Monday, November 27, 2017

তাবলীগী নিসাব ও জিহাদ বিমুখতা

তাবলীগী নিসাব ও জিহাদ বিমুখতা


হজরত আতা (রহ.) বলেন, বায়তুল্লাহ্কে দেখাও ‘এবাদাত। যে বায়তুল্লাহ্কে দেখিল সে যেন সারা রাত্রি জাগ্রত রহিল, দিনভর রোজা রাখিল, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করিল। (ফাজায়েলে হাজ্জ ৯৫ পৃঃ বাংলা)
ত্বাউস বলেন, বাইতুল্লাহ দর্শন করা উত্তম হল ঐ ব্যক্তির ‘ইবাদাতের চেয়ে যিনি সিয়াম পালনকারী, রাত্রি জাগরণকারী এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী- (প্রাগুক্ত ৭৭ পৃঃ, গৃহীতঃ প্রচলিত জাল হাদীস)। এতদ্ব্যতীত তাদের মধ্যে এই মওযূ (মনগড়া) হাদীসটি খুবই প্রসিদ্ধ রয়েছে।  رجعنا من الجهاد الاصغر إلى الجهاد الاكبر‘আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এলাম। এর দ্বারা
তাদের হালকায়ে যিক্রের (এবং খানকার সন্যাসব্রতকে) মজলিসগুলিকে ‘বড় জিহাদ’ এবং সশস্ত্র জিহাদের ময়দানকে ‘ছোট জিহাদ’ হিসাবে গণ্য করতে চেয়েছেন। (আঃ রহমান উমরি, তাবলীগী জামা‘আত ৮৪ পৃঃ, গৃহীতঃ হাদীসের প্রামাণিকতা ৫১)
পাঠক লক্ষ্য করুন যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য জিহাদ ফরয করেছেন, তিনি বলেন :
{كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ}
‘‘তোমাদের জন্য ক্বিতাল (সশস্ত্র লড়াইকে) ফরয করে দিলাম। যদিও তোমাদের কাছে তা অপছনদনীয় হবে।’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ২১৬)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন :
عن معاذ بن جبل قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قاتل فى سبيل الله فوافق ناقة وجبت له الجنة-
যে ব্যক্তি উটনি দোহনের মত সামান্য সময়ও আল্লাহর পথে সশস্ত্র লড়াই করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (আবূ দাউদ- হাদীস সহীহ, আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন)
মুসলিম ভ্রাতাগণ! এ জাতীয় অনেক আয়াত ও হাদীস আছে যা উল্লেখ করলে বইয়ের কলেবর বেড়ে যাবে তাই উল্লেখ করলাম না। এখন আপনারা একটু ভেবে দেখুন শায়খের উক্তি এবং কুরআন ও হাদীসের সমাধান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী নয় কি? তাছাড়া আমার বাস্তব জীবনে বহুবার লক্ষ্য করেছি। তাবলীগের মুরুববীদেরকে যখনই জিহাদের কথা বলা হয়, তখন ঈমানের মেহনত করে (তাবলীগী চিল্লার মাধ্যমে) ঈমান মযবূত করার দোহাই দিয়ে বলে থাকেন, আমরা এখন আল্লাহর রসূলের মাক্কী জীবনে আছি, কারণ রসূল ১৩ বৎসর ঈমানের মেহনত করেছেন, আমাদেরও জিহাদের মত এত বড় ‘আমাল করার পূর্বে ঈমানের মেহনত করে ঈমান মযবূত করে নিতে হবে। কথাটার সত্যতা একটু বুঝার চেষ্টা করুন। জিহাদ থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করার যতগুলি অজুহাত আছে, আমার মনে হয় এটি তার মধ্যে অন্যতম। সশস্ত্র জিহাদ বা ক্বিতাল এমন একটি ফরয যা আল্লাহ আমাদের জন্য ফরয করে দিলেও অনেকের তা ভাল লাগবে না। যা আমরা এর পূর্বে সূরা বাক্বারার ২১৬ নং আয়াতে উল্লেখ করেছি। তাই আমরা দেখি মুসলিম দাবী করেও এক শ্রেণীর লোক জিহাদের কথা শুনলে আঁতকে উঠেন, বিরোধিতা করেন। কেউ কেউ হিকমাতের কথা বলে ক্বিতালের বিকল্প পথ আবিষ্কার করেন। যে পথে জীবনের ঝুকি নেই, কষ্ট নেই, রক্ত ঝরাতে হয় না, ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরীর কোন ক্ষতি হয় না, হিজরাত ও নুসরাতের নামে এক মাসজিদ থেকে অন্য মাসজিদে গেলে মুরগীর রান খাওয়া যায়, মেহমানদারীর মাধ্যমে খাসি যবাই করে নুসরাত পাওয়া যায়। অথচ নাবী (সাঃ) বলেন :
