নামকরণে কুসংস্কার
হিন্দু
কিসসা-কাহিনীতে দেখা যায়, এক দেবতার উপাসক অন্য দেবতার নামে নামকরণ করে না
এতে নাকি আরাধ্য দেবতা ক্রদ্ধ হয়। শাক্তদের মধ্যে পাওয়া যায় না, বৈষ্ণবদের
নাম। আবার এক দেবতার পূজারী অন্য দেবতার কোপানলে পতিত হয়। এক দেবতা
প্রসন্ন হয়, অন্য দেবতা রুষ্ট হয়। মনসা মঙ্গলের গল্প কাহিনীতে দেখা যায় :
শিব ভক্ত চাঁদ সওদাগর মনসার পূজা দিতে অসম্মত হলে, চাঁদ সওদাগরকে কি
নাজেহালই না হতে হয়। সপ্ত ডিঙ্গি, সাত পুত্র খুইয়ে বেচারী সর্বহারা হয়-
অবশেষে পূজা দিতে সওদাগর রাজি হলে দেবীর প্রসন্নতায় আবার সবই প্রাপ্ত হয়।
এটা হলো হিন্দুদের ধর্মমত, বিশ্বাস। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, মুসলিমদের
ঘরেও এ ধরনের বিশ্বাস বা আক্বীদাহ অনুপ্রবেশ ঘটেছে। জাহেলরা এ ধরনের
আক্বীদায় বিশ্বাস করলে দুঃখ হত ঠিকই, কিন্তু আলিম ঘরাণায় যে এই ধরনের খেয়াল
ও জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের বৈকি! এই ধরনের
ভ্রান্ত কুসংস্কারপূর্ণ, তাওহীদের পরিপন্থী আক্বীদাহর নমুনা পেশ করছি। এক
বিখ্যাত আলিমের বিখ্যাত কিতাব থেকে :
কিতাবের নাম : বেহেশতী জেওর
মূল : আশরাফ আলী থানবী
অনুবাদ : শামসুল হক সাহেব (ফরিদপুরী)
প্রকাশ : এমদাদিয়া লাইব্রেরী (চকবাজর, ঢাকা-১১০০)
পৃষ্ঠা : দুই
বিষয় : জন্ম বৃত্তান্ত
মূল : আশরাফ জীবনী (সওয়ানেহ আশরাফ)
গৃহীত : ইসলামে নামকরণের পদ্ধতি
লেখক : বাশীর বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল হামীদ আল্-মা’সূমী (মাক্কাতুল মুকাররামা, সউদী আরব)।
মূল : আশরাফ আলী থানবী
অনুবাদ : শামসুল হক সাহেব (ফরিদপুরী)
প্রকাশ : এমদাদিয়া লাইব্রেরী (চকবাজর, ঢাকা-১১০০)
পৃষ্ঠা : দুই
বিষয় : জন্ম বৃত্তান্ত
মূল : আশরাফ জীবনী (সওয়ানেহ আশরাফ)
গৃহীত : ইসলামে নামকরণের পদ্ধতি
লেখক : বাশীর বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল হামীদ আল্-মা’সূমী (মাক্কাতুল মুকাররামা, সউদী আরব)।
হাকীমুল উম্মাত মাওলানা থানবীর জন্ম
বৃত্তান্ত অলৌকিক ঘটনার সহিত জড়িত। তাঁর পিতার কোন পুত্র সন্তানই জীবিত
থাকত না। তদুপরি তিনি এক দূরারোগ্য চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের
পরামর্শে এমন এক ঔষধ সেবন করেন যাতে তার প্রজনন ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে রহিত
হয়ে যায়। এতে হাকীমুল উম্মাতে মাতামহী নেহায়েত বিচলিত হয়ে পড়েন। একদা তিনি
হাফিয গোলাম মর্তজা সাহেব পানিপথীর খিদমাতে এ বিষয়টি আরয করেন। হাফিয সাহেব
ছিলেন মজযুব। তিনি বললেন, ‘‘উমার ও ‘আলীর টানাটানিতেই পুত্র সন্তানগুলো মারা যায়। এবার পুত্র সন্তান জন্মিলে ‘আলীর সোপর্দ করে দিও। ইনশাআল্লাহ জীবিত থাকবে।
তাঁর এ হেয়ালী কেউই বুঝতে পারলেন না। পূর্ণ কথার সারমর্ম একমাত্র মাওলানার
বুদ্ধিমতী জননীই বুঝলেন, আর তিনি বললেন, হাফিয সাহেবের কথা অর্থ সম্ভবত :
