আল-কুরআনে ওয়াসীলার অর্থ
ইতোপূর্বে
ওয়াসীলার যে আভিধানিক অর্থ বর্ণনা করেছি সালাফ সালেহীন (পূর্বসুরী বিদ্বান
তথা সাহাবা ও তাবিঈগণ) কুরআনের উল্লেখিত ওয়াসীলাহ শব্দের অর্থ তাই করেছেন,
যা সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা অর্থের বহির্ভূত নয়। কুরআন
কারীমে দু’টি সূরার দু’টি আয়াতে ওয়াসীলাহ শব্দটি এসেছে। সূরা দু’টি হচ্ছে
মায়িদাহ ও ইসরা। আয়াত দু’টি নিম্নরূপ :
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ
آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي
سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ}
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং
তার নিকট ওয়াসীলা সন্ধান কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর, অবশ্যই মুক্তিপ্রাপ্ত
হবে।’’ (সূরা আল-মায়িদাহ ৩৫)
{أُولَئِكَ الَّذِينَ
يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ
وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ
كَانَ مَحْذُوراً}
‘‘তারা (কতিপয় জনগোষ্ঠী) যাদেরকে আহবান
করে, তারাই তাদের প্রতিপালকের নিকট ওয়াসীলা সন্ধান করে। কে তাদের অধিক
নিকটবর্তী; আর তারা (আল্লাহর) রহমতের আশা করে ও তার আযাবকে ভয় করে। নিশ্চয়ই
তোমার প্রতিপালকের আযাব ভীতিযোগ্য।’’ (সূরা আল-ইসরা ৫৭)
প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমামুল মুফাসসিরীন হাফিয ইবনু জারীর (রহ.) বলেছেন :
اتقوا الله اجيبوا الله فيما امر ونهاكم بالطاعة له في ذلك
তোমাদের প্রতি আরোপিত যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ মান্য করতঃ আনুগত্যের সাথে আল্লাহর ডাকে সাড়া দাও।
(وبتغوا إليه الوسيلة) واطلبوا القربة إليه بالعمل بما يرضيه
আল্লাহর নিকট নৈকট্য তালাশ কর তাঁকে
সন্তুষ্টকারী ‘আমালের মাধ্যমে। হাফিয ইবনু কাসীর ইবনু আব্বাস (রাযি.) থেকে
বর্ণনা করেছেন যে, ওয়াসীলার অর্থ নৈকট্য। অনুরূপ অর্থ সংকলিত হয়েছে
মুজাহিদ, হাসান, আবদুল্লাহ বিন কাসীর, সুদ্দী ইবনু যায়দ ও অপরাপর
মুফাসসিরগণ থেকে। ক্বাতাদাহ থেকেও এরূপ সংকলিত হয়েছে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জন
কর তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ও তাকে সন্তুষ্টকারী আমলের মাধ্যমে। অতঃপর ইবনু
কাসীর (রহ.) বলেন : এ সকল নেতৃস্থানীয় আলিমগণ আয়াতের তাফসীরে যা বলেছেন
এতে নির্ভরযোগ্য তাফসীরকারকদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই। আর তা হচ্ছে, এই যে,
ওয়াসীলা হচ্ছে ঐ বিষয় যার মধ্যমে অভীষ্ঠ লক্ষ্য উদ্দেশ্যে পৌঁছা যায়-
(তাফসীর ইবনু কাসীর ৫ম খন্ড, ৮৫ পৃঃ)। দ্বিতীয় আয়াতঃ বিশিষ্ট সহাবী ইবনু
মাস‘ঊদ (রাযি.) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়া সম্পর্কে যা বলেছেন, তাতে তার অর্থ
সুস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেছেন :
كان ناس من الإنس يعبدون ناسا من الجن فاسلم الجن وتمسك هولاء دينهم
কিছু সংখ্যক মানুষ কিছু সংখ্যক জ্বীনের
পূজা করত। অতঃপর পূজ্য জ্বীন সম্প্রদায় ইসলাম গ্রহণ করে। কিন্তু তারা (ঐ
মানব সম্প্রদায়) নিজেদের ধর্মে (জ্বীন পূজায়) বহাল থাকে। (সহীহ বুখারী)
হাফিয ইবনু হাজার (রহ.) বলেন, জ্বীন
পূজারী মানব সম্প্রদায় জ্বীন পূজায় বহাল থাকে, অথচ এ সকল জ্বীন তা পছন্দ
করত না। যেহেতু তারা ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর নিকট ওয়াসীলাহ কামনা করতে
শুরু করেছে। (ফাতহুল বারী, ৮ম খন্ড, ৩৯৭ পৃঃ)
উক্ত আয়াতের এটিই হচ্ছে নির্ভরযোগ্য
ব্যাখ্যা, যেমনটি ইমাম বুখারী ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) থেকে বর্ণনা পূর্বক তাঁর
সহীহ বুখারী গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন, ওয়াসীলাহ বলতে ঐ সকল বিষয়বস্তু
