Monday, January 29, 2018

নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামায আদায়ের পদ্ধতি

নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামায আদায়ের পদ্ধতি

( صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ) رواه البخاري

অর্থঃ “তোমরা সেভাবে নামায আদায় কর, যে ভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখ।” বুখারী
 ১. সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে ওযু করবে :
আল্লাহ্‌ পাক কুরআনে যে ভাবে ওযু করার নির্দেশ প্রদান করেছেন সে ভাবে ওযু করাই হলো পরিপূর্ণ ওযু। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এ সম্পর্কে এরশাদ করেন :
 ” হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাযের উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও তখন (নামাযের পূর্বে) তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলোকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মসেহ কর এবং পা গুলোকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল।” [সূরা মায়েদাহ – ৬] এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ হলো :
( لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغِيْرِ طَهُوْرٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُوْلٍ (
অর্থঃ” পবিত্রতা ব্যতীত নামায কবুল করা হয় না। আর খিয়ানতকারীর দান গ্রহণ করা হয় না।” ইমাম মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেনঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাযে ভুল করার কারণে বললেনঃ
( ِإذَا قُمْتَ إِلىَ الصَّلاَةِ فَأَسْبِغِ الْوُضُوْءَ )
অর্থঃ”তুমি যখন নামযে দাড়াবে (নামাযের পূর্বে) উত্তম রূপে ওযু করবে।”২. মুসল্লি বা নামাযী ব্যক্তি কিবলামুখী হবেঃ
সে যে কোন জায়গায় থাক না কেন,তার সমস্ত শরীর ও মনকে যে ফরজ বা নফল নামায আদায়ের ইচ্ছা করছে অন্তরকে সে
 নামাযের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে। এবং মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করবে না, কারণ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয় বরং বা তা বিদ্‌আত। কারণ নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ কেউ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করেন নেই।
সুন্নত সম্মত হলো যে, নামাযী তিনি ইমাম হয়ে নামায আদায় করুন অথবা একা, তার সামনে সুতরাহ (নামাযের সময় সামনে স্থাপিত সীমাচিহ্ন) রেখে নামায পড়বেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সামনে সুতরাহ ব্যবহার করে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিবলামুখী হওয়া নামাযের শর্ত। তবে কোন কোন বিশেষ অবস্থা তার ব্যতিক্রম যা সুবিদিত বা সবার জানা এবং এ বিষয়ে আহলে এলমদের কিতাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৩.তাকবীরে তাহরীমাহঃ
আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমাহ দিয়ে নামাযে দাড়াবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে নিবদ্ধ রাখবে।
৪.তাকবীরে তাহরীমায় হাত উত্তোলনঃ
তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাতকে কাঁধ অথবা কানের লতির বরাবর উঠাবে।
৫.বুকে হাত বাঁধাঃ
এরপর ডান হাতের তালুকে তার বাম হাতের উপরে কবব্জি অথবা বাহু ধারণ করে উভয় হাত রাখবে। বুকের উপর হাত রাখা সম্পর্কে সাহাবী অয়েল ইবনে হুজর এবং কাবীসাহ ইবনে হুলব আততায়ী [রাযিয়াল্লাহু আনহুমা] তিনি তার পিতা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৬.সানা পড়াঃ
দু’আ ইস্তেফতাহ [সানা] পাঠ করা সুন্নাত। দুআ ইস্তেফতাহ নিম্নরূপ :
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বা-ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাতাইয়ায়া, কামা বা’আদ্‌তা বাইনাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবি, আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়ায়া কামা ইউনাক্কাছ ছাওবুল আবইয়াদু মিনাদ্‌দানাসি, আল্লাহুম্মাগছিলনী মিন খাতাইয়ায়া বিল মায়ি, ওয়াছ্‌ছালজি, ওয়াল বারাদি।