এই যে, ছেলের পিতৃকুল ফারূকী। আর আমি ‘আলী (রাঃ)-এর বংশধর। এযাবৎ পুত্র
সন্তানদের নাম রাখা হচ্ছিল পিতার নামানুকরণে, অর্থাৎ ‘হক’ শব্দ যোগে রাখা
হয়েছিল। যেমন আব্দুল হক, ফাজলে হক ইত্যাদি। এবার পুত্র সন্তান জন্মিলে
মাতৃকূল অনুযায়ী নাম রাখতে অর্থাৎ আমার ঊর্ধ্বতন আদি পুরুষ ‘আলী (রাঃ)-এর
নামের সহিত মিল রেখে নামকরণের কথা বলেছেন। এটা শুনে হাফিয সাহেব সহাস্যে
বলে উঠলেন, বাহবা! মেয়েটি বড়ই বুদ্ধিমতী বলে মনে হয়। আমার উদ্দেশ্য এটাই
ছিল। এর গর্ভে দু’টি ছেলে হবে। এইনশাআল্লাহ উভয়ই বেঁচে থাকবে এবং ভাগ্যবান
হবে। একজনের নাম রাখবে আশরাফ আলী, অপরজনের নাম রাখবে আকবর আলী। একজন হবে
আমার অনুসারী, সে হবে আলিম ও হাফিয। অপরজন হবে দুনিয়াদার। বস্ত্ততঃ তা-ই
হয়েছিল্ আল্লাহ তা‘আলা এক বুযুর্গের দ্বারা থানবী মাতৃগর্ভে আসার পূর্বে
অর্থাৎ আলমে আরওয়াহে থাকাকালীন তাঁর নাম রেখে দিলেন। আল্লাহ তা‘আলার কত বড়
মেহেরবানী। কত বড় সৌভাগ্যের কথা!
বইটির ১ম পৃষ্ঠা পড়লে পাঠক অবগত হবেন যে,
আশরাফ আলী থানবীর পিতৃপুরুষ ‘উমার (রাঃ) এবং মাতৃকূল ‘আলী (রাঃ) থেকে।
থানবী সাহেবের পিতার কোন সন্তান জীবিত থাকত না, কেননা তাদের নাম রাখা
হয়েছিল ‘উমার (রাঃ)-এর নামে। ফলে ‘উমার ও ‘আলীর টানাটানিতেই পুত্র
সন্তানগুলো মারা যায়। এ যেন ঠিক চাঁদ সওদাগরের কিসসা কাহিনীর মত এক দেবতা
তুষ্ট হলে অন্য দেবতা রুষ্ট হয়।
উপরিউক্ত কথাগুলোর মধ্যে ‘উমার ও ‘আলী
(রাঃ)-এর জীবন দান; মৃত্যু ঘটানোর ক্ষমতা ও পরস্পরের মধ্যে রেসারেষির কথা
সুস্পষ্ট। কিন্তু প্রত্যেক মুসলিম জানে এবং বিশ্বাস করে একমাত্র আল্লাহই
পারেন মানুষের জীবন দান করতে এবং মৃত্যু ঘটাতে। আল্লাহ নিজেকে যে বিভিন্ন
নামে নামকরণ করেছেন; সে নাম হলো ‘আল-মহী ওয়াল মুমী’ (জীবনদাতা ও
মৃত্যুদাতা)।
আল্লাহ ইরশাদ করেন :
{أَنَّهُ هُوَ أَضْحَكَ وَأَبْكَى، وَأَنَّهُ هُوَ أَمَاتَ وَأَحْيَا، وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالأُنْثَى، مِنْ نُطْفَةٍ إِذَا تُمْنَى}
‘‘তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান, তিনিই
মৃত্যু দেন, তিনিই জীবন দান করেন। তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল পুরুষ ও নারী
স্খলিত কীট বিন্দু হতে।’’ (সূরা আন-নাজম ৪৩-৪৬)
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
{اللهُ الَّذِي
خَلَقَكُمْ ثُمَّ رَزَقَكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ هَلْ
مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَفْعَلُ مِنْ ذَلِكُمْ مِنْ شَيْءٍ سُبْحَانَهُ
وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ}
‘‘আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর
তোমাদেরকে রিযক (জবিনোপকরণ) দিয়েছেন। তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান ও পরে