উদ্দেশ্য যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এ ব্যাপারে আয়াতটি
অত্যন্ত সুস্পষ্ট। এজন্য আল্লাহ বলেন, يبتغون
অর্থাৎ তারা সন্ধান করে এমন সব ‘আমাল যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা
যায়। দু’টি আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে সালাফদের (পূর্ববর্তী মুফাস্সিরদের)
থেকে যা সংকলন করেছি তা এরই নির্দেশ করে আরবী ভাষা (অভিধান) ও সঠিক বোধ
শক্তি। পক্ষান্তরে যারা এ আয়াত দু’টি থেকে নাবীগণ ও নেককারগণের অবয়ব
সত্তা আল্লাহর নিকট তাদের অধিকার ও সম্মানের ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা বৈধ হওয়ার
ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করে থাকে। তাদের ব্যাখ্যা বাতিল এবং বাক্যকে নিজের
স্থান থেকে বিকৃত করণ, শব্দকে তার প্রকাশ্য নির্দেশনা থেকে পরিবর্তন করণ ও
দলীলকে এমন অর্থে ব্যবহার করা যার সম্ভাবনা রাখে না। তদুপরি এমন অর্থ কোন
সালাফ বা সহাবা, তাবিঈ ও তাদের অনুসারীগণ বা গ্রহণযোগ্য কোন তাফসীরকারক
বলেননি।
প্রতিভাত হল যে, ওয়াসীলাহ শব্দের অর্থ ঐ
সৎকর্ম যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এবার এই সৎকর্মটি
শারী‘আত সম্মত কিনা জ্ঞাত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ আল্লাহ এ সকল ‘আমাল নির্বাচন
করার দায়িত্ব আমাদের দিকে সোপর্দ করেন নি, বা তা চিহ্নিত করার ভার আমাদের
বিবেক ও রুচির উপর ছাড়া হয়নি। কেননা এমনটি হলে ‘আমালে বৈপরীত্য তাই আল্লাহ
আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমলের ক্ষেত্রে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে এবং
তার নির্দেশনা ও শিক্ষার অনুসরণ করতে। কেননা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না কোন
বিষয় তাঁকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হল আল্লাহর নৈকট্য
অর্জন করার মাধ্যমগুলো জানা। আর তা এভাবে সম্ভব; প্রতিটি বিষয় আল্লাহ ও
তদীয় রসূল (সাঃ) যা প্রবর্তন করেছেন তার দিকে প্রত্যাবর্তন করা ।
ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, কোন ‘আমাল সৎ ও
কবূল হওয়ার জন্য তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে একনিষ্ঠ হতে হবে এবং আল্লাহর দেয়া
নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, তাওয়াস্সুল বা ওয়াসীলাহ
দু’ভাগে বিভক্ত।
১) التوسل الشرعى শারী‘আত সম্মত ওয়াসীলাহ :
২) التوسل البدعى বিদ‘আত ওয়াসীলাহ।
কুরআন-সুন্নাহ্কে অধ্যয়ন করে শারী‘আত
সম্মত ওয়াসীলাকে সাধারণত তিনভাগে বিভক্ত পাওয়া গেছে। (ক) আল্লাহর নাম ও তার
গুণাবলীর ওয়াসীলাহ। (খ) সৎ ‘আমালের ওয়াসীলাহ। (গ) সৎ ব্যক্তির দু‘আর
ওয়াসীলাহ। প্রকারগুলো এখানে দলীলসহ বিশদ বর্ণনা দেয়া হল :
প্রথমতঃ আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ওয়াসীলাহ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন :
{وَِللهِ الأَ(রাঃ)سْمَاءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ}
‘‘আর আল্লাহর অনেক সুন্দরতম নাম রয়েছে।
অতএব সেগুলোর ওয়াসীলায় তাঁকে আহবান কর এবং পরিত্যাগ কর তাদেরকে যারা
নামসমূহের ভিতর বিকৃতি সাধন করে।’’ (সূরা আ’রাফ ১৮০)
সুন্নাত হতে দলীল- নাবী (সাঃ) -এর বাণী :
اللهم بعلمك الغيب وقدرك على الخلق احينى ما علمت الحياة خيرا لى وتوفنى إذا علمت الوفاء خيرا لى
হে আল্লাহ! তোমার গায়িব জানা ও সৃষ্টির
উপর ক্ষমতার ওয়াসীলায় আমাকে জীবিত রাখ যে পর্যন্ত তুমি আমার জীবিত থাকা
কল্যাণজনক বলে জান। আর আমাকে মৃত্যু দাও যখন আমার জন্য মৃত্যুকে কল্যাণজনক
বলে জান। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ওয়াসীলাহ গ্রহণ করার নিয়ম। যেমন- মুসলিম ব্যক্তি তার দু‘আয় বলবে :
اللهم إنى اسالك بانك انت
