ইফতারের সময় পঠিতব্য দু‘আ
দারুল
উলূম দেওবন্দের পরেই সাহারানপুর মাদরাসার স্থান। সেই মাদরাসার সনামধন্য
শাইখুর হাদীস ‘ফাযায়িলে ‘আমাল’-এর লেখক জনাব যাকারিয়া সম্ভবত সজ্ঞানে
হাদীসের শব্দে বাড়াবাড়ি করেছেন। যেমন তিনি তাবলীগী নিসাবে লিখেছেন :
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَبِكَ اওمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَعَلىও رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
আয় আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রাখিয়াছি
এবং তোমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছি এবং তোমার উপর ভরসা করিয়াছি ও
তোমারই প্রদত্ত নেয়ামত দ্বারা ইফতার করিতেছি।
অতঃপর তিনি লিখেছেন,
‘‘হাদীছে আরও সংক্ষিপ্ত দোয়া বর্ণিত আছে।’’ (ফাজায়েলে রমজান- ৪৯১ পৃঃ)
শাইখ সাহেব নিজেই স্বীকার করেছে যে,
তার
লিখিত ইফতারের মশহূর দু‘আতে এমন কতগুলো বাড়তি শব্দ আছে, যা পৃথিবীর কোন
হাদীসে নেই। হাদীস ঘাটলে বোঝা যায় যে, একটি যঈফ বর্ণনায় ইফতারের দু‘আ এরূপ
আছে।
اللهم لك صمت وعلى رزقك افطرت
হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে রোযা রেখেছি
এবং তোমার দেয়া রিযক দ্বারাই ইফতার করিছ (সনদ যঈফ)। আবূ দাঊদ- সওম অধ্যায়,
‘ইফতারের সময় যা বলতে হয়’ ক্রমিক নং ২৩৫৮, বায়হাকী , সুনানে কুবরা ৪/২৩৯;
সুনানে ‘সগীর’ হাদীস ১৪২৮, তাহক্বীক; আব্দুল্লাহ ‘উমার আল- হাসানাইন,
বায়হাক্বী সুনানে কুবরা, হাদীস; ৮১৩৪- তাহক্বীক- মুহাম্মাদ আব্দুল কাদীর
আত্বা; দারা কুতনী। সুনান- ২/১৮৫ (২৪০); তাবারানী, সগীর ভিন্ন সনদে,
হাদ্বীন নং ৯১৩; হাইসামী (রহ.) মাজমাউয যাওয়ায়েদ গ্রন্থে (৩৬৯) বলেছেন,
তাবারানী ‘আওসাত’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তাতে দাউদ বিন যাবারকান
রয়েছে আর সে হলো যঈফ। এছাড়া আল্লামা আলবানী (রহ.) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন
(ইরওয়াউল গালীল ৪/৩৮, হাদীস ৯১৯)। ইমাম যাহাবী ‘আযযুআফা’ গ্রন্থে বলেছেন,
একজন ব্যতীত সকলেই দাউদ বিন যাবারকান কে যঈফ বলেছেন। ইমাম আবূ দাউদ বলেছেন,
(গৃহীত প্রগুক্ত- ৫৬ পৃ:) সে পরিত্যাক্ত।
পাঠক! তাবলীগী জামা‘আতের ২নং আমীর
মুহাম্মাদ ইঊসূফ সাহেব সাহারানপুর মাসরাসায় আবূ দাঊদ পড়েছেন (হায়াতুস
সাহ-বাহ, ঊর্দূ ২য় পৃষ্ঠা) ভাবতে আশ্চর্য লাগে, যে শাইখুল হাদীস সাহেব
বছরের পর বছর আবু দাঊদ পড়িয়েছেন, তিনি যঈফ হাদীসটি শুধু বর্ণনা করেন নি বরং
উক্ত সংক্ষিপ্ত দু‘আর সাথে ‘আবিকা আ-মানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াককালতু’
শব্দ বাড়িয়ে হাদীস বিকৃত করেছেন। এটা কি তাকলীদে শাখসীর কুফল নয়? আমাদের
হানাফী ভাইয়েরা সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে
মাস‘উদ (রাঃ)-কে একটু বেশী গুরুত্ব দান কারেন। এই ইবনে মাস‘উদ (রাঃ) যখন
কোন হাদীস বয়ান করতেন তখন (রসূল (সাঃ)-এর শব্দাবলী কম বেশী হয়ে যাবার ভয়ে)
তাঁর চোখ দু'টো লাল হয়ে যেত তাঁর শিরাগুলো ফুলে উঠতো ফলে তিনি বলতেন, নাবী
(সাঃ) এরূপ বলেছেন কিংবা একটু কম বলেছেন অথবা একটু বেশি বলেছেন, নতুবা এর
কাছাকাছি বলেছেন। (ইবনে মাজাহ ৪র্থ পৃষ্ঠা)
তাই বলছি, রসূলের হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে
একটি শব্দ রেফের হওয়ার ভয়ে ইবনে মাস‘উদের মত সাহাবী যদি ভয়ে কেঁটে উঠেন,
তাহলে আজকের শাইখুল হাদীসদের হাদীসের শব্দে বাড়াবাড়ি করার ব্যাপারে মুখে
তালা মারা এবং কলমের নিভ ভেঙ্গে ফেলা উচিৎ নয় কি? কিন্তু হায় তাক্বলীদে
সাখসী! অর্থাৎ অন্ধ ব্যক্তি পূজার জন্য মুকাল্লিদ্বীনরা কুরআন হাদীসের কতই
না বিকৃতি করল তার কোন পরিসংখ্যান করা যাবে কি?
ইফতারের সময় পঠিতব্য সঠিক দু‘আটি হচ্ছে :
ইবনে ‘উমার (রাঃ) বলেন, নাবী (সাঃ)যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন :
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْاَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
অর্থ : পিপাসা দূর হল, শিরা-উপশিরা সিক্ত
হল এবং নেকী নির্ধারিত হল ইনশাআল্লাহ। (আবূ দাঊদ, মিশকাত হা ১৯৯ ‘সিয়াম’
অধ্যায়, সনদ হাসান; ইরওয়া হা /৯২০, ৮/৩৯ পৃঃ হাকিম ‘মুসতাদরাক’ ১/৪২২ (তিনি
বলেন হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে বিশুদ্ধ)।
No comments:
Post a Comment