তোমাদেরকে জীবিত করেন। আল্লাহতো তাঁর কার্যে কোন অংশীদারী থেকে বহু
ঊর্ধ্বেং এবং পূতময় মহান। (সূরা রূম- ৪০)
মুশরিকদের জবাবে নাবী ইবরাহীম (‘আ.) বলেন :
{الَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ، وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ، وَالَّذِي يُمِيتُنِي ثُمَّ يُحْيِينِ}
‘‘তিনি আমাকে দান করেন আহার্য ও পানীয় এবং
রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন। তিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন,
অতঃপর পুনর্জীবিত করবেন।’’ (সূরা শু‘আরা- ৭৯-৮১)
এছাড়াও কুরআন মাজীদের আরও বিভিন্ন আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, একমাত্র তিনি প্রাণ ও মৃত্যু ঘটানোর মালিক। আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রসূল (সাঃ) বলেন, মানুষের মৃত্যু হলে তার
সমস্ত ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম)
তাহলে ‘উমার বা ‘আলী (রাঃ) কারোর মৃত্যু
ঘটাতে সক্ষম? ‘আলী (রাঃ)-এর সেই ক্ষমতা থাকলে কারবালার ময়দানে তাঁর
পুত্র-পৌত্র হত্যাকারীদের ‘টানাটানি’ করে মেরে ফেলতে পারতেন না?
জীবিতাবস্থায় ‘আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ) রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে সম্মুক-সমরে
অবতীর্ণ হয়েছেন, তাদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। তাদের
মৃত্যুর পরে সব দ্বন্দ্বের অবাসান ঘটেছে। ‘আলী ও মু‘আবিয়ার মরণোত্তর
‘টানাটানির’ খবর তো কেউ শোনে নি কোনদিন। ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে ‘আলী (রাঃ)-এর
জীবিতাবস্থায় এমন কোন দ্বন্দ্ব বা রেষারেষি ছিল না যে মৃত্যুর পরেও তা
অব্যাহত থাকবে! বরং পরস্পরের মধ্যে ছিল সুগভীর শ্রদ্ধা, পরম ভালবাসা। খলীফা
‘উমার ইবনুল খাত্তাব ‘আলী (রাঃ)-এর শিশুকন্যা উম্মু কুলসুমকে বিবাহ করার
প্রস্তাব দেন। ‘আলী (রাঃ) বিস্মিত হয়ে বলেন : হে আমীরুল মু’মিনীন আমার এ
ছোট মেয়েটি আপনার কি উপকারে লাগবে? আমীরুল মু’মিনীন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব
বললেন : হে ‘আলী! আমি কি কোন উপকারের আশায় তোমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছি।
আমি তো আত্মীয়তার বাঁধনে আহলুল বায়াতের সাতে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চাইছি। ‘আলী
(রাঃ) খুশি হয়ে ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিলেন। খুলাফায়ে
রাশেদ্বীনের ইতিহাসে দেখা যায়, ‘উমার ও ‘আলী (রাঃ) পরস্পরের প্রতি আনুগত্য,
শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাহলে মৃত্যুর পরে তাদের মধ্যে
কিভাবে ‘টানাটানি’ শুরু হয়। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। লেখকতো কোন শী‘আ
প্রভাবে প্রভাবিত হন নি?)