الله الرحمن الرحيم العزيز الحكيم أن تعافيني أو يقول اللهم إنى اسالك
برحمتك التى وسعت كل شيئ ان ترحمنى وتغفرلى
‘‘হে আল্লাহ! তুমি প্রজ্ঞাময়,
পরাক্রমশালী, করুণাময়, কৃপানিধান তাই তারই ওয়াসীলায় তোমার নিকট সুস্থতা
চাই। অথবা বলবে, হে আল্লাহ! তোমার নিকট প্রার্থনা করছি তোমার ঐ অসীলার
রহমাতের যা সবকিছুকে বেষ্টন করে আছে। সুতরাং আমার উপর রহমাত কর এবং আমাকে
ক্ষমা করে দাও।’’
অথবা অনুরূপ আল্লাহর সুন্দরতম নাম ও গুণাবলীর অসীলার মাধ্যম ধরে দু‘আ করবে যেমন, নাবী (সাঃ) ইস্তিখারার দু‘আয় বলেছেন :
اللهم إنى استخيرك بعلمك وستقدرك بقدرتك واسالك من فضلك العظيم
হে আল্লাহ! তোমার জ্ঞানের ওয়াসীলায় আমি
তোমার নিকট কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং তোমার কুদরাত বা ক্ষমতার ওয়াসীলায়
তোমার নিকট ক্ষমতা চাই এবং তোমার সুমহান অনুগ্রহ চাই। (সহীহ বুখারী)
নাবী (সাঃ)-এর আর একটি বাণী :
يا حى ياقيوم برحمتك استغيث
হে চিরঞ্জীব! হে সর্বনিয়ন্তা! তোমার
রহমাতের ওয়াসীলায় সাহায্য ভিক্ষা করি। (হাদীসটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন,
হাদীসটি সহীহ, সহীহা-আলবানী-হা: ২২৭)
বিপদের দু‘আয় নাবী (সাঃ) বলেছেন :
اسالك اللهم بكل اسم هولك سميت به تفسك أو أنزلته في كتابك أو علمته أحدا من خلقك أو أستاثرت به فى علم الغيب عندك
হে আল্লাহ! তোমার নিকট সাহায্য চাই তোমার ঐ
নামের ওয়াসীলায় যার দ্বারা তুমি নিজেকে নামকরণ করেছ অথবা যা তোমার কিতাবে
অবতীর্ণ করেছ। অথবা সৃষ্ট জীবের মধ্যে তোমার কোন বান্দাকে শিক্ষা দিয়েছ
অথবা তোমার নিকট অদৃশ্যের জ্ঞান ভান্ডারে সংরক্ষিত রেখেছ। (মুসনাদে আহমাদ
১/৩৯১, হিসনুল মুসলিম-১৪৫ পৃ:)
নাবী (সাঃ) থেকে এ ধরনের আরো অনেক দু‘আ বর্ণিত রয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর নিকট সৎ ‘আমালের দ্বারা ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা :
ঐ সৎ আমল যার ভিতর কবুল হওয়ার শর্ত পরিপূর্ণ ভাবে বিদ্যমান। আর তা এরূপ যেমন দু‘আ কারী বলবে :
اللهم يإيمانى بك ومحبيى لك واتباعى ورسولك اغفرلى
‘‘হে আল্লাহ! তোমার প্রতি আমার ঈমান,
তোমার জন্য আমার ভালবাসা এবং তোমার রসূলের অনুসরণ ও অনুকরণের ওয়াসীলায়
আমাকে ক্ষমা করো।’’ আরো এরূপ শারী‘আত সম্মত দু‘আর ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা যায়। এ
সকল ওয়াসীলাহ নির্দেশনায় কুরআন থেকে আল্লাহ তা‘আলার কিছু বাণী উদ্ধৃত করা
হলো :
{رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ}
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চিতরূপে আমরা
ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের গুনাহ্সমূহ ক্ষমা কর এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে
রক্ষা কর।’’ (সূরা আল-ইমরান ১৬)
আর আল্লাহর বাণী :
{رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ}
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যা অবতীর্ণ
করেছ আমরা তার উপর ঈমান এনেছি এবং রসূলের অনুসরণ করেছি, অতএব সাক্ষ্য
প্রদানকারীদের (মুহাম্মাদী উম্মাতের সৎকর্মশীল বান্দাদের) দলে আমাদেরকে
লিপিবদ্ধ কর।’’ (সূরা আল-ইমরান ৫৩)
আল্লাহর আরো বলেন,
{رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِياً يُنَادِي لِلإِ(রাঃ)يمَانِ
أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا
وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الأَ(রাঃ)بْرَارِ}
‘‘হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমরা একজন
ঘোষণাকারীকে ঈমানের ঘোষণা করতে শুনেছি যে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের
প্রতি ঈমান আনো’। সে অনুযায়ী আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং হে আমাদের প্রতিপালক!
