Monday, November 27, 2017

তাবলীগী নিসাব ও পরোক্ষ শিরকের প্রাদুর্ভাব

তাবলীগী নিসাব ও পরোক্ষ শিরকের প্রাদুর্ভাব


ফাজায়েলে দরূদ ৪৬নং কাহিনীতে শাইখ লিখেছেন-
‘‘হাফেজ আবু নাঈম হজরত ছুফিয়ান ছুরী (ছঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে আমি এক সময় কোথাও বাহিরে যাইতেছিলাম, তখন দেখিলাম যে একজন যুবক যখনই কোন কদম উঠাইতেছে অথবা রাখিতেছে তখনই পড়িতেছে- আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মোহাম্মাদিন অআলা আ-লে মোহাম্মাদিন।’’ আমি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম তুমি কি এই আমল কোন কিতাবী প্রমাণের দ্বারা করিতেছ, না নিজের ইচ্ছামত করিতেছ যুবক বলিল আপনি কে?
আমি বলিলাম সুফিয়ান ছুরী সে বলিল ইরাক ওয়ালা ছুফিয়ান। আমি বলিলাম হ্যাঁ। যুবক বলিল আপনার আল্লাহর মারফত হাছেল আছে কি? বলিলাম হ্যাঁ আছে। সে বলিল কিভাবে আছে, আমি বলিলাম রাত্র হইতে দিন বাহির করে, দিন হইতে রাত্র, মায়ের পেটে বাচ্চার ছুরত দান করে। সে বলিল আপনি কিছুই চিনেন নাই। আমি বলিলাম তা হইলে তুমি কিভাবে আল্লাহর মারফত হাফিল করিলে, যুবক বলিল কোন কাজের জন্য দৃঢ় আশা পোষণ করি কিন্তু তবুও তা ত্যাগ করিতে হয়। আর কোন কাজ করিবার ইচ্ছা করি কিন্তু তা করিতে পারি না ইহা দ্বারা আমি বুঝিয়া লইলাম যে নিশ্চয় একজন আছেন। যিনি আমার কাজ সম্পাদন করেন। আমি বলিলাম তোমার এই দরূদ পড়ার ভেদ কি? সে বলিল আমার মায়ের সহিত হজ্বে গিয়াছিলাম। পথিমধ্যে আমার মা মারা যান। তাহার মুখ কালো হইয়া যায় এবং পেট পুলিয়া যায়। মনে হইল তিনি বহুত বড় পাপ করিয়াছেন। তাই আমি আল্লাহর দরবারে হাত উঠাইলাম। তখন দেখিলাম যে হেজাজের দিক হইতে একটা মেঘ খন্ড আসিল আর সেখান হইতে একজন লোক জাহের হইল তিনি আমার মায়ের মুখে হাত ফিরাইলেন যদ্বারা তাহার মুখ রওশন হইয়অ গেল এবং পেটে হাত ফিরাইলেন যদ্বারা ফুলা একেবারেই চলিয়া গেল। আমি আরজ করিলাম আপনি কে যাঁহার উছিলায় আমার মায়ের মছিবত কাটিয়া গেল। তিনি বলিলেন আমি তোমার নবী মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে অছাল্লাম। আমি আজর করিলাম। হুজুর (ছঃ) আমাকে কিছু অছিয়ত করুন, হুজুর (ছঃ) বলিলেন যখন কদম উঠাইবে এবং রাখিবে তখনই পড়িবে ‘‘আল্লাহুম্মা ছাল্লে আলা মোহাম্মদিও আলা আলে মোহাম্মাদিন- (নোজহাত)। (তাবলীগী নিসাব- ফযায়েলে দরূদ- ১২৬-১২৭ পৃ:)
পাঠক! রসূল (সাঃ)-এর ইন্তিকালের পরে বারযখী জীবন ছেড়ে দুনিয়াতে এসে তার পক্ষে কারো বিপদের গায়েবী খবর জানার ধারণা উপরে উল্লিখিত আয়াতে রববানীর আলোকে শিরক নয় কি? তার ইন্তিকালের পর মেঘের মধ্যে তার উড়ে এসে কারো বিপদ উদ্ধার করার ধারণাও শিরক। সর্বপরি কথা হলো, দরূদের ফাযীলাত বর্ণনায় কুরআন ও সহীহ হাদীস কি যথেষ্ট নয়? তিনি বইয়ের কলেবর বাড়ানোর জন্য এই অযথা অপচেষ্টা কেন করেছেন আমাদের বুঝে আসে না।
৮৩ নং অনুরূপ আরো কয়েকটি শিরকী ঘটনা উল্লেখ করেছেন তার সর্বশেষ ঘটনা আপনাদের নিকট তুলে ধরছি :
‘‘রওজুল ফায়েক গ্রন্থে অন্য একটি ঘটনা বর্ণিত আছে, হজরত সুফিয়ান ছুরী (রঃ) বলেন যে, আমি তওয়াফ করিতেছিলাম। তখন এক ব্যক্তিকে দেখিতে পাইলাম যে, সে প্রতি কদমে কদমে কোন প্রকার দোয়া না পড়িয়া শুধু দরূদ শরীফ পড়িতেছে, আমি তাহাকে উহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে সে বলিল আপনি কে? আমি বলিলাম আমি ছুফিয়ান ছুরী। সে বলিল আপনি যদি এই জামানার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি না হইতেন আমার রহস্যের কথা বর্ণনা করিতাম না। তারপর লোকটি বলিতে লাগিল আমি এবং আমার পিতা হজ্জে রওয়ানা হইয়াছিলাম, পথি মধ্যে পিতার এন্তেকাল হইয়া গেল। তাহার চেহারা কালো হইয়া গেল আর আমি পেরেশান হইয়া তাহার চেহারা কাপড় দিয়া ঢাকিয়া রাখিলাম। ঐ সময়ে আমার নিদ্রা আসিয়া যায়।