ঐ বইয়ের একই পৃষ্ঠায় ইলমুল গায়িবের খবর
জানা পীর গোলাম মুর্তজা পানিপথী সাহেব বলেন, এর গর্ভে দু’টি ছেলে হবে
ইন্শা-আল্লাহ, উভয়ই বেঁচে থাকবে এবং ভাগ্যবান হবে। একজনের নাম রাখবে আশরাফ
আলী, অপরজনের নাম রাখবে আকবর আলী। একজন হবে আমার অনুসারী, সে হবে আলিম ও
হাফিয়। অপরজন হবে দুনিয়াদার। বস্ত্ততঃ তা-ই হয়েছিল........। এ যেন রাম
জন্মের পূর্বে রামায়ণের কাহিনী লেখার মত। পীর হাফিয গোলাম মুর্তজা
কল্পনা-বিশিষ্ট কবি বাল্মিলিকীর সুন্নাতের অনুরসরণ করেছেন।
কুরআন-হাদীস অনুযায়ী ইলমুল গায়িব একমাত্র
আল্লাহই জানেন। রসূল ও নাবীগণও গায়িবের খবর জানতেন না। অথচ পীর সাহেব গোলাম
মুর্তজা (নামটি অশুদ্ধ শিরক ফি তাসমীয়াহ শিরকী নাম বলে মনে হয়) আশরাফ আলী
থানবী ও তার ভাই আকবর আলীর জন্মের অভিষ্যদ্বাণী করেছেন, তাদের নামকরণ
করেছেন এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারণেরও (ক্বাদর) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। অথচ
আল্লাহ কুরআন বলেন :
{إِنَّ اللهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَداً وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ}
‘‘কখন ক্বিয়ামাত হবে তা কেবল আল্লাহই
জানেন। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করে এবং তিনি জানেন যা (জরায়ুতে) মাতৃগর্ভে আছে।
কেউ জানে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে এবং জানে না কোন দেশে তার মৃত্যু
ঘটবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।’’ (সূরা লুক্বমান ৩৪)
খাতেমুন নাব্যিয়ীন আশরাফুল মুরসালীন
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ (সাঃ) ও গায়িবী খবর জানতেন না। আল্লাহ তা‘আলা
নাবীকে বলতে নির্দেশ দেন :
{قُلْ لاَ أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعاً وَلاَ ضَرّاً إِلاَ مَا شَاءَ اللهُ وَلَوْ كُنْتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لاَسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ}
‘‘বল, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত
আমার নিজের ভাল-মন্দের উপরও আমার কোন অধিকার নেই। আমি যদি গায়িবের খবর
জানতাম তবে আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ
করতে পারত না।’ (সূরা আ‘রাফ- ১৮৮)
রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
لا يعلم الغيب إلا الله
‘‘আল্লাহ ছাড়া কেউই ভবিষ্যতের খবর জানে না।’’ (তাবারানী, হাঃ হাসান)
রসূল (সাঃ) শুনলেন কতিপয় শুিশু মেয়ে
বীরত্বগাথা গাচ্ছে। সেখানে তিনি পৌঁছলে তারা গাইতে শুরু করল, ‘‘আমাদে মধ্যে
নাবী আছে, তিনি জানেন আগামীকাল কি ঘটবে। রসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে ঐ কথা
বলতে নিষেধ করলেন এবং তারা পূর্বে যেভাবে বীরত্বগাথা গাইছিল, সেভাবে গীত
গাইতে বললেন।’’ (বুখারী- কিতাবুন নিকাহ)
রসূলুল্লাহ (সাঃ)ও যে ভবিষ্যতের খবর
জানতেন না হাদীসে তার বহু প্রমাণ করেছে। তিনি গায়িব জানলে তাঁর স্ত্রী
উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ -এর চরিত্রে কলঙ্ক দানের চরম মুহূর্তে তিনি
