Monday, November 27, 2017

নাবী প্রেমের বিভিন্ন কাহিনী

নাবী প্রেমের বিভিন্ন কাহিনী


১। জনৈক বেদুঈন হুজুর (ছঃ)-এর কবর শরীফের নিটক দন্ডায়মান হইয়া আরজ করিল, হে রব! তুমি গোলাম আজাদ করিবার হুকুম করিয়াছ। ইনি তোমার মাহবূব আমি তোমার গোলাম। আপন মাহবূবের কবরের উপর আমি গোলামকে আগুন হইতে আজাদ করিয়া দাও। গায়েব হইতে আওয়াজ আসিল, তুমি একা নিজের জন্য কেন আজাদী চাহিলে? সমস্ত মানুষের জন্য কেন আজাদী চাহিলে না। আমি তোমাকে আগুন হইতে আজাদ করিয়া দিলাম। (ফাজায়েলে হজ্ব- ১৫২-১৫৩ পৃঃ)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ!
রসূলের ইন্তিকালের পর তাঁর মাযারে গিয়ে প্রার্থনা করা মাযারপূজারীদের সাদৃদ্য নয় কি? আর গায়িবী আওয়াজ শুনা এটাতো নবুওয়াতের কাজ। ঐ বেদুঈন কি নাবী ছিল যে, তার কাছে গায়িবী আওয়াজ এলো ‘আমি তোমাকে আগুন হইতে আজাদ করিয়া দিলাম।’ আমাদের ভাবতে অবাক লাগে শাইখুল হাদীসে মত একজন স্বনাধন্য আলিম এ জাতীয় ইসলাম বিরোধী আক্বীদাহ বিশ্বাস কিভাবে ছড়াতে চেয়েছেন তাবলীগী নিসাবের মাধ্যমে। এ জাতীয় কিস্সা এ অধ্যায়ে প্রায় সবগুলোই। পাঠক একটু কষ্ট করে ফাজায়েলে হজ্ব অধ্যায়ন করলেই আপনাদের সম্মুখে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তথাপিও বইয়ের কলেবর বৃদ্ধি না করে কয়েকটি ঘটনা আমরা আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরছি।
২। একই অধ্যায়ে ৪র্থ নং কাহিনীতে শায়খ লিখেছেন, হজরত হাছান বছরী (রঃ) বলেন, বিখ্যাত ছুফী হজরত হাতেম আছাম্ম- যিনি দীর্ঘ ত্রিরিশ বৎসর যাবত একটি কোববার মধ্যে চিল্লাকাশী করেন, বিনা প্রয়োজনে জীবনে একটি কথাও বলেন নি। তিনি হুজুর (ছঃ)- এর কবর শরীফে হাজির হইয়া শুধু এই কথাটুকু আরজ করেন, ইয়া আল্লাহ! আমরা তোমার হাবীবের কবরে হাজির হইয়াছি্ তুমি আমাদেরকে নিরাশ করিয়া ফিরাইয়া দিও না। গায়েব হইতে আওয়াজ আসিল, আমি তোমাদিগকে মাহবূবের কবর জেয়ারত এই জন্যই নছীব করিয়াছি যে, উহা কবুল করিব। যাও, আমি তোমার এবং তোমার সাথে যত লোক এখানে হাজির হইয়াছে সকলের গোনাহ মাফ করিয়া দিলাম।  ([জারকানী] ফাজাযেলে হজ্ব ১৫৩ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! এ জাতীয় সূফীদের চিল্লাকাশীর বিধান মুহাম্মাদী (সাঃ) শারী‘আতে কোথাও আছে কি? এটাতো হিন্দু যোগী সন্ন্যাসীদের শিরকী পদ্ধতি বলে মনে হয়, যা সূফীগণ ইসলাম ওয়ায়েজ করেছে। শাইখ সাহেব নিজেও সূফী ছিলেন এবং হিন্দুস্তানে জন্মগ্রহণ করে হিন্দু প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেননি বলে মনে হয়।
আর এ জাতীয় গায়িবী খবরতো মুহাম্মাদীরা নাবী ছাড়া আর কার ব্যাপারে স্বীকার করে না। আমরা জানি, এ জাতীয় গায়িবী খবর আহমাদী জামা‘আতের কাদিয়ানীরা গোলাম আহমাদ সম্পর্কে বিশ্বাস করে। যার কারণে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীসহ তার অনুসারীরা সকলেই কাফির মুরতাদ ওয়াজিবুল ক্বতল হয়েছে। আর তাবলীগী নিসাব পড়লে তো মনে হয়। গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর মত অগণিত সূফী গায়িবী খবর পেয়ে নবুওয়াতের মর্যাদা হাসিল করতে চেয়েছেন। খতমে নবুওয়াত মুভমেন্ট, এদের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখবেন কি?
