Monday, November 27, 2017

নাবীর জন্য সব কিছু সৃষ্টি

নাবীর জন্য সব কিছু সৃষ্টি


‘‘আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি আসমানসমূহ (কোন কিছু) সৃষ্টি করতাম না’’- (ফাজায়েলে জিকির ৩য় ফসল, ১৪৩ পৃঃ; গৃহীত- ওয়াসিলার শির্ক ১৫ পৃঃ)। এটি লোক মুখে হাদীসে কুদসী হিসাবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এটি একটি ভিত্তিহীন রিওয়ায়াত, মিথ্যুকদের বানানো কথা। রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসের সাথে এর সামান্যতম মিল নেই। ইমাম সাগানি, আল্লামা পাটনী, মোল্লা আলী কারী,
শায়খ আজলুনী, আল্লামা কাউকজী, ইমাম শওকানী, মুহাদ্দিস ‘আবদুল্লাহ ইবনু সিদ্দিক আল-গুমারী এবং শাহ ‘আবদুল ‘আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) প্রমুখ মুহাদ্দিসীনে কিরাম এটিকে জাল বলেছেন। [দেখুন- রিসালাতুল মাওযুআত ৯, তাযকিরাতুল মাওযু‘আত ৮৬, আল-মাসুন ১৫০, কাশফুল খাফা ২/১৬৪, আল-জুউলুউল মারসু ৬৬, আল-ফাওয়ায়েদুল মাজমু‘আ ২/৪১০, আল-বুশীরী মাদেহুর রাসূলিল আ‘যম (স.) ৭৫, ফাতাওয়া আযীযিয়া ২/১২৩, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১/৭৭; গৃহীতঃ প্রচলিত জাল হাদীস ১৮৬-১৮৭]। কেউ কেউ বলেন যে, এই রিওয়ায়াত যদিও জাল; কিন্তু এর মূল বিষয়বস্তু (অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খাতিরেই এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে পয়দা করার ইচ্ছা না করলে তিনি কোন কিছুই পয়দা করতেন না) সঠিক। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এই দুনিয়া ও সমগ্র জগৎকে কেন সৃষ্টি করলেন, তা ওয়াহী ছাড়া জানার কোন উপায় নেই। ওয়াহী শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের আয়াত কিংবা কোন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত না হবে যে, একমাত্র তাঁর খাতিরেই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আক্বীদা পোষণ করার কোন সুযোগ নেই। জানা কথা যে, এটি কুরআন মাজীদের কোন আয়াত কিংবা কোন সহীহ হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। এটিও উপরে বর্ণিত জাল রিওয়ায়াত অথবা এ ধরনের বাতিল বর্ণনার ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। যাকে তারা আক্বীদাহ তথা মৌলিক বিশ্বাস্য বিষয় বানিয়ে রেখেছে। (যাইলুল মাকাসিদিল হাসান, যাইলু তানযীহিশ শরী‘আতির মারফুয়া; গৃহীত : প্রচলিত জাল হাদীস ১৮৮ পৃঃ)
উল্লিখিত হাদীসদ্বয় সহীহ না হওয়ার ব্যাপারে আল্লামা ইবনু তাইমিয়া তাঁর মাযমুয়াকে ফাতাওয়া গ্রন্থে ১ম খন্ড ২৫৪ পৃষ্ঠায় বলেন : এ হাদীস যে, কখনও সত্য হতে পারে না। তা আল-কুরআনের নিম্নের আয়াত থেকে একেবারে দিনের আলোর মত স্পষ্ট প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন :
{فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ}
‘‘অতঃপর আদাম তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হল। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমাপরবশ হলেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ৩৭)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আদাম (‘আ.)-কে তাওবার দু‘আ শিখিয়েছি অপরদিকে উল্লেখিত বর্ণনায় প্রমাণিত হয়, এটা ছিল আদাম (‘আ.)-এর আপন (ইজতিহাদ) গবেষণা। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলেন, তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অসীলা কেন গ্রহণ করলে? সকল মুফাস্সিরগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কি ছিল সেই ক্ষমা চাওয়ার কথাগুলি? সূরা আ’রাফের ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ সেই তাওবাহ করার কথাগুলি তা আমাদেরকে ওয়াহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন। তা হচ্ছে :
{رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ}
‘‘হে আমাদের রব! আমরা আমাদের নিজেদের উপর যুল্ম করেছি, যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না কর, তাহলে আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব।’’ (সূরা আ’রাফ ২৩)
এটা আল-কুরআনের স্পষ্টবাণী, এর মধ্যে রসূল  -এর নামের উল্লেখ কোথায় রয়েছে? আল্লাহ কি বে -মালুম ভুলে গেলেন এত বড় একটা আক্বীদার বিষয়? আর এটা আবিষ্কার হল কিসের মাধ্যমে যে, আদাম (‘আ.) মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অসীলায় মাফ পেয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিদ‘আতীরা কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কোন দলীল পায় না বরং তারা জাল হাদীস থেকে যুক্তি খুঁজে বের করে। দ্বিতীয় বিষয়টি হল এর মাধ্যমে তারা নাবী (সাঃ)-কে সমগ্র জগৎ সৃষ্টির কারণ বলে উল্লেখ করে। অথচ কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ভাষায় জগৎ সৃষ্টির কারণ উল্লেখ করে বলেন :
{وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالأِ<نْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ}
‘‘আমি জ্বীন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করি নি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি তারা আমার বন্দেগী করবে।’’ (সূরা যারিয়াত ৫৬)
আরো দেখুন- আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামাত জ্বীন, ইনসান সহ সমস্ত মাখলুকের জন্য সৃষ্টি করেছেন। শুধু নাবী (সাঃ)-এর জন্য নয়- বাক্বারাহ ২২-২৯, আন‘আম ৯৭, ইব্রাহীম ৩২-৩৪, ত্বহা ৫৩-৫৪, ফুরক্বান ৪৭, নামাল ৬০, লুক্বমান ২০, ইয়াসীন ৭১-৭২, যুমার ৬, মু’মিন ৬৪, যুখরুফ ১০, জাসিয়া ১২-১৩, নূহ ১৯।
প্রশ্ন হল তিনি কি প্রথম সৃষ্টি? এর উত্তর হচ্ছে মানুষের মধ্যে প্রথম সৃষ্টি হলেন আদাম (‘আ.) আর জিনিসের মধ্যে প্রথম হল কলম। তার প্রমাণ হল আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
{إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَراً مِنْ طِينٍ}
‘‘যখন তোমার রব বললেন আমি মাটি হতে মানুষ সৃষ্টি করব।’’ (সূরা সোয়াদ ৭১)
আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেন :
إن أول خلق الله القلم
‘আল্লাহ তা‘আলা প্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম।’(আবূ দাউদ, তিরমিযী- হাসান সহীহ)
প্রমাণিত হল পৃথিবী সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আল্লাহর ‘ইবাদাত বা উপাসনা করা, নাবী (সাঃ)-এর ব্যক্তিত্ব নয়। স্বয়ং নাবী (সাঃ)-কেও তাঁর ‘ইবাদাত ও বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া নাবী (সাঃ)-এর উসিলার ব্যাপারটিও অসার প্রমাণিত হল। বিস্তারিত দেখুন- এই কিতাবের অসীলার অধ্যায়ে।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