স্তদ্ধ থাকতেন না। আল্লাহর কাছ তেখে ওয়াহী না আসা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা
করতে হয়েছে। ইয়াহূদীরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আত্মা সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে
তিনি বলেন যে, আগামীলাক জবাব দেবেন। ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাই
আঠারো দিন পর্যন্ত ওয়াহী আসা বন্ধ ছিল। হইয়াহূদীরা এ নিয়ে খুবই
হাসি-মস্কারা শুরু করে। অবশেষে আল্লাহর কাছে থেকে জিবরীলের মাধ্যমে জানতে
পেরেই তিনি ইয়াহূদীদের প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেন। এভাবে রসূল (সাঃ)
জীবনের বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যায়, তিনি গায়িবী খবর জানতেন না। যে গায়িবী খবর
তিনি বলেছেন, তা জিবরীলের কাছে জ্ঞাত হয়েই। দুনিয়া ও আখিরাতের সর্বশ্রেষ্ঠ
মানুষটি আগামীকালের খবরই জানতেন না তাহলে পীর গোলাম মুর্তজা পানিপথী কিবাবে
আশরাফ আলী থানবী ও তার ভাইয়ের জন্মের কথা জানলেন এবং নামরকণ করলেন ও তাদের
তাক্বীদেরও খবর জানালেন? খাতিমুন নাবিয়্যিন ওয়াল মুরসালীন মুহাম্মাদ বিন
আবদুল্লাহ (সাঃ)-এর মৃত্যুর পরই জিবরীল (‘আ.)-এর দুনিয়াতে ওয়াহী নিজে আসার
দায়িত্ব খতম। পীর সাহেবের কাছে তাহলে কিভাবে গায়িবী খবর এলো কুরআন ও হাদীস
থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, গায়িবী খবর একমাত্র আল্লাহই জানেন।
মাতৃগর্ভে কি আছে সে খবরও আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। রসূলল্লাহ ও নাবীগণ ও এ
খবর জানতেন না। অথচ পীর গোলাম মুর্তজা আশরাফ আলী ও আকবর আলীর জন্মের
ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন এবং তাদের নামও রেখে গিয়েছেন। পীর সাহেবের নামই
আপত্তিজনক (যা আমার এ অধ্যায় পূর্বে উল্লেখ করেছি) এবং তিনি যে নামকরণ
করেছেন তা ও অবৈধ। রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এক সাহাবীর নাম ছিল আকবর, তিনি তা
পরিবর্তন করে তার নাম রাখেন বাশীর। (ইমাম বুখারী তাঁর কিতাব ‘তারীখুল
কাবীর’-এ উল্লেক করেন :
بشر أحمد بتى الحارث بن كعب قال محمد بن مسلم حدثنا سعيد بن مروان أبو عثمان إلى هاوى واثنى عليه خيرا وعميرة بن عبد النذر أبو سماعة الرهاوى مولى لهم سمع عصام بن بشير عن أبيه أن النبى صلى الله عليه وسلم سماه بشيرا وكان إسمه أكبر قال سعيد وكان عصام بلغ سنة عشرا ومائة واظن أنه حديثا بهذا منذ خمسين سنة
বাশীরের পুত্র ইসাম তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন। নাবী (সাঃ) তাঁর (বর্ণনাকারী পিতার) নামকরণ করেন বাশীর যার নাম ছির
আকবর। (বুখারী তারীখুল কাবীর, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃঃ, হাঃ ১৮২১)
পরবর্তীকালে ইমাম নাসায়ী হাদীসটি আরো
বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, আমার পিতা থেকে শুনেছি যে, বানী হারিস বিন কা’ব
আমার পিতাকে প্রতিনিধি করে রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে পাঠিয়েছিল। সে
(বর্ণনাকারীর পিতা) বলেন, আমি নাবী (সাঃ)-এর কাছে পৌঁছে সালাম করলাম। তিনি
