বিশ্ব বরেণ্য আলিমগণের দৃষ্টিতে তাবলীগ জামা‘আত ও তার নিসাব
সম্মানিত
মুসলিম ভ্রাতাগণ! এ অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করব বিশ্বের সকল মুসলিমদের নিকট
সমাদৃত আলিম উলামাদের মতামত, বিশেষ করে আরব বিশ্বের আলিমগণের অভিমত। কারণ
আমি এ গ্রন্থের শুরুতে বলেছি যে, আরব বিশ্বের উলামায়ে কেরাম তাবলীগী
জামা‘আত ও তার নিসাবকে বাতিল বলে প্রত্যাখান করেছেন। তারই প্রমাণ স্বরূপ
এখানে বর্তমান শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কিছু আলিমের মতামত সংক্ষেপে তুলে ধরছি।
যাঁদের মতামত তুলে ধরছি তাঁরা হলেন :
১. মুহাম্মাদ বিন ইবরহীম আলে শায়খ- সাবেক গ্রান্ড মুফতী, সৌদি আরব।
২. আবুদল ‘আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায (রহ.) সাবেক গ্রান্ড মুফতী, সৌদি আরব।
৩. মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন- সদস্য সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ, সৌদি আরব।
৪. বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ- মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী।
৫. আবদুর রাযযাক আফিকী- সদস্য, সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ, সৌদি আরব।
৬. ড. সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান- সদস্য, সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ, সৌদি আরব।
৭. ড. সালেহ বিন আবদুল্লাহ আল-উবুদ- চ্যান্সেলর, মদ্বীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব।
৮. হমুদ বিন আবদুল্লাহ আত-তুওয়াইজেরী- বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক ও আলিমে দ্বীন, রিয়াদ, সৌদি আরব।
৯ ড. সালেহ বিন সা‘দ আস-সুহায়মী- ডিন, আক্বীদাহ অনুষদ, মদ্বীনা ইসলামী বিশ্বাবিদ্যালয়, সৌদি আরব।
১০. সা‘দ বিন আবদুর রহমান আল-হুসাইন- সৌদি ধর্মীয় উপদেষ্টা, জর্দান।
১১. আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন্ নাজমী- বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলিমে দ্বীন।
১২. আবুদল কাদের আরনাউত- খাদেমুস সুন্নাহ, দামেশ্ক, সিয়িয়া।
এবার লক্ষ্য করুন তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে এ সকল বিশ্ব স্বীকৃত আলিমদের মতামত :
আর শারী‘আতের বিভিন্ন বিষয়ে এ সমস্ত আলিমদের অভিমত গ্রহণ করার জন্যে মহান আল্লাহ বলেন :
{فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ}
‘‘তোমরা জ্ঞানবানদের জিজ্ঞেস কর, যদি তোমরা তা না জান।’’ (সূরা আম্বিয়া ৭)
১. শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আল শাইখ
(রহ.)- সাবেক গ্রান্ড মুফতী, সৌদী আরব তাঁর রাজকীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের
প্রধানকে লেখা পত্রে তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে বলেন,
আমি মহোদয়ের নিকট এ প্রতিবেদন পেশ করছি যে,
এই জামা‘আতের কোনই ফায়দা নেই, এটি একটি বিদ‘আতী এবং গোমরা সংগঠন। তাদের
নিসাব গ্রন্থ পড়ে দেখলাম, তাতে গোমরাহী এবং বিদ‘আতে ভরপুর। এতে কবর পূঁজা
এবং শিরকের দিকে আহবান করা হয়েছে। বিষয়টি এমনই যে, এ ব্যাপারে চুপ থাকা যায়
না। এজন্য অবশই আল্লাহ চাহেন তো আমি এর প্রতিবাদ লিপি পাঠাব যেন এর
বিভ্রান্তি ও বাতিল প্রকাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহ নিকট দু‘আ করি তিনি যেন, তাঁর
দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং কালিমাকে সুউচ্চে রাখেন-আমীন! তারিখ : ২৯/০১/১৩৮২
হিজরী (তথ্য সূত্র : ফতওয়া ও চিঠিপত্র, শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে
শাইখ, খন্ড ১, পৃঃ ২৬৭-১৬৮)
২. শাইখ আবদুল ‘আযীয বিন বায (রহ.)’র নিকট
তাবলীগ জামা‘আতের সঙ্গে চিল্লায় বের হওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জবাবে
তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর
জন্য। অতঃপর তাবলীগ জামা‘আতের নিকট আক্বীদাহর ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ধারণা নেই।
সুতরাং তাদের সাথে বের হওয়া উচিৎ নয়। একমাত্র যার আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামা‘আতের আক্বীদা সম্পর্কে জ্ঞান ও স্বচ্ছ ধারণা রয়েছে সে বের হতে পারে,
এজন্য যে তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দিতে এবং প্রয়োজনীয় নাসীহাত করতে পারে এবং
তাদেরকে কল্যাণমূলক কাজে সহায়তা করতে পারে। কেননা, তারা তাদের কাজের
ব্যাপারে খুবই তৎপর। কিন্তু তারা আরো অধিক জ্ঞানের মুখাপেক্ষী এবং
আলিম-উলামায়ে কেরামের প্রতি মুখাপেক্ষী, যারা তাদেরকে তাওহীদ ও সুন্নাহর
জ্ঞানে আলোকিত করবে। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে দ্বীনের জ্ঞান দান করুন এবং এর
উপর সাবেত রাখুন। আমীন!
