কুরআন ও হাদিসের আলোকে গুনাহ মাফ এর আমল, পর্ব -3: ৩. পবিত্রতার অধ্যায় ৩. ১. অযু: ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﺧَﻄَﺎﻳَﺎﻩُ ﻣِﻦْ ﺟَﺴَﺪِﻩِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺨْﺮُﺝَ ﻣِﻦْ ﺗَﺤْﺖِ ﺃَﻇْﻔَﺎﺭِﻩِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) . “যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব সুন্দর করে অযু করে, সেই ব্যক্তির শরীর থেকে তার গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়।” [40] আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
« ﺇِﺫَﺍ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﺍﻟْﻌَﺒْﺪُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺃَﻭِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻦُ ﻓَﻐَﺴَﻞَ ﻭَﺟْﻬَﻪُ ،ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻭَﺟْﻬِﻪِ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻧَﻈَﺮَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﺑِﻌَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻏَﺴَﻞَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻦْ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻛَﺎﻥَ ﺑَﻄَﺸَﺘْﻬَﺎ ﻳَﺪَﺍﻩُ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻏَﺴَﻞَ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻪِ ﺧَﺮَﺟَﺖْ ﻛُﻞُّ ﺧَﻄِﻴﺌَﺔٍ ﻣَﺸَﺘْﻬَﺎ ﺭِﺟْﻼَﻩُ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺃَﻭْ ﻣَﻊَ ﺁﺧِﺮِ ﻗَﻄْﺮِ ﺍﻟْﻤَﺎﺀِ ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨْﺮُﺝَ ﻧَﻘِﻴًّﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ ) . “যখন মুসলিম বা মুমিন বান্দা অযু করে এবং তার মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার চেহারা থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যেগুলোর দিকে সে তার চোখ দু’টির সাহায্যে দৃষ্টিপাত করেছিল। তারপর যখন সে তার হাত দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে তার হাত দু’টি থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যা তার হাত দু’টি ধরেছিল। এরপর যখন সে তার পা দু’টি ধুয়ে ফেলে, তখন পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুটির সাথে (তার পা দু’টি থেকে) সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায়, যার দিকে তার পা দু’টি এগিয়ে গিয়েছিল, এমনকি সে গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ পাক- পবিত্র হয়ে যায়।” [41] হে মুসলিম ভাই! জেনে রাখুন, এই মহান ফযীলত শুধু ঐ ব্যক্তিই অর্জন করতে পারবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা অনুযায়ী অযু করবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি প্রয়োগ করবে; আর নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হল— ১. পূর্বোল্লিখিত ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যে একটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, আর তা হলো অযুকে সুন্দর করা; আর এই শর্তটি অন্য আরও কয়েকটি হাদিসের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে; যেমন— (ক) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺛُﻢَّ ﺭَﺍﺡَ ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﻗَﺪْ ﺻَﻠَّﻮْﺍ ، ﺃَﻋْﻄَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﺜْﻞَ ﺃَﺟْﺮِ ﻣَﻦْ ﺻَﻼﻫَﺎ ، ﻭَﺣَﻀَﺮَﻫَﺎ ﻻ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺫَﻟِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﺮِﻫِﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) . “যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর (মাসজিদের উদ্দেশ্যে) বের হয় এবং জনগণকে এমন অবস্থায় পায় যে তারা সালাত আদায় করে ফেলেছে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ ব্যক্তির মত প্রতিদান দিবেন, যে সালাত আদায় করেছে ও জামা‘য়াতে হাযির হয়েছে, অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কিছুই কমতি বা ঘাটতি হবে না।” [42] (খ) ‘উকবা ইবন ‘আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: « ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻓَﺄَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ، ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻳُﻘْﺒِﻞُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻤَﺎ ﺑِﻘَﻠْﺒِﻪِ ﻭَﻭَﺟْﻬِﻪِ ، ﻭَﺟَﺒَﺖْ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔُ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ) . “যে ব্যক্তি অযু করে এবং খুব ভালভাবে ও সুন্দর করে অযু করে, অতঃপর আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” [43] আর যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী, আবদুল্লাহ ইবন ওমর ও অন্যান্য সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মধ্যেও এই বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। ২. আর