বললেন, মারহাবা ওয়া আলাইকাস সালাম। তুমি কোথা থেকে এসেছ? সে বলল, হে আল্লাহ
রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! বানী হারিস ইসলাম গ্রহণের
জন্য আমাকে তাদের প্রতিনিধি স্বরূপ আপনার কাছে পাঠিয়েছে। তিনি বললেন,
(তোমাকে) মারহাবা, তোমার নাম কি? সে বলল, (বললাম) আমার নাম, আকবার। তিনি
বললেন : বরং তুমি বাশীর; (এভাবে) নাবী (সাঃ) তার নামকরণ করলেন বাশীর।
(নাসাঈ আল ইয়াম ওয়াল্লায়লাহ, ১ম খন্ড, ২৭৮ পৃঃ, হাঃ ৩১৩)
সহীহুল বুখারীর ব্যাখ্যাকারী অবিস্মরণীয় ‘আলিম হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী তাঁর বিখ্যাত কিতাব الاصابه তে এ হাদীসের বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। (ইবনু হাজার আসকালানী, আল ইছাবাহ, ১৬১ পৃঃ, হাঃ ৭১২)
উপরিউক্ত হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, ‘আকবার’
নাম রসূলুল্লাহ (সাঃ) অপছন্দ ছিল। সহীহায়ন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ও
সুনানে আরবাহ অর্থাৎ আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনু মাযাহ- ছয়টি হাদীসের
পৃষ্ঠায় যে হাদীস লিপিবদ্ধ, হাদীসের ব্যাখ্যাকারী বিখ্যাত গ্রন্থে আলোচিত
যে আকবার নাম কারো জন্য বৈধ নয়। সে খবর পীর জানেন না অথচ সাত আসামানের উপর
কোন অদৃশ্যলোকে ‘আলমে আরওয়াতে’ বিশ্বকর্তার আদম সৃষ্টির কারখানার তিনি খোঁজ
রাখেন। কিন্তু হাতের কাছে হাদীসের খবর তিনি জানেন না। পীর গোলাম মুর্তজার
এহেন কিসসার সাথে আর এক ‘পীর হযরতের’ ঘটনা এখানে প্রাসঙ্গিক : এক পীর
সাহেবের মুরীদের বাড়ীতে তশরীফ নিয়ে এসেছেন। মুরাকাবায় বসে পীর সাহেব তিন
কালের তিন তিন আলমের খবর দিচ্ছেন। কার কি হবে সে ভবিষ্যদ্বাণীর দ্বারা
সকলের মনে ভয় ও ভক্তির উদ্রেক করছেন। পীর ‘কেবলার’ গায়েবানা কাশ্ফের
হাকীকাত মালুম করার জন্য মেহমান নওয়াজ এক ব্যক্তি পীর সাহেবকে দা‘ওয়াত
দিলেন। ভোজনপ্রিয় পীর সাহেবের সম্মুখে তিনি হাজির করলেন থালাপূর্ণ ভাত। পীর
সাহেব তার প্রিয় খাদ্য দেখতে না পেয়ে গৃহকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন : মুরগী
কোথায়? উত্তরে তিনি বলেন, কাশফের সাহায্যে পীর সাহেব মুরগীর অনুসন্ধান
করুন, যখন তিনি ত্রিলোক এবং ত্রিকালের খবর জানেন, তখন একটা মুরগীর খোঁজ
তিনি নিতে পারবেন না। কিন্তু পীর সাহেবের ‘কাশফ’ মুরগীর সন্ধান দিতে ব্যর্থ
হলো। গৃহকর্তা ভাতের মধ্যে লুকায়িত মুরগীর রোস্ট বের করে সকলকে দেখালেন
এবং সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সম্মুখের মুরগীর খবর যার জানা নেই সে আসমান
যমীনের ভূত-ভবিষ্যতের খবর দেয় কিভাবে?
সবদিক থেকে বিচার করলে আশরাফ আলী থানবীর
জন্মসংক্রান্ত কিস্সা ইসলামী আক্বীদাহর পরিপন্থী এবং সুন্নাতের বিরোধী। অথচ
এ আক্বীদাহ ফাসেদাহ (দুর্গন্ধ, পঁচা বিশ্বাস)- এর সমর্থনে এবং মহোৎসাহে
শামসুল হক ফরিদপুরী সাহেব মন্তব্য করেন। ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এক বুযুর্গের
দ্বারা থানবীর মাতৃগর্ভে আসার পূর্বে অর্থাৎ ‘আলমে আরওয়াহে’ থাকাকালীন তার
নাম রেখে দিলেন, আল্লাহ তা‘আলার কত বড় মেহেরবানী! কত বড় সৌভাগ্যের কথা!’’