আমাদের গুনাহ্গুলো ক্ষমা কর এবং আমাদের থেকে আমাদের মন্দ কাজগুলো বিদূরিত
কর আর নেক বান্দাদের সঙ্গে শামিল করে আমাদের মৃত্যু ঘটাও।।’’ (সূরা আলু
ইমরান ১৯৩)
সুন্নাহ থেকে প্রমাণের ক্ষেত্রে বুরাইদাহ
বর্ণিত (রাযি.) হাদীস প্রণিধানযোগ্য : বুরাইদা (রাযি.) বলেন, নাবী (সাঃ) এক
ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এই ওয়াসীলাই চাচ্ছি যে,
আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি তুমি সেই আল্লাহ যিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত
উপাস্য নেই। তুমি একক মুখাপেক্ষীহীন, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে
জন্ম দেয়নি আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। এতদশ্রবণে নাবী (সাঃ) বললেন, এ ব্যক্তি
আল্লাহর নিকট তাঁর এমন সুমহান নামের ওয়াসীলায় আবেদন করেছে যে, তার মাধ্যমে
আবেদন করা হলে তিনি প্রদান করেন এবং প্রার্থনা করলে কবূল করেন- (হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন তিরমিযী ও ইবনু মাযাহ)। আর এ বিষয় সাক্ষ্য প্রদান করে তিন
ব্যক্তির ঘটনা সম্বলিত ‘আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ)-এর হাদীস। তারা এক গর্তে
প্রবেশ করে আশ্রয় নিলে একটি পাথর উপর থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে গর্তের মুখ বন্ধ
হয়ে যায়। এমতাবস্থায় তারা একে অপরকে বলল, তোমরা তোমাদের সৎ আমালসমূহের
ওয়াসীলাহয় আল্লাহর নিকট দু‘আ কর। অতঃপর তাদের একজন পিতা-মাতার সাথে সৎ
ব্যবহারের দ্বারা ওয়াসীলায় গ্রহণ করল। দ্বিতীয় ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে
অবাধ্যতার কাজ থেকে বিরত থাকার ওয়াসীলাহ গ্রহণ করল। তার চাচাতো বোনকে
আয়ত্বে পাওয়ার পর যখন সে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেয়, তখন সে আল্লাহর ভয়ে
তাকে ছেড়ে দেয়। তৃতীয় ব্যক্তি তার আমানতদারিতা ও সততার ওয়াসীলাহ গ্রহণ করল।
আর এভাবে এক শ্রমিক তার পারিশ্রমিক ছেড়ে চলে গেলে সে তার পারিশ্রমিক
সম্পদকে বিপুল পরিমাণ সম্পদে পরিণত করে। পরবর্তীকালে সে এসে তার সমস্ত
সম্পদ নিয়ে যায় কিছুই ছেড়ে যায়নি- (বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা
করেছেন)। এখানে ঘটনার সার অংশ উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনাটি মুসলিম ব্যক্তির
খুলুসিয়াত পূর্ণ ‘আমালের ওয়াসীলাহ গ্রহণ শরীআত সম্মত হওয়ার প্রতি নির্দেশ
করে।
তৃতীয়তঃ আল্লাহর নিকট সৎ ব্যক্তির দু‘আ ওয়াসীলাহ গ্রহণ :
যেমন মুসলিম ব্যক্তি চরম সঙ্কটে পড়লে বা
তার উপর পিবদ আপতিত হলে এবং নিজেকে আল্লাহর হক আদায়ের ত্রুটি সম্পন্ন মনে
করলে, সে আল্লাহর নিকট মযবূত উপায় গ্রহণ করতে ভালবাসে। এজন্য এমন ব্যক্তির
নিকট যায় যাকে সে, পরহেজগার, পরিশুদ্ধ, মর্যাদা ও কুরআন ওহাদীসের বিদ্যায়
অধিক উপযুক্ত মনে করে। তার নিকট বিপদ মুক্তির ও দুশ্চিন্তা দূরকরণের জন্য
আল্লাহর নিকট দু‘আ করার আবেদন করে। এ ব্যাপরে সুন্নাহ ও সহাবাগণের আচরণ
নির্দেশ করে।
সুন্নাহ থেকে দলীল :
‘আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে এক
পল্লীবাসী নাবী (সাঃ)-এর মিম্বারে খুৎবাহ দান কালে মাসজিদে প্রবেশ করে বলল,
হে আল্লাহ রসূল! আমাদের সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল, রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল,
অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন । তিনি যেন আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন।
নাবী (সাঃ) দু’ খানা হাত উঠিয়ে দু‘আ করলেন, এ পরিমাণ হাত উঠিয়েছিলেন যে,
আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা পর্যন্ত দেখেছিলাম। দু‘আটি এই :
اَللَّهُمَّ أَغِثْنَا اَللَّهُمَّ أَغِثْنَا اَللَّهُمَّ أَغِثْنَا
‘‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য বৃষ্টি দান কর,
হে আল্লাহ! আমাদের জন্য বৃষ্টি দান কর, হে আল্লাহ আমাদের জন্য বৃষ্টি দান
কর।’’ লোকেরাও হাত উঠিয়ে দু‘আ করলো।
আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম করে বলছি
(দু’আর পূর্বে) আমরা আসমানের ব্যাপক অংশ জুড়ে মেঘের একটি ও খন্ড দেখি নাই,
আমাদের মাঝে ও টিলার মাঝে কোন ঘরবাড়ী ছিলনা। দু‘আর পর রসূল (সাঃ)-এর পিছন
দিক থেকে মেঘ প্রকাশিত হল ঢালের ন্যায়। আসমানের মাঝমাঝি স্থানে এসে
চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বর্ষিত হলো। সেই জাতের কসম যার হাতে আমার জীবন!
নাবী (সাঃ) হাত রাখেনি যে পর্যন্ত মেঘমালা পাহাড়সম আকারে বিস্তৃতি লাভ না
করেছিল। অতঃপর মিম্বর থেকে অবতরণ করার পূর্বেই তাঁর দাড়ির পাশ দিয়ে বৃষ্টি
গড়িয়ে পড়তে দেখেছি। অতঃপর তিনি সলাত আদায় করলেন এবং আমরা সলাতান্তে বের
হলাম। পানিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ীতে পৌঁছলাম। দ্বিতীয় জুম্‘আহ পর্যন্ত এ
বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। অতঃপর ঐ পল্লীবাসী লোকটি কিংবা অন্য কোন লোক এসে বলল,
হে আল্লাহ রসূল (সাঃ)! আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাদের
বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। নাবী (সাঃ) মৃদু হাসলেন এবং তাঁর দু’খানা হাত উত্তোলন
পূর্বক বললেন :
اللهم حوالينا ولا علينا اللهم على الأكام والظراب وبطون الأودية ومنابت الشجر (متفق عليه)
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে বৃষ্টি
বর্ষণ করুন, আমাদের উপরে নয়। হে আল্লাহ! টিলার উপর, ছোট ছোট পাহাড়ের উপর
মাঠের ভিতর ও গাছ-পালা উৎপাদন স্থলগুলোতে। (বুখারী ও মুসলিম) মেঘ সরে গেল
এবং মাদ্বীনাহর পার্শ্বস্থ ভূমিতে বর্ষিত হতে লাগল মদ্বীনায় আর একটুও
বৃষ্টি বর্ষিত হলোনা।
সহাবাগণের ‘আমাল হতে প্রমাণ :
এ মর্মে হাদীসটিও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
লোকের যখন অনাবৃষ্টিতে ভুগত তখন ‘উমার (রাঃ) ‘আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের মাধ্যমে বৃষ্টি চাইতেন। তিনি বলতেন :
اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا قال : فيسقون) (رواه البخارى)
হে আল্লাহ! আমার নিকট আমাদের নাবীর
ওয়াসীলাহ ধারণ করলে আপনি আমাদের বৃষ্টি দিতেন, আর এখন আমরা আপনার নিটক
আমাদের নাবীর চাচার ওয়াসীলাহ ধারণ করছি। অতএব আমাদেরকে বৃষ্টি দান কর।
বর্ণনাকারী বলেন, ফলে তারা বৃষ্টি পাপ্ত হতো। (সহীহ বুখারী)
এর অর্থঃ আমরা আমাদের নাবীর শরণাপন্ন হতাম
এবং তাঁর নিকট দু‘আর আবেদন করতাম এবং তাঁর দু‘আর ওয়াসীলায় আল্লাহর নৈকট্য
কামনা করতাম। আর এখন যেহেতু তিনি ঊর্ধ্বতন বন্ধুর সান্নিধ্যে চলে গেছেন
(মৃত্যু বরণ করেছেন), সেহেতু আমাদের জন্য তাঁর পক্ষে দু‘আ করা সম্ভব নয়।
তাই আমরা নাবীর চাচার সম্মুখীন হচ্ছি এবং তার নিকট আমাদের জন্য দু‘আর আবেদন
করছি। এসব কথার অর্থ এই নয় যে, তারা তাদের দু‘আয় এরূপ বলত, হে আল্লাহ!
