিলের প্রতিবাদের মাধ্যমে আল্লাহর রাস্তায় ধৈর্য ধারণ, যোগ্যতা অর্জন ছাড়া সম্ভব নয়।
আল্লাহ, সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এরশাদ করেন :

{وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا وَكَانُوا بِآياتِنَا يُوقِنُونَ}

‘‘তারা সবর করত বলে আমি তাদের মধ্যে থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথপ্রদর্শন করত। তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল।’’  (সূরা সাজদাহ ২৪)
গভীর ‘ইলম ও পান্ডিত্য এবং সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত অর্জন ছাড়া ইজতিহাদী যোগ্যতা অর্জন করা যায় না। যারা ফাতওয়া দেয় তাদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন যে, এমন কিছু বিষয় রয়েছে যাতে ইজতিহাদের কোন সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে ইজতিহাদের ভিত্তিতে কোন মতামত দেয়া যাবে না। বিষয়গুলো হচ্ছে :
১। আক্বীদাহর সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়। কেননা আক্বীদাহ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তাওকীফী। তাওকীফী মানে এমন বিষয় যা আল্লাহ ও রসূল (সাঃ) কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত। তাওকীফী বিষয়ে ইজতিহাদের কোন সুযোগ নেই।
২। যেসব বিষয় শারঈ (অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ) থেকে সুস্পষ্ট বিধান দেয়া আছে। কেননা ‘নস’ মানে সুস্পষ্ট দলীলে থাকা সত্ত্বেও ইজতিহাদ চলে না, যা ঘটেছে শাইখের ক্ষেত্রে। কারণ মাযহাবী ইজতিহাদের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো মুফতী নিজ মাযহাব বা অন্য মাযহাবের এমন সব মতসমূহ গ্রহণ করবেন যা কুরআন-সহীহ হাদীসের দলীলের বিবেচনায় তার কাছে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। দলীল বিরোধী অথচ তাঁর মনে দুর্বলতা রয়েছে অথবা মানুষ খুশি হবে এ দৃষ্টিভঙ্গিতে সে কোন ফাতওয়া দিবে না। কেননা যে আল্লাহর অসুন্তষ্টি বিবেচনায় না রেখে মানুষের সন্তুষ্টি চায়, আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হন এবং মানুষকে তার উপর অসন্তষ্ট করে দেন। যে বা যারা সুস্পষ্ট দলীলের বিরোধিত করে তাদের প্রতিবাদ করা উচিৎ। কোন অবস্থাতেই তাদের ব্যাপারে নীরব থাকা যাবে না। কেননা এ অবস্থায় চুপ থাকা মানে হাক্বকে গোপন রাখা আর বাতিলকে মেনে নেয়া। আর আল্লাহ পাক এর পরিণতি সম্পর্কে বলেন :

{إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللاَّعِنُونَ، إِلاَّ الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ}

‘‘নিশ্চয়ই যারা আমাদের অবতীর্ণ কোন দলীল এবং হিদায়াতকে লোকেদের জন্য আমরা কিতাবের মধ্যে বর্ণনা করার পরেও গোপন করে, আল্লাহ তাদেরকে অভিসম্পাত করেন আর অভিসম্পাতকারীরাও তাদের প্রতি অভিসম্পাত করে থাকে। কিন্তু যারা তাওবাহ করে এবং সংশোধন করে নেয় এবং সত্যকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে, তাদের তাওবাহ আমি কবুল করি, বস্তুতঃ আমি অত্যধিক তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।  (সূরা বাক্বারাহ ১৫৯-১৬০)
 যে ভুল করে তার ভুল ধরিয়ে দেয়ার অর্থ তাকে খাঁটো করা নয় বরং এটি হচ্ছে নসীহাত, কল্যাণ ও তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা করা। রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘দ্বীন হচ্ছে নসীহাত, অর্থাৎ একে অপরকে কল্যাণের কথা বলা। ভাল কাজে সহযোগিতা করা। ভুল-ত্রুটি সংশোধন করা, আল্লাহ আমাদের সকলকে কল্যাণকর ‘ইলম ও জ্ঞান অর্জন এবং নেক ‘আমালের তাওফীক দিন।
সম্মানিত পাঠক! এবার লক্ষ্য করুন শাইখ রসূলকে নিয়ে কিরূপ বাড়াবাড়ি করেছেন।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