[অর্থঃ”হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে আমার পাপগুলি থেকে এত দূরে রাখ যেমনঃ পূর্ব ও পশ্চিমকে পরস্পরকে পরস্পর থেকে দূরে রেখেছ। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে এমন ভাবে পরিষ্কার করে দাও, যেমনঃ সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার পাপ হতে (পবিত্র করার জন্য) পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে দাও।”] বুখারী ও মুসলিম
অন্য এক হাদীসে আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, যদি কেউ চায় তা’হলে পূর্বের দুআর পরিবর্তে নিম্নের দুআটিও পাঠ করতে পারে। কারণ নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তা পাঠ করার প্রমাণ রয়েছে।
(( سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ ))
উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাস্‌মুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অর্থঃ” হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে,আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা’বূদ নেই।”
পূর্বের দুআ দুটি ছাড়াও যদি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অন্যান্য যে সমস্ত দুআয়ে ইস্তেফতাহ বা সানা বলা প্রমাণিত তা পাঠ করে তবে কোন বাধা নেই। কিন্তু উত্তম হলো যে কখনও এটি আবার কখনও অন্যটি পড়া। কারণ এর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিপূর্ণ অনুসরণ প্রতিফলিত হবে।
এরপর বলবে :
আঊযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
অর্থঃ”আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
অতঃপর সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
( لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ )
অর্থঃ” যে ব্যক্তি (নামাযে) সূরা ফতিহা পাঠ করে না তার নামায হয় না।” [বুখারী ও মুসলিম] সূরা ফতিহা পাঠ শেষে জাহরী নামাযে (যেমনঃ মাগরিব, এশা ও ফজর) উচ্চস্বরে আওয়াজ করে এবং ছিররি নামাযে (যেমনঃ জোহর ও আসর) মনে মনে আ-মীন বলবে।
এরপর পবিত্র কুরআন থেকে যে পরিমাণ সহজসাধ্য হয় পাঠ করবে। উত্তম হলো যে, জোহর, আসর এবং এশার নামাযে কুরআন মজিদের আওছাতে মুফাচ্ছাল [সূরা নাস থেকে সূরা যুহা পর্যন্ত এবং ফজরে তেওয়াল [সূরা কাফ থেকে সূরা নাবা পর্যন্ত] আর মাগরিবে কিসার [সূরা যুহা থেকে সূরা নাস পর্যন্ত] থেকে পাঠ করা। মাগরিব নামাযে কখনও তেওয়াল অথবা আওসাত থেকে পাঠ করবে। এভাবে পাঠ করা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত রয়েছে। আসরের কিরআতকে জোহর এর কিরআত থেকে হালকা করা জায়েয আছে।
৭.রুকূঃ
উভয় হাত দু’কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবে। মাথাকে পিঠ বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলিকে খোলাবস্থায় উভয় হাটুর উপরে রাখবে। রুকুতে ইতমিনান বা স্থিরতা অবলম্বন করবে। এরপর বলবেঃ “সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম”।অর্থঃ-”আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।”
দুআটি তিন বা তার অধিক পড়া ভাল এবং এর সাথে নিম্নের দুআটিও পাঠ করা মুস্তাহাব-জায়েয।
( سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّناَ وَبِحَمْدِكَ اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ )
উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্ল্লাহুম্মাগ্‌ফিরলি।
অর্থঃ”হে আল্লাহ ! আমাদের প্রতিপালক, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তোমার প্রশংসা সহকারে। হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা কর।”
৮.রুকূ থেকে উঠাঃ
উভয় হাত কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠিয়ে “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ”
বলে রুকু থেকে মাথা উঠাবে। ইমাম বা একাকী উভয়ই দু’আটি পাঠ করবে। রুকু থেকে খাড়া হয়ে বলবে :
( رَبَّنَاوَلَكَ الْحَمْدُ،حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا ِفيْهِ؛ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَ مِلْءَ الْأَرْضِ؛ وَمِلَءَ ماَ بَيْنَهُمَا ؛ وَمِلْءَ ماَ شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ )
উচ্চারণঃ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ্‌, হামদান কাছিরান তাইয়্যেবাম মুবারাকান ফি-হ, মিলয়াস সামাওয়াতি ওয়া মিলয়াল আরজি, ওয়া মিলয়া মা বায়নাহুমা,ওয়া মিলয়া মা শি’তা মিন শাইয়িন বা’দু।
