রোগ, বালা মুসিবতে ইমানদারের করণীয়।
রোগ-ব্যাধিতে ঈমানদারের করণীয়!
লেখকঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
১) এ বিশ্বাস রাখা যে, রোগ-ব্যাধিতে একমাত্র আরোগ্যদানকারী মহান আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কেউ রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮِﺿْﺖُ ﻓَﻬُﻮَ ﻳَﺸْﻔِﻴﻦِলেখকঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
১) এ বিশ্বাস রাখা যে, রোগ-ব্যাধিতে একমাত্র আরোগ্যদানকারী মহান আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কেউ রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“(ইবরাহীম আ. বললেন) যখন
আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই
আমাকে সুস্থতা দান
করেন।” (সূরা শুয়ারা: ৮০) ওষুধ-
পথ্য কেবল মাধ্যম। মহান
আল্লাহই এ সব ওষুধে
রোগমুক্তির কার্যকারিতা
দান করেছেন। ওষুধকেই মুল
আরগ্যদানকারী মনে করা
শিরক। অনুরূপভাবে, অসুখ-
বিসুখে তথাকথিত ওলী-
আওলিয়ার মাজারে ধর্ণা
দেয়া, মাযারে বা কবরে
মানত করা, গণক ও ঠাকুরের
স্মরণাপন্ন হওয়া ইত্যাদি
নাজায়েজ কাজ।
২) সবর করা: কারণ, রোগ-
ব্যাধি আল্লাহর তকদীরের
অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আল্লাহর
ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা
এবং সবর করা ঈমানের দাবী।
সবরের মর্যাদা সম্পর্কে
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﻭَﺍﺻْﺒِﺮُﻭﺍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻊَ ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮِﻳﻦَ . ‘আর
তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয়
আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে
আছেন’ (সূরা আনফাল: ৪৬)।
তিনি আরও বলেন: ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ
ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏٍ
“ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের
প্রতিদান পূর্ণরূপে দেয়া হবে
কোন হিসাব ছাড়াই।” (সূরা
যুমার: ১০)।
সবরের পরিচয় হল:
(ক) মনোক্ষুন্ন না হওয়া
এবং হা হুতাশ ও বিরক্তি
প্রকাশ করা থেকে নিজেকে
নিয়ন্ত্রণ করা।
(খ) মানুষের কাছে রোগ-
ব্যাধির ব্যাপারে বেশী
অভিযোগ করা থেকে বিরত
থাকা।
(গ) এমন সব কথা ও আচরণ
থেকে দূরে থাকা যা ধৈর্য
হীনতার পরিচয় বহন করে।
৩) ধৈর্যের সাথে শরীয়ত
সম্মত পন্থায় চিকিৎসা করা।
যেমন, কুরআন-হাদীসের দুয়ার
মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা,
এলোপ্যাথিক, হেমিও,
ইউনানি ইত্যাদি পদ্ধতিতে
চিকিৎসা গ্রহণ করা ইত্যাদি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম নিজেই বিভিন্ন
রোগ-ব্যাধিতে প্রেসকিপশন
প্রদান করেছেন। তবে সর্ব
প্রকার তাবিজ, কবজ, রিং,
সুতা, বালা, আংটি, শরীরে
গাছ-গাছালি ঝুলিয়ে রাখা
ইত্যাদি সবই বর্জনীয়। কারণ,
এগুলো শরীয়ত সম্মত নয়।
৪) এ বিশ্বাস রাখা যে,
অসুখ হলে আল্লাহ তায়ালা
ঈমানদারের গুনাহ মোচন
করেন এবং তাঁর নিকট তার
মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
একজন প্রকৃত মুমিন
সর্বাবস্থায় দৃঢ়ভাবে এ কথা
বিশ্বাস করে যে, সে যে
অবস্থায় আছে, তাতে কোনো
কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যেমন
সহীহ মুসলিম প্রখ্যাত সাহাবী
সুহাইব ইবন সিনান রা. থেকে
মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,
‘মুমিনের বিষয়টা বড়ই অদ্ভূত!
তার সব অবস্থাতেই কল্যাণ
থাকে। এটি শুধু মুমিনেরই
বৈশিষ্ট্য যে, যখন সে আনন্দে
থাকে, তখন আল্লাহর শুকরিয়া
আদায় করে এবং যখন সে
কষ্টে থাকে, তখন সবর করে।
আর এ উভয় অবস্থাই তার জন্য
কল্যাণ বয়ে আনে।’
৫) রোগ-ব্যাধিতে বেশি
বেশি আল্লাহর নিকট তওবা
করা এবং সুস্থতার জন্য মহান
আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি
দুয়া করা। সুস্থ অবস্থায় মানুষ
আল্লাহর এই নিয়ামত সম্পর্কে
গাফেল থাকে। তাই অসুস্থ
হলে তার সামনে আল্লাহর
নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের
পাশাপাশি নিজের গুনাহের
জন্য মহান আল্লাহর নিকট
তওবা করার এবং তার নিকট
দুয়া ও আরাধনা করার সুযোগ
সৃষ্টি হয়। তাই এ অবস্থায়
বেশি বেশী তওবা-
ইস্তিগফার, দুয়া এবং
আল্লাহর কাছে ফিরে আসার
মাধ্যমে তার প্রিয় ভাজন
বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার
এ সুযোগকে হাত ছাড়া করা
উচিৎ নয়।
পরিশেষে, মহান আল্লাহ
তায়ালা যেন, পৃথিবীর সকল
রোগাক্রান্ত মানুষকে সুস্থতা
দান করেন এবং কষ্ট ও
দুর্দশায় নিপতিত প্রতিটি
মানুষের কষ্ট ও দূর্দশা লাঘব
করে দেন। আমীন।
লেখকঃ আব্দুল্লাহিল হাদী
বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড
গাইডেন্স সেন্টার, সউদী
আরব।
No comments:
Post a Comment