জামাআতের গুরুত্ব, পরিপ্রেক্ষিত বর্তমান সমাজ
আল্লাহ তাআলা সালাতের মর্যাদা সমুন্নত করেছেন। পবিত্র কুরআনের বহু জয়গায় সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন । সালাতের প্রতি যত্নবান ও জামাআতভুক্ত হয়ে সালাত আদায়ের আদেশ করেছেন। সালাতকে গুরুত্বপূর্ন ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ও আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:—
وأقيموا الصلاة وآتوا الزكاة واركعوا مع الراكعين – سورة البقرة :43
আর সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং সালাতে রুকুকারীদের সাথে রুকু কর। (বাকারা-৪৩)
আর এর প্রতি অবমাননা এবং তা আদায়ে অলসতা মুনাফিকের আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে :—
إن المنافقين يخادعون الله وهو خادعهم وإذا قاموا إلى الصلاة قاموا كسالى – سورة النساء :142
মুনাফিকরা অবশ্যই প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে অথচ তারা প্রকারান্তরে নিজেদেরই প্রতারিত করছে । বস্তুতঃ তারা যখন সালাতে দাড়ায় তারা দাড়ায় একান্ত শিথিলভাবে। (সূরা নিসা-১৪২)
ولايأتون الصلاة إلا وهم كسالى . سورة التوبة: 54
তারা সালাতে আসে আলস্যভরে (সূরা তওবা : ৫৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের প্রতি অচ্ছেদ্যভাবে যত্নবান ছিলেন। যুদ্ধ কি শান্তি, সুস্থ কি অসুস্থ সকল অবস্থায় এমনকি ওয়াফতের পূর্বে মৃত্যব্যাধিতে আক্রান্ত অবস্থায়ও তিনি সালাত আদায়ে অবহেলা করেননি বিন্দুমাত্র । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ, ও পরবর্তীতে তাবেয়ীন ও উত্তম পূর্বপুরুষগণ সালাতের প্রতি ছিলেন বর্ণনাতীতভাবে ঐকান্তিক, একনিষ্ঠ । তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি রীতিমতো ঘাবড়ে দেবার মতো। বর্তমানে অনেক মুসলমানই সালাত আদায়ে দারুণভাবে উদাসীন। জুমার সালাতে মসজিদে উপচে-পড়া ভীড় হচ্ছে ঠিকই তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে মসজিদের অধিকাংশ জায়গাই থাকে মুসুল্লিশূন্য। সালাত বিষয়ে মুসলমানদের অবহেলার আদৌ কোন কারণ থাকতে পারে না। সালাত বিষয়ে অবহেলার অর্থ ঈমানের একটি মৌলিক দাবি , ইসলামের একটি প্রধানতম নিদর্শন বিষয়ে অবহেলা । আর যারা এ ধরনের অবহেলা প্রদর্শনে অভ্যস্ত তাদের অপেক্ষায় থাকবে মর্মন্তুদ শাস্তি, কঠিন নারকীয় আযাব।
আমাদের পূর্বপুরুষগণ জামা‘আতভুক্তিতে সালাত আদায়ের প্রতি খুবই যত্নশীল। তাদের নিকট এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম ; এমনকি জামাত ছুটে গেলে খুবই মর্মাহত হতেন। তারা। মনোকষ্টে অশ্রু ঝরাতেন। সমবেদনা জানাতেন একে অপরকে জামাত ছুটে যাওয়ার কারণে ।
জামাআতভুক্তিতে সালাত না আদায়ের ফলে সালফে সালেহীনের মনোবেদনা
মুহাম্মদ বিন মুবারক আ‘সম রহ. বলেন :— ‘আমি জামা‘আতে সালাত আদায়ে সক্ষম না হওয়ায় শুধুমাত্র আবু ইসহাক আল-বুখারীই সমবেদনা জানান। অথচ যদি আমার পিতা মারা যেত, তাহলে দশ হাজারেরও বেশী মানুষ আমাকে সমবেদনা জানাত। কেননা ধর্ম পালন করতে গিয়ে কষ্ট শিকার, তাদের নিকট, দুনিয়ার মুসীবতের চেয়েও সহজ মনে হত।
জামা‘আতে সালাত আদায় তাদের নিকট দুনিয়ার সম্পদ অর্জনের চেয়েও অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অথচ আমরা দুনিয়ার পিছনেই লেগে রয়েছি মরিয়া হয়ে। দুনিয়-অর্জন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই ভয়ে অনেক সময় সালাতও আদায় করছি দেরী করে। শুধু তাই নয় বরং আমাদের মাঝে এমন অনেকই আছেন, যারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্যের পিছনে তড়িত হয়ে সালাত আদায়ই ছেড়ে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে।