অর্থঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। তোমার প্রশংসা অসংখ্য, উত্তম ও বরকতময়,যা আকাশ ভর্তি করে দেয়, যা পৃথিবী পূর্ণ করে দেয়, উভয়ের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ করে এবং এ’গুলি ছাড়া তুমি অন্য যা কিছু চাও তাও পূর্ণ করে দেয়।”
পূর্বের দু’আটির পরে যদি নিম্নের দু’আটিও পাঠ করা হয় তাহলে ভাল।
( أَهْلُ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ؛ أَحَقُّ مَا قاَلَ الْعَبْدُ؛ وَكُلُّناَلَكَ عَبْدٌ؛ اَللَّهُمَّ لاَمَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَالْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ )
উচ্চারণঃ আহলুস্‌সানায়ি ওয়াল মাজদি,আহাক্কু মা কালাল আবদু’ ওয়া কুল্লুনা লাকা আবদুন। আল্লাহুম্মা ! লা- মানি’আ লিমা আ’তাইতা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা, ওয়ালা ইয়ানফা’উ যালজাদ্দি মিনকাল্‌জাদ্দু।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! তুমিই প্রশংসা ও মর্যাদার হক্কদার, বান্দাহ যা বলে তার চেয়েও তুমি অধিকতর হকদার। এবং আমরা সকলে তোমারই বান্দাহ। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করেছো, তার প্রতিরোধকারী কেউ নেই। আর তুমি যা নিষিদ্ধ করেছো তা প্রদানকারীও কেউ নেই। এবং কোন সম্মানী ব্যক্তি তার উচ্চ মর্যাদা দ্বারা তোমার দরবারে উপকৃত হতে পারবে না।”
কোন কোন সহীহ হাদীসে নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই [পূর্বের] দু’আটি পড়া প্রমাণিত আছে। আর মুকতাদী হলে রুকু থেকে উঠার সময় ” রাব্বানা ওয়া লাকাল হাম্‌দ–“দুআটি শেষ পর্যন্ত পড়বে। রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর ইমাম ও মুকতাদী সকলের জন্য দাড়ানো অবস্থায় যে ভাবে উভয় হাত বুকের উপর ছিল সে ভাবে বুকের উপর উভয় হাত রাখা মুস্তাহাব। এ বিষয়ে নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অয়েল ইবনে হুজর এবং সাহল বিন সা’দ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) এর বর্ণিত হাদীস থেকে প্রমাণিত।
৯.সিজদাহঃ
আল্লাহু আকবার বলে। যদি কোন প্রকার কষ্ট না হয় তা হলে দুই হাটু উভয় হাতের আগে (মাটিতে রেখে) সিজদায় যাবে আর কষ্ট হলে উভয় হাত হাটুর পূর্বে (মাটিতে) রাখা যাবে। হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী থাকবে। এবং হাতের আঙ্গুলগুলি মিলিত ও প্রসারিত হয়ে থাকবে।
সিজদাহ হবে সাতটি অঙ্গের উপর। অঙ্গগুলো হলোঃ নাক সহ কপাল, উভয় হাতুলী, উভয় হাটু এবং উভয় পায়ের আঙ্গুলের ভিতরের অংশ।
সিজদায় গিয়ে বলবেঃ “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা”(অর্থঃ আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের [আল্লাহর] প্রশংসা করছি।) তিন বা তার অধিকবার তা পুনরাবৃত্তি করবে। এর সাথে নিম্নের দু’আটি পড়া মুস্তাহাব।
উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি।
[অর্থঃ”হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক,তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি তোমার প্রশংসা সহকারে। হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা কর।”]
[সিজদায়] বেশি বেশি দু’আ করা মুস্তাহাব। কেননা নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ
( فأما الركوع فعظموا فيه الرب وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء فقمن أن يستجاب )
অর্থঃ”তোমরা রুকু অবস্থায় মহান প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত বর্ণনা কর এবং সিজদারত অবস্থায় অধিক দুআ পড়ার চেষ্টা কর, কেননা তোমাদের দুআ’ কবুল হওয়ার উপযোগী।” মুসলিম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও এরশাদ করেন :
( أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِن رَّبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوْا الدُّعَاءَ. )
অর্থঃ”বান্দাহ সিজদাহ অবস্থায় তার প্রতিপালকের অধিক নিকটবর্তী হয়ে থাকে। অতএব এই অবস্থায় তোমরা বেশি বেশি দুআ করবে।” মুসলিম