৩। একই নিবন্ধের অন্যত্র ৫ নং কিস্সয়া শাইখ লিখেছেন, ‘শায়েখ ইব্রাহীম এবনে শায়বান (রঃ) বলেন, আমি হজ্বের পর মাদ্বীনা পাকে পৌঁছিয়া কবর শরীফে হাজির হইয়া হুজুরে পাক (ছঃ)-এর খেদমতে ছালাম আরজ করিলাম। উত্তরে হুজরা শরীফ হইতে অ-আলাই-কাচ্ছালামু শুনিতে পাই।’ (ফাজায়েলে হজ্ব ১৫৪ পৃঃ)
৪। একই বইয়ের ৬নং কিসসায় তিনি লিখেছেন : ‘আল্লামা কাস্তালানী (রঃ) বলেন, আমি একবার এমন কঠিন রোগে আক্রান্ত হই যে, ডাক্তারগণ পর্যন্ত নিরাশ হইয়া যায়। অবশেষে আমি মাক্কা শরীফ অবস্থানকালে হুজুর (ছঃ)-এর উছিলায় দোআ করিলাম। রাত্রি বেলায় আমি স্বপ্নে দেখি, এক ব্যক্তির হাতে একটি কাগজের টুকরা, তাহাতে লেখা রহিয়াছে, ইহা আহমাদ বিন্ কস্তালানীর জন্য ঔষধ। হুজুরে পাক (ছঃ)-এর তরফ হইতে তাঁহার নির্দেশে ইহা দান করা হইয়াছে। আমি ঘুম হইতে জাগ্রত হইয়া দেখি, আমার মধ্যে রোগের কোন চিহ্ন নাই। ৮৮৫ হিজরীতে অন্য এক ঘটনা ঘটে। তাহা এই যে, মক্কা শরীফ হইতে ফিরিবার পথে এক হবশী আমার খাদেমাকে ঘুষি মারিলে  সে পড়িয়া যায়। ইহাতে সে কিছুদিন যাবত খুব অসুস্থ থাকে। আমি হুজুর (ছঃ) এর উছিলায় তাহার জন্য দোআ করি। রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখি, এক ব্যক্তি এক জ্বিনকে সঙ্গে লইয়া আমার নিকট আসিয়া বলিল, ইহাকে হুজুরে পাক (ছঃ) আপনার নিকট পাঠাইয়াছেন। সে হাবশীর ছুরতে আসিয়া আপনার খাদেমাকে ঘুষি মারে। কাস্তালানী বলেন, আমি সেই জ্বিনকে খুব শাসাইয়া দেই এবং এই রকম কাজ যেন সে জীবনে কখনও না করে সেই জন্য তাহাকে কছম দিয়া দেই। তার পর চোখ খোলামাত্র আমি দেখিতে পাই, খাদেমার শরীরে কষ্টের আর কোন চিহ্ন নাই। (ফাজায়েলে হজ্ব পৃষ্ঠা-১৫৪)
পাঠক! লক্ষ্য করুন, এ জাতীয় আক্বীদা-বিশ্বাস যা শায়খ তুলে ধরেছেন, তা কি কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী নয়? আমরা দেখি কুরআন হাদীসের শিক্ষা হল মানুষ অসুস্ত হলে আরোগ্যের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবে। নাবীগণও অসুস্ত হলে আল্লাহর নিকট দু‘আ করতেন। কোন নাবী অসুস্থ হলে অন্য নাবীর ওয়াসীলায় অথবা তাঁর মাযারে গিয়ে প্রার্থনা করেছেন মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (‘আ.) অসুস্থ হলে কি করেছিলেন আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনে বর্ণনা করেন এভাবে {وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِين} অর্থাৎ ‘‘আমি যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন তিনি (আল্লাহ) আমাকে আরোগ্য দান করেন।’’  আশ-শু‘আরা ৮০)
আইয়ূব (‘আ.) অসুস্থ হয়ে আল্লাহর নিকট এভাবে প্রার্থনা করেন;

{وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ}

‘‘আর স্মরণ কর আইয়ূবের কথা যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর আপনি দয়াবানদের চেয়েও সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান।  (আল-আম্বিয়া ৮৩)
বিশবনাবী (সাঃ) যখন কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন তখন এই দু‘আ পাঠ করতেন :

اذهب الباس رب الناس واشف انت الشافي لا شفاء الاشفاؤك شفاء لا يغادر سقما (متفق عليه)

‘‘হে মানবমন্ডলীর প্রতিপালক! এই রোগ দূর করে দিন, আরোগ্য প্রদান করুন। একমাত্র আপনি আরোগ্য প্রদানকারী। আপনার শিফা ব্যতীত আর কোন শিফা নেই। আপনার শিফা এমন যে কোন রোগকে ছাড়ে না।’’ (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম মিশকাত হা: ১৫৩০, মুসলিমের দু‘আ পৃ: ১৩৪)
সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আপনারা লক্ষ্য করেছেন শায়খ তাবলীগী নিসাবের মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিমকে তাওহীদ বিরোধী এক ভয়ানক শিরকী আক্বীদার তা’লীম দিতে চেয়েছেন। কথিত আছে, আল-কুরআনের পরে সারা বিশ্বে সব থেকে বেশী পঠিত যে বইখানা তা নাকি এ নিসাব গ্রন্থ। আল্লাহর কিতাবের পরিপন্থী এ জাতীয় আক্বীদাহ-বিশ্বাস ছড়ানোর বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ কি সোচ্চার হবে না?
৫। একই প্রবন্ধের ৮ নং এ শাইখ লিখেছেন- ‘‘শায়েখ আবুল খায়ের (রঃ) বলেন, একবার মদ্বীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকিতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পাইয়া অবশেষে আমি হুজুরের এং শায়ইখানের কবরের মধ্যে ছালাম পড়িয়ে আরজ করিলাম, ইয়া রাছূলাল্লাহ! আমি আজ রাত্রে হুজুরের মেহমান হইব। এই কথা আরজ করিয়া মিম্বর শরীফের নিকট গিয়া আমি শুইয়া পড়িলাম। স্বপ্নে দেখি, হুজুরে পাক (ছঃ) তাশরীফ আনিয়াছেন; ডানে হজরত আবূ বকর, বাম দিকে হজরত ওমর এবং সামনে হজরত আলী (রাঃ)। হজরত আলী (রাঃ) আমাকে ডাকিয়া বলিলেন, এই দেখ, হুজুর (ছঃ) তাশরীফ আনিয়াছেন। আমি উঠিবা মাত্রই হুজুর (ছঃ) আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি উহার অর্ধেক খাইয়া ফেলি। তার পর যখন আমার চোখ খুলিল তখন আমার হতে বাকী অর্ধেক ছিল।’’  (ফাজায়েলে হজ্ব ১৫৫ পৃঃ)
সম্মানিত মুসলিম ভাইগণ! আল্লাহকে ছেড়ে মৃত্যুর পর নবী মাযারে গিয়ে খাদ্যের প্রার্থনা করা স্পষ্ট শির্ক নয় কি? মৃত্যুর পর নবী ক্ববরে থেকে খাওয়াতে পারেন এ আক্বীদাহ পোষণ করা শির্ক নয় কি? অথচ মহান আল্লাহ বলেন :

{وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الأرْضِ إِلاَّ عَلَى اللهِ رِزْقُهَا}

‘‘ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর’’।  (সূরা হূদ : ৬)
মহান আল্লাহ আরও বলেন,

