সৎ কাজ এর আদেশ অসৎ কাজর নিষেধ
ইসলামে দাওয়াত এর গুরুত্ব
*****বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম*****
আজ আমি আপানাদের প্রতি এমন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলব
যে বিষয় নিয়ে মুসলিমদের ২% লোকও হয়তো ভাবে না।
সেটা হলঃ দাওয়াহ। মানুষকে আল্লাহ্র পথে আহ্বান করা।
এই কাজটির গুরুত্ব কতটুকু?
আমি নিজে তো ইসলামের বিধি-বিধান, আল্লাহ্র সকল হুকুম-
আহকাম মেনে চললাম কিন্তু আমার পাশের ভাইয়ের আল্লাহ্
গোলামী সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা নেই, সে এটাও
জানেনা কেন তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? ফলে সে ইসলামের বিধি-
আজ আমি আপানাদের প্রতি এমন একটা বিষয় নিয়ে কথা বলব
যে বিষয় নিয়ে মুসলিমদের ২% লোকও হয়তো ভাবে না।
সেটা হলঃ দাওয়াহ। মানুষকে আল্লাহ্র পথে আহ্বান করা।
এই কাজটির গুরুত্ব কতটুকু?
আমি নিজে তো ইসলামের বিধি-বিধান, আল্লাহ্র সকল হুকুম-
আহকাম মেনে চললাম কিন্তু আমার পাশের ভাইয়ের আল্লাহ্
গোলামী সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা নেই, সে এটাও
জানেনা কেন তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? ফলে সে ইসলামের বিধি-
বিধান পালনের ধার ধারে না। আল্লাহ্র আদেশ নিষেধের
ব্যাপারে তার কোন গুরুত্ব নেই। এভাবেই সে জাহান্নামের
পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সঠিক জ্ঞান না থাকার
কারনে সে অমার্জনীয় অপরাধ শির্ক, কুফুরীতে পর্যন্ত লিপ্ত
হচ্ছে। সে এত বড় অপরাধ করার পরও
নিজেকে অপরাধী মনে করে না। ভাবছে এটা তো তেমন কিছুই
না।
কেন সে এমনটা ভাবছে? কেন সে অপরাধ করার পরও আল্লাহ্র
আযাবকে ভয় পাচ্ছে না?
এর উত্তর আল্লাহ্ , আখিরাত ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক
জ্ঞান না থাকার কারনে।
কিন্তু পক্ষান্তরে আমি তো শির্ক, কুফুরীর মত অপরাধের
কথা চিন্তাই করতে পারি না। নিজের পরকালকে সমৃদ্ধ করার
জন্য যথাসাধ্য আমল করেই যাচ্ছি তো করেই যাচ্ছি।
কিন্তু শুধু নিজে নিজে আমল করলেই কি হবে???
আমার ভাই, আমার পরিবার, আমার আত্মীয়, আমার সমজের
লোকেরা সব জাহান্নামের ইন্ধন হয়ে যাচ্ছে এই বিষয়ে আমার
কোন ভ্রুক্ষেপই নেই। আমি শুধু নিজেই আমল করে যাচ্ছি ।
*শুধু নিজে নিজে আমল করলেই চলবে না, তাদেরকে সঠিক
পথে আহ্বান করাও আমাদের উপর ফরজ।
অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্যই অন্যদেরকেদাওয়াহহ
দিতেই হবে। এটা ছাড়া মুক্তির কোন উপায় নেই।
যে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করে তাকেই এই কাজটি অবশ্যই
অবশ্যই করতে হবে।
তার প্রমানঃ
সুরা আল-আসরে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ সময়ের কসম
করে বলেনঃ সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। চারটা কাজ করলেই সেই
ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে।
১। ঈমান ২। সৎকর্ম করতে হবে ৩। পরস্পরকে সত্যের
উপদেশ দিতে হবে ৪। পরস্পরকে সবরের উপদেশ দিতে হবে।
এখানে ভালভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন এই চারটা কাজ
করলে ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে। তার মধ্যে তিন নং কাজটাই
হচ্ছে মানুষকে দাওয়াহ দেয়া। পরস্পরকে সত্যের উপদেশ
দেওয়া অর্থাৎ সৎ কাজে আদেশ করা এবং মন্দ কাজে নিষেধ
করা। সুরা আল-আসরকে সমগ্র কুরআনের সার-সংক্ষেপ
বলা হয়। কুরআন হচ্ছে মানুষের জন্য হিদায়েত, মুক্তির পথ।
যে কোন মানুষ যদি ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে চায়
