প্রশ্ন: আমি জনৈক নাস্তিকের সাথে কথা বলছিলাম, সে আমাকে প্রশ্ন করে বলল: “আদম সৃষ্টির দীর্ঘ বিরতির পর কেন আল্লাহ হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন, অথচ তিনি জানতেন আদমের সঙ্গীর প্রয়োজন আছে? যদি তিনি সবকিছু জানেন, তাহলে কেন তাদের দু’জনকে একসঙ্গে সৃষ্টি করেননি”? আমাকে জানিয়ে বাধিত করবেন, যেন তার উত্তর দিতে পারি।
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ।
প্রথমত: আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, আল্লাহ যা চান তাই করেন, তাকে জবাবদিহি করা যায় না, তবে বান্দাদেরকে জবাবদিহি করা হবে। বান্দার অধিকার নেই রবকে প্রশ্ন করা, ‘কেন করেছেন’? ইমাম ইসহাক ইব্ন ইবরাহিম রহ. বলেন: “আল্লাহর কর্ম সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করা যায় না, যেরূপ মানুষের কর্ম সম্পর্কে করা যায়। তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ لَا يُسَۡٔلُ عَمَّا يَفۡعَلُ وَهُمۡ يُسَۡٔلُونَ ٢٣ ﴾ [الانبياء: ٢٣]
“তিনি যা করেন, সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না, বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।”[1] আল্লাহর কোনো সিফাৎ ও কর্ম সম্পর্কে বিবেক দ্বারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই, যেমন মানুষের স্বভাব ও কর্ম সম্পর্কে বিবেক দ্বারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।”[2]
এটা শুধু এ কারণে নয় যে, তিনি পরাক্রমশালী, যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, বরং তার প্রতিটি কর্ম হিকমত, ইনসাফ ও ন্যায়পরায়ণতায় ভরপুর। তিনি ইরশাদ করেন:
﴿ أَلَا يَعۡلَمُ مَنۡ خَلَقَ وَهُوَ ٱللَّطِيفُ ٱلۡخَبِيرُ ١٤ ﴾ [الملك: ١٤]
“যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি অতি সুক্ষ্মদর্শী, পূর্ণ অবহিত”।[3]
দ্বিতীয়ত: আপনাকে প্রশ্নকারী নাস্তিক বলেছে, ‘আদম সৃষ্টির দীর্ঘ বিরতির পর আল্লাহ তা‘আলা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন’! তাকে বলুন: এ তথ্য তুমি কোথায় পেয়েছ?! এটা অদৃশ্যের জ্ঞান, যা তুমি দেখনি, তোমার ইতিহাসজ্ঞান ও তোমার মত লোকদের ইতিহাস সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। যদি নবীদের সংবাদ বিশ্বাস করে বলে থাক, তাহলে আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত্ব ও একত্ববাদ সম্পর্কে তাদের সংবাদও বিশ্বাস কর, তারা যে অহি, অদৃশ্য জগত, জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন তাও বিশ্বাস কর। অতঃপর দেখ, যদি এ জাতীয় প্রশ্নের সুযোগ থাকে, তাহলে কর!!