৩. শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীনকে
প্রশ্ন করা হয়েছিল তাবলীগ জামা‘আত ও এর সাথে সংশ্রব রাখার ব্যাপারে এবং
তাদের নির্দিষ্ট তরীকার যিকর ও ছয় উসূল সম্পর্কে। উত্তরে বলেন, ‘‘ইবাদাত হল
‘তাওকিফী’ অর্থাৎ শারী‘আত নির্ধারিত। এজন্য কোন মুসলিমই কোন ‘ইবাদাত করতে
পারবে না যা আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) নির্দিষ্ট করেননি। কেননা আল্লাহ
তা‘আলা অস্বীকার করেছেন তাদেরকে যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) ব্যতীত অন্য
কারো তৈরী করা ‘ইবাদাত করবে।
মহান আল্লাহ বলেন :
{أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ وَلَوْلا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ}
‘‘তাদের কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য
রয়েছে, তাদের জন্য যারা বিধান তৈরী করছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? যদি
চূড়ান্ত ফায়সালা না থাকত তবে তাদের মাঝে এখনই দফারফা কের দেয়া হত।’’(সূরা
আশ-শুরা ২১)
‘ইবাদাত হল ‘তাওকিফী’ তার ধরণ, পরিমাণ ,
গুণাবলী, সময় এবং স্থানের দিক দিয়ে। সুতরাং ‘ইবাদত অবশ্যই শারী‘আত মোতাবেক
হতে হবে। প্রশ্নকারী যা উল্লেখ করেছে, এভাবে ক্রমধারায় বিদ‘আতী তরীকায়
আল্লাহর যিকর ও তাদের ছয় উসূল দেখতে হবে যে, শারী‘আতে এভাবে সাব্যস্ত রয়েছে
কিনা? যদি রসূল (সাঃ) থেকে এভাবে সাব্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে মাথা পেতে নিতে
হবে। আর যদি সাব্যস্ত না হয়ে থাকে তাহলে যা রসূল (সাঃ) থেকে সাব্যস্ত রয়েছে
তাই যথেষ্ট। আমি জানি না যে, রসূল (সাঃ) থেকে এভাবে যিকর তিলাওয়াত ও উসূল
সাব্যস্ত রয়েছে কিনা। এজন্য আমার ভাইদের অনুরোধ করছি যারা এর সাথে জড়িত
তারা যেন তা পরিত্যোগ করেন এবং রসূল (সাঃ) থেকে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত সে
অনুযায়ী ‘আমাল করেন। সেটাই তাদের জন্য উত্তম এবং প্রতিফলও ভাল হবে।
ছয় উসূল সম্পর্কে শাইখকে প্রশ্ন করা হয় যে, এ
উসূল বা মূলনীতি কি দ্বীনের সবকিছুকে শামিল করে, নাকি দ্বীনের কিছু ঘাটতি
রয়েছে। ঘাটতি থাকলে সেটা কি? উত্তরে শাইখ উসাইমীন বলেন, এতে কোনই সন্দেহ
নেই যে, সর্বোত্তম বাক্য হল আল্লাহর কালাম বা কথা সর্বোত্তম হিদায়াত হলো
মুহাম্মাদ (সাঃ)’র হিদায়াত। পূর্ণ কালাম, উত্তম কালাম, স্পষ্ট কালাম,
ব্যাপ্ত কালাম হলো আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের কালাম। নাবী (সাঃ) দ্বীনের পূর্ণ
বর্ণনা করেছেন যা ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায়। এর দ্বারা
তিনি মুসলিমে হাদীসে জিবরীলের দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা আমরা কলেবর বৃদ্ধির
ভয়ে বর্ণনা করলাম না পাঠককে যথা স্থানে দেখে নেয়ার অনুরোধ করছি এ সম্পর্কে
বিস্তারিত জানার জন্য এবান্দার লেখা ‘‘ইমান ও তা বিনষ্টের কারণগুলি আপনি
জানেন কি?’’ নামক বইটি সংগ্রহকরে পড়ার অনুরোধ রইল। এরপর শাইখ বলেন,
প্রশ্নকারী যে ছয় উসূলের কথা উল্লেখ করেছেন তা ভাল, এতে কোন সন্দেহ নেই
কিন্তু তা অপূর্ণ। অপূর্ণতার কারণ হল, রসূল (সাঃ) যে দ্বীন নিয়ে এসেছিলেন