ফরজ অথবা নফল উভয় নামাযে মুসলিম [নামাযী] সিজদার মধ্যে তার নিজের এবং মুসলমানদের জন্য আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য দুআ করবে। সিজদার সময় উভয় বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে, পেটকে উভয় উরূ এবং উভয় উরূ পিন্ডলী থেকে আলাদা রাখবে। এবং উভয় বাহু [কনুই] মাটি থেকে উপরে রাখবে। (কেননা নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরকম করতে নিষেধ করেছেন।)
নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন :
( اِعْتَدِلُوْا فِي السُّجُوْدِ وَلاَيبسِطُ أَحْدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ إِنْبِسَاطَ الْكَلْبِ ) متفق عليه
অর্থঃ”তোমরা সিজদায় বরাবর সোজা থাকবে। তোমাদের কেউ যেন তোমাদের উভয় হাতকে কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে প্রসারিত না রাখে।” বুখারী ও মুসলিম
১০.সিজদা থেকে উঠাঃ
আল্লাহু আকবার বলে [সিজদাহ থেকে] মাথা উঠাবে। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। দু’হাত তার উভয় রান [ঊরু] ও হাঁটুর উপর রাখবে। এবং নিম্নের দু’আটি বলবে।
উচ্চারণঃ রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী ওয়া আ’ফিনী ওয়াজবুরনী।
অর্থঃ”হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে রহম কর, আমাকে হিদায়েত দান কর, আমাকে রিযিক দান কর, আমাকে সুস্থ্যতা দান কর এবং আমার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ কর।”
এই বৈঠকে ধীর স্থির থাকবে যাতে প্রতিটি হাড়ের জোর তার নিজস্ব স্থানে ফিরে যেতে পারে রুকুর পরের ন্যায় স্থির দাঁড়ানোর মতো। কেননা নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুর পরে ও দু’সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে স্থিরতা অবলম্বন করতেন।
১১.দ্বিতীয় সিজদাহঃ
আল্লাহু আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করবে। এবং দ্বিতীয় সিজদায় তাই করবে প্রথম সিজদায় যা করেছিল।
১২.আরামের বৈঠকঃ
সিজদাহ থেকে আল্লাহু আকবার বলে মাথা উঠাবে। ক্ষণিকের জন্য বসবে, যে ভাবে উভয় সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসেছিল। এ ধরনের পদ্ধতিতে বসাকে “জলসায়ে ইসতেরাহা” বা আরামের বৈঠক বলা হয়। আলেমদের দু’টি মতের মধ্যে অধিক সহীহ মতানুসারে এ ধরনের বসা মুস্তাহাব এবং তা ছেড়ে দিলে কোন দোষ নেই।”জলসায়ে ইস্‌তেরাহা”এ পড়ার জন্য [নির্দিষ্ট] কোন দু’আ নেই।
অত:পর দ্বিতীয় রাকআতের জন্য যদি সহজ হয় তাহলে উভয় হাঁটুতে ভর করে উঠে দাঁড়াবে। তার প্রতি কষ্ট হলে উভয় হাত মাটিতে ভর করে দাঁড়াবে। এরপর [প্রথমে] সূুরাহ ফাতিহা এবং কুরআনের অন্য কোন সহজ সূরাহ পড়বে। প্রথম রাকআতে যেভাবে করেছে ঠিক সে ভাবেই দ্বিতীয় রাকআতেও করবে।
মুকতাদী তার ইমামের পূর্বে কোন কাজ করা জায়েয নেই। কারণ নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এ রকম করা থেকে সতর্ক করেছেন। ইমামের সাথে সাথে (একই সঙ্গে) করা মাকরুহ। সুন্নাত হলো যে, মুকতাদীর প্রতিটি কাজ কোন শিতিলতা না করে ইমামের আওয়াজ শেষ হওয়ার সাথে হবে। এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন।
“ইমাম এই জন্যই নির্ধারণ করা হয়,যাতে তাকে অনুসরণ করা হয়, তার প্রতি তোমরা ইখতেলাফ করবে না। সুতরাং ইমাম যখন আল্লাহু আকবার বলবে তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে এবং যখন তিনি রুকু করবেন তোমরাও রুকু করবে এবং তিনি যখন “সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবেন তখন তোমরা “রাব্বানা ওয়া লাকাল হাম্‌দ”বলবে আর ইমাম যখন সিজদাহ করবেন তোমরাও সিজদাহ করবে।” বুখারী ও মুসলিম
১৩.প্রথম বৈঠকঃ
নামায যদি দু’রাক্‌আত বিশিষ্ট হয় যেমনঃ ফজর, জুমআ ও ঈদের নামায, তা’হলে দ্বিতীয় সিজদাহ থেকে মাথা উঠিয়ে ডান পা খাড়া করে বাম পায়ের উপর বসবে। ডান হাত ডান ঊরুর উপর রেখে শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুলি ছাড়া সমস্ত আঙ্গুল মুষ্টিবদ্ধ করে দুআ ও আল্লাহর নাম উল্লেখ করার সময় শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা নাড়িয়ে তাওহীদের ইশারাহ করবে। যদি ডান হাতের কনিষ্ঠা ও অনামিকা বন্ধ রেখে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি মধ্যমাঙ্গুলির সাথে মিলিয়ে গোলাকার করে শাহাদাত বা তর্জনী দ্বারা ইশারা করে তবে তা ভাল। কারণ নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দু’ধরনের বর্ণনাই প্রমাণিত। উত্তম হলো যে, কখনও এভাবে এবং কখনও ওভাবে করা। এবং বাম হাত বাম ঊরু ও হাঁটুর উপর রাখবে। অত:পর এই বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যতু) পড়বে।