তোমার নাবীর সম্মানের অসীলায় আমাদেরকে বৃষ্টিদান কর, অতঃপর তার মৃত্যুর পর
বলতেন হে আল্লাহ! আব্বাস (রাঃ)-এর মান-মর্যাদার ওয়াসীলাহয় আমাদের বৃষ্টি
দান কর। কারণ এ ধররে দু‘আ বিদ‘আত। কুরআন ও সুন্নাহয় এর কোন ভিত্তি নেই।
এরূপ ওয়াসীলাহ পূর্বসুরী কোন বিদ্বান ধারণ করেননি। অনুরূপভাবে মু‘আবিয়া
(রাঃ)-এর যুগে ইয়াযীদ বিন আসঅদ (রহ.)-এর দু‘আর ওয়াসীলাহতে বৃষ্টি
চেয়েছিলেন। তিনি সম্মানিত তাবিঈগণের একজন ছিলেন, যদি ব্যক্তি সত্ত্বা
সম্মান ও মর্যাদার ওয়াসীলাহ ধারণ করা শারী‘আত সম্মত হতো ‘উমার ও মু‘আবিয়াহ
(রাঃ) আল্লাহ রসূল (সাঃ)-এর ওয়াসীলাহতে পানি চাওয়া বাদ দিয়ে ‘আব্বাস (রাঃ)-
ও ইয়াযীদ (রহ:)। এর ওয়াসীলাহ ধারণ করতেন না।
বিদ‘আতী ওয়াসীলাহ :
ইতোপূর্বে আমরা শারী‘আত সম্মত ওয়াসীলাহ ও
তার প্রকারভেদ দলীলসহ আলোচনা করেছি, এবার অন্যান্য ওয়াসীলাহ সম্পর্কে
আলোচনা করবো। যেমন কোন ব্যক্তির অধিকারে অর্থাৎ কোন ব্যক্তির মর্যাদার
ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা বিদ‘আতী ওয়াসীলাহ বৈ কিছু হতে পারে না। যে সম্পর্কে
আল্লাহর কিতাব ও নাবীর সুন্নাহ থেকে কোন নির্দেশনা নেই। এমনকি কোন সাহাবা ও
তাবেঈগণ এরূপ করেছেন বলে জানাও যায় নি। এসবই যথেষ্ট নবাস্কিৃত ওয়াসীলাহ যা
বাতিল প্রসারনিত হওয়ার ব্যাপারে। আর এ কারণেই অনেক গবেষক ইমাম ঐ ধরনের
ওয়াসীলাহকে অস্বীকার করেছেন। এ বিষয় মতানৈক্য পোষণকারীর কথার পতি ভ্রূক্ষেপ
করা যাবে না। কারণ তা দ্বীনের ভিতর নবাস্কিৃত ও বিদ‘আত যার নিষিদ্ধতা
সম্পর্কে কুরআনের ও সুন্নাহ সুস্পষ্ট দলীল রয়েছে।
ওয়াসীলাহ বিষয়ে কিছু সংশয় ও তার নিরসন :
ব্যক্তিসত্ত্বা ও মর্যাদার ওয়াসীলাহ ধারণ
বৈধ জ্ঞানকারীরা কিছু দলীল প্রমাণের আশ্রয় নিয়ে থাকে যার অবস্থা দ্বিবিধ।
হয় দলীল শুদ্ধ কিন্তু তারা এর অর্থ বিকৃত করে এবং এমন অর্থে ব্যবহার করে
যার সম্ভাবনা রাখে না। কিংবা দলীলগুলো দুর্বল ও বানোয়াট যার প্রতি নির্ভর
করা যায় না। এ দু‘টি বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্তভাবে কিছু আলোকপাত করবো। প্রথম
বিষয়টি হচ্ছে এমন সব দলীল যেগুলিকে এমন অর্ধে ব্যাবহার করা হয় যার সম্ভবনা
রাখেনা। ব্যক্তিসত্তার ওয়াসীলাহ ধারণ বৈধ জ্ঞানকারীগণ দু’টি হাদীস এমন
অর্থে ব্যবহার করে থাকেন এবং ধারণা করে থাকেন ঐ দু’টি তাদের মতের সমর্থনে
রয়েছে।
প্রথম হাদীস :
হাদীসটি ইমাম বুখারী (রহ.) আনাস (রাঃ)
থেকে বর্ণনা করেছেন। লোকেরা যখন অনাবৃষ্টির সম্মুখীন হতো, তখন ‘উমার (রাঃ)
‘আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব-এর ওয়াসীলায় বৃষ্টি চাইতেন। তিনি বললেন :
اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا قال : فيسقون) (رواه البخارى)
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট আমদের
নাবীর ওয়াসীলাহ ধারণ করলে তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতে, আর এখন আমরা তোমার