তবে তাকে এই চারটা কাজ করে ক্ষতি থেকে মুক্ত হতে হবে।
যদি কেউ এই চারটা কাজ পরিপূর্ণভাবে না করে তবে আল্লাহ্
বলেছেন কসম সময়ের সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ।
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক।
তারা ভাল কাজে আদেশ দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে।
নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর
আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল,
সুকৌশলী। [সুরা আত তওবাঃ ৭১]
এই আয়াতটি খেয়াল করেন এখানেও আল্লাহ্ প্রথমে নামাজের
কথা বললেন না কেন? আগে ভাল কাজে আদেশ দেয় এবং মন্দ
কাজে নিষেধ করে। এখানে আগে ভাল কাজে আদেশ দেয়
এবং মন্দ কাজে নিষেধ করার কথা বললেন কেন? অতএব সৎ
কাজে আদেশ এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা একজন মুসলিমের
জন্য অবশ্যই একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ।
এই কাজ প্রত্যেক মুসলিমকে করতেই হবে। এই কাজ
না করলে সে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেনঃ
“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের
জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের
নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর
প্রতি ঈমান আনবে।” (আলে ইমরানঃ ১১০)
সর্বোত্তম উম্মত কিম এমনি এমনি হওয়া যাবে? অবশ্যই
সৎকাজের নির্দেশ ও অন্যায় কাজে বাধা দিতে হবে তবেই
সর্বোত্তম উম্মত হওয়া যাবে।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ আরো বলেনঃ
“তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান
রাখে এবং সৎকাজের বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অসৎকাজ
থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত
চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল”।
(আলে ইমরানঃ ১১৪)
এটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। এই কাজ প্রত্যেক
উম্মতকে করতেই হবে। এটা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহিওয়াসাল্লাম
বলেনঃ ‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ!
তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং খারাপ কাজ
থেকে নিষেধ করবে। নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ
তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব প্রেরণ
করবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর নিকট দো‘আ করবে কিন্তু
তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে না’ ।
(তিরমিযী হাদিসনং-৫১৪০)।
এখন আসুন দেখি এই কাজ করলে কি লাভ আছেঃ
আমাদের নেতা মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে সারাটি জীবন
ধরে মানুষকে দাওয়াহ দিয়ে গেছেন। সারা জীবন চেষ্টা করেছেন
কিভাবে মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো যায়।
তিনি বলেছেনঃ
“কেহ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ
করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের
অধিকারী সে হবে,তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের
সওয়াবে কোন কমতি হবেনা”
[সহীহ মুসলিম: ২৬৭৪]
তিনি আরো বলেছেনঃ
“প্রচার করো,যদি একটিমাত্র আয়াতও হয়”। [সহীহ
বুখারি ৩৪৬১]
মৃত্যুর পর মানুষের দৈহিক আমল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
শুধু তিনটি রাস্তা খোলা থাকে সওয়াব পৌছানোর জন্য। আবূ
হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« ﺍَﺫِﺇ ُﻥﺎَﺴْﻧِﺈْﻟﺍ َﺕﺎَﻣ ُﻪْﻨَﻋ َﻊَﻄَﻘْﻧﺍ ﺎَّﻟِﺇ ُﻪُﻠَﻤَﻋ ْﻦِﻣ
ٍﺔَﺛﺎَﻠَﺛ ﺎَّﻟِﺇ : ْﻦِﻣ ٍﺔَﻗَﺪَﺻ ْﻭَﺃ ،ٍﺔَﻳِﺭﺎَﺟ ٍﻢْﻠِﻋ ُﻊَﻔَﺘْﻨُﻳ
،ِﻪِﺑ ٍﺪَﻟَﻭ ْﻭَﺃ ٍﺢِﻟﺎَﺻ ﻮُﻋْﺪَﻳ ُﻪَﻟ . »
‘যখন কোনো মানুষ মারা যায় তখন তার সমস্ত আমলের
সওয়াব বন্ধ হয়ে যায়; তবে তিনটি আমলের সওয়াব বন্ধ হয়
না। তা হচ্ছে : (১) তার সদকায়ে জারিয়া (২) তার প্রবর্তিত
এমন কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞান যা থেকে মানুষ উপকৃত হয়, (৩)
তার রেখে যাওয়া এমন সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।
[মুসলিম : ১৬৩১]
লেখা যেহেতু লেখকের মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকবে তাই
ভালো লেখার জন্য তিনি অনন্ত কবরে শুয়ে নেকীর ভাগিদার
হতে থাকবেন। তেমনি আরেক হাদীসে বলা হয়েছে, সৎ
কাজে আদেশকারী তা সম্পাদনকারীর মতো। যেমন আনাস
রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« َّﻥِﺇ ﻰَﻠَﻋ َّﻝﺍَّﺪﻟﺍ ِﺮْﻴَﺨﻟﺍ ﻪِﻠِﻋﺎَﻔَﻛ .ِ »
‘নিশ্চয় সৎ কাজের পথ প্রদর্শক তা সম্পাদনকারীর
অনুরূপ।’ [তিরমিযী : ২৬৭০, সহীহ]
###একটু খেয়াল করুনঃ
এত গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি সম্পর্কে অধিকাংশ মুসলিমরা আজ
গাফেল। অথচ খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্ম প্রচার করার জন্য
কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। তাদের রয়েছে খ্রিষ্টান
মিশনারিজ, তাদের এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেই
প্রতিষ্ঠানের কাজ শুধু মানুষকে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রতি আহ্বান
করা।
এই জন্য তারা প্রচুর টাকাও ব্যয় করছে। মানুষকে খ্রিষ্টান
ধর্ম গ্রহণ করার জন্য আর্থিকভাবে প্রলভনও
তারা দেখিয়ে থাকে। তাদের এই প্রতিষ্ঠান গুলোতে যারা কাজ
করে তারা সকলেই ফুল টাইম দায়ী। অথচ আমরা আমাদের ধর্ম
প্রচার করার জন্য কতজন ফুল টাইম দায়ী হিসেবে নিজের
পেশা বেছে নিয়েছি?? আমাদের অনেকে পার্ট টাইম দাওয়াহর
কাজ করে থাকেন, কিন্তু কিছুদিন পর তারাও হাপিয়ে উঠেন।
এবং এই কাজ ছেড়ে দিতে চান। খ্রিষ্টানরা যদি তাদের বাতিল
ধর্ম প্রচার করতে ক্লান্ত না হয় তবে আমরা কেন আমাদের
হক ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যাই। আপনাদের
মধ্যে কি কেউ GOD TV-র নাম শুনেছেন?
এটি একটি খ্রিষ্টান ধর্মের প্রচারণা মূলক TV Channel.
এই Channel টি তে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ২৪
ঘন্টা ধরে তাদের ধর্মের প্রচারণা চালায়। তারা প্রতি বছর
এই Channel টির পেছনে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে।
এটা হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্মীয় স্যাটেলাইট TV
Channel. এছাড়া তাদের ধর্মের প্রচারণা মূলক অনেক TV
Channel রয়েছে।
আমি আপনাদের প্রশ্ন করতে চাই ইসলাম ধর্মের
প্রচারণা মূলক কয়টি TV Channel রয়েছে?
আরে TV Channel তো অনেক খরচের ব্যাপার একটু মৌখিক
ভাবে মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করবে তাতেই অধিকাংশ
মুসলিম গাফেল, যারাই একটু আধটু করে তারাও কিছুদিন পর
অব্যাহতি নিতে চায়।
লেখা অবেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে। আমি পবিত্র কুরআনের
একটি বানী দিয়ে আমার এই লেখার ইতি টানতে চাইঃ
“তার চাইতে উত্তম কথা আর কার- যে মানুষকে আল্লাহ্র
পথে আহ্বান করে নিজে সৎ কর্ম
করে এবং বলে আমি তো আল্লাহ্র অনুগত। [সুরা হা-মিম-
সাজদাঃ ৩৩, সুরা ফুসিলাতঃ ৩৩]
No comments:
Post a Comment