আলিমুল গায়িব আল্লাহতা‘আলা পবিত্র কুরআন ঘোষণা করেন, ‘‘মাতৃগর্ভে কি আছে একমাত্র তিনিই জানেন।’’ (সূরা লুক্বমান- ৩৪)
কিন্তু পীর সাহেবকে দেখা যাচ্ছে শুধু
মাতৃগর্ভেরই নয়; বরং ‘আলমে আরওয়াহে’ থাকাকালীন এর খবর জানেন। এক্ষেত্রে
ঈমানদার পাঠক আল্লাহর কথা বিশ্বাস করবেন, না শামসুল হক ফরিদপুরীর পীর
কেবলার কেরামতীর উকালতীকে প্রশ্রয় দেবেন? শুধু তাই নয়, মাতৃগর্ভে আসার
পূর্বে অর্থাৎ ‘আলমে আরওয়াহে’ থাকাকালীন তার নামও রেখে দিলেন। ‘একি কথা
শুনি আমি মন্থবার মুখে’ এ যে আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতার সাথে টেক্কা দিয়ে
ইলাহী কারবার। আল্লাহই তো সন্তান জন্মানোর পূর্বাভাষ দিয়ে সুসংবাদ দিতে
পারেন এবং নামও রাখতে পারেন, কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
{يَا زَكَرِيَّا إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلامٍ اسْمُهُ يَحْيَى لَمْ نَجْعَلْ لَهُ مِنْ قَبْلُ سَمِيّاً}
‘‘যে যাকারিয়া! তোমাকে এক পুত্রে (জন্মের)
সুসংবাদ দান করছি, যার নাম ইয়াহইয়া, যে নামে ইতোপূর্বে কেউ নামকরণ
করেনি।’’ (সূরা মারইয়াম- ৭)
অথচ পীর গোলাম মুর্তজা পানিপথী সাহেব ইলাহী কায়দায় আশরাফ আলী ও তার ভাই আকবর আলীর জন্মের সুসংবাদ দান করে তাদের নামকরণও করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা তো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষনা করেন :
{سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ}
‘‘তাঁরই গৌরব ও মহানতা, তিনি তাঁর অংশীদারী থেকে বহু উর্ধ্বে।’’ (সূরা আর-রূম ৪০)
অথচ এ সম্বন্ধে শামসুল হক ফরিদপুরীর
মন্তব্য করেন, আল্লাহ তা‘আলার কত বড় মেহেরবানী, কত বড় সৌভাগ্যের কথা। কুরআন
ও সুন্নায় বিশ্বাসী মুসলিম অবশ্যই বলবে, কত বড় দুর্ভাগ্যের কথা। কত বড়
বদনসীবী!
‘বেহেশতী জেওর’ যে কিতাবের নাম তার মধ্যে এ
ধরনের ইসলামী আক্বীদাহ পরিপন্থী কিস্সা সংযোগ করে যেন হাঁড়িভর্তি দুধের
মধ্যে এক ফোটা গো-চনা চিটিয়ে দেয়া হয়েছে। ঊর্দূ ভাষীদের উদাহরণ দিয়ে বলা
চলে- কিমা মে হাড্ডি’। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ ধরনের শিরকী কথার প্রতিবাদে
এগিয়ে আসেনি কোন নায়েবে নাবী (উলামা) মুনকারকে নাহী (নিষেধ) করার জন্য কোন
তাওহীদবাদী মুসলিমের কণ্ঠ হয় নি সোচ্চার।- এসবই হয় এ ‘দ্যাশেই’।
‘‘এমন দেশটি থোকাও খুঁজে পাবে না'কো তুমি।’’
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুণ যে থানবীর
তা’লীম আমাদের মধ্যে তাবলীগের মাধ্যমে চালু করতে চয়েছেন ইলিয়াস সাহেব, তার
প্রসিদ্ধ গ্রন্থের ভূমিকাতেই শিরক। এ ধরনের আরো অনেক বিভ্রান্তিকর বিষয় আছে
‘বেহেশতী জেওর’ নামক গ্রন্থে যা লিখতে গেলে বইয়ের কলেবর বৃদ্ধি পাবে, তাই
আর মাত্র একটি মাসআলা উল্লেখ করে ইতি টানব মাসআলাটি নিম্নরূপ : ‘বেহেশতী
জেওর’ বইয়ের ৪র্থ খন্ডের ১৭ নং মাসআলায় উল্লেখ আছে ‘‘রাতের অন্ধকারে স্ত্রী
মনে করে কন্যা বা শ্বাশুড়ীর শরীর স্পর্শ করলে অথবা কোন ছেলে স্বীয় বিমাতার
শরীর স্পর্শ করলে, সে পুরুষ তার স্ত্রীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে।
