সমাজে এর ক্ষতিকর দিকসমূহ
১।
আজকাল মৃত ব্যক্তির নিকট বসে কুরআন তিলাওয়াত করা একটা রসম-রিওয়াজে পরিণত
হয়েছে। এমনকি কোন বাড়ী থেকে কয়েকজনের তিলাওয়াত শুনলে মনে হয়, কেউ ওখানে
মারা গেছে। যদি রেডিওতে সারাদিন কুরআন তিলাওয়াত শুনাযায় তবে বুঝতে হবে কোন
নেতা মারা গেছেন। একবার কোন এক ব্যক্তি কোন এক অসুস্থ বাচ্চাকে দেখতে গিয়ে
কুরআন তিলাওয়াত করেন। শুনামাত্র তার মা চেঁচিয়ে উঠেন, আমার বাচ্চাতো এখনো
মারা যায় নি, কিভাবে তুমি কুরআন পড়ছ?
২। যে মৃত ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় সলাত ত্যাগ করেছে, তার জন্য মৃত্যুর পর কুরআন পড়লে কি লাভ হবে?
কারণ তাকে তো আযাবের খবর দেয়া হয়েছে :
{فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ * الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ سَاهُونَ}
‘‘ঐ সমস্ত সলাতীদের জন্য ধ্বংস যারা সলাতের ব্যাপারে অলসতা করে।’’ (সূরা মাউন ৪-৫)
৩। যে হাদীসে বলা হয়েছে- ‘‘তোমরা মৃতদের
উপর সূরা ইয়াসিন পড়’’ তা বানানো হাদীস। দারকুতনী বলেন, সনদ দুর্বল এবং মূল
কথাও দুর্বল। নাবী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীদের থেকে এমন কোন দলীল নেই যে,
তারা মৃতের উপরে কুরআন পড়েছেন। না সূরা ইয়াসিন না ফাতিহা। অথবা কুরআনের
অন্য কোন অংশ। বরং দেখা যায়, নাবী (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের বলতেন :
استغفر لاخيكم وسلوا له الله الثبت فإنه الآن يسال
‘‘দাফনের পর তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য
মাফ চাও এবং আল্লাহর কাছে তার জন্য ঈমানের দৃঢ়তা চাও। কারণ, তাকে এখন
প্রশ্ন করা হবে। (সহীহ আবূ দাঊদ)
৪। নাবী (সাঃ) কোন সাহাবীকে শিখান নি যে, কবরে ঢুকার সময় বা পরে সূরা ফাতিহা (বা অন্য কোন অংশ) পড়বে। বরং বলেছেন :
السلام عليكم أهل الديار من المؤمنين والمسلمين وأنتم من سلفتم وانا ان شاء الله بكم لاحقون اسال الله لنا ولكم العافية من العذاب
‘‘হে ঘরের মু’মিন বাসিন্দাগণ! তোমাদের উপর
শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও আল্লাহ চাহে তো তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আল্লাহ
তা‘আলার কাছে তোমাদের এবং আমাদের জন্য তাঁর আযাব হতে মাফ চাই।’’ (সহীহ
মুসলিম, মিশকাত, হা:-১৭৬৪)
এ হাদীস আমাদের এই শিক্ষা দিচ্ছে যে, মৃতদের জন্য আমরা দু‘আ করব, তাদের কাছে দু‘আ বা সাহায্য চাইব না।
৫। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে এজন্য নাযিল করেছেন, যাতে জীবিতরা ‘আমাল করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
{لِيُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيّاً وَيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِينَ}
‘‘এ জন্য যে, যারা জীবিত তাদেরকে যেন ভয় দেখান হয়, আর কাফিরদের ব্যাপারে যা বলা হয়েছে তা ঘটবেই। (সূরা ইয়াসীন- ৭০)
৬। কবরস্থানে কুরআন তিলাওয়াত করা নিষেধ। কারণ নাবী বলেন :
لاتجعلوا بيوتكم مقابر فإن الشيطان ينفر من البيت الذى تقرأ فيه سورة البقرة (رواه المسلم)
‘‘তোমরা বাসস্থানসমূহকে কবরস্থান বানাবে না। কারণ শাইতন ঐ সমস্ত বাড়ী হতে পলায়ন করে যেখানে সূরা বাকারাহ পড়া হয়। (সহীহ মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে,
কবরস্থান কুরআন পাঠের স্থান নয়; বরং বাড়ী তার পাঠস্থান। যে সমস্ত হাদীসে
কবরস্থানে কুরআন পাঠের কথা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ নয়।
(দেখুন এই বান্দার লেখা মাযহাবের স্বরূপ ও
منهاج الفرقة الناجية মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পথ নির্দেশিকা- লেখক মুহাম্মাদ
জামীল যাইনু, দারুল হাদীসের শিক্ষক, মাক্কাতুল মুকাররমা, পৃষ্ঠা ৮৫-৮৭/৯৪)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ লক্ষ্য করেছেন
কি? তাবলীগী নিসাবের মাধ্যমে উদ্ধৃতিহীন এ জাতীয় বক্তব্য যা রসূলের বাণীও
নয় তার দ্বারা মুসলিম আক্বীদাহ প্রতিষ্ঠিত করার প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছে।
এটাকি কোন শাইখুল হাদীসের নীতি হওয়া উচিৎ? আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সরল পথের
সন্ধান দিন- আমীন!
No comments:
Post a Comment