لاهجرة بعد الفتح ولكن جهاد ونية-
মাক্কা বিজয়ের পর হিজরাত নেই। তবে জিহাদ ও নেক নিয়্যাত ব্যতীত- (বুখারী, মুসলিম)। আর এ জামাত এক মাসজিদ থেকে অন্য মাসজিদে, এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায় হিজরাত করে এর কোনটা মাক্কা আর কোনটা মাদ্বীনা তা আমাদের বুঝে আসে না।
কেউ কেউ আবার যাতে জিহাদের পথে না যেতে হয়, তার জন্য হরেক রকমের বাহানা খুঁজে বেড়ায়। উল্লিখিত বক্তব্য হল জিহাদ থেকে বিরত থাকারই একটি বাহানা মাত্র। অন্যথা জিহাদের পূর্বে ১৩ বছর ঈমানের মেহনত করতে হবে, এ নির্দেশ কুরআন ও হাদীসের কোথায় আছে? কোন সহাবী কি জিহাদে অংশ নেয়ার আগে কথিত ১৩ বছর মেহনত করেছিলেন? মাক্কী জীবনের তুলনায় মাদানী জীবনীতে অধিক সংখ্যক সহাবী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা কত ১৩ বছর ঈমানের মেহনত করেছিলেন? আল্লাহর রসূল (সাঃ) কি তাদের ১৩ বছর ঈমানের মেহনত করে পরে জিহাদ করার কোন নির্দেশ দিয়েছিলেন? মাদানী জীবনের সহাবীদের ঈমানকি এত দ্রুত মযবূত হয়েগিয়েছিল, আর প্রথম সারির সহাবী আবূ বাক্র, ‘উমার, উসমান, ‘আলী (রাযি.)-এর মত সহাবীদের ঈমান মজবুত হতে সময় লাগল কিনা ১৩ বছর!!! আল্লাহর রসূল (সাঃ)-এর সবচেয়ে কম সময়ের সহাবী উসাইরিম (রাযি.) যিনি উহূদ যুদ্ধের সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। যিনি জীবনে এক ওয়াক্ত সলাত আদায়ের সুযোগ পাননি। একটি সিয়াম পালনের সুযোগ পাননি, সুযোগ পাননি হাজ্জ করার, যাকাত দেয়ার, কুরআন পড়ার, এমনকি সুযোগ পাননি ইসলামকে ভাল করে বুঝার। ঈমান আনার পরই রসূল (সাঃ) এমন ব্যক্তিকে জিহাদে পাঠিয়েছিলেন। তাকে তো আল্লাহর রসূল নির্দেশ দেননি যাও ১৩ বছর ঈমানের মেহনত করে নাও। সলাত, সিয়াম, হাজ্জ, যাকাত শেখো, ৬ নং এর মাধ্যমে ইসলাম বুঝে নাও, এ সবের ‘আমাল কর এবং এর মাধ্যমে ঈমান মযবূত হলেই কেবল জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। কেবল মাসজিদে গিয়ে গাস্ত করলেই ঈমান মযবূত হয় না, ঈমান মযবূত হয় ইসলামের জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, জান-মালের যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকা, যে কোন বিপদাপদ হাসি মুখে বরণ করে নেয়ার মাধ্যমে। জিহাদের ময়দানে যে কঠিন কষ্ট হয়, যেসব পরীক্ষা দিতে হয় তার সিকি ভাগও কষ্টের পরীক্ষা সলাত, সিয়াম, ছয় নম্বর চর্চায় ও গাস্তে হয় না। ক্ষুধার কষ্ট, শারীরিক কষ্ট, মানসিক টেনশন তো আছেই, প্রতি পদে পদে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। যে কোন সময় একটি বুলেট কেড়ে নিতে পারে প্রাণ, কিংবা শত্রুর হাতে বন্দি হয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে, সামনে শত্রু, মাথার উপর বিমান চক্কর দিচ্ছে। প্রচন্ড গোলা বর্ষণ করে যাচ্ছে শত্রু বাহিনী, যে কোন সময় প্রাণ চলে যেতে পারে তবুও পিছপা হওয়ার কোন উপায় নেই। এমন চরম বিপদ, তারপরও পিছু হটার কোন উপায় নেই। এমন চরম বিপদ তারপরও পিছু হটা যাবে না। পিছু হটলে চিরস্থায়ী জাহান্নামীর খাতায় নাম লেখা হয়ে যাবে। অতএব ধৈর্যের সাথে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এতে হয় মৃত্যু ঘটবে অথবা বিজয়ী হবে। মৃত্যু হলে সেটা হবে শহীদি মৃত্যু। আর বিজয়ী হলে সেটা হবে গাজী। এ উভয় ব্যক্তিই মহাপুরস্কারে ভূষিত হবে বলে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেন। এর নামই ঈমানের পরীক্ষা। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবনের পরোয়া না করে আল্লাহর শত্রুদের মোকাবিলায় নামা হাসিমুখে বরণ করতে পারে, যে কোন কষ্ট বিপদকে তুচ্ছ জ্ঞান করতে পারে তার মত মযবূত ঈমানদার আর কে আছে? তার ঈমান মযবূত বলেই তো নিহত হোক আর জীবিত থাক উভয় অবস্থায়ই আল্লাহ তাকে মহাপুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করেছেন। কোন ব্যক্তি যদি কথিত ১৩ বছর ঈমানের মেহনত করে ঈমান পাকাপোক্ত করে জিহাদ করতে আসে ও পরে মৃত্যুর ভয়ে ময়দান ত্যাগ করে তবে কি মূল্য আছে ১৩ বছরের মেহনতের? আর ১৩ বছরের সলাত, সিয়াম সহ যাবতীয় চিল্লা ও গাস্তের ‘আমাল কি তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারে? জিহাদে না গিয়ে এভাবে ১৩ বছর কেন সারা জীবন মেহনত করলেও ঈমানের পরীক্ষা হবে না। বুঝা যাবে না ঈমান মযবূত হল কিনা। ঈমান পরীক্ষা করতে হলে, ঈমান মযবূত করতে হলে জিহাদের ময়দানে যেতে হবে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও যদি অটল অবিচল থাকা যায় তবেই বোঝা যাবে ঈমান মযবূত হয়েছে। আর মন যদি প্রাণের ভয়ে জিহাদের ময়দান ছেড়ে পালাতে চায়, তাহলে বুঝা যাবে এত বছরের সলাত, সিয়াম এবং কালিমার বিরদ, গাস্ত, চিল্লায়ও ঈমানদার হওয়া যায় নি। ঈমান মযবূত হয়নি, তাকে মযবূত করার জন্য এ ময়দানই আঁকড়ে থাকতে হবে।
এভাবে জিহাদের মাধ্যমেই কেবল ঈমান মযবূত হতে পারে। জিহাদ থেকে পালিয়ে বেড়িয়ে বাহানা তালাশ করে শুধু নিজেকে প্রবঞ্চনা করা যেতে পারে, ঈমান মযবূত করা যায় না। পরিশেষে তাবলীগের মুরুববীদের নিকট সবিনয়ে জানতে চাই, আপনাদের মাক্কী জিন্দেগী আর কতকাল চলবে? আপনারা কি ভারতবর্ষের পরিবর্তে আরবের মরু প্রান্তরে মাক্কাহ নগরে বাস করেন? যে আপনাদের আবার মাক্কী জিন্দেগী আছে? আপনারা কি রসূল বা সহাবা যে আপনাদের মাক্কী জিন্দেগী থাকতে হবে। আপনারা এই প্রথম নতুন নাবীর (?) নতুন মাক্কা নগরে (?) মুশরিকদের (?) নিকট কালিমার দা‘ওয়াত দিতে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন ও নিপীড়ন ভোগ করে চলেছেন যে আপনাদের এই ভারতবর্ষে তাবলীগী জীবনকে বাস্তব অর্থে বা রূপক অর্থে বা ভাব অর্থে অথবা অন্য কোন অর্থে মাক্কী জিন্দেগী বলতে হবে? আল্লাহর রসূল (সাঃ) ১৩ বৎসর মাক্কী জীবনে কাফিরদের সাথে জবরদস্ত জিহাদ (?) করে মাত্র ১৪০ জন (?) সহাবা পেয়েছিলেন কিন্তু আপনারা তো প্রায় এক শতাব্দী ধরে তাবলীগ করে শুধু বাংলাদেশেই ষাট লক্ষ লোকেরও বেশি লোক সংগ্রহ করেছেন বলে খবর পাওয়া যায়। তারপরও কি আপনাদের মাক্কী জীবন শেষ হল না? আপনাদের বর্তমান তাবলীগী জিন্দেগী যদি সত্যি মাক্কী জিন্দেগী হয় তবে অবশ্যই আপনাদের হিজরাত করতে হবে এবং মাদানী জিন্দেগী থাকতে হবে। তাই যখন হিজরাত করবেন, তখন এত লোক কোথায় হিজরাত করবেন তার বন্দোবস্ত করেছেন কি?

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