(বেহেশতী জেওর, ৪র্থ খন্ড,, ১৭ পৃঃ)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! এবার লক্ষ্য
করুন আলোচ্য ফাতাওয়াটি কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে সঠিক কিনা? বেহেশতী জেওর-এর
বর্ণিত মাসআলাটি পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। সঠিক কথা
এই যে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এ ধরনের জঘন্য আচরণ হয়ে গেলে স্ত্রী তার উপর
হারাম হবে না। কেননা একটি হারাম কাজ অপর একটি হালালকে হারাম করতে পারে না।
এরূপ কাজ হয়ে গেলে তাকে খালেস অন্তরে তাওবাহ করতে হবে।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে
বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি তার শ্বাশুড়ী ও শ্যালিকার সাথে যিনা করে ফেললে তিনি
বলেন যে, এ কাজের জন্য তার স্ত্রী তার উপর হারাম হবে না। (মুহাম্মাদ ইবনু
আবী শায়বাহ, বায়হাক্বী, সনদ সহীহ, ইরওয়াউল গালীল হাঃ ১৮৮১, ৬/২৮৮; গৃহীত
আত-তাহরীক নভেম্বর ও ফ্রেব্রয়ারী- ২০০৫, প্রশ্ন ২/১৬২)
একটি জাল হাদীস
তাবলীগী নিসাবে ফাজায়েলে যিকিরে শাইখুল হাদীস লিখেছেন :
‘‘একটি হাদীছে আসিয়াছে, যেই ব্যক্তি
কাউকেও লজ্জা দেয়ার উদ্দেশ্যে তাহার পাপের উল্লেখ করিবে মৃত্যুর পূর্ব
পূর্বের সে ঐ পাপে গ্রেপ্তার হইবে।’’ (ফাজায়েলে জিকির ৪৪৭)
হাদীসটির কোন সনদ বর্ণনা করা হয়নি আমরা কি
করে বুঝব এটা সহীহ হাদীস কিনা? তার পরেও আমরা এই অর্থের হাদীস পেয়েছি যার
সনদ জাল। নিম্নে এরূপ ১টি হাদীস উল্লেখ করা হল-
من غير اخاه بذنب لم يمت حتى يعمله
‘‘যে ব্যক্তি তার ভাইকে কোন গুনাহের কারণে ভৎর্সনা করবে, সে ব্যক্তি সে কর্ম না করা পর্যন্ত পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না।’’
হাদীসটি জাল। একটিকে ইমাম তিরমিযী
(৩/৩১৮), ইবনু আবিদ দুনিয়া ‘যাম্মুল গীবা’ গ্রন্থে, ইবনু আদী (২/২৯৬) এবং
খতীবুল বাগদাদী (২/৩৩১-৩৩০) মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান সূত্রে.......বর্ণনা
করেছেন। তিরমিযী বলেন : হাদীসটি হাসান গারীব। এটির সনদ মুত্তাসিল নয়। খালিদ
ইবনু মি’দাদ মু‘আয ইবনু জাবালকে পান নি। আলবানী বলেন : তাহলে কিভাবে এটি
হাসান। যেমনটি যাহাবীর ‘আল-মীযান’ গ্রন্থে এসেছে। অতঃপর তিনি এ হাদীসটি
উল্লেখ করেছেন। এ কারণেই সাগানী তার ‘মাওযু‘আত’ গ্রন্থে (পৃঃ ৬) হাদীসটি
উল্লেখ করেছেন। তার পূর্বে ইবনুল জাওযী (৩/৮২) ইবনু আবিদ দুনিয়ার সুত্রে
বর্ণনা করেছেন অতঃপর বলেছেন : এটি সহীহ নয়। মুহাম্মাদ ইবনু হাসান মিথ্যুক।
সুয়ূতী ‘আল-লাআলী’ গ্রন্থে (২/২৯৩) তার সমালোচনা করে বলেছেন যে, এটি
তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন : এটি হাসান গারীব এবং তার শাহেদ রয়েছে।
আল্লামা আলবানী বলেন : তার শাহেদটি মারফূ নয়। সালেহ ইবনু বাশীর আল-মুরবীর
কারণে এটির সনদ দুর্বল। তিনি দুর্বল যেমনভাবে আত-তারকীব’ গ্রন্থে এসেছে।
মারফূ না হওয়ার কারণে এটি শাহেদ হওয়ার যোগ্য নয়। এছাড়াও মারফূ হিসাবেও
শাহেদ এসেছে, কিন্তু সেটিও দুর্বল। (দেখুন- ‘মিশকাত’, তয় খন্ড; যঈফ ও জাল
হাদীস সিরিজ, ১ম খন্ড, ২০৫ পৃষ্ঠা)
No comments:
Post a Comment