আল্লাহ ওয়ালাদের ছোহবত
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ}
‘‘হে বিশ্বাসী বান্দাগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য বাদীদের সাথে থাক।’’ (তাওবাহ : ১১৯)
মোফাচ্ছেরীনগণ সত্যবাদীদের অর্থ এখানে
মাশায়েখ ও ছুফিয়ায়ে কেরাম দ্বারা করিয়াছেন। যখন কোন ব্যক্তি তাঁহাদের
সাহচর্য লাভ করেন তখন তাঁহাদের তরবিয়াত ও আল্লাহ প্রদত্ত শক্তির বদৌলতে সে
তারাক্বীর উচ্চ শিখরে আরোহন করিয়া যায়। হযরত শায়েখ আকবর (রঃ) লিখিয়াছেন,
তুমি যদি নিজের আমিত্বকে অন্যের আদেশের সম্মুখে বিলীন করতে না পার তবে
আজীবন সাধনা করিয়াও নিজের নফসের গোলামী হইতে নিস্কৃতী পাইবে না। অতএব যখনই
তোমার সম্মুখে এমন ব্যক্তির আবির্ভাব হয় যাঁহার ইজ্জত তোমার অন্তরে রহিয়াছে
তখনই তাঁহার খেদমতে লিপ্ত হও, তাঁহার সম্মুখে মুর্দার মত হইয়া থাক, তোমার
মস্ত খাহেশাতকে মিটাইয়া তাহার আদেশ পালনে ব্রতী হও। তাঁহার নিষেধ থেকে বিরত
থাক। তিনি যেই ব্যবস্থা করতে বলেন তাহাই কর। নিজের খাহেশে নয় বরং তাঁহার
হুকুমে। তিনি বসিতে বলিলে বসিয়া পড়। অতএব কামেল মোর্শদ তালাশ করিতে সচেষ্ট
হও, তিনি তোমাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছাইয়া দিবেন। উর্দুতে বলা হয়েছেتا كي تيرى ذات كو الله كى ذات سـﮯ ملادﮮ।’’
(তাবলীগী নিছাব, ফাজায়েলে আ‘মালের
ফাজায়েলে তাবলীগ বাংলাদেশ ৪৬ পৃষ্ঠা, সংশোধিত সংস্করণ- ১৮ মার্চ, ২০০৩ইং
তাবলীগী কুতুবখানা, চকবাজার, ঢাকা- ১২১১)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতৃমন্ডলী! আল-কুরআনে
মুসলিদের জন্য রসূল (সাঃ)’র পবিত্র সত্তাকে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ
বানিয়েছেন। আর তাঁরই আদর্শকে গ্রহণ করার জন্য গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি
(সাঃ) ছাড়া অন্য কোন সত্তা বা ব্যক্তি উম্মাতে মুসলিমার জন্য কামেল অর্থাৎ
পরিপূর্ণ অনুসরণীয় নয়, আর হতেও পারে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
১. {لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ}
‘‘(হে মু’মিনগণ!) তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের (জীবনের) মধ্যে উত্তম আদর্শ আছে। (আহযাব : ২১)
২. {وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ}
রসূল (সাঃ) তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক। (হাশর ৫৯ : ৭)
৩. {فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً}
কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা
মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার ভার
তোমার উপর ন্যস্ত না করে, অতঃপর তোমার ফয়সালার ব্যাপারে তাদের মনে কিছু
মাত্র কুণ্ঠাবোধ না থাকে, আর তারা তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সমর্পণ
করে। (আন-নিসা-৪:৬৫)
৪. {مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظاً}
যে রসূলের হুকুম মানল, সে তো আল্লাহরই
হুকুম মানল, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে (জোরপূর্বক তাকে সৎপথে আনার জন্য) আমি
তোমাকে তাদের প্রতি পাহারাদার করে পাঠাইনি। (আন-নিসা ৪:৮০)
আল কুরআনের উল্লিখিত আয়াত দ্বারা স্পষ্ট
হয়ে যায় যে, আনুগত্য এবং পরমাবারদারীর উপযুক্ত যদি কেউ থাকে তাহলে তিনি
হলেন একমাত্র রসূলের সত্তা, এ মর্মে কুরআন মাজীদের অগণিত আয়াত আছে। কিন্তু
কলেবর বৃদ্ধির ভয়ে যত সামান্য উদ্ধৃতি দেয়া হল, নাবী (সাঃ) ছাড়া অন্য কাউকে
উম্মাতে মুসরিমার জন্য আল্লাহ তা‘আলা নমুনা বানাননি। কোন আমল বিশুদ্ধ
হওয়ার জন্য শর্ত হল আমলটি নাবী (সাঃ)’র তরীকা মুতাবেক হতে হবে। যদি কোন আমল
তাঁর তরীকা বহির্ভূত হয় তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়, এই বৈশিষ্ট
আল্লাহ অন্য কারো জন্য নির্ধারণ করেননি। এ জন্য মুসিলম হওয়ার জন্য শর্ত হল
ব্যক্তি তার স্বীয় তামাস খয়েশাত অর্থাৎ তার প্রবৃত্তিকে নাবী (সাঃ) এর
তাবে বা অনুগত করে দিবে। নাবী (সাঃ) বলেন,
لا يومن احدكم حتى يكون هوا ه تبعا لما جئت به (ذكره النووي في الاربعين وعزاه إلى كتاب الحجة وصحح اسناده)
‘‘তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে
না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনীত বিষয়ের অনুগত হবে।’’ (ইমাম নববী ৪০
হাদীসের উল্লেখ করে কিতাবুল হুজ্জাহর উদ্ধৃতি দিয়ে তার সনদকে সহীহ বলেছেন)
সম্মানিত পাঠক! আল্লাহ রসূলের উল্লেখিত
নির্দেশ সামনে রেখে ফাযায়েলে তাবলীগের উপরোক্ত বক্তব্যগুলোর প্রতি একটু
দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন আর ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন। এবং অন্তরের
সঙ্কির্ণতা দূর করে বলুন, রসূলের উত্তম আদর্শের উপস্থিতিতে পুনরায় অন্য কোন
শায়খে কামেলের অনুসন্ধান করা যিনি আল্লাহর সঙ্গে মিলিয়ে দিবে। তার তাবলীগ
করা হচ্ছে। তাহলে রসূলের তরীকা কি যথেষ্ট নয়? তিনি কি আমাদের জন্য রাস্তা
দেখিযে যাননি? এটা আবার কোন শায়খে কামেল যাকে নিজের উপর তাছারফের (অন্যায়
হস্ত ক্ষেপের) পরিপূর্ণ ক্ষমতা দেয়ার তাবলীগ হচ্ছে? এটা আবার কোন শায়খ যাকে
রিসারাতের আসনে আসীন করা হচ্ছে? সে যে জিনিসের নির্দেশ দিবে তা বিনা দিধায়
মেনে নিতে হবে। আর যা নিষেধ করবে তা থেকে বিরত থাকতে হবে যখন এ অধিকার
আল্লাহ তা‘আলা শুধু নাবী (সাঃ)-কে দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment