(৪০২) কখন এবং কিভাবে মুসাফির নামায ও রোযা আদায় করবে?
মুসাফির নিজ শহর থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত দু’দু রাকাত নামায আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন,
أَوَّلَ مَا فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ وَأُتِمَّتْ صَلَاةُ الْحَضَرِ
“সর্বপ্রথম যে নামায ফরয করা হয়েছিল তা হচ্ছে দু’রাকাত। সফরের নামাযকে ঐভাবেই রাখা হয়েছে এবং গৃহে অবস্থানের সময় নামাযকে পূর্ণ (চার রাকাত) করা হয়েছে।” অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, “গৃহে অবস্থানের সময় নামায বৃদ্ধি করা হয়েছে।” আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, আমরা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে মদ্বীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। তিনি মদ্বীনা ফিরে আসা পর্যন্ত দু’দু রাকাত করে নামায আদায় করলেন।
কিন্তু
মুসাফির যদি স্থানীয় ইমামের সাথে নামায আদায় করে তবে পূর্ণ চার রাকাতই পড়বে। চাই নামাযের প্রথম থেকে ইমামের সাথে থাকুক বা পরে এসে অংশ গ্রহণ করুক। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাধারণ বাণী একথার দলীল।
إِذَا سَمِعْتُمُ الْإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلَاةِ وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلَا تُسْرِعُوا فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
“যখন নামাযের ইকামত প্রদান করা হয় তখন হেঁটে হেঁটে ধীর-স্থির এবং প্রশান্তির সাথে নামাযের দিকে আগমণ করবে। তাড়াহুড়া করবে না। অতঃপর নামাযের যতটুকু অংশ পাবে আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা পরে পূর্ণ করে নিবে।”
এ হাদীছটি স্থানীয় ইমামের পিছনে নামায আদায়কারী মুসাফিরদেরও শামিল করে। ইবনু আব্বাস (রাঃ)কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এটা কি কথা মুসাফির একাকী নামায পড়লে দু’রাকাত পড়বে আর স্থানীয় ইমামের পিছনে পড়লে চার রাকাত পড়বে? তিনি বললেন, এটা সুন্নাত।
মুসাফিরের জন্য জামাআতের নামায রহিত নয়। কেননা আল্লাহ্ বলেনঃ
]وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمْ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِنْ وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَى لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ[
“আর যখন আপনি তাদের সাথে থাকেন আর তাদেরকে জামাআতের সাথে নামায পড়ান, তবে তা এইভাবে হবে যে, তাদের মধ্যে থেকে একদল আপনার সাথে নামাযে দাঁড়াবে এবং নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সাথে রাখবে। অনন্তর যখন তারা সিজদা করবে (এক রাকাআত পূর্ণ করবে), তখন তারা আপনাদের পিছনে চলে যাবে এবং অন্য দল যারা এখনও নামায পড়েনি তারা আসবে এবং আপনার সাথে নামায পড়ে নিবে।” (সূরা নিসাঃ ১০২)
অতএব মুসাফির যদি নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে অবস্থান করে, তবে আযান শুনলেই মসজিদে জামাআতের নামাযে উপস্থিত হবে। তবে যদি মসজিদ থেকে বেশী দূরে থাকে বা সফর সঙ্গীদের ক্ষতির আশংকা করে তবে মসজিদে না গেলেও চলবে। কেননা সাধারণ দলীল সমূহ একথাই প্রমাণ করে যে, আযান বা এক্বামত শুনলেই জামাআতে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব।
নফল বা সুন্নাত নামাযের ক্ষেত্রেঃ মুসাফির যোহর, মাগরিব ও এশার সুন্নাত ছাড়া সবধরণের নফল ও সুন্নাত আদায় করবে। রাতের নফল (তাহাজ্জুদ), বিতর, ফজরের সুন্নাত, চাশত, তাহিয়্যাতুল ওযু, তাহিয়্যাতুল মসজিদ, সফর থেকে ফেরত এসে দু’রাকাত নামায আদায় করবে।
দু’নামায একত্রিত করার বিধান হচ্ছেঃ সফর যদি চলমান থাকে তবে উত্তম হচ্ছে দু’নামাযকে একত্রিত করা। যোহর ও আছর এবং মাগরিব ও এশা একত্রিত আদায় করবে। প্রথম নামাযের সময়ই দু’নামায একত্রিত আদায় করবে অথবা দ্বিতীয় নামাযের সময় দু’নামাযকে একত্রিত করবে। যেভাবে তার জন্য সুবিধা হয় সেভাবে করবে।
কিন্তু সফরে গিয়ে কোন জায়গায় যদি অবস্থান করে তবে উত্তম হচ্ছে দু’নামাযকে একত্রিত না করা। একত্রিত করলেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা উভয়টিই রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত আছে।
ছিয়ামের ক্ষেত্রে মুসাফিরের জন্য উত্তম হচ্ছে ছিয়াম পালন করা। ছিয়াম ভঙ্গ করলেও কোন অসুবিধা নেই। পরে উক্ত দিনগুলোর কাযা আদায় করে নিবে। তবে ছিয়াম ভঙ্গ করা যদি বেশী আরাম দায়ক হয় তাহলে ছিয়াম ভঙ্গ করাই উত্তম। কেননা আল্লাহ্ বান্দাকে যে ছুটি দিয়েছেন তা গ্রহণ করা তিনি পসন্দ করেন। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য।
No comments:
Post a Comment