এই সুন্দর করার বিষয়টি আল্লাহর নির্দেশের যথাযথ অনুসরণ ব্যতীত কিছুতেই সম্ভব নয়; যেমনটি একাধিক সহীহ হাদিসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ বর্ণিত হয়েছে; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস আবূ আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: « ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﻭَﺻَﻠَّﻰ ﻛَﻤَﺎ ﺃُﻣِﺮَ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﻋَﻤَﻞٍ ( ﻭ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ : ﺫَﻧْﺒِﻪِ ) » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺎﺋﻲ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﻪ ) . “যে ব্যক্তি অযু করল যেমনভাবে অযু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সালাত আদায় করল যেমনভাবে সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তার পূর্বের কৃতকর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” [44] ৩. আর একাধিক হাদিসের মধ্যে আল্লাহর নির্দেশের সর্বোৎকৃষ্ট বিবরণ ও সর্বোত্তম ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম; তন্মধ্যে অন্যতম একটি হাদিস ‘উসমান ইবন ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত; তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অযুর পানি নিয়ে আসার জন্য (তাঁকে) ডাকলেন, তারপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অযুর পদ্ধতি বর্ণনা করলেন; অতঃপর তিনি বললেন: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের শেষ অংশে বলেছেন: « ﻣَﻦْ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻧَﺤْﻮَ ﻭُﺿُﻮﺋِﻰ ﻫَﺬَﺍ ﺛُﻢَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ﻻَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﻓِﻴﻬِﻤَﺎ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻏُﻔِﺮَ ﻟَﻪُ ﻣَﺎ ﺗَﻘَﺪَّﻡَ ﻣِﻦْ ﺫَﻧْﺒِﻪِ » . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭ ﻣﺴﻠﻢ ) . “যে ব্যক্তি আমার এ অযূর ন্যায় অযূ করে দুই রাকা‘য়াত সালাত করবে এবং তার মধ্যে কোনো বাজে খেয়াল মনে আনবে না, তার অতীতের সব গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” [45] * * * [40] মুসলিম, হাদিস নং- ৬০১ [41] মুসলিম, হাদিস নং- ৬০০ [42] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫৬৪; নাসায়ী, হাদিস নং- ৮৫৬; আর হাদিসটি সহীহ। [43] নাসায়ী, হাদিস নং- ১৫১; হাদিসটি সহীহ। [44] নাসায়ী: (১/৯০ – ৯১); ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ১৩৯৬; ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ১০৩৯ এবং আরও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন; আমি বলি: হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের ইনশাআল্লাহ। [45] বুখারী, হাদিস নং- ১৫৮ ও ১৬২; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬১
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সাম্প্রতিক পোষ্ট
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?
"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...
জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ
-
যৌন উত্তেজনার সময় পানির মতো আঠালো যে তরল পদার্থ বের হয়, তা কি নাপাক? একে “মাযী” বলে। আর তা নাপাক। তা বের হলে উযূ নষ্ট হয়ে যায়। শরমগাহ...
-
গুপ্ত অভ্যাস (হস্তমৈথুন) ব্যবহার করা বৈধ কি? গুপ্ত অভ্যাস (হাত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বীর্যপাত, স্বমৈথুন বা হস্ত মৈথুন) করা কিতাব, সুন...
-
মনোমালিন্য ‘‘সংসার সাগরে দুঃখ-তরঙ্গের খেলা, আশা তার একমাত্র ভেলা।’’ কিন্তু সেই ভেলা ডুবে গেলে আর কার কি সাধ্য? স্বামী যদি স্...
-
*সূরা বাকারা ও সূরা আলে-ইমরানের ফজিলত গুলি কি কি? এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের অর্থঃ ✔1-রাতে ঘুমানোর আগে সুরা বাক্বারার শেষ ...
-
আপন মামাত, খালাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, চাচী, মামি, স্ত্রীর বোন বা ভাবীর সাথে মুসাফাহাহ বৈধ কি? যার সাথে পু...
-
কেউ কেউ মনে করেন, আমার মন খুবই পরিস্কার। তাকে আমি মা, খালা, অথবা বোনের মতোই মনে করি ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে তাঁর সাথে মেলা-মেশা করতে অসুবিধা ...
-
কথা বলার ব্যপারে "ইসলামে"র শিক্ষা কি? ====== ১। কথা বলার পূর্বে সালাম দেয়া। সূরা নূরঃ ৬১ ২। সতর্কতার সাথে কথা বলা। (কে...
-
জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১৫টি অসাধারন হাদিস- *১-গীবত থেকে দূরে থাকা- আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “যে ব্যাক্তি তার (মুসলি...
-
# দোয়া_কবুল_না_হওয়ার_কারণগুলো_কি_কি ? ---------------------------------------------------------------------- কিছু পাপ আছে যা বান্দার মা...
-
প্রশ্ন:নাটক, সিনেমা দেখা , গল্পের বই পড়া কি জায়েজ ? =============================== উত্তর : যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালা...
No comments:
Post a Comment