মায়মুন বিন মেহরান রহ. মসজিদে এলে তাকে বলা হল, সমস্ত লোক চলে গিয়েছে। তিনি বললেন :—
إنا لله وإنا إليه راجعون
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’। এই সালাতের মর্যাদা আমার নিকট ইরাকের গভর্ণর হওয়ার চেয়েও অধিক প্রিয়।
ইউনুস বিন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, আমার যদি মুরগী হারিয়ে যায়, তবে আমি তার জন্য চিন্তিত হই, অথচ সালাত ছুটে গেলে তার জন্য চিন্তিত হই না!সালফে সালেহীনগণ সালাতের আওয়াজ শোনার সাথে সাথে মসজিদে যাবার জন্য প্রতিযোগিতা করতেন। ইমামের সাথে প্রথম তাকবীরে উপস্থিত হবার জন্য তারা সকলে ছিলেন প্রচন্ড আগ্রহী ।
সাঈদ নি মুসায়্যিব রহ. বলেন : পঞ্চাশ বৎসর ধরে আমার প্রথম তাকবীর ছুটেনি, পঞ্চাশ বৎসর পর্যন্ত আমি ফরয নামাযে মানুষের ঘাড় দেখিনি। অর্থাৎ তিনি পঞ্চাশ বৎসর ধরে প্রথম কাতারেই শমিল ছিলেন।
ওয়াকী বিন জারাহ রহ. বলেন : প্রায় সত্তর বৎসর পর্যস্ত আ’মাশ রহ. এর প্রথম তাকবীর ছুটেনি। ইবনে সামাআহ রহ. বলেন : চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত আমার তাকবীরে উলা ছুটেনি। শুধু যে দিন আমার মায়ের মৃত্যু হয়, সে দিন ছুটেছিল।
প্রিয় ভাই ! আমাদের অবস্থা আর সালফে সালেহীনের অবস্থার মাঝে অনেক ব্যবধান তাদের নিকট সালাতের গুরুত্ব ছিল আপরিসীম, আর আমরা এর অবমাননা করছি হরহামেশা। তারা এর প্রতি যত্নবান ছিলেন। আর আমারা করছি অলসতা। তারা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্যের উপর সালাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, আর আমরা দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি এবং একে (সালাতকে) পিছনে ফেলে রেখেছি। এর গুরুত্বপূর্ণ ছাওয়াব ও অফুরন্ত ফযীলতের প্রতি তাদের উৎসাহ ছিল অপরিসীম। আর আমরা এ থেকে বিমুখ।
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত ও ফলাফল
জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফযীলত ও মর্যাদা অনেক। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ :-
১। সালাত পাপমোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ :—
عن أبي هريرة رضي الله عنه : أن رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم : قال: ألا أدلكم على ما يمحو الله به الخطايا ويرفع به الدرجات؟ قالوا: بلى يا رسول الله قال: إسباغ الوضوء على المكاره وكثرة الخطا إلى المساجد وانتظارالصلاة بعد الصلاة فذلكم الرباط. رواه الترمذي :48
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : আমি কি তোমাদের এমন বিষয় জানাব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহসমূহ মোচন করে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন ? সাহাবায়ে কিরাম বললেন : হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন : তা হচ্ছে কষ্টের সময়ে যথাযথভাবে অযু করা, মসজিদের দিকে বেশি বেশি পদচারণ করা এবং এক সালাতের পর অন্য সালাতের অপেক্ষায় থাক। এটাই হল সীমান্ত প্রহরা। (তিরমিযী : ৪৮)
অন্য হাদীসে এসেছে :
অন্য হাদীসে এসেছে :
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما : أن رسول الله صلى الله قال : من راح إلى مسجد الجماعة فخطوة تمحو سيئة وخطوة تكتب له حسنة ذاهبا وراجعا. رواه أحمد وصحح إسناد ه الشيخ أحمد شاكر : 6311
আব্দুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, তার আসা এবং যাওয়ায় প্রতি পদক্ষেপে গুনাহ মিটে যায় এবং প্রতি পদক্ষেপে নেক ‘আমল লেখা হয়। (আহমাদ : ৬৩১১)
২। সালাত বান্দাকে শয়তান থেকে হিফাজত করে এবং তার প্ররোচনা থেকে নিরাপদ রাখে:
فعن أبي الدرداء رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ما من ثلاثة في قرية ولابدو لا تقام فيهم الصلاة إلا قد استحوذ عليهم الشيطان، فعليكم بالجماعة فإنما يأكل الذئب القاصية – رواه أبوداود وحسنه الألباني : 460
আবূ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি : যে গ্রামে বা মরুপ্রান্তরে তিনজন লোক অবস্থান করে অথচ তারা জামা‘আত কায়েম করে সালাত আদায় করে না, শয়তান তাদের উপর চরে বসে। কাজেই জামা‘আতে সালাত আদায় করা একান্ত অপরিহার্য। কারণ বাঘ দলছুট বকররীটিকেই উদরস্থ করে (আবূ দাউদ : ৪৬০)
৩। নিফাক থেকে পরিত্রাণ এবং জাহান্নাম খেকে মুক্তি :—
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
أثقل صلاة على المنافقين صلاة العشاء والفجر – متفق عليه: 1411
এশা ও ফজরের সালাত মুনাফিকদের নিকট সবচেয়ে বেশী ভারী বোঝা বলে মনে হয়। (বুখারী ও মুসলিম : ১৪১১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
من صلى أربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الأولى كتب له براءتان : براءة من النار وبراءة من النفاق – رواه الترمذي وحسنه الألباني : 224
যে ব্যক্তি একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রথম তকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাতে আদায় করে, তার জন্য দু’টি মুক্তি রয়েছে : জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর নিফাক থেকে মুক্তি। (তিরমিযী : ২২৪)
ইবনে মাসউদ রা. বলেন :
ইবনে মাসউদ রা. বলেন :
ولقد رايتنا وما يتخلف عنها إلا منافق معلوم النفاق- رواه مسلم : 1046
এক সময় আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, একমাত্র প্রকাশ্য মুনাফিক ব্যতীত আর কেউ জামা‘আতে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকেনি। (মুসলিম : ১০৪৬)
৪। কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ :—
عن بريدة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم: قال: بشر المشائين في الظلم إلى المساجد بالنور التام يوم القيامة- رواه أبو دواؤد وصحه الألباني :447
বুরাইদাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: অন্ধকার রাতে মসজিদে গমনকারীদের জন্য ক্বিয়ামত দিবসে পূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও। (আবূ দাউদ : ৪৪৭)
৫। জামা‘আতে সালাত আদায়কারী আল্লাহর হিফাজতে :—
فعن أمامة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ثلاثة كلهم ضامن على الله عز وجل ومنهم (ورجل راح إلى المسجد فهو ضامن على الله حتى يتوفاه فيدخله الجنة أو يرده بما نال من أجر وغنيمة – رواه أبو داود وصححه الألباني : 2133
উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন : তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায়, তন্মধ্যে মসজিদে গমনকারী ব্যক্তি। সে আল্লার জিম্মায় থাকে ; এমনকি, তার মৃত্যু হলে তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা তাকে ছাওয়াব বা গনীমত প্রদান করে (বাড়ীতে) ফিরিয়ে দিবেন। (আবূ দাউদ : ২১৩৩)
তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :—
من صلى الصبح في جماعة فهو في ذمة الله فمن أخفر ذمة الله كبه الله في النار لوجهه. رواه الدارمي : 3367
যে ব্যক্তি সকালের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে। যে আল্লাহর জিম্মাকে অবমাননা করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (দারামী : ৩৩৬৭)
একটু ভেবে দেখুন ! যে ব্যক্তি সকল ফরয-সালাত জামা‘আতের সাথে মসজিদে আদায় করে তার অবস্থা কত কল্যাণময় হতে পারে ?
একটু ভেবে দেখুন ! যে ব্যক্তি সকল ফরয-সালাত জামা‘আতের সাথে মসজিদে আদায় করে তার অবস্থা কত কল্যাণময় হতে পারে ?