তাশাহহুদ বা আত্তাহিয়্যতু :
উচ্চারণঃ”আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্‌সালাওয়াতু ওয়াত্‌ তাইয়্যিবাতু আছ্‌ছালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আছ্‌ছালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিছ ছালিহীন। আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান্‌ আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
[অর্থঃ”যাবতীয় ইবাদত, মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক সমস্তই আল্লাহর জন্য। হে নাবী ! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মা’বূদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।”]
অতঃপর [দরূদ] বলবে :
 উচ্চারণ:” আল্লাহুম্মা সাল্ল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্‌রা-হীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্‌রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। ওয়া বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইব্‌রা-হীমা ওয়া আলা আলি-ইব্‌রা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।”
[অর্থঃ”হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ কর। যেমনঃ তুমি ইব্‌রাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও গৌরবান্বিত। এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বর্কত নাযিল কর, যেমনঃ তুমি ইব্‌রাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর নাযিল করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও গৌরাবান্বিত।”
অতঃপর নিম্নের দু’আটি পড়বে :-
এরপর আল্লাহর কাছে চারটি বস্তু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন আযাবিল ক্বাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল্‌ মাহইয়া ওয়ালমামাতি ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল।
অর্থঃ”আমি আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর যন্ত্রণা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফেত্‌না থেকে।”
এরপর দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল কামনা করে নিজের পছন্দমত যে কোন দু’আ করবে। যদি তার পিতা-মাতা ও অন্যান্য মুসলমানের জন্য দু’আ করে তাতে কোন দোষ নেই। দু’আ করার বিষয়ে ফরজ অথবা নফল নামযে কোনই পার্থক্য নেই। কারণ নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথায় ব্যাপকতা রয়েছে, ইবনে মাসউদের হাদীসে যখন তিনি তাশাহহুদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন তখন বলেছিলেন :
( ثُمَّ لِيَتَخَيَّرْ مِنَ الدُّعاَءِ أَعْجَبَهُ إِلَيْهِ فَيَدْعُوْا )
অর্থঃ”অত:পর তার কাছে যে দু’আ পছন্দনীয়, তা নির্বাচন করে দু’আ করবে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে,
( ثُمَّ يَتَخَيَّرْ مِنَ الْمَسْأَلَةِ مَا شَاءَ )
অর্থঃ” অতঃপর যা ইচ্ছা চেয়ে দু’আ করতে পারে।”
এই দু’আগুলি যেন বান্দাহর দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত বিষয়কে শামিল করে। অতঃপর [নামাযী] তার ডান দিকে [তাকিয়ে] “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” অর্থ :-“তোমাদের উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত নাযিল হউক এবং বাম দিকে [তাকিয়ে] “আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে ছালাম ফিরাবে।
১৪.তিন বা চার রাকা’আত বিশিষ্ট নামাযঃ
