তাবলীগি নিসাবের ভূমিকাতেই শির্ক
তাবলীগী
নিসাবের লেখক শায়খুল হাদীস জাকারিয়া বলেন : ‘‘ওলামায়ে কেরাম ও ছুফীকুল
শিরোমণি, মোজাদ্দেদে দ্বীন, হজরত মাওলানা ইলিয়াছ (রহঃ) আমাকে আদেশ করেন যে,
তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজন অনুসারে কোরআন ও হাদীছ অবলম্বনে যেন একটা
সংক্ষিপ্ত বই লিখি। এতবড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালে নাজাতের উছিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।’’ (তাবলীগী নিসাব, ফাজায়েলে তাবলীগের ভূমিকা, পৃষ্ঠা ৩)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ!
উপরের আন্ডার
লাইনযুক্ত অংশ পড়ুন আর লক্ষ্য করুন, যাতে জনাব জাকারিয়ার জন্য পরকালের
নাযাতের উসীলা হয়, তাই তিনি তাবলীগী জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ইলিয়াসের
সন্তষ্টি বিধানের লক্ষ্যে তাবলীগী নিসাব অর্থাৎ ফাজায়েলে ‘আমাল ও ফাজায়েলে
সাদাকাত গ্রন্থদ্বয় রচনা করেন। যার অনেকাংশ কুরআন-হাদীস পরিপন্থী। কুরআন
হাদীস কিছু অবলম্বন করলেও তাতে অপব্যখ্যায় ভরপুর। অধিকাংশ যঈফ জাল হাদীসে
ভরপুর। তাছাড়া আছে সুফীদের উদ্ভট কিস্সা কাহিনী যা অনেকাংশে কুরআন-হাদীসের
আক্বীদার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সম্ভবতঃ এজন্যই জনাব শায়খ আল্লাহর সন্তষ্টি
কামনা না করে জনাব ইলিয়াসের সন্তুষ্টি কামনা করেছেন। কারণ কুরআন-হাদীস
অবলম্বনের কথা যা তিনি বলেছেন তা তিনি করেননি তাই তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি
চাননি তিনি তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ইলিয়াসের আদেশে তারই প্রবর্তিত
পদ্ধতি অনুসারে উল্লিখিত গ্রন্থদ্বয় রচনা করেন। যা তার নির্দেশের অনুকুলে
অর্থাৎ অনেকাংশে কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রতিকূলে।
সম্মানিত পাঠক! এর সত্যতা জানতে পারবেন
আমাদের এ বইখানার মাধ্যমে। শায়খের বইয়ের ভূমিকাতেই বুঝা যায়, এটা
কুরআন-হাদীসের বিপরীত কারণ আমরা জানি দা‘ওয়াত ও তাবলীগ আল্লাহর নির্দেশিত
একটি দ্বীনি ও নেকীর কাজ। উলামায়ে কেরাম একে ইসলামের ৬ষ্ঠতম স্তম্ভ হিসাবে
সাব্যস্ত করেছেন এবং মহান রাববুল ‘আলামীন একে ঈমানের পূর্বেই স্থান
দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
{كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللهِ }
‘‘তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানব জাতির
কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে
ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’’ (সূরা আল-ইমরান
১১০)
শুধু তাই নয়, সূরা তাওবাতেও মহান আল্লাহ সেটাকে সলাত প্রতিষ্ঠা যাকাত প্রদানের পূর্বেই উল্লেখ করেছেন। (দেখুন তাওবা-৭১)
বুঝা যাচ্ছে দা‘ওয়াত ও তাবলীগ একটি বড়
‘ইবাদাত বা দ্বীনী বিষয় এবং নেকীর কাজ। তাবলীগী ভাইদের ভাষায় উম্মুল হাসানা
বা সমস্ত নেকির ‘মা’। তাহলে এই ‘ইবাদাত বা নেকীর কাজটা হতে হবে
সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর সন্তুষ্ঠির উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ ইখলাসের (নিষ্ঠার)
ভিত্তিতে সহীহ্ নিয়তে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
{وَمَا أُمِرُوا إِلاَّ لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذ‘لِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ}
‘‘আর তাদেরকে হুকুম করা হয়েছে যে, তারা
একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকভাবে আল্লাহর দ্বীন পালনের মাধ্যমে একমাত্র তাঁরই
‘ইবাদাত করবে, সলাত কায়িম করবে এবং যাকাত দান করবে। এটাই হচ্ছে সুদৃঢ়
দ্বীন।’’ (সূরা আল বায়্যিনাহ-৫)
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
{قُلْ إِنَّ صَلاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ}
‘‘হে রসূল! আপনি বলুন, আমার সলাত, আমার
কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। অর্থাৎ
তাঁর সন্তুষ্টির জন্য।’’ (সূরা আনআম-১৬২)
সম্মানিত মুমিন ভাই ও বোনেরা! উল্লিখিত
দলীল-প্রমাণ দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায়, একজন মু’মিনের প্রতিটি কর্ম বা
‘ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করা উচিৎ। অথচ
আমরা লক্ষ্য করেছি শায়খ জাকারিয়া দা‘ওয়াত ও তাবলীগের মত এত বড় কাজ লিখনির
মাধ্যমে আঞ্জাম দিতে গিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা না করে ইলিয়াস সাহেবের
সন্তুষ্টি কামনাকে তার নাজাতের ওয়াসীলা ভেবেছেন। এতবড় ‘ইবাদাত পালন করতে
গিয়ে স্রষ্টার সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য না করে একজন সৃষ্টির সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য
করাটা কি শির্ক নয়? আর শির্কের পরিণাম কি জাহান্নাম নয়? মহান আল্লাহ বলেন :
{إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ}
‘‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে
অংশীদার স্থাপন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার
বাসস্থান হবে জাহান্নাম এবং অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।’’ (সূরা
আল-মায়েদাহ্-৭২)
রসূল (সাঃ) বলেন :
وعن عثمان بن مالك رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: إن الله حرم على النار من قال لاَ إله الا الله يبتغى بذالك وجه الله عزوجل. (متفق عليه)
অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে
জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন যে বলে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার
উপাস্য নেই এর দ্বারা সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়।’ (সহীহ্
বুখারী ও মুসলিম)
সম্মানিত মুসলিম ভাই! প্রমাণিত হল যে,
একজন মু’মিন ও মুসলিম কোন ভাল কর্ম সম্পাদন করলে তা হবে শুধুমাত্র আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য। এটা শুধু আমার কথা নয়, শায়খ জাকারিয়া নিজেও লিখেছেন।
যদিও তিনি ভূমিকাতে উক্ত শির্কী আক্বীদা পেশ করেছেন। শাইখ যা লিখেছেন আমরা
তার কিছু অংশ হুবহু পাঠকের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরলাম।
ফাজায়েলে তাবলীগের পঞ্চম পরিচ্ছেদ। মুবাল্লেগীনদের ইখলাসে নিয়ত অধ্যায়।
‘‘এই পরিচ্ছেদে মোবাল্লেগীনদের খেদমতে
আমার একিট বিশেষ অনুরোধ এই যে, তাহারা যেন স্বীয় ওয়াজ নছীয়ত ও লিখনীকে
এখলাসের দ্বারা অলংকৃত করেন। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নয় এমন আমল
দুনিয়াতেও কোন কাজে আসিবে না আর আখেরাতেও উহার কোন ছওয়াব পাওয়া যাইবে না।
হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন-
ان الله لا ينظر إلى صوركم وامولكم ولكن ينظر إلى قلوبكم واعمالكم (مشكوة عن مسلم)
অর্থঃ আল্লাহ পাক তোমাদের বাহ্যিক ছুরত ও সম্পদের প্রতি লক্ষ্য করেন না বরং তোমাদর অন্তর ও আমালের পতি দৃষ্টিপাত করেন। -(মেশকাত)
হাদীছে বর্ণিত আছে, জনৈক ব্যক্তি হুজুর
(সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলেন যে, ঈমান কি জিনিস? হুজুর (ছঃ) উত্তর করিলেন-
এখলাছ। অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে, হজরত মোয়াজ (রাঃ) কে হুজুর (সাঃ) যখন
ইয়ামেনের গভর্নর নিযুক্ত করিলেন, তখন তিনি আরজ করিলেন, হুজুর আমাকে কিছু
অছিয়ত করুন। হুজুর (সাঃ) বলিলেন, দ্বীনের কাজে এখলাছের পতি বিশেষ লক্ষ্য
রাখিবে। কারণ এখলাছের সহিত সামান্য আমলই যথেষ্ট। আরও বর্ণিত আছে আল্লাহ পাক
আমলের মধ্যে যাহা শুধু তাঁহার সন্তুষ্টির জন্য করা হয় উহাই কবুল করেন।
অন্য হাদীছে এরশাদ হইয়াছে-
قال الله تعالى أنا اغنى الشركاء عن الشرك من عمل عملا اشرك فيه معى غير تركته وشركه وفي رواية فانا منه برئ فهو للذى عمله (مشكوة عن مسلم)
আল্লাহ পাক বলেন, আমি অংশীদারদের অংশ
