সহীহ আক্বীদার মানদন্ডে তাবলীগী নিসাব
এই
হাকীকাত বা বাস্তবতাকে কিভাবে অস্বীকার করা যায় যে, ছোট একটি তাবলীগী
জামা‘আত দ্বীনের দা‘ওয়াত নিয়ে হিন্দুস্থানের বতী জনপদ (দিল্লীর)
নিজামউদ্দ্বীন থেকে সর্বপ্রথম কাজ শুরু করে এবং পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে গোটা
দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এখন প্রত্যেক গ্রামে-গঞ্জে, জনপদে গাস্তের প্রচলন এবং
রাতের বেলায় মাসজিদে কিয়াম (অবস্থান) বা শবগুযারী প্রসিদ্ধ। এছাড়া
বাংলাদেশের রাজধানীর তুরাগ নদীর তীরে টুঙ্গির ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ মানুষের যে
গণজমায়েত, পাকিস্তানের শহর লাহোর সংলগ্ন রায়েবন্ডের ইজতিমায় যে জনসমুদ্র
দেখা যায়, তা কোন দুনিয়াবী বা পার্থিব উদ্দেশ্যে জমা হয় না। বরং সকলের
অন্তরে একটাই পিপাসা বা ব্যাকুলতা আর বাসনা। তা হল আমাদের রব আমাদের প্রতি
খুশী হয়ে যাক এবং নাবী (সাঃ) -এর বারাকাতময় তরীকা আমাদের জিন্দেগীতে
প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এই পথভোলা বা বিপথগামী মানুষগুলো যাতে পুনরায় সঠিক পথের
সন্ধান পায় অর্থাৎ সিরাতে মুস্তাকিমের পথ পাক সেই জযবা বা আবেগ ঘর থেকে বের
হওয়ার জন্য তাদেরকে মাজবুর বা বাধ্য করে। স্বীয় মাল সম্পদ খরচ করা, নিজের
বিছানা নিজে উঠানো, অলি-গলিতে আল্লাহর যিক্র করা এবং মুখালিফ বা বৈরীর
সঙ্গে সদাচরণ ও সহানুভূতি, জযবায়ে ঈছার আত্মদান ও দ্বীনের জন্য ত্যাগ ছাড়াও
এই ধরনের অন্যান্য সৎগুণ তাবলীগ জামা‘আতের সাথীদের মধ্যে পাওয়া যায়। এই
জাতীয় গুণাবলী একজন মুসলিমের মধ্যে থাকা দরকার বা আবশ্যক। কিন্তু এই সকল
গুণাবলী সত্ত্বেও একটি অত্যাবশ্যকীয় এবং মৌলিক বিষয়ে ভুল থেকে যায়, আর তা
হল আক্বীদার সংশোধন বা বিশুদ্ধ আক্বীদাহ। আক্বীদাহ যদি সঠিক না হয়, তাহলে
সমস্ত নেক ‘আমাল নিস্ফল হয়ে যায়। আর নেক ‘আমালের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে
তাওহীদের বা একত্ববাদের উপর। কারণ তাওহীদ নেই তো কিছুই নেই। মহান আল্লাহ
বলেন :
{وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ}
‘‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের
প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে আপনিও যদি আল্লাহ সাথে শরীক স্থাপন করেন তবে আপনার
সকল কর্ম নিস্ফল হয়ে যাবে এবং আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্তদের একজন।’’ (সূরা
আল-যুমার ৬৫)
চিন্তা করুন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে
মনোনীত মা’সুম রসূল (সাঃ) -এর থেকে সুন্দর ‘আমাল আর কার হতে পারে? কিন্তু
তাঁর ‘আমালও শির্কের উপস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এর মাধ্যমে প্রমাণিত
হচ্ছে শির্ক মিশ্রিত ‘আমাল তা যতই ভাল হোক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তা কখনও
গ্রহণ করবেন না। অন্যত্র এই বাস্তবতাকে আল্লাহ তা‘আলা এভাবে ইরশাদ করেন :
{الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ}
‘‘যারা ঈমান এনেছে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে যুল্ম দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদের জন্য এবং এরাই সৎপথপ্রাপ্ত।’’ (সূরা আল-আনআম ৮২)
আলোচ্য আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে শাস্তির
কবল থেকে নিরাপদ ও নিশ্চিত এবং হিদায়াতে রাববানির হাক্বদার তারাই, যারা
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, অতঃপর বিশ্বাসের সাথে কোনরূপ যুল্ম এবং
শির্ককে মিশ্রিত করে না। [হাদীসে বর্ণিত যে, উক্ত আয়াত নাযিল হলে সহাবায়ে
কিরাম (রাযি.) চমকে উঠলেন এবং আরয করলেন : হে আল্লাহর রসূল (সাঃ)! আমাদের
মধ্যে এমন কে আছে যে, পাপের মাধ্যমে যুল্ম করে নি?]