নিকট আমাদের নাবীর চাচার ওয়াসীলাহ ধারণ করিছ। অতএব তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি
দান কর। বর্ণনাকারী বলেন, ফলে তরা বৃষ্টি প্রাপ্ত হত (ইমাম বুখারী হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন)।
তারা এই হাদীস থেকে বুঝে থাকেন যে, ‘উমার
(রাঃ)-এর ওয়াসীলাহ ধারণ করার অর্থ ‘আব্বাস (রাঃ)-এর আল্লাহর নিকট সম্মান ও
মর্যাদার দ্বারা ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা। ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক ‘আব্বাস (রাঃ)-এর
ওয়াসীলাহ ধারণ মানে দু‘আয় শুধু তার নাম উল্লেখ করা এবং তাঁর বরাতে আল্লাহ
নিকট বৃষ্টি তলব করা। সমগ্র সাহাবা এ আচরণকে সমর্থন করেছিলেন। অতএব দাবীর
সপক্ষে এ হাদীসটি প্রামাণ বহন করছে। উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ গ্রহণ করা
পাঁচভাবে আগ্রাহ্য।
এক. যদি ব্যক্তি সত্তা ও
সম্মানের ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা শরী‘আত সম্মত হতো, তাহলে ‘উমার (রাঃ)
সৃষ্টিকুল শ্রেষ্ঠ রসূর (সাঃ)-এর দু‘আর ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা বিমুখ হয়ে
সম্মানের দিক থেকে তাঁর চেয়ে বহু নিম্ন পর্যায়ের আব্বাস (রাঃ) এর ওয়াসীলাহ
ধারন করার জন্য শরনাপন্ন হতেন না। কিন্তু উমার (রাঃ) এমনটি এজন্য করেছেন
কারণ, তিনি জানতেন যে, রসূল (সাঃ) এর দু‘আর অসীলাহ গ্রহণ করা শুধু তাঁর
জীবদ্দশায় সম্ভব ছিল। জীবদ্দশায় থাকাকালে তিনি তাদের জন্য আল্লাহর নিকট
দু‘আ করতেন। ফলে আল্লাহ তার দু‘আ কবূল করতেন, যেমনটি পল্লীবাসী লোকটার ঘটনা
থেকে জানা গেছে।
দুই. মানুষ চরম পর্যয়ের
কোন প্রয়োজনের সম্মুখীন হলে, স্বভাবতই সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বড় ধরণের
একটি মাধ্যম তালাশ করে, যা তাকে সেই উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম করতে পারে।
সুতরাং কিভাবে ‘উমার (রাঃ) রসূল (সাঃ)-এর মৃত্যুর পর তার ওয়াসীলাহ শারী‘আত
সম্মত হওয়া সত্ত্বেও পরিত্যাগ করতে পারেন? অথচ তারা ছিলেন খরা ও অনাবৃষ্টির
কারণে বিপর্যন্ত অবস্থায়। যার জন্য সেই বছরটির নাম আমুর রমাদ (ছাই-এর বছর)
বলা হয়।
তিন. হাদীসের শব্দ
নির্দেশ করে যে, ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক ‘আব্বাস (রাঃ)-এর ওয়াসীলাহ ধরা
একাধিকবার ঘটেছে। আর তা আনাস (রাঃ)-এর উক্তি দ্বারা যে, লোকেরা যখন খরার
সম্মুখীন হতো, তখন ‘উমার (রাঃ) ‘আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব-এর ওয়াসীলায়
বৃষ্টি চাইতেন। যদি এমনটি ঘটেও থাকে যে, ‘উমার (রাঃ) উত্তম ছেড়ে অধমের
শরনাপন্ন হয়েছেন, মেযনটি বিরোধীগণের ধারণা, তাহলে একবার ঘটার কথা বারংবার
ঘটার কথা নয়। কিন্তু দেখা যায় প্রতিবারেই ‘আব্বাস (রাঃ) শরণাপন্ন হয়েছেন।
একটিবারও নাবী (সাঃ)-এর শরণাপন্ন হননি।