স্থাপনের মুখাপেক্ষী নহি। যদি কোন ব্যক্তি কোন আমলের মধ্যে কাহাকেও আমার
সাথে শরীক করে, তবে উক্ত ব্যক্তিকে আমি তাহার শেরেকের উপর সোপর্দ করিয়া
থাকি। অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি তাহার দায়িত্ব হইতে মুক্ত হইয়া যাই।-
(মেশকাত) অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে, ক্বেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে এক
ঘোষণাকারী উচ্চঃস্বরে ঘোষণা করিবে, যে ব্যক্তি কোন আমলের মধ্যে অন্য
কাহাকেও শরীক করিয়াছে, সে যেন উহার প্রতিদান তাহার কাছ থেকেই চাহিয়া লয়।
কারণ আল্লাহ তায়ালা যে কোন প্রকার অংশ স্থপন হইতে মুক্ত। - (মেশকাত)
অন্য হাদীছে বর্ণিত আছে,
من صلى يرائ فقد أشرك ومن صام يرائ فقد اشرك ومن تصدق يرائ فقد اشرك
যে ব্যক্তি লোক দেখানে নামাজ পড়ে সে
মোশরেক হইয়া যায়, আর যে ব্যক্তি লোক দেখানো ছদকা করিল সেও মোশরেক হইয়া গেল।
অর্থাৎ যাহাদেরকে দেখাইবার জন্য করা হইয়াছে উহা তাহাদের জন্যই হইল। অন্য
একটি হাদীছে আছে
অর্থঃ কেয়ামতের দিবস সর্বপ্রথম যাহাদের
ফায়ছালা শুনানো হইবে তন্মধ্যে একজন শহীদ হইবে। তাহাকে ডাকিয়া আল্লাহ পাক
স্বীয় নেয়ামতসমূহ স্মরণ করাইবেন। সেই ব্যক্তি উহা চিনিয়া লইবে ও স্বীকার
করিবে। অতঃপর তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইবে যে, ঐ সব নেয়ামতের প্রতিদানে তুমি
কি কাজ করিয়াছ? সে উত্তর করিবে তোমার সুন্তষ্টি লাভের জন্য জেহাদ করিয়াছি ও
শহীদ হইয়াছি। এরশাদ হইবে মিথ্যা বলিয়াছ? তোমাকে বীর পুরুষ বলিবে এই জন্যই
এই সব করিয়াছিলে।
সুতরাং তাহা-তো বলা হইয়াছে। তারপর তাহাকে আদেশ শুনানো হইবে। অতঃপর তাহাকে অধঃমুখী করিয়া টানিয়া জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইব।
দ্বিতীয় ঐ আলেমের বিচার হইবে যে এলেম
শিখিয়াছিল ও শিখাইয়াছিল এবং কোরআনে পাক পড়িয়াছিল। তাহাকে ডাকিয়া তাহার উপর
প্রদত্ত নেয়ামত সমূহ দেখানো হইবে। সে ব্যক্তিও স্বীকার করিবে। তারপর আল্লাহ
পাক জিজ্ঞাসা করিবেন ঐ সব নেয়ামতের পরিবর্তে তুমি কি আমল করিয়াছ? সে বলিবে
তোমার সুন্তুষ্টি বিধানের জন্য এলেম শিখিয়াছি ও শিখাইয়াছি এবং তোমার
রেজামন্দির আশায় কালামে পাক হাছেল করিয়াছি। উত্তর হইবে মিথ্যা বলিতেছ। তুমি
এইজন্য শিখিয়াছিলে যে, লোকে তোমাকে ক্বারী বলিবে। সুতরাং সেই মাকসুদ তো
পূর্ণ হইয়াছে। অতঃপর তাহাকে ফরমানে এলাহী শুনানো হইবে এবং তাহাকেও অধঃ মুখী
করিয়া টানিয়া জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।- (মেশকাত)
তৃতীয় ঐ ধনাট্য ব্যক্তি হইবে যাহাকে
আল্লাহ পাক প্রচুর পরিমাণ ধন সম্পদ দান কয়িাছেন তাহাকেও হাজির করিয়া নেয়ামত
সমূহের স্বীকারোক্তি লইয়া প্রশ্ন করা হইবে যে, তার প্রতিদানে তুমি কি আমল
করিয়াছে? সে আরজ করিবে, খোদায়ে পাক! তোমার মনোনীত যে কোন রাস্তায় আমি দান
করিতে ত্রুটি করি নাই। এরশাদ হইবে মিথ্যাবাদী ঐ সব তুমি এই জন্যই করিয়াছিলে
যে, লোকে তোমাকে দাতা বলিবে। তাহা তো বলাই হইয়াছে। তাহাকে ও নির্দেশ
মোতাবেক সজোরে টানিয়া জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে।- (মেশকাত)
সুতরাং মোবাল্লেগীনদের জন্য নিতান্তই
প্রয়োজন, তাঁহারা যেন যে কোন কাজ কর্ম আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও দ্বীনের
প্রচার এবং হুজুরে পাক (ছঃ) এর সুন্নাতের তাবেদারীর নিয়তেই করিয়া থাকেন।
(তাবলীগী নিসাব- ফাজায়েলে তাবলীগ ২৯-৩৩ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুন, শায়খের
ভূমিকায় লেখা তার নিজস্ব আক্বীদার সঙ্গে উল্লিখিত লেখার কোন মিল আছে কি?
শায়খের এই লেখা দ্বারা বুঝা যায় কুরআন ও সহীহ্ হাদীসের মানদন্ডে তার যে
নিজস্ব আক্বীদা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। আল্লাহ আমাদের সকলকে নির্ভেজাল তাওহীদের
প্রচার ও প্রতিষ্ঠা এবং সার্বিক ক্ষেত্রে শির্ক মুক্ত জীবন যাপন করার
তাওফীক দান করুন।
No comments:
Post a Comment