Thursday, February 1, 2018

আন্‌-নওয়াবীর (৪০) চল্লিশ হািদস

আন্‌-নওয়াবীর চল্লিশ হািদস

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

হাদীস – ১
আমীরুল মুমিনীন আবু হাফস্ উমার ইবন আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন—
আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—
“সমস্ত কাজের ফলাফল নির্ভর করে নিয়্যতের উপর, আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়্যত করেছে, তাই পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দিকে হয়েছে, আর যার হিজরত দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) আহরণ করার জন্য অথবা মহিলাকে বিয়ে করার জন্য তার হিজরত সে জন্য বিবেচিত হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে।”
[সহীহ্ আল-বুখারী: ১, সহীহ্ মুসলিম: ১৯০৭। মুহাদ্দিসগণের দুই ইমাম আবু আব্দুল্লাহ্ মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল ইবন ইব্রাহীম ইবন মুগীরা ইবন বারদেযবাহ্ আল-বুখারী এবং আবুল হাসান মুসলিম ইবন হাজ্জাজ ইবন মুসলিম আল-কুশায়রী আন্-নিশাপুরী আপন আপন সহীহ্ গ্রন্থে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। যা সবচেয়ে সহীহ্ গ্রন্থদ্বয় বলে বিবেচিত হয়।]
الحديث الثاني
“مجيء جبريل ليعلم المسلمين أمر دينهم”

عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَيْضًا قَالَ
” بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ذَاتَ يَوْمٍ، إذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعْرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ. حَتَّى جَلَسَ إلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم . فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخْذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنْ الْإِسْلَامِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إنْ اسْتَطَعْت إلَيْهِ سَبِيلًا. قَالَ: صَدَقْت . فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ! قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِيمَانِ. قَالَ: أَنْ تُؤْمِنَ بِاَللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ. قَالَ: صَدَقْت. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ الْإِحْسَانِ. قَالَ: أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّك تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاك. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ السَّاعَةِ. قَالَ: مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنْ السَّائِلِ. قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَاتِهَا؟ قَالَ: أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ. ثُمَّ انْطَلَقَ، فَلَبِثْنَا مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ: يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنْ السَّائِلُ؟. قَلَتْ: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُم”. [ رَوَاهُ مُسْلِمٌ رقم: 8 ]
হাদীস – ২
এটাও উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসেছিলাম, এমন সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, যার কাপড় ছিল ধবধবে সাদা, চুল ছিল ভীষণ কালো; তার মাঝে ভ্রমণের কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতে পারে নি। সে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে গিয়ে বসে, নিজের হাঁটু তার হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে নিজের হাত তার উরুতে রেখে বললেন: “হে মুহাম্মাদ, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন”।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল, সালাত প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত আদায় কর, রমাদানে সওম সাধনা কর এবং যদি সামর্থ থাকে তবে (আল্লাহর) ঘরের হজ্জ কর।”
তিনি (লোকটি) বললেন: “আপনি ঠিক বলেছেন”। আমরা বিস্মিত হলাম, সে নিজে তার নিকট জিজ্ঞাসা করেছে আবার নিজেই তার জবাবকে ঠিক বলে ঘোষণা করছে। এরপর বলল: “আচ্ছা, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- আল্লাহ্, তাঁর ফিরিশ্‌তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও আখেরাতর উপর ঈমান আনা এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনা।”
সে (আগন্তুক) বলল: “আপনি ঠিক বলেছেন”। তারপর বলল: “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন”।
তিনি বলেন: “তা হচ্ছে এই- তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ, আর তুমি যদি তাঁকে দেখতে নাও পাও তবে তিনি তোমাকে দেখছেন”।
সে (আগন্তুক) বলল: “আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সে জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী কিছু জানে না”।
সে (আগন্তুক) বলল: “আচ্ছা, তার লক্ষণ সম্পর্কে বলুন”।
তিনি (রাসূল) বললেন: “তা হচ্ছে এই- দাসী নিজের মালিককে জন্ম দেবে, সম্পদ ও বস্ত্রহীন রাখালগণ উঁচু উঁচু প্রাসাদে দম্ভ করবে”।
তারপর ঐ ব্যক্তি চলে যায়, আর আমি আরো কিছুক্ষণ বসে থাকি। তখন তিনি (রাসূল) আমাকে বললেন: “হে উমার, প্রশ্নকারী কে ছিলেন, তুমি কি জান? আমি বললাম: “আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল অধিক ভাল জানেন”। তিনি বললেন: “তিনি হলেন জিবরীল। তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে তোমাদের কাছে এসেছিলেন।”
[সহীহ্ মুসলিম: ৮]
الحديث الثالث
“بني الإسلام على خمس”
عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ
” بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ”.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ، رقم : 8، وَمُسْلِمٌ ، رقم : 21  ]
হাদীস – ৩
আবু আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবন উমার ইবন আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
“পাঁচটি জিনিসের উপর ইসলামের বুনিয়াদ রাখা হয়েছে— সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা এবং রমাদানের সওম পালন করা।”
[বুখারী: ৮, মুসলিম: ২১]
الحديث الرابع
“إن أحدكم يجمع في بطن أمه”
عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم -وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ-:
“إنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يُرْسَلُ إلَيْهِ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ، وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ: بِكَتْبِ رِزْقِهِ، وَأَجَلِهِ، وَعَمَلِهِ، وَشَقِيٍّ أَمْ سَعِيدٍ.
فَوَاَللَّهِ الَّذِي لَا إلَهَ غَيْرُهُ إنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إلَّا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا.
وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إلَّا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا”.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ , رقم: 3208، وَمُسْلِمٌ , رقم: 2643]
হাদীস – ৪
আবূ আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন— রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম— যিনি সত্যবাদী ও যার কথাকে সত্য বলে মেনে নেয়া হয়— তিনি আমাদেরকে বলেছেন:
তোমাদের সকলের সৃষ্টি নিজের মায়ের পেটে চল্লিশ দিন যাবৎ শুক্ররূপে জমা হওয়ার মাধ্যমে শুরু হতে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন জমাট বাঁধা রক্তরূপে থাকে, পরবর্তী চল্লিশ দিন মাংসপিণ্ড রূপে থাকে, তারপর তার কাছে ফিরিশ্‌তা পাঠানো হয়। অতঃপর সে তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করায় এবং তাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হয়- তার রুজি, বয়স, কাজ এবং সে কি সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান।
অতএব, আল্লাহর কসম-যিনি ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই-তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতবাসীর মত কাজ করে[1]- এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জাহান্নামবাসীর মত কাজ শুরু করে এবং তার ফলে তাতে প্রবেশ করে।
এবং তোমাদের মধ্যে অপর এক ব্যক্তি জাহান্নামীদের মত কাজ শুরু করে দেয়- এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র এক হাত ব্যবধান থাকে, এ অবস্থায় তার লিখন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে বলে সে জান্নাতবাসীদের মত কাজ শুরু করে আর সে তাতে প্রবেশ করে।
[বুখারী: ৩২০৮, মুসলিম: ২৬৪৩]
الحديث الخامس
“من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد”
عَنْ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أُمِّ عَبْدِ اللَّهِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم
“مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ”.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ , رقم: 2697، وَمُسْلِمٌ , رقم: 1718]
 وفي رواية لمسلم: مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أمْرُنَا … فَهُوَ رَدٌّ
হাদীস – ৫
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় সংযুক্ত করবে যা তার অংশ নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে (অর্থাৎ তা গ্রহণযোগ্য হবে না)।
[বুখারী: ২৬৯৭, মুসলিম: ১৭১৮]
মুসলিমের বর্ণনার ভাষা হলো এই যে,
যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে না (অর্থাৎ প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে)।
الحديث السادس
“إن الحلال بين وإن الحرام بين”
عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ:
“إنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ، وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا أُمُورٌ مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ، فَمَنْ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ فَقْد اسْتَبْرَأَ لِدِينِهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ، كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوشِكُ أَنْ يَرْتَعَ فِيهِ.
أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى، أَلَّا وَإِنَّ حِمَى اللَّهِ مَحَارِمُهُ، أَلَّا وَإِنَّ فِي الْجَسَدِ مُضْغَةً إذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ”.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ , رقم: 52 ، وَمُسْلِمٌ , رقم: 1599]
হাদীস – ৬
আবু আব্দিল্লাহ্ আন্-নু‘মান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ
নিঃসন্দেহে হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট, আর এ দু‘য়ের মধ্যে কিছু সন্দেহজনক বিষয় আছে যা অনেকে জানে না। অতএব, যে ব্যক্তি সন্দিহান বিষয় হতে নিজেকে রক্ষা করেছে; সে নিজের দ্বীনকে পবিত্র করেছে এবং নিজের সম্মানকেও রক্ষা করেছে। আর যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয়ে পতিত হয়েছে; সে হারামে পতিত হয়েছে। তার অবস্থা সেই রাখালের মত যে নিষিদ্ধ চারণ ভূমির চারপাশে (গবাদি) চরায়, আর সর্বদা এ আশংকায় থাকে যে, যে কোন সময় কোন পশু তার মধ্যে প্রবেশ করে চরতে আরম্ভ করবে।
সাবধান! প্রত্যেক রাজা-বাদশাহর একটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর হারামকৃত বিষয়াদি। সাবধান! নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড আছে; যখন তা ঠিক থাকে তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায় -এটা হচ্ছে কলব (হৃদপিণ্ড)।
[বুখারী: ৫২, মুসলিম: ১৫৯৯]
الحديث السابع
“الدين النصيحة”
عَنْ أَبِي رُقَيَّةَ تَمِيمِ بْنِ أَوْسٍ الدَّارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ
“الدِّينُ النَّصِيحَةُ. قُلْنَا: لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ، وَلِكِتَابِهِ، وَلِرَسُولِهِ، وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ” .
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ , رقم: 55]
হাদীস – ৭
আবু রুকাইয়্যা তামীম ইবন আওস আদ্-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
দ্বীন হচ্ছে শুভকামনা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম: কার জন্য? তিনি বললেন: আল্লাহ্, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসূলের, মুসলিম নেতাদের এবং সকল মুসলিমের জন্য।
[মুসলিম: ৫৫]
الحديث الثامن
“أمرت أن أقاتل الناس”
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ
أُمِرْت أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ؛ فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إلَّا بِحَقِّ الْإِسْلَامِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ تَعَالَى.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ , رقم: 25 ، وَمُسْلِمٌ , رقم: 22]
হাদীস – ৮
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে লড়াই করতে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। আর তারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয়। যদি তারা এরূপ করে তবে তারা আমার হাত থেকে নিজেদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে নেবে, অবশ্য ইসলামের হক যদি তা দাবী করে তবে আলাদা কথা; আর তাদের হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত।
[বুখারী: ২৫, মুসলিম: ২২]
الحديث التاسع
“ما نهيتكم عنه فاجتنبوه”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ صَخْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ
مَا نَهَيْتُكُمْ عَنْهُ فَاجْتَنِبُوهُ، وَمَا أَمَرْتُكُمْ بِهِ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، فَإِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ كَثْرَةُ مَسَائِلِهِمْ وَاخْتِلَافُهُمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ , رقم: 7288 ، وَمُسْلِمٌ , رقم: 1337]
হাদীস – ৯
আবু হুরায়রা আব্দুর রহমান ইবন সাখর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
আমি তোমাদেরকে যেসব বিষয় নিষেধ করেছি, তা থেকে বিরত থাক। আর যেসব বিষয়ে আদেশ করেছি, যথাসম্ভব তা পালন কর। বেশী বেশী প্রশ্ন করা আর নবীদের সথে মতবিরোধ করা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
[বুখারীঃ ৭২৮৮, মুসলিম: ১৩৩৭]
الحديث العاشر
“إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم
إنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ فَقَالَ تَعَالَى: “يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنْ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا”، وَقَالَ تَعَالَى: “يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ.
ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إلَى السَّمَاءِ: يَا رَبِّ! يَا رَبِّ! وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِّيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لَهُ؟.
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ , رقم: 1015]
হাদীস – ১০
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আল্লাহ্ তা‘আলা পাক-পবিত্র, তাই তিনি কেবল পবিত্র জিনিসই কবূল করে থাকেন। আল্লাহ্ তা‘আলা মুমিনদের ঐ কাজই করার হুকুম দিয়েছেন যা করার হুকুম তিনি রাসূলদেরকে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: ((হে রাসূলগণ! পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং নেক আমল করুন।)) আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেছেন: ((হে মুমিনগণ! আমরা তোমাদের যে পবিত্র জীবিকা দান করেছি তা থেকে আহার কর।))
তারপর তিনি (রাসূলুল্লাহ্) এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে ও কাপড় ধুলোবালিতে ময়লা হয়ে আছে। অতঃপর সে নিজের দুই হাত আকাশের দিকে তুলে ধরে ও বলে: হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, সে হারামভাবে লালিত-পালিত হয়েছে; এ অবস্থায় কেমন করে তার দো‘আ কবূল হতে পারে।
[মুসলিম: ১০১৫]
الحديث الحادي عشر
“دع ما يريبك إلى ما لا يريبك”
عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ سِبْطِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم وَرَيْحَانَتِهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ:
حَفِظْت مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم “دَعْ مَا يُرِيبُك إلَى مَا لَا يُرِيبُك”.
[ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ , رقم: 2520 ، وَالنَّسَائِيّ , رقم: 5711 ، وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ]
হাদীস – ১১
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্নেহাস্পদ দৌহিত্র আবু মুহাম্মাদ হাসান ইবন আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
“আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে এ কথা শুনে স্মরণ রেখেছি:  সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করে সন্দেহমুক্ত বিষয় গ্রহণ কর।”
[তিরমিযী: ২৫২০, নাসায়ী: ৫৭১১, আর ইমাম তিরমিযী বলেছেন: হাদীসটি হাসান সহীহ]
الحديث الثاني عشر
“من حسن إسلام المرء”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم :
“مِنْ حُسْنِ إسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ”.
[حَدِيثٌ حَسَنٌ، رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ, رقم: 2318، ابن ماجه, رقم: 3976]
হাদীস – ১২
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“অনর্থক অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করাই একজন ব্যক্তির উত্তম ইসলাম।”
[হাদীসটি হাসান। তিরমিযী: ২৩১৮, ইবনে মাজাহ: ৩৯৭৬]
الحديث الثالث عشر
“لا يؤمن أحدكم حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه”
عَنْ أَبِي حَمْزَةَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ خَادِمِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ:
“لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ”.
 [رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ, رقم: 13، وَمُسْلِمٌ, رقم: 45]
হাদীস – ১৩
আবু হামযাহ্ আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম-হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।”
 [বুখারী: ১৩, মুসলিম: ৪৫]
الحديث الرابع عشر
” لا يحل دم امريء مسلم إلا بإحدى ثلاث”
عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم:
“لَا يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ إلَّا بِإِحْدَى ثَلَاثٍ: الثَّيِّبُ الزَّانِي، وَالنَّفْسُ بِالنَّفْسِ، وَالتَّارِكُ لِدِينِهِ الْمُفَارِقُ لِلْجَمَاعَةِ”.
 [رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ, رقم: 6878، وَمُسْلِمٌ, رقم: 1676]
হাদীস – ১৪
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“কোন মুসলিমের রক্তপাত করা তিনটি কারণ ব্যতীত বৈধ নয়- বিবাহিত ব্যক্তি যদি ব্যভিচার করে, আর যদি প্রাণের বদলে প্রাণ নিতে হয়। আর যদি কেউ স্বীয় দ্বীনকে পরিত্যাগ করে মুসলিম জামা‘আত হতে আলাদা হয়ে যায়।”
 [বুখারী: ৬৮৭৮, মুসলিম: ১৬৭৬]
الحديث الخامس عشر
“من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فليقل خيرا”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ:
“مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاَللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاَللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاَللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ”.
 [رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ, رقم: 6018، وَمُسْلِمٌ, رقم: 47]
হাদীস – ১৫
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তার উচিত হয় উত্তম কথা বলা অথবা চুপ থাকা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতে ঈমান রাখে, তার উচিত আপন প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হওয়া। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও আখেরাতের উপর ঈমান রাখে, তার উচিত আপন অতিথির সম্মান করা।”
 [বুখারীঃ ৬০১৮, মুসলিমঃ ৪৭]
الحديث السادس عشر
” لا تغضب”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنْ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَوْصِنِي. قَالَ:
لَا تَغْضَبْ، فَرَدَّدَ مِرَارًا، قَالَ: لَا تَغْضَبْ” .
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ: 6116]
হাদীস – ১৬
আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন:
রাগ করো না। লোকটি বার বার রাসূলের নিকট উপেদশ চায় আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: রাগ করো না।
[বুখারী: ৬১১৬]
 الحديث السابع عشر
“إن الله كتب الإحسان على كل شيء”
عَنْ أَبِي يَعْلَى شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ:
“إنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذِّبْحَةَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ”.
]رَوَاهُ مُسْلِمٌ: 1955]
হাদীস – ১৭
আবূ ইয়া‘লা শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সমস্ত জিনিস উত্তম পদ্ধতিতে করার বিধান করে দিয়েছেন। সুতরাং যখন তুমি হত্যা করবে, তখন উত্তম পদ্ধতিতে হত্যা করবে আর যখন তুমি যবেহ্ করবে, তখন উত্তম পদ্ধতিতে যবেহ্ করবে। তোমাদের প্রত্যেকের আপন ছুরি ধারালো করে নেয়া উচিত ও যে জন্তুকে যবেহ্ করা হবে তার কষ্ট লাঘব করা উচিত।
[মুসলিম: ১৯৫৫]
الحديث الثامن عشر
“اتق الله حيثما كنت”
عَنْ أَبِي ذَرٍّ جُنْدَبِ بْنِ جُنَادَةَ، وَأَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ:
“اتَّقِ اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْت، وَأَتْبِعْ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقْ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ”.
[رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ: 1987] وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ، وَفِي بَعْضِ النُّسَخِ: حَسَنٌ صَحِيحٌ.
হাদীস – ১৮
আবূ যার জুনদুব ইবন জুনাদাহ্ এবং আবূ আব্দুর রহমান মু’আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত আছে, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
তুমি যেখানে যে অবস্থায় থাক না কেন আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক মন্দ কাজের পর ভাল কাজ কর, যা তাকে মুছে দেবে; আর মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার কর।
[তিরমিযী: ১৯৮৭, এবং (তিরমিযী) বলেছেন যে, এটা হচ্ছে হাসান হাদীস। কোন কোন সংকলনে এটাকে হাসান সহীহ্ বলা হয়েছে।]
الحديث التاسع عشر
“احفظ الله يحفظك”
عَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ:
“كُنْت خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَوْمًا، فَقَالَ: يَا غُلَام! إنِّي أُعَلِّمُك كَلِمَاتٍ: احْفَظْ اللَّهَ يَحْفَظْك، احْفَظْ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَك، إذَا سَأَلْت فَاسْأَلْ اللَّهَ، وَإِذَا اسْتَعَنْت فَاسْتَعِنْ بِاَللَّهِ، وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوك بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوك إلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَك، وَإِنْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوك بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوك إلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْك؛ رُفِعَتْ الْأَقْلَامُ، وَجَفَّتْ الصُّحُفُ”.
[رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ: 2516] وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
وَفِي رِوَايَةِ غَيْرِ التِّرْمِذِيِّ: “احْفَظْ اللَّهَ تَجِدْهُ أمامك، تَعَرَّفْ إلَى اللَّهِ فِي الرَّخَاءِ يَعْرِفُك فِي الشِّدَّةِ، وَاعْلَمْ أَنَّ مَا أَخْطَأَك لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَك، وَمَا أَصَابَك لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَك، وَاعْلَمْ أَنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ، وَأَنْ الْفَرَجَ مَعَ الْكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا”.