তা উল্লিখিত হাদীসে জিবরীলে বলা হয়েছে। সেখানে রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তিনি
(জিবরাঈল) তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন’’ (সহীহ
মুসলিম)।
অতএব আমার ভাইদের জন্য নসীহাত, যারা এই ছয়
উসূলকে নিজের চলার জন্য মূলভিত্তি হিসাব গ্রহণ করেছে, তারা যেন এ
চিন্তাধারা পরিবর্তন করে এ মহান হাদীসে যা এসেছে সেদিকে ফিরে আসে। যাকে
নাবী (সাঃ) দ্বীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতএব প্রথমেই ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ
বা আরকানকে ভালভাবে জানতে হবে। অতঃপর জানতে হবে ইমানের ছয় আরকানকে। তারপর
ইহসানকে, এভাবেই তারা পূর্ণ দ্বীনকে জানতে ও শিখতে পারবে।
শাইখকে তৃতীয় আর একটি প্রশ্ন করা হয়েছে,
তাবলীগীদের ‘‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ব্যাখ্যা সম্পর্কে। এর ব্যাখ্যায় তারা
বলে যে, তা হল অন্তর থেকে ভ্রান্ত বিশ্বাস বের করে আল্লাহর জাতের উপর সঠিক
বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহ ব্যতীত কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোন
রিযিকদাতা নেই এবং আল্লাহ ব্যতীত কার্যপরিচালনাকারী কেউ নেই। এই
ব্যাখ্যাটি কি সঠিক? উত্তরে তিনি বলেন, এ ব্যাখ্যা সঠিক নয়। কেননা, এ
ব্যাখ্যা দ্বারা কেবল তাওহীদের রুবুবিয়্যঅত বুঝায়, যা দ্বারা কোন মানুষ
ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। (অবশ্য এ বিশ্বাস একজন ব্যক্তির ঈমানদার হওয়ার
জন্য পূর্বশর্ত বটে কিন্তু যথেষ্ট নয়)।
যদি প্রবেশ করতে পারত এবং নিজেদের সম্পদ ও
রক্তকে হেফাজত করতে পারও তাহলে মুশরিকরা যাদের মাঝে নাবী (সাঃ) প্রেরিত
হয়েছিলেন তারা মুসলিম বলে গণ্য হত, তাদের রক্ত বৈধ হত না। কেননা তারা পূর্ণ
ঈমান রাখত এবং স্বীকার করত যে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা,
রিযিকদাতা, সর্বকাজের পরিচালনাকারী। এতদ্বসত্ত্বেও তারা ইসলামের মাঝে
প্রবেশ করেনি বরং নাবী (সাঃ) তাদের রক্ত ও সম্পদ বৈধ করে দিয়েছিলেন এবং
তাদের সন্তান ও স্ত্রীদেরকে ক্রীতদাস বানিয়ে ছিলেন। আর তারা যে রুবুবিয়্যাহ
বা প্রভুত্বের তাওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর কৃতকর্মে তাঁকে একক বলে বিশ্বাস করা
যেমন সৃষ্টি, রিযিক দান, জীবন দান, মৃত্যু দান, সমগ্র রাজ্য ও বিষয়াদি
পরিচালনা করা ইত্যাদি (যে সব বিষয়ে তাবলীগী ভাইয়েরা তাদের কালিমার
ব্যাখ্যায় দিয়ে থাকে) তা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) -এর যুগের কাফির মুশরিকরা
স্বীকার করত তার প্রমাণ মহান আল্লাহর বাণী,
{قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُدَبِّرُ الأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللهُ فَقُلْ أَفَلا تَتَّقُونَ}
‘‘বল, কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা
দান করে। শ্রবণ ও দর্শনের মালিক কে? কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করে এবং
জীবিত থেকে মৃতকে বের? আর কে বিষয়ের তদারকি করে? তখন তারা (মুশরিকরা)
অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। অতএব বল, তোমরা কি সংযমী হবে না? (সূরাহ
ইউনুস-৩১)