আমাদের নিকট এ জাতীয় প্রশ্নের কোনো অবকাশ নেই, কারণ আমাদের দীনের মূলনীতি হচ্ছে সর্বতোভাবে নিজেকে আল্লাহর নিকট সোপর্দ করা। অধিকন্তু আমরা তোমাকে জানাচ্ছি যে, বাহ্যত আদম ও হাওয়ার সৃষ্টির মাঝে দীর্ঘ বিরতি ছিল না, তুমি যার দাবি করছ, আদমকে জান্নাতে প্রেরণ করার পূর্বেই আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন।
আবু হুরায়রা সূত্রে ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আবু হুরায়রা সূত্রে ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও, কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের মধ্যে উপরের হাড্ডি সবচেয়ে বেশী বাঁকা। যদি তা সোজা করতে চাও ভেঙ্গে ফেলবে, ছেড়ে দিলেও তার বক্রতা যাবে না। অতএব নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।”[4] হাফেয ইব্ন হাজার রহ. বলেন: “এ হাদিস ইব্ন ইসহাকও বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি অতিরিক্ত বলেছেন:
«الْيُسْرَى مِنْ قَبْل أَنْ يَدْخُل الْجَنَّة ، وَجُعِلَ مَكَانه لَحْم»
জান্নাতে প্রবেশ করানোর পূর্বে বাম পাঁজর থেকে (তাকে সৃষ্টি করা হয়), অতঃপর তার জায়গায় গোস্ত তৈরি করা হয়।”[5]
ইব্ন কাসির রহ. বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আদম ও তার স্ত্রীকে জান্নাতে বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি ইরশাদ করেন:
“আর আমি বললাম, ‘হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং তা থেকে আহার কর স্বাচ্ছন্দ্যে, তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না, তাহলে তোমরা যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে”।[6] তিনি অন্যত্র বলেন:
“আর হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস কর। অতঃপর তোমরা আহার কর যেখান থেকে চাও এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। তাহলে তোমরা উভয়ে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে”।[7] অন্যত্র বলেন:
“আর স্মরণ কর, যখন আমি মালায়েকাদের বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’, তখন ইবলীস ছাড়া সকলেই সিজদা করল; সে অমান্য করল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আদম, নিশ্চয় এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, সুতরাং সে যেন তোমাদের উভয়কে কিছুতেই জান্নাত থেকে বের করে না দেয়, তাহলে তোমরা দুর্ভোগ পোহাবে। নিশ্চয় তোমার জন্য এ ব্যবস্থা যে, তুমি সেখানে ক্ষুধার্তও হবে না এবং বস্ত্রহীনও হবে না। আর সেখানে তুমি পিপাসার্তও হবে না এবং রৌদ্রদগ্ধও হবে না”।[8]
এ আয়াতসমূহ থেকে বুঝে আসে যে, আদমের জান্নাতে প্রবেশের পূর্বেই হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইব্ন ইসহাক যা স্পষ্ট বলেছেন। এটাই আয়াতের বাহ্যিক অর্থ।”[9]
তৃতীয়ত: এও তো সম্ভব যে, এতে হিকমত রয়েছে, যার নাগাল তার বিবেক পায়নি, আমরাও যা হাসিল করতে পারিনি। মানুষের বিবেক কি মহা বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে, তার ভেতর ও বাহির সকল রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে, হয়নি। বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করতে পারেনি, কিংবা যার বাস্তবতা ও রহস্য সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি, তার কি অস্তিত্ব নেই, সেখানে পৌঁছার প্রচেষ্টা অব্যাহত নেই?! অতএব আদম ও হাওয়াকে একসঙ্গে সৃষ্টির কারণ না-জানা আমাদের জন্য দোষণীয় নয়, অনুরূপ আমাদের না-জানা তাতে কোনো হিকমত নেই তারও প্রমাণ নয়।
অতঃপর কে বলেছে আদমের শূণ্যতা অনুভব করায় ফায়দা নেই, যে শূণ্যতা দূর করা হয়েছে স্ত্রী হাওয়ার মাধ্যমে? দুঃখ পরবর্তী সুখ দীর্ঘ দিন স্মরণ থাকে, আদমও তার স্ত্রীর নিয়ামত দীর্ঘ দিন স্মরণ রাখবে স্বাভাবিক, কৃতজ্ঞতা ভরে নিজেকে তার নিকট সপে দিবে। হয়তো এ শূণ্যতায় সে আল্লাহর নিকট নিজের প্রয়োজন পেশ করেছে, নিঃসঙ্গতার অভিযোগ করেছে ও একাকীত্ব দূর করার নিমিত্তে প্রার্থনা করেছে, আর এটাই তো উবুদিয়াত বা দাসত্ব, বান্দার নিকট আল্লাহ যা কামনা করেন। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার প্রতিটি কর্ম পরিপূর্ণ হিকমত ও উপযুক্ত প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত।
সূত্র:
موقع الإسلام سؤال وجواب
[1] সূরা আম্বিয়া: (২৩)
[2] আল-ইস্তিকামাহ: (১/৭৮) লি ইব্ন তাইমিয়াহ।
[3] সূরা মুলক: (১৪)
[4] বুখারি: (৩৩৩১), মুসলিম: (১৪৭০)
[5] ফাতহুল বারি: (৬/৩৬৮)
[6] সূরা বাকারা: (৩৫)
[7] সূরা আরাফ: (১৯)
[8] সূরা ত্বহা: (১১৬-১১৯)
[9] বিদায়া ও নিহায়া: (১/৮১), সংক্ষিপ্ত করে নেওয়া।
ইসলাম Q A
অনুবাদক : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
সূত্র : http://www.islamqa.info – ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ
No comments:
Post a Comment