হাদীস – ১৯
আবূ আব্বাস আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন- একদিন আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পিছনে ছিলাম, তিনি আমাকে বললেন: “হে যুবক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাবো- আল্লাহকে সংরক্ষণ করবে[2] তো তিনি তোমাকে সংরক্ষণ করবেন, আল্লাহকে স্মরণ করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। যখন কিছু চাইবে তো আল্লাহর কাছেই চাইবে; যখন সাহায্য চাইবে তো আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইবে। জেনে রাখ, সমস্ত মানুষ যদি তোমার কোন উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ্ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা ব্যতীত আর কোন উপকার করতে পারবে না। আর যদি সমস্ত মানুষ তোমার কোন অনিষ্ট করতে চায় তবে আল্লাহ্ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা ব্যতীত আর কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে।”
[তিরমিযী: ২৫১৬, হাদীসটি সহীহ্ (হাসান) বলেছেন।]
তিরমিযী ছাড়া অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে:
“আল্লাহকে স্মরণ করবে তো তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে, তুমি স্বচ্ছল অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করবে তো তিনি তোমাকে কঠিন অবস্থায় স্মরণ করবেন। মনে রেখো- যা তুমি পেলে না, তা তোমার পাবার ছিল না, আর যা তুমি পেলে তা তুমি না পেয়ে থাকতে না। আরো জেনে রাখো- ধৈর্য্য ধারণের ফলে (আল্লাহর) সাহায্য লাভ করা যায়। কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ আসে। কঠিন অবস্থার পর স্বচ্ছলতা আসে।”
الحديث العشرون
“إذا لم تستح فاصنع ما شئت”
عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ عُقْبَةَ بْنِ عَمْرٍو الْأَنْصَارِيِّ الْبَدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم:
“إنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلَامِ النُّبُوَّةِ الْأُولَى: إذَا لَمْ تَسْتَحِ فَاصْنَعْ مَا شِئْت”.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ: 3483].
হাদীস – ২০
আবূ মাসউদ উকবাহ্ ইবন আমর আল-আনসারী আল-বদরী রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত হয়েছে- তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“অতীতের নবীগণের কাছ থেকে মানুষ একথা জানতে পেরেছে- যদি তোমার লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা তাই কর।”
[বুখারী: ৩৪৮৩]
الحديث الحادي والعشرون
“قل آمنت بالله ثم استقم”
عَنْ أَبِي عَمْرٍو وَقِيلَ: أَبِي عَمْرَةَ سُفْيَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ:
“قُلْت: يَا رَسُولَ اللَّهِ! قُلْ لِي فِي الْإِسْلَامِ قَوْلًا لَا أَسْأَلُ عَنْهُ أَحَدًا غَيْرَك؛ قَالَ: قُلْ: آمَنْت بِاَللَّهِ ثُمَّ اسْتَقِمْ”.
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ: 38]
হাদীস – ২১
আবূ আমরকে আবূ আমরাহ্ও বলা হয়- সুফিয়ান ইবন আব্দুল্লাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন-
আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু বলে দিন যেন আপনাকে ব্যতীত আর কারো কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন না হয়। তিনি বললেন: বল- ‘আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি’; তারপর এর উপর দৃঢ় থাক।”
[মুসলিম: ৩৮]
الحديث الثاني والعشرون
“أرأيت إذا صليت المكتوبات وصمت رمضان”
عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا:
“أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ: أَرَأَيْت إذَا صَلَّيْت الْمَكْتُوبَاتِ، وَصُمْت رَمَضَانَ، وَأَحْلَلْت الْحَلَالَ، وَحَرَّمْت الْحَرَامَ، وَلَمْ أَزِدْ عَلَى ذَلِكَ شَيْئًا؛ أَأَدْخُلُ الْجَنَّةَ؟ قَالَ: نَعَمْ”.
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ: 15]
হাদীস – ২২
আবূ আব্দুল্লাহ্ জাবের ইবন আব্দুল্লাহ্ আল-আনসারী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত হয়েছে-
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে জিজ্ঞাসা করলেন: আপনি কি মনে করেন যদি আমি ফরয নামায আদায় করি, রমযানে রোযা রাখি, হালালকে হালাল বলে ও হারামকে হারাম বলে ঘোষণা করি, আর এর বেশী কিছু না করি, তাহলে কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? তিনি বললেন: হাঁ।
[মুসলিম: ১৫]
الحديث الثالث والعشرون
“االطهور شطر الإيمان”
عَنْ أَبِي مَالِكٍ الْحَارِثِ بْنِ عَاصِمٍ الْأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم:
“الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَآنِ -أَوْ: تَمْلَأُ- مَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، وَالصَّلَاةُ نُورٌ، وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ، وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ، وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَك أَوْ عَلَيْك، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو، فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا”.
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ: 223]
হাদীস – ২৩
আবূ মালেক আল-হারেস ইবন আসেম আল-আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক; আল-হামদুলিল্লাহ্ (সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য) [বললে] পাল্লা পরিপূর্ণ করে দেয় এবং “সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদুলিল্লাহ্ (আল্লাহ্ কতই না পবিত্র! এবং সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য) উভয়ে অথবা এর একটি আসমান ও যমীনের মাঝখান পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে আলো, সাদকা হচ্ছে প্রমাণ, সবর উজ্জ্বল আলো, আর কুরআন তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ। প্রত্যেক ব্যক্তি আপন আত্মার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সকাল শুরু করে- আর তা হয় তাকে মুক্ত করে দেয় অথবা তাকে ধ্বংস করে দেয়।”
[মুসলিম: ২২৩]
الحديث الرابع والعشرون
“يا عبادي إني حرمت الظلم على نفسي”
عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِيمَا يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، أَنَّهُ قَالَ:
“يَا عِبَادِي: إنِّي حَرَّمْت الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي، وَجَعَلْته بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا؛ فَلَا تَظَالَمُوا. يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إلَّا مَنْ هَدَيْته، فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ. يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ جَائِعٌ إلَّا مَنْ أَطْعَمْته، فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ. يَا عِبَادِي! كُلُّكُمْ عَارٍ إلَّا مَنْ كَسَوْته، فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ. يَا عِبَادِي! إنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا؛ فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ. يَا عِبَادِي! إنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضُرِّي فَتَضُرُّونِي، وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنْفَعُونِي. يَا عِبَادِي! لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ، مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا. يَا عِبَادِي! لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا. يَا عِبَادِي! لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ، فَسَأَلُونِي، فَأَعْطَيْت كُلَّ وَاحِدٍ مَسْأَلَته، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ. يَا عِبَادِي! إنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ، ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إيَّاهَا؛ فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدْ اللَّهَ، وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلَا يَلُومَن إلَّا نَفْسَهُ”.