নামায যদি তিন রাকআত ওয়ালা হয়, যেমনঃ মাগরিবের নামায অথবা চার রাকআত ওয়ালা যেমনঃ জোহর, আছর ও এশার নামায, তা’হলে পূর্বোল্লিখিত “তাশাহহুদ” পড়বে এবং এর সাথে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদও পাঠ করা যাবে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে হাটুতে ভর করে (সোজা হয়ে) দাড়িয়ে উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে পূর্বের ন্যায় বুকের উপর রাখবে। এবং শুধু সূরা ফাতিহা পড়বে। যদি কেউ জোহর ও আসরের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকআতে কখনও সূরা ফাতিহার অতিরিক্ত অন্য কোন সূরা পড়ে তবে কোন বাধা নেই। কেননা এবিষয়ে আবু সাঈদ খুদরী রা. কতৃক নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। প্রথম তাশাহহুদে যদি নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদ পাঠ করা ছেড়ে দেয় এতেও কোন ক্ষতি নেই। কারণ প্রথম বৈঠকে দরূদ পাঠ করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব।
অতঃপর মাগরিবের নামাযের তৃতীয় রাকআত এবং জোহর,আসর ও এশার নামাযের চতুর্থ রাকআতের পর তাশাহহুদ পড়বে এবং নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ করবে আর আল্লাহর কাছে জাহান্নামের আযাব, কবরের আযাব, জীবিত ও মৃত্যুর ফেতনা এবং মাসীহে দাজ্জালের ফেতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং বেশি বেশি দু’আ করবে।
নামাযের শেষ বৈঠকে এবং এর পরবর্তী সময়ে সুন্নাতী কিছু দু’আ :-
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক সময় নিম্নের দু’আটি পাঠ করতেন।
]رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ 
যেমন তা দুরাক্‌আত ওয়ালা নামাযে উল্লেখ হয়েছে। [অতঃপর শেষ বৈঠকের জন্য বসবে] তবে এ বৈঠকে তাওয়াররুক করে বসবে অর্থাৎ ডান পা খাড়া করে এবং বাম পা ডান পায়ের নিম্ন দিয়ে বের করে রাখবে। পাছা যমীনের উপর স্থির রাখবে। এ বিষয়ে আবু হুমাইদ রা. থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এরপর সব শেষে “আস্‌সালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ” বলে প্রথমে ডান দিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবে।
[সালামের পর] ৩বার “আছ্‌তাগফিরুল্লাহ” পড়বে (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) নিম্নের দু’আগুলি [১ বার] পড়বে :
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতাছ ছালামু, অমিনকাছ ছালামু, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইক্‌রাম।
লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুল্‌কু অলাহুল হাম্‌দু ওয়াহুয়া আলা কুল্ল্লি শাইইন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা ! লা- মানি’আ লিমা ‘আতাইতা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফা’উ যালজাদ্দি মিনকাল্‌জাদ্দু। লা- হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহি, লা -ইলাহা ইল্লাল্লাহু,ওয়ালা না’বুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুননি’মাতু ওয়ালাহুল ফাজলু,ওয়ালাহুস্‌ সানাউল হাসানু, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদদীনা ওয়ালাউ কারিহাল কাফিরূন।
অর্থঃ”হে আল্লাহ! তুমি শান্তি দাতা, আর তোমার কাছেই শান্তি, তুমি বরকতময়, হে মর্যাদাবান এবং কল্যাণময়।”আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মা’বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সকল বাদশাহী ও সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সব কিছুর উপরেই ক্ষমতাশালী। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া দুঃখ কষ্ট দূরকরণ এবং সম্পদ প্রদানের ক্ষমতা আর কারো নেই।
হে আল্লাহ! তুমি যা দান করেছো, তার প্রতিরোধকারী কেউ নেই। আর তুমি যা নিষিদ্ধ করেছো তা প্রদানকারীও কেউ নেই। এবং কোন সম্মানী ব্যক্তি তার উচ্চ মর্যাদা দ্বারা তোমার দরবারে উপকৃত হতে পারবে না।”
আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মা’বূদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি, নিয়ামত সমূহ তাঁরই,অনুগ্রহও তাঁর এবং উত্তম প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) মা’বূদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠ ভাবে পালন করি। যদিও কাফিরদের নিকট উহা অপছন্দনীয়।
“সুব্‌হানাল্লাহ”৩৩ বার (আল্লাহ পূত ও পবিত্র) “আল্‌হামদুলিল্লাহ” ৩৩ বার (সকল প্রশংসা আল্লাহর)” আল্লাহু আকবার” ৩৩ বার পড়বে (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) আর একশত পূর্ণ করতে নিম্নের দু’আটি পড়বে
উচ্চারণঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু,লাহুল মুল্‌কু ওয়ালাহুল হাম্‌দু,ওয়াহুয়া আলা কুল্ল্লি শাইইন ক্বাদীর।