উপরোক্ত আয়াতের শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ
হওয়ার জন্য বিশ্বাসের সাথে যুল্মকে মিশ্রিত না করার শর্ত বর্ণিত হয়েছে।
এমতাবস্থায় আমাদের মুক্তির উপায় কি? মহানাবী (সাঃ) উত্তরে বললেন, তোমরা
আয়াতের প্রকৃত অর্থ বুঝতে সক্ষম হওনি, আয়াতে যুল্ম দ্বারা শির্ক বুঝানো
হয়েছে। যেমন সূরা লুক্বমানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
{إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ}
‘‘নিশ্চয়ই শির্ক বড় যুল্ম।’’ (লুক্বমান ১৩)
সুতরাং আয়াতের অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি
বিশ্বাস স্থাপন করে, অতঃপর আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলীতে কাউকে অংশীদার না
করে, সে শাস্তির কবল থেকে নিরাপদ ও সুপথপ্রাপ্ত। হায়! তাবলীগী জামা‘আত যদি
আক্বীদাহ সংশোধনের জন্য কিছু কাজ করত! নেক ‘আমালের সঙ্গে সঙ্গে আক্বীদাও
কিছু সংশোধন করত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ সম্পর্কে কোন কাজ হচ্ছে না।
তাবলীগী নিসাবের অনেক স্থানে শির্কী কথার বর্ণনা রয়েছে, আমাদের ভয় হয় এগুলো
পাঠকের কেউ যেন সঠিক হিসাবে গ্রহণ না করে। যদি এমন করা হয় তাহলে রাবেব
কারীমের বর্ণনা শুনুন :
{عَامِلَةٌ نَاصِبَةٌ، تَصْلَى نَاراً حَامِيَةً}
‘‘কর্মক্লান্ত পরিশ্রান্তভাবে (বহু ‘আমালকারীরা) তারা প্রবেশ করবে জ্বলন্ত আগুনে।’’ (সূরা আল-গাশিয়া ৩-৪)
বহু মুজাহাদা, মেহনত এবং কষ্ট করে চিল্লা লাগিয়ে, ঘরবাড়ী ছেড়ে মুসিবাত বরদাস্ত করে মিলল কি? আগুন!!!
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
{قُلْ
هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالاً، الَّذِينَ ضَلَّ
سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ
يُحْسِنُونَ صُنْعاً}
‘‘(হে নাবী!) আপনি বলে দিন, আমি কি
তোমাদের ক্ষতিগ্রস্ত ‘আমালকারীদের সম্পর্কে খবর দিব? দুনিয়ার জীবনে যাদের
সমস্ত ‘আমাল বরবাদ হয়েছে অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর ‘আমাল করে
যাচ্ছে।’’ (সূরা কাহাফ ১০৩-১০৪)
হায় আফসোস! তাবলীগী জামা‘আতের মুরুববীগণ
যদি তাবলীগী নিসাব থেকে শির্ক ও বিদ‘আতগুলো বের করে দিত এবং এই নিসাবকে
পুনরায় নতুন করে সংশোধন করে সংকলন করত, তাহলে অতী উত্তম হত। এই নিসাবের
প্রত্যেকটি বর্ণনাকে (জারাহ তা’দীল অনুযায়ী) শুদ্ধকরণের মাধ্যমে কুরআন
মাজীদ এবং সহীহ হাদীসের মানদন্ডে যাচাই করে, যে সকল বিষয়গুলি ভ্রান্ত
প্রমাণিত হয় তা বাদ দিয়ে মিথ্যা বর্ণনা এবং যঈফ (দুর্বল) বর্ণনা দ্বারা
মানুষের আক্বীদাহ খারাপ না করে এবং বিচ্ছিন্ন মাযহাব থেকে যদি বিরত থাকে,
তাহলেই আশা করা যায় যে, দ্বীন দুনিয়ার সফলতা বা কামিয়াবী অর্জিত হবে।
{وَلاَ تَهِنُوا وَلا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الأَ<عْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ}
‘‘তোমরা হীন বল হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, তোমরাই জয়ী হবে যদি তোমরা মু’মিন হও।’’ (সূরা আলু ইমরান ১৩৯)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের সঙ্গে
জয়ী এবং কামিয়াবীর ওয়াদা করেছেন। মুশরিকদের সঙ্গে নয়। বুঝা যাচ্ছে আজ আমরা
লাঞ্ছনা, অপমান, নিপীড়ন, শোষণ-বঞ্চনার শিকার কারণ আমাদের অধিকাংশই দাবিতে
ঈমানদার এবং ভৌগলিক মু’মিন কিন্তু ঈমান শূন্য। যেমন মহান আল্লাহ বলেন :
{وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ}
‘‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে কিন্তু তাঁর শরীক করে।’’ (সূরা ইউসূফ ১০৬)
আর যদিও ঈমান কিছু থাকে, তা শির্কের চাদরে
আবৃত। এ জাতীয় ঈমান মূলত ঈমানই নয়। এখন তাবলীগী নিসাব থেকে সংক্ষিপ্ত
বিবরণ পেশ করছি। অপরদিকে এর মুকাবিলায় কুরআন এবং সহীহ হাদীস পেশ করছি। এ
বিষয়গুলি ফয়সালার ভার আমি পাঠকের উপর অর্পণ করছি।
No comments:
Post a Comment