অতএব বুঝা গেল, কালিমায়ে তাওহীদের ব্যাখ্যা
ওটা নয়, যা তাবলীগীরা দিয়ে থাকে। বরং কালিমায়ে তাওহীদের সঠিক অর্থ হল
‘আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্যিকার মাবূদ নেই’। আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব ইলাহ বা
মাবূদ বাতিল। মহান আল্লাহ বলেন,
{ذَلِكَ بِأَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ}
‘‘এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহই সত্য এবং তারা যাদের ইবাদত করে সব মিথ্যা। তিনি সর্বোচ্চ, মহান’’। (সূরাহ লুকমান-৩০)
মুসলিমেরা এই মহান কালিমা থেকে এই অর্থই বুঝেছে। এজন্যই মুশরিকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে,
{إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ يَسْتَكْبِرُونَ - وَيَقُولُونَ أَإِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَجْنُونٍ}
‘‘তাদের যখন বলা হত, আল্লাহ ব্যতীত কোন
মাবূদ নেই, তখন তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করত এবং বলত, আমরা কি এক পাগল কবির
কথায় আমাদের উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব?’’ (সূরাহ সফ্ফাত- ৩৫-৩৬)
অত্র আয়াত দ্বারা এ কথা স্পষ্টভাবে জানা যায়
যে, মুশরিকরা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অর্থ এদের চেয়ে ভাল করে জেনেছিল।
অতঃপর শাইখ উসাইমিন (রহ:) কে তাবলীগী জামা‘আতের বয়ানের পর এবং গাস্তে বের
হওয়ার সময় সম্মিলিতভাবে দু‘আ করা সম্পর্কে এবং সপ্তাহে বৃহস্পতিবার তাদের
মারকাজসমূহে শবগুজারী সম্পর্কে। এই দলীল দেয় যে, হাদীসে বর্ণিত আছে, যে
ব্যক্তি আল্লাহর কোন ঘরে একরাতে এতেকাফ করবে আল্লাহ তা‘আলা তার মাঝে এবং
জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। এক খন্দক থেকে আর এক
খন্দকের দূরত্ব হল আসমান-যমীনের মাঝের দূরত্বের সমান। এর উত্তরে শাইখ বলেন,
সম্মিলিতভবে দু‘আ করা নাসীহাতের পর অথবা মাসজিদ থেকে দা‘ওয়াতে বের হবার
সময়, এর কোন ভিত্তি বা দলীল নেই, এটি এক প্রকার বিদ‘আত এবং প্রত্যেক
বৃহস্পতিবার রাতে সাপ্তাহিক শবগুজারী ও ই’তিকাফ করা নিঃসন্দেহে বিদ‘আত।
নাবী (সাঃ) হতে এ কথা সাব্যস্ত হয়নি যে, তিনি প্রতি বৃহস্পতিবারকে
ই’তিকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে দিতেন। বরং এ কথাই প্রমাণিত রয়েছে যে, তিনি
প্রথমে রমাযানের প্রথম দশদিন এতেকাফ করেন। এর পরের বছর দ্বিতীয় দশ দিন
এতেকাফে বসেন এরপর তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, লাইলাতু ক্বদর শেষ দশকে। এরপর
থেকে তিনি মৃত্যু অবধি রমযানের শেষ দশকে এতেকাফ করেন। শুধুমাত্র একবার
বিশেষ কারণে রমযানে এতেকাফ করতে পারেন নি বিধায় শওয়াল মাসে এতেকাফ করেন।
তিনি উমার (রাঃ) কে কাবা ঘরে তাঁর একদিনের এতেকাফের মানত পুরা করার অনুমতি
দিয়েছিলেন। প্রশ্নকারী যে হাদীসের উল্লেখ করেছে তার কোন ভিত্তি রয়েছে বলে
জানি না।
(তথ্যসূত্র : মুহাম্মাদ বিন সালেহ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফাতওয়া)
(তথ্যসূত্র : মুহাম্মাদ বিন সালেহ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফাতওয়া)
No comments:
Post a Comment