[অর্থঃ “আ্ল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মা’বূদ নেই, তিনি একক,তাঁর কোন শরীক নেই। সকল বাদশাহী ও সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনিই সব কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী।”]
অতঃপর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে :
[[উচ্চারণঃ “আল্লাহু লা- ইলাহা ইল্লা হুঅ, আল হাইয়্যুল কাইয়্যুম, লা-তা’খুযুহু ছিনাতুউ অলা নাউম, লাহু মা ফিচ্ছামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদি; মান্‌যাল্লাযী ইয়াশফা’উ ইন্‌দাহু ইল্লা বিইযনিহি, ইয়া’লামু মা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহী,ইল্লা বিমা শা -য়া,ওয়াছিআ কুরছিইয়্যুহুচ্ছামাওয়াতি, ওয়াল আরদা, ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিইয়ুল আযীম।”]]
[অর্থঃ”আল্লাহ তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) মাবূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক,তাঁকে তন্দ্রা এবং নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর। কে আছে এমন
যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে ? তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত আছেন। যতটুকু তিনি ইচ্ছে করেন, ততটুকু ছাড়া তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসী সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে রক্ষণা-বেক্ষণ করা তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি মহান শ্রেষ্ঠ।” সূরা আল বাকারাহ -২৫৫ আয়াত]
প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাছ পড়বে। মাগরিব ও ফজর নামাযের পরে এই সূরা তিনটি [ইখলাস, ফালাক এবং নাছ] তিনবার করে পুনরাবৃত্তি করা মুস্তাহাব। কারণ নবী করাীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ সম্পর্কে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
একই ভাবে পূর্ববর্তী দুআগুলির সাথে ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর নিম্নের দুআটি বৃদ্ধি করে দশ বার করে পাঠ করা মুস্তাহাব। কারণ নবী করাীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ সম্পর্কে [হাদীসে] প্রমাণিত আছে।
উচ্চারণঃ”লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু,ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হাম্‌দু,ইওহয়্যি ওয়া ইওমীতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর।”
অর্থঃ ” আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন মা’বূদ নেই, তিনি একক,তাঁর কোন শরীক নেই। সকল বাদশাহী ও সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু দান করেন। তিনিই সব কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী।”
অত:পর ইমাম হলে তিনবার “আছ্‌তাগফিরুল্লাহ”এবং ” আল্লাহুম্মা আন্‌তাছ ছালামু, ওয়ামিনকাছ ছালামু,তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইক্‌রাম।” বলে মুকতাদীদের দিকে ফিরিয়ে মুখা- মুখী হয়ে বসবে। অতঃপর পূর্বোল্লিখিত দুআগুলি পড়বে। এ বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে, এর মধ্য থেকে সহীহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) কতৃক নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে। এই সমস্ত আযকার বা দু’আ পাঠ করা সুন্নাত,ফরজ নয়।
প্রত্যেক মুসলমান নারী এবং পুরুষের জন্যে জোহর নামযের পূর্বে ৪ রাক্‌আত এবং পরে ২ রাক্‌আত, মাগরিবের নামাযের পর ২ রাক্‌আত, এশার নামাযের পর ২ রাক্‌আত এবং ফজরের নামযের পূর্বে ২ রাক্‌আত। এই মোট ১২ রাক্‌আত নামায পড়া মুস্তাহাব। এই ১২ [বার] রাক্‌আত নামাযকে সুনানে রাওয়াতিব বলা হয়। কারণ নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত রাকআতগুলি মুকীম অবস্থায় নিয়মিত যত্ন সহকারে আদায় করতেন। আর সফরের অবস্থায় ফজরের সুন্নাত ও [এশার] বিতর ব্যতীত অন্যান্য রাকআতগুলি ছেড়ে দিতেন। নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর এবং মুকীম অবস্থায় উক্ত ফজরের সুন্নাত ও বিতর নিয়মিত আদায় করতেন। তাই আমাদের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমলই হলো উত্তম আদর্শ। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,
]لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ[ (২১) الأحزاب
অর্থঃ” নিশ্চয়ই রাসূুলুল্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।”সূরা আহযাব- ২১
রাসূুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :
( صَلٌّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِيْ أُصَلِّيْ ) رواه البخاري
অর্থঃ”তোমরা সেভাবে নামায আদায় কর, যে ভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখ।” বুখারী
এই সমস্ত সুনানে রাওয়াতিব এবং বিতরের নামায নিজ ঘরেই পড়া উত্তম। যদি কেউ তা মসজিদে পড়ে তাতে কোন দোষ নেই। এ সম্পর্কে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :
( أَفْضَلُ صَلاَةِ الْمَرْءِ فِيْ بَيْتِهِ إِلاَّ الْمَكْتوبَةْ ) متفق على صحته
অর্থঃ”ফরজ নামায ব্যতীত মানুষের অন্যান্য নামায [নিজ] ঘরেই পড়া উত্তম।”হাদীসটি সহীহ
এই সমস্ত রাকআতগুলি [১২ রাকআত নামায] নিয়মিত যত্ন সহকারে আদায় করা হলো জান্নাতে প্রবেশের একটি মাধ্যম।
সহীহ মুসলিমে উম্মে হাবীবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনে বলেন যে, আমি রাসূুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি :
( مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّيْ لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشَرَةَ رَكْعَةً تَطَوُعًا إِلاَّ بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتاً فِي الْجَنَّةِ )
অর্থঃ”যে কোন মুসলিম ব্যক্তিই আল্লাহর জন্য [খালেস নিয়্যতে] দিবা-রাত্রে ১২ [বার] রাক্‌আত নফল নামায পড়বে, আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য একটি জান্নাতে ঘর বানাবেন।” আমরা যা পূর্বে উল্ল্লেখ করেছি ইমাম তিরমিযী তার বর্ণনায় অনুরূপ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
যদি কেউ আসরের নামাযের পূর্বে ৪ [চার] রাকআত এবং মাগরিবের নামাযের পূর্বে ২ [দুই] রাকআত এবং এশার নামাযের পূর্বে ২ [দুই] রাকআত পড়ে, তা হলে তা উত্তম হবে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
( رَحِمَ اللَّهُ امْرَأً صَلَّى أَرْبَعًا قَبْلَ الْعَصْرِ )
অর্থ”আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করুন,যে আসরের (ফরয) নামাযের পূর্বে চার রাকআত (নফল) নামায পড়ে থাকে।” হাদীসটি ইমাম আহমাদ, আবুদাউদ, তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন এবং ইবনে খুযায়মাহ সহীহ বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
( بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ ؛ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ ؛ ثُمَّ قَالَ فِي الثَّالِثَةِ لِمَنْ شَاءَ )
অর্থ”প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে (নফল) নামায, প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে (নফল) নানায।” তৃতীয় বার বলেন “যে ব্যক্তি পড়ার ইচ্ছে করে।” বুখারী
যদি কেউ জোহরের পূর্বে ৪ [চার] রাকআত এবং পরে ৪ [চার] রাকআত পড়ে তবে তা ভাল। এর প্রমাণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
( مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعٍ قَبْلَ الظُّهْرِ وَأَرْبْعٍ بَعْدَهَا حَرَّمَهُ اللَّهُ تَعَالىَ عَلَى النّاَرِ )
অর্থঃ”যে ব্যক্তি জোহরের পূর্বে ৪ [চার] রাক্‌আত ও পরে ৪ [চার] রাক্‌আত (সুন্নাত নামায) এর প্রতি যত্নবান থাকে, আল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন।”ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আহলে সুনান সহীহ সূত্রে উম্মে হাবীবাহ থেকে উল্ল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ সুনানে রাতেবার নামাযে জোহরের পরে ২ রাকআত বৃদ্ধি করে পড়বে। কারণ জোহরের পূর্বে ৪ রাকআত এবং পরে ২ রাকআত পড়া সুনানে রাতেবাহ। অতএব জোহরের পরে ২ রাকআত বৃদ্ধি করলে উম্মে হাবীবাহর হাদীসের প্রতি আমল হবে। আল্লাহই তাওফীকদাতা। দরূদ ও ছালাম বর্ষিত হোক, আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সাহাবাগণের প্রতি এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাঁর ইত্তেবা’ করবেন তাদের প্রতিও।
 সমাপ্ত

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