৬। ঘরে সালাত আদায়ের চেয়ে মসজিদে সালাত আদায় অধিক ছাওয়াবের উপযোগী বানায় :—
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
صلاة الرجل في جماعة تضعف على صلاته في بيته وفي سوقه خمسا وعشرين ضعفا وذلك أنه إذا توضأ فأحسن الوضوء ثم خرج إلى المسجد لا يخرجه إلا الصلاة لم يخط خطوة إلا رفعت له بها درجة وحط عنه بها خطيئة فإذا صلى لم تزل الملائكة تصلى عليه ما دام في مصلاه: اللهم صل عليه اللهم ارحمه ولا يزال أحدكم في صلاة ما انتظر الصلاة – متفق عليه : 611
জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় ঘরে বা বাজারের সালাতের চেয়ে ২৫ গুণ বেশী ছাওয়াবের অধিকারী বানায়। আর এটা এভাবে যে, যখন সে অযু করে খুব সুন্দর করে । এবং (সালাতের জন্য) মসজিদের উদ্দেশো বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে, প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করা হয়। তারপর যখন সে সালাত আদায় করতে থাকে, ফেরেস্তাগণ তার জন্য রহমতের দু‘আ করতে থাকেন। যতক্ষণ সে সালাতের জায়গায় বসে থাকে ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে দু’আ করেন যো, হে আল্লাহ ! এই ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল কর। হে আল্লাহ ! এর উপর দয়া কর। আর যতক্ষণ সে সালাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, ততক্ষণ সে সালাতের অর্ন্তভুক্ত থাকে।’ (বুখারী ও মুসলিম : ৬১১)
রাসূল সা. বলেন :
রাসূল সা. বলেন :
من غدا إلى المسجد أو راح أعد الله له في الجنة منزلا كلما غدا أو راح- متفق عليه : 622
যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন, যতবার সে সকালে বা সন্ধ্যায় গমন করে ততবারই। (বুখারী ও মুসলিম : ৬২২)
عن أبي أمامة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: من خرج من بيته متطهرا إلى صلاة مكتوبة فأجره كأجر ه الحاج المحرم – رواه أبو داود وحسنه الألباني رقم الحديث : 471
আবূ উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি নিজ গৃহ থেকে পবিত্র হয়ে ফরয সালাতের জন্য বের হয়, তার ছাওয়াব একজন হজ্জ পালনকারীর ছাওয়ারেবর সমান। (আবূ দাউদ : ৪৭১)
وعن جابر رضي الله عنه قال: أراد بنو سلمة أن يتحول إلى قرب المسجد قال: والبقاع خالية فبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا بني سلمة دياركم تكتب آثاركم فقالوا ما كان يسرنا أن كنا تحولنا – رواه مسلم :1069
জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : বনু সালামাহ গোত্র মসজিদের কাছে স্থানান্তরিত হতে মনস্থ করল। তিনি বলেন : জায়গা খালি ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌছলে তিনি তাদেরকে বললেন : হে বনী সালামাহ ! তোমরা তোমাদের বর্তমান বাসস্থানগুলো ধরে রাখ। মসজিদে গমনাগমনের পদক্ষেপগুলো তোমাদের জন্যে লিখে রাখা হবে। তারা বললেন : স্থানান্তরিত হওয়া আমাদের কিই-বা আনন্দত দিতে পারে ! (মুসলিম: ১০৬৯)
৭। জামা‘আতে সালাত আদায়কারী কিয়ামত দিবসে আরশের নীচে ছায়া পাবেন :—
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: سبعة يظلهم الله في ظله يوم لا ظل إلا ظله .وذكر منهم ورجل قلبه معلق بالمساجد ( رواه البخاري : 620 )
সাহাবী আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা ছায়া দান করবেন ঐ দিন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না … তাদের মধ্যে একজন হল ঐ ব্যক্তি যার হৃদয় মসজিদের সাথে লাগানো। অর্থাৎ সালাত ও জামা‘আতের প্রতি অচ্ছেদ্যভাবে আগ্রহী। (বুখারী ও মুসলিম : ৬২০)
৮। আল্লাহ তা‘আলা মুসল্লির আগমনে খুশী হন :—
রাসূল সা. বলেন :
لا يتوضأ أحدكم فيحسن وضوءه ويسبغه ثم يأتي المسجد لا يريد إلا الصلاة فيه إلا تبشبش الله إليه كما يتبشبش أهل الغائب بطلعته. رواه ابن خزيمة وأحمد وصححه الألباني :8131