{إِنَّ اللهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ}

‘‘আল্লাহ তো রিয্ক দান করেন এবং তিনি প্রবল প্ররাক্রান্ত।’’  (সূরা যারিয়াত : ৫৮)
সম্মানিত পাঠক! আল্লাহর নিকট রিয্ক প্রার্থনা না করে এ ধরনের প্রমাণহীন উদ্ভট কাহিনী বর্ণনা করা এবং ঈমানদারদেরকে মাযারভক্ত বানানোর এ জাতীয় যড়যন্ত্র অত্যনত সন্তর্পণে নিসাবের মাধ্যমে মুসলিম হৃদয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা স্পষ্ট শির্ক। এজন্যই তো আমরা দেখি তাবলীগী জামা‘আতের প্রধান মারকায নিজামউদ্দিন। সেখানে গিয়ে আমি নিজ চোখে দেখেছি অগণিত মুসলিম নামধারী মুশরিকরা প্রতিদিন নিজামউদ্দিন আওলিয়ার মাযারে পুষ্প অর্পণ করছে। তার নিকট বিপদের জন্য প্রার্থনা করছে। অথচ পাশেই তাবলীগী মারকাযে হাজার হাজার মুবাল্লিগ প্রতিদিন সারা বিশ্ব থেকে জড় হচ্ছে। কিন্তু এ স্পষ্ট শিরকের বিরুদ্ধে তারা نهي عن المنكر অর্থাৎ অসৎ কাজে বাধা দানের দায়িত্বটুকু পালন করছেনা। নিজ দেশে বড় মারকাযের পাশ থেকে শির্ক সরাতে পারেনি। আবার তারা অন্য দেশে তাবলীগ করে বেড়াচ্ছে এবং মসজিদ থেকে কুরআনের দার্স বন্ধ করে তবলীগী নিসাবের শিরক, বিদ‘আত, জাল, যঈফ, উদ্ভট কিসসা কাহিনীর প্রচারে মেতে উঠেছে এবং তাতে তারা সফলও হয়েছে। তারা ফখর করে বলে, আমাদের লোকসংখ্যা বেশী। কারণ এ জামা‘আত আল্লাহর নিকট মাকবূল হয়েছে। এটাই তার প্রমাণ। আমরা বলি, লোক বেশী হওয়া এবং দল ভারী হওয়াটা কুবূলিয়াতের প্রমাণ বহন করে না। কারণ, সর্বযুগে মুশরিকদের সংখ্যাই বেশী থাকবে।
মহান আল্লাহ বলেন,

{وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَهُمْ مُشْرِكُونَ}

‘‘বেশী সংখ্যক মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে কিন্তু তারা মুশরিক।’’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬)
পরিশেষে বলতে চাই, মু’মিনদেরকে মুশরিক বানানোর ষড়যন্ত্রে যারা মেতে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য মুসলিমদেরকে অভ্রান্ত ওয়াহীর দাওয়াতকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ জাতীয় আক্বীদা-বিশ্বাসকে দেখে দুঃখ করে কবি শফিক বলেন,
গ্রাস করেছে আজি গ্রাস করেছে
নবীর দ্বীনকে শিরক বিদ‘আতে গ্রাস করেছে।
মুসলমান আজ ফযীলতের ধোঁকায় পড়েছে
তাই তিন চিল্লায় জান্নাত কেনার কোশেশ করতেছে
এখন নাকি টুঙ্গির মাঠে হজ্জও হইতেছে।
গ্রাস করেছে আজি গ্রাস করেছে
নাবীর দ্বীনকে শিরক বিদ‘আতে গ্রাস করেছে।
এ ছাড়া ফাজায়েলে হজ্জে নাবীপ্রেমের বিভিন্ন কাহিনীতে নাবীকে নিয়ে এ জাতীয় বাড়াবাড়ির কথা লেখা আছে যা সম্পূর্ণ লিখতে গেলে কলেবর আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে, তাই আমরা শুধু অংশ বিশেষ তুলে ধরলাম। বিস্তারিত নিসাব গ্রন্থে দেখে নেয়ার জন্য পাঠকদের প্রতি অনুরোধ রইল। ফাজায়েলে হজ্জর উল্লিখিত প্রবন্ধের ১১নং লেখা আছে আবুল ওফা নামক জনৈক ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর ক্ববর থেকে বের হয়ে নাবী (সাঃ) তাঁর হাত ধরে মক্কার  মাসজিদে হারামে পৌঁছে দিলেন। (ফাজায়েলে হজ্ব ১৫৬-১৫৭)
১২ নং কাহিনীতে আছে ‘‘আবূ এমরান ওয়াছেতী কে পিপাসার কারণে প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হলে বেহেশতের রেদওয়ান ফেরেশতা তাকে পানি পান করালেরন এবং মাদ্বীনায় গিয়ে নাবী (সাঃ) এবং তার সাথীদ্বয়কে সালাম পৌঁছাতে আরয করলেন। (ফাজায়েলে হজ্জ পৃ: ১৫৭)
 আমাদের ভাবতে অবাক লাগে যে, রেদওয়ান ফেরেশতা জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে আবূ ইমরানের নিকট আসলেন পিপাসা নিবারণ করালেন কিন্তু নাবীর ক্ববর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেন না। এ জাতীয় গাজাখোরী লেখা শাইখুল হাদীসের মত আলিমের কলম দ্বারা কিভাবে লেখা হল?
১৪ নং লেখা হয়েছে- ‘‘ছাইয়্যেদ নূরুদ্দিন আইজী শরীফ আফীযুদ্দ্বীনের পিতা সম্পর্কে লিখিয়াছেন, তিনি রওজা মোবারকে পৌঁছিয়া যখন আচ্ছালামু আলাইকা আইউহান্নাবীউ অরহমাতুল্লাহে অবারাকাতুহু বলেন, তখন উপস্থিত সকলেই শুনিতে পান, কবর শরীফ হইতে আওয়াজ আসে, অ-আলাইকাচ্ছালামু ইয়া অলাদী।’’    (ফাজায়েলে হজ্ব ১৫৮ পৃঃ)
১৫নং ঐ একই রকমের ঘটনা লেখা হয়েছে।
১৬নং শাইখ লিখেছেন- ‘‘ইউছুফ বিন আলী বলেন, জনৈক হাশেমী মেয়েলোক মাদ্বীনায় বাস করিত। তাহার কয়েকজন খাদেম তাহাকে বড় কষ্ট দিত। সে হুজুরের দরবারে ফরিয়াদ লইয়া হাজির হইল। রওজা শরীফ হইতে আওয়াজ আসিল, তোমার মধ্যে কি আমার আদর্শের প্রতি আনুগত্যের আগ্রহ নাই। তুমি ছবর কর যেমন আমি ছবর করিয়াছিলাম। মেয়েলোকটি বলেন, এই সান্ত্বনাবাণী শুনিয়া আমার যাবতীয় দুঃখ মুছিয়া গেল। ঐদিকে বদ আখলাক খাদেমঘুলো মরিয়া গেল।’’ (ফাজায়েলে হজ্ব ১৫৯ পৃঃ)
২৬নং ঐ একই রকম কিসসা লেখা আছে- ছাবেত বিন আহমদ বলেন, তিনি একজন মোয়াজ্জেনকে মসজিদে নববীতে আজান দিতে দেখিয়াছিলেন। মোয়াজ্জেন যখন আচ্ছালাতু খায়রুম মিন্নাওম বলিল, তখন এক খাদেম আসিয়া তাঁহাকে একটি থাপ্পড় মারিল। মোয়াজ্জেন কাঁদিয়া উঠিয়া আরজ করিল, ইয়া রাছুলাল্লাহ! আপনার উপস্থিতিতে আমার এইরূপ হইতেছে? সঙ্গে সঙ্গে সেই খাদেরমের শরীর অবশ ইয়া গেল। লোকজন তাহাকে ইঠাইয়া ঘরে লইয়া গেল এবং তিন দিন পর সে মরিয়া গেল।’’  (ফাজায়েলে হজ্ব ১৬২ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! উল্লিখিত ঘটনাদ্বয় পড়ুন আর একটু ভেবে দেখুন, নাবী (সাঃ) ক্ববরে থেকে মানুষের মুসীবত দূর করেন এবং বেয়াদবীর অপরাধে মানুষ মেরেও ফেলেন। জীবদ্দশায় নাবী (সাঃ) কাফিরদের বিরুদ্ধে লড়াই করলেন, দাঁত শহীদ হল, মাথায় হেলমেট ঢুকে গেল তখনতো নাবী এভাবে কাফিরদের মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তাতো করলেন না কিন্তু মরার পরে এ জাতীয় ক্ষমতায় বিশ্বাস তো মাযার ভক্তরা করে থাকে। যা বিবেকের পরিপন্থী মৃত্যুর পর যে লোকটারে চারজনে ধরে ক্ববরে রাখতে হল, অতঃপর ক্ববরে রেখে মাটি চাপা দিলে তার সমস্ত শক্তি এসে যায়। যার সাধারণ জ্ঞান আছে সেও কি এ জাতীয় বিশ্বাস করতে পারে? এবার লক্ষ্য করুন, নাবী ক্ববরে থেকে কিভাবে মহিলার মুসীবত দূর করলেন এবং খাদিম মারলেন? অথচ মহান আল্লাহ বলেন :

{مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلاَّ بِإِذْنِ اللهِ}

‘‘আল্লাহ অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আপতিত হয় না।’’  (সূরা তাগাবুন ১১)
মহান আল্লাহ বলেন :

{تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ}

‘‘মহামহিমান্বিত আল্লাহ, সর্বময় কর্তৃত্ব যাঁর করায়ত্ত; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন।’’ (সূরা মুল্ক ১-২)
তিনি আরো বলেন :

{وَمَا يَسْتَوِي الأَحْيَاءُ وَلاَ الأَمْوَاتُ إِنَّ اللهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِ}

‘‘আর সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহই যাকে ইচ্ছা শ্রবণ করান, তুমি শুনাতে সমর্থ হবে না যারা ক্ববরে রয়েছে তাদেরকে।’’ (সূরা ফাতির ২২)

{وَهُوَ الَّذِي أَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ إِنَّ الأِنْسَانَ لَكَفُورٌ}

‘‘আর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন; অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন। মানুষ তো অতি মাত্রায় অকৃতজ্ঞ।  (সূরা হাজ্জ ৬৬)
তিনি আরো বলেন :

{ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُونَ}

‘‘এরপর তোমরা অবশ্যই মরবে।’’   (সূরা আল-মু‘মিনুন-১৫)
উল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মুর্দা এবং যিন্দা সমন নয়। মুর্দা না শোনে, না বলে আর না কোন ক্ষমতা রাখে। তাহলে মৃত্যুর পর নাবীর মধ্যে এ জাতীয় ক্ষমতার বিশ্বাস করাটা তাওহীদ বিরোধী নয় কি? কুরআন বলে মউতের মালিক আল্লাহ এবং মুসীবত থেকে ত্রাণকর্তাও আল্লাহ। আর জনাব শাইখ বলেন, এ জাতীয় ক্ষমতা নাবীরও আছে। এখন কার কথায় বিশ্বাস করবেন? শায়খের কথায় বিশ্বাস করলে আল্লাহর কথা মিথ্যা হয়। আর আল্লাহর কথায় বিশ্বাস করলে শাইখের কথা মিথ্যা হয়। এখন কোনটা সত্য মনে করবেন, এটা আপনাদের বিবেচ্য বিষয়। এবার কুরআন খুলুন আর দেখুন : নাবী, ওয়ালীদের লোকেরা ডাকে কিন্তু তারা তাদের কোন খবর রাখে না- সূরা  মায়িদাহ ১১৬-১১৭ম ইউনুস  ২৮-২৯, ফাতির- ১৩-১৪, আহকাফ ৫-৬।
উল্লেখ্য সাহায্য একমাত্র আল্লাহর নিকট চাইতে হবে এবং বিপদ থেকে উদ্ধারকারী নাবী নয়, এমাত্র আল্লাহ। সূরা ফাতিহা ৪, বাক্বারাহ ১৬০, আন‘আম ১৭-১৮, ৬৩-৬৪, আ‘রাফ ৩৭, ১২৮, ১৯৭।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