চার. নিশ্চয়ই বিরোধীগণ আমাদের সাথে এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে ‘উমার (রাঃ)-এর বাণী اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا ‘‘আমরা তোমার নিটক আমাদের নাবীর ওয়াসীলাহ ধরতাম’’। অনুরূপভাবে তাঁর বাণীنتوسل إليك بعم نبينا আমরা তোমার নিকট আমাদের নাবীর চাচার ওয়াসীলাহ ধারণ করছি এতে একটি অব্যয় উহ্য রয়েছে। বিরোধিগণ বলেন, "بجاه نبينا" "بجاه عم نبينا" আমাদের নাবীর সম্মানের ওয়াসীলাহ এবং আমাদের নাবীর চার সম্মানের ওয়াসীলে শব্দ গুলি উহ্য মেনে থাকেন। আর আমরা بدعاء نبينا আমাদের নাবীর দু‘আর ওয়াসীলাহ এবং بدعاء عم نبينا
আমাদের নাবীর চাচার ওয়াসীলাহ শব্দগুলো উহ্য মানি। সংযোগশীল উহ্য অব্যয়টি
নির্ধারণের জন্য সুন্নাহ ও ঘটনার ভঙ্গির দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ‘উমার
(রাঃ) ও সাহাবাগণ যেহেতু নিজের বাড়ীতে বসে থেকে বলেননি।
ونتوسل إليك بعم نبيك
‘‘আমরা তোমার নিকট তোমার নাবীর চাচার
ওয়াসীলাহ ধারণ করছি’’ বরং তাঁরা ‘আবাবস (রাঃ)-কে নিয়ে সলাতের মাঝে বেরিয়ে
গিয়েছিলেন এবং সেখান গিয়ে দু‘আ করার জন্য তার নিকট আবেদন করেছিলেন। এ থেকে
প্রমাণিত হয় যে, অবস্থাটি ছিল দু‘আর অবস্থা। যদি ব্যক্তি সত্তা ও সম্মানের
ওয়াসীলাহ ধরার অবস্থা হতো, তাহলে তাদের জন্য ঘরে বসে রসূল (সাঃ)-এর
ওয়াসীলাহ ধারণ করা বেশি উপযুক্ত ছিল। কারণ ঊর্ধ্বতন বন্দুর (আল্লাহর)
সান্নিধ্যে গমনের ফলে তাঁর (রসূলের) সম্মান ও মর্যাদা পরিবর্তন হয়নি। ‘উমার
(রাঃ) ও সাহাবাগণ জানতেন যে, রসূল (সাঃ) এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছেন যা
ইন্তিকালের পূর্বের অবস্থার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। যখন রসূর তাদের মাঝে
বিদ্যমান ছিলেন তখন নাবী (সাঃ)-এর নিকট আসতেন এবং দু‘আ তলব করতেন। কিন্তু
মৃত্যুর পর বারযাখী জীবনে অবস্থান করেছেন, যে জীবনের প্রকৃতি ও ধরন একমাত্র
আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আর তা দুনিয়াবী জীবন ও তাঁর অবস্থা থেকে
সম্পূর্ণ ভিন্নতর।
পাঁচ. এরূপ ‘আমাল ও আচরণ
কতিপয় সাহাবা থেকেও প্রমাণিত। যেমন মু‘আবিয়াহ (রাঃ) কর্তৃক প্রসিদ্ধ তাবিঈ
ইয়াজিদ বিন আসওয়া (রহ:)-এর ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা। অনুরূপভাবে যাহহাক ও
ইয়াজিদ বিন আসওয়াদের সাথে যে আচরণ করেছিলেন। এসব আচরণ প্রমাণ করে যে, রসূল
(সাঃ)-এর তিত্মাধানের পর সাহাবাগণ তাঁকে ওয়াসীলাহ হিসাবে ধারণ করেন নি। বরং
তারা দু‘আ করতে সক্ষম জীবিত সৎ ব্যক্তির তালাশ করতেন এবং তাঁর নিকট
আল্লাহর দরবারে দু‘আ করার জন্য আবেদন করতেন। যদি ব্যক্তিসত্তা ও মর্যাদার
ওয়াসীলাহ গ্রহণ করা শারী‘আত সম্মত হতো, তবে সাহাবাগণ এ ধরনের ওয়াসীলাহ
ধারণে সবার চেয়ে অগ্রগামী হতেন। কারণ তাঁরা ক্ষুদ্র বৃহৎ সর্বক্ষেত্রে রসূল
(সাঃ)-এর অনুসরণে আগ্রহী ছিলেন। আর এমনটির অস্তিত্ব যদি তদানীন্তন কালে
থাকতো, তাহলে তারা তা আমাদের জন্য সঙ্কলন করতেন।
সম্মানিত পাঠক! এবার লক্ষ্য করুন, শাইখ যে
বলেছেন, ‘‘এত বড় বুযুর্গের সন্তুষ্টি বিধান, আমার পরকালের নাজাতের ওসীলাহ
হবে’’ তা কোন পযায়ে পড়ে।
No comments:
Post a Comment