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ: 2577]
হাদীস – ২৪
আবূ যর আল-গিফারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ্ বলেছেন:
“হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি; অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না।
হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব।
হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাতদিন গোনাহ্ করছ, আর আমি তোমাদের গোনাহ্ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার সামর্থ রাখ না যে আমার ক্ষতি করবে আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে আমার ভালো করবে।
হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করবে না।
আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারবে না।
হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সমস্ত মানুষ ও তোমাদের সমস্ত জিন যদি সবাই একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয়ে যায় তা ব্যতীত আর কিছু কম হতে পারে না।
হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে (কাজকে) তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আর আমি তার পুরোপুরি প্রতিফল দিয়ে দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তার আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত, আর যে তার বিপরীত পাবে তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেয়া উচিত।”
[মুসলিম: ২৫৭৭]
الحديث الخامس والعشرون
“ذهب أهل الدثور بالأجور”
عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَيْضًا،
“أَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالُوا لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَا رَسُولَ اللَّهِ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالْأُجُورِ؛ يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أَمْوَالِهِمْ. قَالَ: أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُونَ؟ إنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةً، وَأَمْرٌ بِمَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ، وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ: أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ وِزْرٌ؟ فَكَذَلِكَ إذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ، كَانَ لَهُ أَجْرٌ”.
[رَوَاهُ مُسْلِمٌ: 1006]
হাদীস – ২৫
আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহর কিছু সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন:
“হে আল্লাহর রাসূল! বিত্তবান লোকেরা প্রতিফল ও সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে। আমরা নামায পড়ি তারাও সেরকম নামায পড়ে, আমরা রোযা রাখি তারাও সেরকম রোযা রাখে, তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সদকা করে।
তিনি বলেন: আল্লাহ্ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস রাখেননি যে তোমরা সদকাহ্ দিতে পার। প্রত্যেক তাসবীহ্ (সোবহান আল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) হচ্ছে সদকাহ্, প্রত্যেক ভালো কাজের হুকুম দেয়া হচ্ছে সদকাহ্ এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত করা হচ্ছে সদকাহ্। আর তোমাদের প্রত্যেকে আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও হচ্ছে সদকাহ্।
তারা জিজ্ঞাসা করেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাঙ্খা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করে, তাতেও কি সওয়াব হবে?
তিনি বলেন: তোমরা কি দেখ না, যখন সে হারাম পদ্ধতিতে তা করে, তখন সে গোনাহ্গার হয় কি না! সুতরাং অনুরূপভাবে যখন সে ঐ কাজ বৈধভাবে করে তখন সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে।”
[মুসলিম: ১০০৬]
الحديث السادس والعشرون
“كل سلامى من الناس عليه صدقة”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم:
“كُلُّ سُلَامَى مِنْ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ، كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ تَعْدِلُ بَيْنَ اثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وَتُعِينُ الرَّجُلَ فِي دَابَّتِهِ فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرْفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وَبِكُلِّ خُطْوَةٍ تَمْشِيهَا إلَى الصَّلَاةِ صَدَقَةٌ، وَتُمِيطُ الْأَذَى عَنْ الطَّرِيقِ صَدَقَةٌ”.
[رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ: 2989، وَمُسْلِمٌ: 1009]
  হাদীস – ২৬
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“প্রত্যেহ যখন সূর্য উঠে মানুষের (শরীরের) প্রত্যেক গ্রন্থির সাদকাহ্ দেয়া অবশ্য কর্তব্য। দু’জন মানুষের মাঝে ইনসাফ করা হচ্ছে সাদকাহ্, কোন আরোহীকে তার বাহনের উপর আরোহন করতে বা তার উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সাদকাহ্, ভাল কথা হচ্ছে সাদকাহ্, সালাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সাদকাহ্ এবং কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সাদকাহ্।”
[বুখারী: ২৯৮৯, মুসলিম: ১০০৯]
الحديث السابع والعشرون
“البر حسن الخلق”
عَنْ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: “الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ، وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي صَدْرِك، وَكَرِهْت أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ” رَوَاهُ مُسْلِمٌ [رقم:2553].
وَعَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: أَتَيْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ: “جِئْتَ تَسْأَلُ عَنْ الْبِرِّ؟ قُلْت: نَعَمْ. فقَالَ: استفت قلبك، الْبِرُّ مَا اطْمَأَنَّتْ إلَيْهِ النَّفْسُ، وَاطْمَأَنَّ إلَيْهِ الْقَلْبُ، وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإِنْ أَفْتَاك النَّاسُ وَأَفْتَوْك” .
حَدِيثٌ حَسَنٌ، رَوَيْنَاهُ في مُسْنَدَي الْإِمَامَيْنِ أَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ [رقم:4/227]، وَالدَّارِمِيّ [2/246] بِإِسْنَادٍ حَسَنٍ.
হাদীস – ২৭
আন-নওয়াস ইবন সাম’আন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“উত্তম চরিত্র হচ্ছে নেকী, আর গোনাহ্ তাকে বলে যা তোমার মনকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে এবং তা লোকে জানুক তা তুমি অপছন্দ কর।”
[মুসলিম: ২৫৫৩]
ওয়াবেসা ইবন মা’বাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
আমি একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলে তিনি আমাকে বললেন: “তুমি কি নেকী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ?”
আমি বলি: জী হাঁ।
তিনি বললেন: “নিজের মনকে জিজ্ঞাসা কর; যা সম্পর্কে তোমার আত্মা ও মন আশ্বস্ত থাকে তা হচ্ছে নেকী, আর গোনাহ্ হচ্ছে তা যা যদিও লোক (তার স্বপক্ষে) ফাতাওয়া দিয়ে দেয় তবুও তোমার আত্মাকে অশ্বস্তিতে রাখে ও মনে সংশয় সৃষ্টি করে।”
[-এটি হচ্ছে হাসান হাদীস যা আমি দুই ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল ও আদ্-দারেমীর মুসনাদ থেকে উৎকৃষ্ট সদনে উদ্ধৃত করেছি।]
الحديث الثامن والعشرون
“أوصيكم بتقوى الله وحسن الخلق”
عَنْ أَبِي نَجِيحٍ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: “وَعَظَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مَوْعِظَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ! كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأَوْصِنَا، قَالَ: أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ تَأَمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيينَ، عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ”.
رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ [رقم:4607]، وَاَلتِّرْمِذِيُّ [رقم:266] وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
হাদীস – ২৮
আবূ নাজীহ্ আল-‘ইরবাদ ইবন সারিয়াহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বক্তৃতায় আমাদের উপদেশ দান করেন যাতে আমাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে ও আমাদের চোখে পানি এসে যায়।
আমরা নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে বিদায়কালীন উপদেশ; আপনি আমাদেরকে অসীয়াত করুন। তিনি বললেন: “আমি তোমাদের মহান আল্লাহকে ভয় করতে অসীয়াত করছি, আর আনুগত্য দেখাতে অসীয়াত করছি; যদি কোন গোলামও তোমাদের শাসক হয় তবুও। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা অনেক মতবিরোধ দেখবে; সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের পদ্ধতি মেনে চল, তা দাঁত দিয়ে (অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) ধরে রাখ; আর অভিনব বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাক, কারণ প্রত্যেক অভিনব বিষয় হচ্ছে বিদ’আত, প্রত্যেক বিদ’আত হচ্ছে গোমরাহী এবং প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম হচ্ছে জাহান্নামের আগুন।”
[-আবূ দাউদ(৪৬০৭) ও তিরমিযী(২৬৬) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এটা সহীহ্ (হাসান) হাদীস।]
الحديث التاسع والعشرون
“تعبد الله لا تشرك به شيئا”
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قُلْت يَا رَسُولَ اللَّهِ! أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ وَيُبَاعِدْنِي مِنْ النَّارِ، قَالَ: “لَقَدْ سَأَلْت عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ: تَعْبُدُ اللَّهَ لَا تُشْرِكْ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ الْبَيْتَ، ثُمَّ قَالَ: أَلَا أَدُلُّك عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ؟ الصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ، وَصَلَاةُ الرَّجُلِ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ، ثُمَّ تَلَا: ” تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ ” حَتَّى بَلَغَ “يَعْمَلُونَ”، ثُمَّ قَالَ: أَلَا أُخْبِرُك بِرَأْسِ الْأَمْرِ وَعَمُودِهِ وَذُرْوَةِ سَنَامِهِ؟ قُلْت: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: رَأْسُ الْأَمْرِ الْإِسْلَامُ، وَعَمُودُهُ الصَّلَاةُ، وَذُرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ، ثُمَّ قَالَ: أَلَا أُخْبِرُك بِمَلَاكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ فقُلْت: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ‍! فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ وَقَالَ: كُفَّ عَلَيْك هَذَا. قُلْت: يَا نَبِيَّ اللَّهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ: ثَكِلَتْك أُمُّك وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ عَلَى وُجُوهِهِمْ -أَوْ قَالَ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ- إلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ؟!” .
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ [رقم:2616] وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
হাদীস – ২৯
মু’আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন:
আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।
তিনি বললেন: তুমি এক বৃহৎ বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। এটা তার জন্য খুবই সহজ আল্লাহ্ যার জন্য সহজ করে দেন। তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না, নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দাও, রমযানে রোযা রাখ এবং (কা’বা) ঘরে হজ্জ কর।
তারপর তিনি বলেন: আমি কি তোমাদের কল্যাণের দরজা দেখাব না? রোযা হচ্ছে ঢাল, সাদকাহ্ গোনাহকে নিঃশেষ করে দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়; আর কোন ব্যক্তির গভীর রাতের নামায।
তারপর তিনি পড়েন: تتجافي جنوبهم عن المضاجع হতে يعلمون পর্যন্ত। যার অর্থ হলো: তারা শয্যা পরিত্যাগ করে তাদের রবকে ভয়ে ও আশায় ডাকে এবং আমরা তাদেরকে যে রিয্‌ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তাদের কর্মের জন্য যে চক্ষু শীতলকারী প্রতিফল রক্ষিত আছে তা তাদের কেউই জানে না। [সূরা আস্-সাজদাহ্: ১৬-১৭]
তিনি আবার বলেন: আমি তোমাদের কর্মের মূল এবং তার স্তম্ভ ও তার সর্বোচ্চ চূড়া বলবো কি?
আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন।
তিনি বললেন: কর্মের মূল হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং তার সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ।
তারপর তিনি বলেন: আমি কি তোমাকে এসব কিছু আয়ত্তে রাখার জিনিস বলবো না?
আমি নিবেদন করি: হে আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন।
তিনি নিজের জিভ ধরে বললেন: এটাকে সংযত কর।
আমি জিজ্ঞেস করি: হে আল্লাহর নবী! আমরা যা বলি তার হিসাব হবে কি?
তিনি বললেন: তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, হে মু’আয! জিভের উৎপন্ন ফসল ব্যতীত আর কিছু এমন আছে কি যা মানুষকে মুখ থুবড়ে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে?
[তিরমিযী: ২৬১৬ এবং তিনি বলেছেন: এটা হাসান (সহীহ্) হাদীস।]
الحديث الثلاثون
“إن الله تعالى فرض فرائض فلا تضيعوها”
عَنْ أَبِي ثَعْلَبَةَ الْخُشَنِيِّ جُرْثُومِ بن نَاشِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَال: “إنَّ اللَّهَ تَعَالَى فَرَضَ فَرَائِضَ فَلَا تُضَيِّعُوهَا، وَحَدَّ حُدُودًا فَلَا تَعْتَدُوهَا، وَحَرَّمَ أَشْيَاءَ فَلَا تَنْتَهِكُوهَا، وَسَكَتَ عَنْ أَشْيَاءَ رَحْمَةً لَكُمْ غَيْرَ نِسْيَانٍ فَلَا تَبْحَثُوا عَنْهَا”.
حَدِيثٌ حَسَنٌ، رَوَاهُ الدَّارَقُطْنِيّ [“في سننه” 4/184]، وَغَيْرُهُ.
হাদীস – ৩০
আবূ সা’লাবাহ্ আল-খুশানী জুরসূম ইবন নাশিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা ফরযসমূহকে অবশ্য পালনীয় করে দিয়েছেন, সুতরাং তা অবহেলা করো না। তিনি সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, সুতরাং তা লঙ্ঘন করো না। এবং কিছু জিনিস হারাম করেছেন, সুতরাং তা অমান্য করো না। আর তিনি কিছু জিনিসের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করেছেন-তোমাদের জন্য রহমত হিসেবে; ভুলে গিয়ে নয়-সুতরাং সেসব বিষয়ে বেশী অনুসন্ধান করো না।”
[হাদীসটি হাসান (সহীহ্), আদ্-দারা কুতনী: ৪/১৮৪ ও অন্যান্য কয়েকজন বর্ণনা করেছেন।]
الحديث الحادي والثلاثون
“ازهد في الدنيا يحبك الله”
عَنْ أَبِي الْعَبَّاسِ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ‍! دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إذَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللَّهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ؛ فَقَالَ: “ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبُّك اللَّهُ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبُّك النَّاسُ” .
[حديث حسن، رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ، رقم: 4102، وَغَيْرُهُ بِأَسَانِيدَ حَسَنَةٍ]
হাদীস – ৩১
আবুল আব্বাস সাহল ইবন সা’দ আস্-সা’ইদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
“এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কাজ বলুন যা করলে আল্লাহ্ আমাকে ভালবাসেন, লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।
তখন তিনি বললেন: দুনিয়ার প্রতি অনুরাগী হবে না, তাহলে আল্লাহ্ তোমাকে ভালবাসবেন; আর মানুষের কাছে যা আছে তার ব্যাপারে আগ্রহী হবে না, তাহলে মানুষও তোমাকে ভালবাসবে।”
[ইবনে মাজাহ্: ৪১০২]
الحديث الثاني والثلاثون
“لا ضرر ولا ضرار”
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ سَعْدِ بْنِ مَالِكِ بْنِ سِنَانٍ الْخُدْرِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: ” لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ” .