আমি স্বপ্নে দেখিতে পাই যে একজন অপূর্ব সুন্দর লোক, তাহার মত এত সুন্দর পুরুষ আমি জীবনে কখনও দেখি নাই এবং তাহার মত পরিষ্কার পোশাক আমি ইতিপূবে আর দেখি নাই এবং তাঁহার চেয়ে অধিক খুশবু ওয়ালা আমি আর কখনও দেখি নাই। তিনি খুব দ্রুত কদমে আসিয়া আমার পিতার চেহারা হইতে কাপড় হটাইয়া উহাতে আপন হাত ফিরাইয়া দেন, যাহাতে পিতার চেহারা সাদা হইয়া যায়, তিনি ফিরিয়া যাইবার সময় আমি তাঁহার অাঁচল ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, খোদা আপনার উপর রহম করুক আপনি কে? আপনার উছিলায় এই পরদেশে আল্লাহ পাক আমার পিতার উপর রহম করিয়াছেন। তিনি বলিলেন তুমি আমাকে চিন না? আমি মোহাম্মাদ এবনে আব্দুল্লাহ যার উপর কোরান অবতীর্ণ হইয়াছে। তোমার পিতা বহুত বড় পাপী ছিল কিন্তু আমার উপর বেশী বেশী করিয়া দরূদ পাঠ করিত। বিপদের সময় আমি আজ তাহার সাহায্য করিলাম। এইভাবে যেই ব্যক্তিই আমার উপর দরূদ পাঠ করে আমি তাহার সাহায্য করিয়া থাকি।  (ফাজায়েলে দরূদ- ১২২)
সম্মানিত পাঠক! এতবড় একজন শাইখুল হাদীসের দরূদের ফাযীলাত লেখতে কি কোন সহীহ হাদীসের গ্রন্থ নজরে পড়ে নি। যে কারণে রওযুল ফায়েজ নামক একখানা অপরিচিত অপ্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে এধরণের উদ্ভট শিরক দিব‘আত মিশ্রিত কাহিনী বর্ণনা করা কি প্রয়োজন ছিল তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাছাড়া নাবী (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তাঁর উপর দরূদ পড়ার জন্য কাবীরা গুনাহগারে সাহায্য করেন, এভাবে গুনাহ মাফ করা এবং সাহায্য করা, বিপদ দূর করা এতসব আল্লাহর কাজ। নাবী (সাঃ)’র মৃত্যুর পর এ জাতীয় কাজ আল্লাহর নাবী করতে পারেন বলে ধারণা শিরক নয় কি? তাছাড়া আমরা আমাদের জ্ঞান মুতাবেক জানি যে, ছোট ছোট গুনাহ নেক আমাল দ্বারা মাফ হয়, কিন্তু বড় গুনাহ তাওবা ছাড়া ক্ষমা হয় না, সে কথা কুরআন ও সহীহ হাদীসে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন :
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلاً كَرِيماً
‘‘ যে সকল বড় গুহান সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, যদি তোমরা সে সব বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাবো।’’  (সূরা নিসা- ২৯)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যারা কাবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে তাদেরকে তাঁর ফযল ও করম দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ সগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমাল দ্বারা যেমন, সলাত, সিয়াম, জুমু‘আ, রমাযান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে। যেমন রসূল (সাঃ)- বলেন :
الصلوات الخمس والجمعة إلى الجمعة ورمضان إلى رمضان مكفرات لما بينهن إذا اجتنت الكبائر
অর্থ : পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমু‘আ হতে অন্য জম‘আ এবং এক রমাযান হতে অন্য রমাযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করিয়ে দেয়, যদি বড় গুনাহগুলো হতে বোঁচে থাকা যায়’’। (সহীহ মুসলিম, গৃহীত কিতাবুল কাবায়ের- পৃঃ ৬ ইমাম আয-যাহাবী (রহ.)
বুঝা গেল সলাত, সিয়াম দ্বারা ছোট গুনাহ মাফ হয় কিন্তু শাইখের উল্লেখিত ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে ‘‘রসূল (সাঃ) নিজেই বলেছেন, তোমার পিতা বড় পাপী ছিল’’ তাহলে সে কাবীরা গুনাহকারী ছিল। তা তাওবাহ ছাড়া কিভাবে ক্ষমা হল, আর রসূল (সাঃ) বা এত বড় গুনাহগারকে সাহায্য করবেন কেন আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া? সাহায্য তো নাবীগণ নিজেরাই আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতেন এবং আমাদেরকেও তাঁর নিকট সাহায্য চাইতে নির্দেশ করেছেন। তা ছাড়া আল্লাহর রসূল তাঁর উম্মাতের হাসায্যের জন্য (বারযাখী) জীবন থেকে এ দুনিয়াতে আসেন। এই ধারণাও শির্ক। উম্মাতের বিপদের কথা তিনি (সাঃ) জানতে পারেন এ ধারণাও শির্ক। তাছাড়া ঘটনা দ্বারা এটাও বুঝা যায়, যত বড় পাপী হোক না কেন দরূদ পাঠ করলে, মাফ হয়ে যায়। তাহলে তো মানুষ সবকিছু ছেড়ে শুধু দরূদ পড়াই কাম্য মনে করবে, বাকী সব ‘আমাল বাদ দিবে। এটাইকি শারী‘আতের কাম্য? এ বিশ্বাস শারী‘আত পরিপন্থী নয় কি?

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