Monday, November 27, 2017

তাবলীগের চিল্লা পদ্ধতি নবোদ্ভাবিত বিদ‘আত

তাবলীগের চিল্লা পদ্ধতি নবোদ্ভাবিত বিদ‘আত


পাঠক! ‘চিল্লা’ ফারসী শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ ‘চল্লিশ দিনের বিশেষ গুরুত্ব রহিয়াছে। যেমন হাদীস শরীফে মাতৃ উদরে মানব জন্মের ধারা বাহিকতা প্রসঙ্গে বলা হইয়াছে, মানুষ চল্লিশ দিন যাবত বীর্যরূপে অবস্থান করে। অতঃপর চল্লিশ দিনে গোশত পিন্ডরূপ ধারণ করে। তারপর প্রতি ৪০ দিনে এক এক অবস্থায় রূপান্তরিত হইতে থাকে, এই কারণে ছুফী দরবেশদের নিকট চিল্লার একটি বিশেষ তাৎপর্য রহিয়াছে।
(ফাজায়েলে নামায পৃষ্ঠা-৬৬)’ (জামিউল লুগাত, ২৫৩ পৃঃ)। সূফী ও পীরদের পরিভাষায় ‘চিল্লা’ বলা হয় কোন একটি বিশেষ জায়গায় (অর্থাৎ খানকায়) অবস্থান করে কিছু বিশেষ ‘আমাল চল্লিশ দিন ধরে অভ্যাস করা। এই চিল্লার বিশদ নিয়ম জানতে হলে আশরাফ আলী থানবী (রহ.)-এর খাস উস্তাদ ইয়াকূব নানোতভী (জন্ম ১৩ সফর ১২৪৯ হিঃ, মৃত্যু ৩ রবিউল আউওয়াল ১৩০২ হিঃ)-এর মাকতুবাত ওয়া বিইয়াযে ইয়াকূবীর ২৩৮-২৩৯ পৃঃ দেখুন)। দেওবন্দি পীর-মুরিদীর বাহক প্রতিষ্ঠাতা তাবলীগী জামা‘আত জনাব ইলিয়াস ঐ চিল্লাকেই সুকৌশলে তাঁর তাবলীগী মিশনে লাগিয়েছেন। তবে তিনি চিল্লার একটু তারতম্য ঘটিয়েছেন। তা হল এই যে, তাঁদের তাবলীগী চিল্লা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কিংবা খানকায় বসে নয়, বরং তা তাবলীগী গাশত বা ঘোরাফেরায় হবে। বর্তমানে দেখা যায় তাবলীগী দা‘ওয়াতের পদ্ধতি নিম্নরূপ :
১। দ্বীনের দা‘ওয়াতের জন্য বিভিন্ন রকমের চিল্লা লাগানো।
২। নিজের পরিবার ও প্রতিবেশীকে দা‘ওয়াত না দিয়ে দূর-দূরান্তে দ্বীনের দা‘ওয়াতী কাজে বের হওয়া।
৩। দ্বীনের দা‘ওয়াতের কাজে সপ্তাহে একদিন, মাসে তিনদিন, বছরে ৪০ দিন, সারা জীবনে ১২০ দিন অর্থাৎ তিন চিল্লার সময় নির্দিষ্ট করে চিল্লা লাগানো।
এগুলো বিদ‘আত হবার কারণ হচ্ছে, রসূল (সাঃ) ও সহাবাগণ দ্বীনের দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে এ জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, বাৎসরিক ও আজীবনের জন্য নির্দিষ্ট সময় নিধারণ করেননি। আমরা কেন নতুন করে তা করতে যাব? বরং কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

{ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ}

‘‘আপনি আপনার প্রতিপালকের পথে আহবান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও সদুপদেশের মাধ্যমে।’’ (সূরা নাহল : ১২৫)

{لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْساً إِلاَّ وُسْعَهَا}

‘‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কাউকে কষ্ট দেন না।’’  (সূরা বাক্বারাহ : ২৮৬)

{فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ}

‘‘তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো।’’ (সূরা তাগাবূন : ১৬)
এ আয়াতগুলোর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, সাধ্যানুসারে হিকমাতের সাথে উপযুক্ত সময়ে দা‘ওয়াতের কাজ করা উচিৎ। এ ক্ষেত্রে বাধা-ধরা কোন সসয় চাপিয়ে দেয়া হয় নি। সর্বোপরি রসূল (সাঃ) থেকে এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এটি বিদ‘আত। কেননা রসূল (সাঃ) বলেন :

من احدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد

‘‘যে কেউ আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন অবাঞ্ছিত কিছু আবিষ্কার করল যা তাতে নেই, তা অবশ্যই প্রত্যাখ্যাত।’’  (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
আরেকটি বর্ণনা এসেছে :

من عمل عملا ليس عليه أمرنا فهو رد

‘‘যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যা আমাদের দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।’’ (সহীহ মুসলিম)
অতএব নিজের স্ত্রী এবং পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য অধিকারের দিকে খেয়াল না রেখে খালি হাতে তাদেরকে আল্লাহর উপর সোপর্দ করে দ্বীনের কাজের নামে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর দূরে থাকা বিদ‘আত। রসূল (সাঃ) এমনটি করেন নি। এমনকি যুদ্ধে যাবার সময়ও তিনি লটারীর মাধ্যমে বাছাই করা স্ত্রীকে সাথে করে নিয়ে গেছেন। অতএব সকল বিষয়ে রসূলের সুন্নাতকেই অাঁকড়ে ধরে নিজেকে বিদ‘আতমুক্ত রাখাটাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিৎ।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