তোমাদের মধ্যে যদি কেউ পরিপূর্ণভাবে অযূ করে, অতঃপর শুধুমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, তবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি এমন খুশি হন যেরূপ খুশি হয় নিরুদ্দেশ ব্যক্তির আচম্বিতে ফেরে আসায় তার পরিবারের সদস্যরা । (ইবনু খুযাইমাহ : ৮১৩১)
৯। জামা‘আতে সালাত একাগ্রতা অর্জন ও অন্তর বিগলিত হওয়ার উপকরণ :—
কোন মুসলিম যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন দুনিয়ার সকল ব্যস্ততা থেকে সে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়, অতঃপর সে মসজিদে আগত মুসল্লিদের আল্লাহর সামনে রুকু-সিজদারত অবস্থায় দেখে। যিকির এবং কুরআন তিলাওয়াত প্রত্যক্ষ করে। আল্লাহর কালাম স্বকর্ণে শোনার সুযোগ পায়। এ সব থেখে সে বুঝতে পারে এ ময়দান আল্লাহ ও তার জান্নাত লাভের উদ্দেশে প্রতিযোগিতার ময়দান। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাকারীরাই আন্তরিকতা ও একাগ্রতার সাথে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়।
১০। জামাতের সাথে সালাত আদায় মুসলমানদের মাঝমাঝে পারস্পরিক আন্তরিকতা ও মহব্বত সৃষ্টি করে :—
জামা‘আতে সালাতে আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানগণ দিন ও রাতে পাঁচবার পরস্পর মিলিত হয়। তাদের মাঝে সালাম বিনিময় হয়। একে অপরের খোজ-খবর নেয়। হাসিমুখে একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করে। এ সব বিষয় পারস্পরিক মহব্বত, ভালবাসা এবং একে অপরের কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়।
১১। আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের নিকট মুসল্লীদের নিয়ে গর্ব করেন :—
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: أبشروا هذا ربكم قد فتح بابا من أبواب السماء يباهي بكم الملائكة يقول : انظروا إلى عبادي قد قضوا فريضة وهم ينتظرون أخرى – رواه أحمد وابن ماجه : 793
আব্দূল্লাহ বিন ‘আমর রা. থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের প্রভু আসমানের দরজাসমূহের একটি দরজা খুলেছেন। সেখানে তোমাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে বলেন, দেখ আমার বান্দাদেরকে, তারা একটি ফরয আদায় করেছে এবং আরেকটি ফরযের জন্য অপেক্ষা করছে। (আহমাদ, ইবনে মাজাহ্ : ৭৯৩ )
১২। এতে অজ্ঞ লোকের জন্য রয়েছে শিক্ষা এবং বিজ্ঞলোকের জন্য রয়েছে উপদেশ :—
যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে মসজিদে সালাত আদায় করে, সে সালাতের আহকাম, আরকান, সুন্নাত ইত্যাদি বিষয়গুলো আহলে ইলম থেকে শিখতে পারে । আহলে ইলমের সালাত দেখে উক্ত ব্যক্তি নিজের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে নেয়। এমনিভাবে ওয়াজ-নসীহত শুনে ভাল কাজে উৎসাহিত হয়, মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এতে সে অনেক উপকৃত হয়, যা ঘরে সালাত আদায় করে আদৌ সম্ভব নয়।
১৩। আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত আদায়ে মুগ্ধ হন :
কতই না সৌভাগ্য ঐ ব্যক্তির, যার আমল দেখে সৃষ্টিকর্তা মুগ্ধ হন।
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن الله ليعجب من الصلاة في الجمع – رواه أحمد وحسنه الألباني
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি : নিশ্চই আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত আদায় করাতে মুগ্ধ হন। (আহমাদ)
১৪। জামা‘আতে সালাত আদায়ের ছাওয়াব লিখা এবং আসমানে উঠানোর ব্যাপারে ফেরেশতাগণ বির্তক করেন :—