حَدِيثٌ حَسَنٌ، رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ [راجع رقم:2341]، وَالدَّارَقُطْنِيّ [رقم:4/228]، وَغَيْرُهُمَا مُسْنَدًا. وَرَوَاهُ مَالِكٌ [2/746] فِي “الْمُوَطَّإِ” عَنْ عَمْرِو بْنِ يَحْيَى عَنْ أَبِيهِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم مُرْسَلًا، فَأَسْقَطَ أَبَا سَعِيدٍ، وَلَهُ طُرُقٌ يُقَوِّي بَعْضُهَا بَعْضًا.
হাদীস – ৩২
আবু সাঈদ সা’দ ইবন মালিক ইবন সিনান আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“ক্ষতি করা উচিত নয়, আর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াও উচিত নয়।”
[হাদীসটি হাসান। এটিকে ইবনে মাজাহ (দেখুন হাদীস নং: ২৩৪১), আদ্-দারা-কুতনী (হাদীস নং: ৪/২২৮) এবং অন্যান্যগণ সনদসহ বর্ণনা করেছেন। ইমাম মালেক মুয়াত্তা গ্রন্থে (হাদীস নং: ২/৭৪৬) একে মুরসাল সনদে বর্ণিত হয়েছে। তিনি সনদের মধ্যে যে আমর ইবন ইয়াহ্ইয়া নিজের পিতা হতে যিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তিনি আবু সাঈদকে বাদ দিয়েছেন। তবে হাদীসটির আরও বহু বর্ণনায় এসেছে যার কোনো কোনোটি অপর কোনো কোনোটির দ্বারা শক্তিশালী হয়েছে।]
الحديث الثالث والثلاثون
“البينة على المدعي واليمين على من أنكر “
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: “لَوْ يُعْطَى النَّاسُ بِدَعْوَاهُمْ لَادَّعَى رِجَالٌ أَمْوَالَ قَوْمٍ وَدِمَاءَهُمْ، لَكِنَّ الْبَيِّنَةَ عَلَى الْمُدَّعِي، وَالْيَمِينَ عَلَى مَنْ أَنْكَرَ” .
حَدِيثٌ حَسَنٌ، رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ [في”السنن” 10/252]، وَغَيْرُهُ هَكَذَا، وَبَعْضُهُ فِي “الصَّحِيحَيْنِ”.
হাদীস – ৩৩
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যদি মানুষকে কেবল তাদের দাবী অনুযায়ী দিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা অন্যের সম্পদ ও জীবন দাবী করে বসবে। তবে নিয়ম হচ্ছে দাবীদারকে প্রমাণ পেশ করতে হবে, আর যে অস্বীকার করবে তাকে শপথ করতে হবে।
[এ হাদীসটি হাসান। এটাকে বায়হাকী ও অন্যান্যগণ এভাবে বর্ণনা করেছেন এবং এর কিছু অংশ সহীহ্ হাদীসের অনুরূপ।]
الحديث الرابع والثلاثون
“من رأى منكم منكرا فليغيره بيده”
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: “مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ” .
رَوَاهُ مُسْلِمٌ [رقم:49].
হাদীস – ৩৪
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় দেখলে তা সে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে, যদি তা সম্ভব না হয় তবে মুখ দ্বারা প্রতিহত করবে, তাও যদি না করতে পারে তাহলে অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করবে। আর এ হচ্ছে (অন্তর দিয়ে প্রতিহত করা) দুর্বলতম ঈমান।”
[মুসলিম: ৪৯]
الحديث الخامس والثلاثون
“لا تحاسدوا ولا تناجشوا ولا تباغضوا”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ” لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَنَاجَشُوا، وَلَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَدَابَرُوا، وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إخْوَانًا، الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ، لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا يَخْذُلُهُ، وَلَا يَكْذِبُهُ، وَلَا يَحْقِرُهُ، التَّقْوَى هَاهُنَا، وَيُشِيرُ إلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنْ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ، كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ: دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ” .
رَوَاهُ مُسْلِمٌ [رقم:2564].
হাদীস – ৩৫
আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
পরস্পর হিংসা করো না, একে অপরের জন্য নিলাম ডেকে দাম বাড়াবে না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করবে, একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যেও না, একজনের ক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয় করো না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর যুলুম করে না এবং তাকে সঙ্গীহীন ও সহায়হীনভাবে ছেড়ে দেয় না। সে তার কাছে মিথ্যা বলে না ও তাকে অপমান করে না। তাকওয়া হচ্ছে- এখানে, তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন। কোন মানুষের জন্য এতটুকু মন্দ যথেষ্ট যে, সে আপন মুসলিম ভাইকে নীচ ও হীন মনে করে। এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম।
[মুসলিম: ২৫৬৪]
الحديث السادس والثلاثون
“من نفس عن مسلم كربة”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: “مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ، يَسَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِما سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ، وَاَللَّهُ فِي عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِي عَوْنِ أَخِيهِ، وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إلَى الْجَنَّةِ، وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ فِيمَا بَيْنَهُمْ؛ إلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمْ السَّكِينَةُ، وَغَشِيَتْهُمْ الرَّحْمَةُ، وَذَكَرَهُمْ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ، وَمَنْ أَبَطْأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ”.
رَوَاهُ مُسْلِمٌ [رقم:2699] بهذا اللفظ.
হাদীস – ৩৬
আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন মুমিনের দুঃখ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ কেয়ামতের দিন তার দুঃখ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়াতে ও আখেরাতে তার বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। যে বান্দা আপন ভাইকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্ সে বান্দাকে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি জ্ঞান লাভের জন্য কোন রাস্তা গ্রহণ করে, তার অসীলায় আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দিবেন। যেসব লোক আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন ঘরে (অর্থাৎ মসজিদে) সমবেত হবে, কুরআন পড়বে, সকলে মিলিত হয়ে তার শিক্ষা নেবে ও দেবে, তাদের উপর অবশ্যই প্রশান্তি অবতীর্ণ হবে, রহমত তাদের ঢেকে নেবে, ফিরিশ্‌তাগণ তাদের ঘিরে থাকবে আর আল্লাহ্ তাদের কথা এমন সকলের মধ্যে উল্লেখ করবেন যারা তাঁর কাছে উপস্থিত। যে ব্যক্তি তার আমলের কারণে পিছিয়ে পড়বে, তার বংশ পরিচয় তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।
[মুসলিম: ২৬৯৯]
الحديث السابع والثلاثون
“إن الله كتب الحسنات والسيئات”
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم فِيمَا يَرْوِيهِ عَنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، قَالَ: “إنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ، ثُمَّ بَيَّنَ ذَلِكَ، فَمَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، وَإِنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عِنْدَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ إلَى سَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ إلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ، وَإِنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللَّهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلَةً، وَإِنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللَّهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً”.
رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ [رقم:6491]، وَمُسْلِمٌ [رقم:131]، في “صحيحيهما” بهذه الحروف.
হাদীস – ৩৭
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রব হতে বর্ণনা করেন যে,
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ ভাল ও মন্দ কাজকে লিখে রেখেছেন। তারপর তিনি এ ব্যাখ্যা করেন: যে ব্যক্তি ভাল কাজের জন্য দৃঢ় সংকল্প করে কিন্তু তা সম্পন্ন করতে পারে না, তবু আল্লাহ্ তার জন্য পরিপূর্ণ নেকী লেখেন; আর দৃঢ় সংকল্প করে সে যদি তা সম্পন্ন করে তবে আল্লাহ্ নিজের কাছে তার জন্য দশ নেকী থেকে সাতশ’ পর্যন্ত; বরং তার চেয়েও বেশী নেকী লেখেন। এর বিপরীত, যদি কারো মন্দা কাজের বাসনা জাগে কিন্তু তা কাজে পরিণত না করে, আল্লাহ্ তার জন্য পরিপূর্ণ নেকী লেখেন; কিন্তু যদি সে তার কামনা বাসনাকে কাজে পরিণত করে, তবে তার জন্য একটি মন্দ কাজ লেখেন।
[বুখারী: ৬৪৯১, মুসলিম: ১৩১]
الحديث الثامن والثلاثون
“من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب”
عَنْ أَبِي هُرَيْرَة رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم إنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ: “مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقْد آذَنْتهُ بِالْحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُهُ عَلَيْهِ، وَلَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْت سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَلَئِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ”.
رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ [رقم:6502].
হাদীস – ৩৮
আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি। আমি যা তার উপর যা ফরয করেছি আমার বান্দাহ্ তা ব্যতীত অন্য কোন পছন্দসই জিনিসের দ্বারা আমার অধিক নিকটবর্তী হতে পারে না। আর আমার বান্দাহ্ নফলের সাহায্যে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে, এমনকি আমি তাকে ভালবাসতে থাকি। সুতরাং আমি যখন তাকে ভালবাসতে থাকি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই; যা দ্বারা সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই; যার দ্বারা সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই; যার দ্বারা সে ধরে এবং তার পা হয়ে যাই; যার দ্বারা সে চলে[3]। সে যদি আমার কাছে কিছু চায় আমি অবশ্যই তাকে তা দেই। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দান করি।
[বুখারী: ৬৫০২]
الحديث التاسع والثلاثون
“إن الله تجاوز لي عن أمتي الخطأ والنسيان”
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ: “إنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ” .
حَدِيثٌ حَسَنٌ، رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ [رقم:2045]، وَالْبَيْهَقِيّ [“السنن” 7
হাদীস – ৩৯
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ আমার উম্মাতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে করতে সে বাধ্য হয়েছে।
[এ হাদীসটি হাসান। ইবনে মাজাহ্ (নং-২০৪৫), বায়হাকী (সুনান, হাদীস নং-৭) ও আরো অনেকেই এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।]
الحديث الأربعون
“كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل”
عَنْ ابْن عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم بِمَنْكِبِي، وَقَالَ: “كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّك غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ”. وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُولُ: إذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تَنْتَظِرْ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلَا تَنْتَظِرْ الْمَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِك لِمَرَضِك، وَمِنْ حَيَاتِك لِمَوْتِك.
رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ [رقم:6416].
হাদীস – ৪০
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাঁধ ধরে বললেন:
দুনিয়াতে অপরিচিত অথবা ভ্রমণকারী মুসাফিরের মত হয়ে যাও।
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলতেন, সন্ধ্যা বেলায় উপনীত হলে সকালের অপেক্ষা করো না। আর সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। অসুস্থতার জন্য সুস্থতাকে কাজে লাগাও, আর মৃত্যুর জন্য জীবিত অবস্থা থেকে (পাথেয়) সংগ্রহ করে নাও।
[বুখারী: ৬৪১৬]
الحديث الحادي والأربعون
“لا يؤمن أحدكم حتى يكون هواه تبعا لما جئت به”
عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم “لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ”.
حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ، رَوَيْنَاهُ فِي كِتَابِ “الْحُجَّةِ” بِإِسْنَادٍ صَحِيحٍ.
হাদীস – ৪১
আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু আল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না আমি যা এনেছি তার প্রতি তার ইচ্ছা-আকাঙ্খা অনুগত না হয়ে যায়।
[হাদীসটি হাসান। এটাকে আমি কিতাবুল হুজ্জাহ্ থেকে সহীহ্ সনদের সাথে বর্ণনা করেছি।]
الحديث الثاني والأربعون
“يا ابن آدم إنك ما دعوتني ورجوتني”
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم يَقُولُ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: “يَا ابْنَ آدَمَ! إِنَّكَ مَا دَعَوْتنِي وَرَجَوْتنِي غَفَرْتُ لَك عَلَى مَا كَانَ مِنْك وَلَا أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ! لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُك عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتنِي غَفَرْتُ لَك، يَا ابْنَ آدَمَ! إنَّك لَوْ أتَيْتنِي بِقُرَابِ الْأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتنِي لَا تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَأَتَيْتُك بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً” .
رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ [رقم:3540]، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
হাদীস – ৪২
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি:
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, তুমি যা-ই প্রকাশ হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দেব- আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ্ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে (আখেরাতে) সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো।
[তিরমিযী (নং-৩৫৪০) এ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।]


[1] অর্থাৎ বাহ্যিক দৃষ্টিতে তার কাজটি সবার নিকট জান্নাতবাসীদের কাজ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতের কাজ করেনি। কারণ, তার ঈমান ও ইখলাসের মধ্যে কোথাও কোন ঘাটতি ছিল। [সম্পাদক]
[2]  আল্লাহ্‌কে সংরক্ষণ করার অর্থ, আল্লাহ্‌র তাওহীদ ও অধিকার সংরক্ষণ। আল্লাহ্‌র আদেশ নিষেধ ও শরী‘আতের বিধি-বিধানের সীমারেখা সংরক্ষণ। [সম্পাদক]
[3]  অর্থাৎ তার কর্মকাণ্ড কেবল আমার সন্তুষ্টিবিধানেই পরিচালিত হয়। সে তখন তা-ই শোনে, দেখে, ধরে বা চলে যাতে আমার সন্তুষ্টি রয়েছে। তাকে আমি আল্লাহই এ তাওফীক দিয়ে থাকি। [সম্পাদক]
সংকলন: ইমাম আবু যাকারিয়া ইয়াহ্‌ইয়া ইবন শরফ আন্‌-নওয়াবী
 অনুবাদ: নিযামুদ্দিন মোল্লা
সম্পাদনা:
মোহাম্মাদ মতিউল ইসলাম
ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