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال قال: رسول الله صلى الله عليه وسلم: أتاني اللية ربي تبارك وتعالى في أحسن صورة قال : أحسبه في المنام فقال يا محمد هل تدري فيم يختصم الملآ الأعلى ؟ قلت لا، قال: فوضع يده بين كتفي حتى وجدت بردها بين ثدي أو قال: في نحري فعلمت ما في السموات وما في الأرض قال: محمد هل تدري فيم يختصم الملآ الأعلى؟ قلت نعم في الكفارات والكفارات : المكث في المساجد بعد الصلوات والمشي على الأقدام إلى الجماعات وإسباغ الوضوء على المكاره ومن فعل ذلك عاش بخير ومات بخير وكان من خطيئة كيوم ولدته أمه – رواه الترمذي وصححه الألباني : 3157
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একরাতে আল্লাহ তা‘আলা এক জ্যোর্তিময় অবস্থায় আমার নিকট এলেন । তিনি বলেন, সম্ভবতঃ তা নিদ্রায় হবে। এসে বললেন : হে মুহাম্মদ ! ঊর্ধ্বজগতে কি নিয়ে বিতর্ক হয় তুমি জান ? আমি বললাম না। তিনি বলেন : অতঃপর তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তার শীতলতা আমার বুকে অনুভব করলাম। (অথবা বললেন আমার গলায়) তখন বুঝতে পারলাম আসমান যমীনের মাঝে কি হচ্ছে ? তিনি বললেন : হে মুহাম্মদ ! তুমি জান উপর আসমানে কি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে ? আমি বললাম : হ্যাঁ, কাফফারা সম্পর্কে। কাফফারা হল সালাতের পর মসজিদে অবস্থান করা। পায়ে হেঁটে জামা‘আতের জন্য গমন করা, কষ্টের সময়েও পুরোপুরি অযু করা। যে ব্যক্তি এটা করবে সে কল্যাণময় জীবন যাপন করবে এবং তার মৃত্যু মঙ্গলময় হবে । তার গুনাহগুলো মিটে এমন হবে যেন সে তার মায়ের উদর থেকে আজই জন্মগ্রহণ করল। (তিরমিযী : ৩১৫৭)
১৫। এটা মানুষকে ভাল কাজের প্রতিযোগিতায় অভ্যস্ত করে এবং নফলের প্রতি উৎসাহিত করে :—
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لو يعلم الناس ما في النداء والصف الأول ثم لم يجدوا إلا أن يستهموا عليه لا ستهموا ولو يعلمون ما في التهجير لا ستهموا إليه ولو يعلمون ما في العتمة والصبح لآتوهما ولو حبوا (متفق عليه:580)
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যদি লোকেরা জানত আযান এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কি আছে, আর লটারীর মাধ্যম ছাড়া তা অর্জন করার অন্য কোন পথ না থাকত, তাহলে তারা অবশ্যই লটারী করত। যদি তারা জানত গরমের সময় ভর দুপুরে মসজিদে যাওয়ার কি ফযীলত, তাহলে অবশ্যই তার জন্যে প্রতিযোগিতা করত। যদি তারা এশা ও ফজরের সালাতের মধ্যে কি মর্যাদা আছে জানতে পারত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দু’টি সময়ের সালাতে শামিল হত। (বুখারী ও মুসলিম: ৫৮০)
অনুরূপভাবে সালাতের সাথে সালাত আদায় ব্যক্তিকে নফল সালাত আদায়েও অভ্যস্ত করে তুলে। যে ব্যক্তি সালাত কায়েমের পূর্বে মসজিদে আসে, সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়ের সুযোগ পায়, সুন্নাত পড়ার সুযোগ পায়, কুরআন তিলাওয়াত, দু‘আ ইসতিগফার ইত্যাদির সুযোগ পায়। আর কিছু না করলেও অন্তত সালাতের অপেক্ষায় চুপ করে বসে থাকতে পারে। আর এ সময় ফেরেশতাগণ তার জন্য এই বলে দু‘আ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, তার প্রতি রহম কর। আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত একিট হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন —
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: أحدكم ما قعد ينتظر الصلاة في صلاة ما لم يحدث تدعو له الملائكة اللهم اغفر له اللهم ارحمه. رواه مسلم:1063
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন সালাতের জন্য নিজের মসল্লায় অপেক্ষা করতে থাকে, তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য দু‘আ করতে থাকে যতক্ষণ তার অযু ভঙ্গ না হয়। ফেরেশতাগণ বলতে _ আল্লাহ ! তুমি একে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ ! তুমি এর উপর রহম কর। (মুসলিম : ১০৬৩)
লেখক: চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
সম্পাদক: মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
No comments:
Post a Comment