Monday, November 27, 2017

উম্মাতের মতবিরোধ রহমত

উম্মাতের মতবিরোধ রহমত


 اختلاف امتى رحمة ‘‘উম্মাতের মতবিরোধ রহমত’’ যঈফ ও জাল হাদীসঃ ১/১০৬ পৃঃ, হাঃ ৫৭।
শাইখ সাহেব তার ফাজায়েলে তাবলীগে এ বিষয়ে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন। ‘আলিমদের মতবিরোধ রহমত স্বরূপ’ এছাড়া এ বিষয়ে তিনি একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থও রচনা করেছেন উল্লিখিত জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করে। এবার লক্ষ্য করুন, হাদীসটি কতটুকু সত্য।
আল্লামা আলবানী (রহ.) বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই এবং এই হাদীস নিজের অর্থের দিক থেকে সত্যপন্থী আলিমদের নিকট গ্রহণের অযোগ্য। ইবনু হাযাম এটাকে নিতান্তই বাজে কথা বলে ঘোষণা করেছেন। মানাবী সুবকীর উদ্ধৃতিতে বলেছেন,
এহাদীসটি মুহাদ্দিসগণের নিকট পরিচিত নয়, এটির কোন সহীহ, দুর্বল এমনকি জাল সনদ সম্পর্কেও অবহিত হতে পারিনি। (যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজঃ ১ম খন্ড, ১০৬ পৃঃ)
মহান আল্লাহ মতবিরোধ করতে নিষেধ করেছেন, তিনি বলেন :
{وَلاَ تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ}
‘‘নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ করো না করলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা পয়দা হবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তি নষ্ট হবে অর্থাৎ তোমাদের শক্তি হারিয়ে যাবে।’ (সূরা আনফাল ৪৬)
মহান আল্লাহ আরো বলেন :
{وَلاَ يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ، إِلاَّ مَنْ رَحِمَ رَبُّكَ}
‘‘তোমার পালনকর্তা যাদেরকে অনুগ্রহ করেন তারা ব্যতীত অন্যরা সর্বদাই মতভেদ করতেই থাকবে।’’ (সূরা হূদ ১১৮-১১৯)
তোমার প্রতিপালক যাদেরকে অনুগ্রহ করেন তারা মতভেদ করে না, সুতরাং যারা বাতিলপন্থী তারাই মতভেদ করে। তবে কোন বিবেক বলে যে মতভেদ রহমত? অতএব সাব্যস্ত হল যে, এই হাদীস বিশুদ্ধ নয়, না সনদের (সূত্রের) দিক দিয়ে আর না মতন (শব্দের) এর দিক দিয়ে। এ দ্বারা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এই হাদীসকে সংশয়ের উৎস বানানো বৈধ নয়। তথাপিও শাইখুল হাদীস সাহেব এটাকে বৈধ করার জন্য যা লিখেছেন পাঠক তা লক্ষ্য করুন!
‘‘এখানে একটি প্রশ্ন হইতে পারে যে, আলিমদের মতবিরোধই উম্মতের ধ্বংসের কারণ। ক্ষেত্র বিশেষে তাহা সত্য হইলেও ইহা দ্রুব সত্য যে, আলেমদের এই মত বিরোধ কোন নতুন নয়। পঞ্চাশ বা শত বৎসরের নয় বরং হুজুরের জামানা হইতে উক্ত এখতেলাফ চলিয়া আসিয়াছে। একদিন হুজুর (ছঃ) স্বীয় পাদুকা মোবারক হজরত আবু হোরায়রাকে নিদর্শন স্বরূপ দান করিয়া এই বাণী ঘোষনা করিতে পাঠাইলেন, যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়িবে সে নিশ্চয় বেহেশতে প্রবেশ করিবে। পথিমধ্যে হজরত ওমরের সহিত সাক্ষাৎ হইল। তিনি সব ঘটনা জিজ্ঞাসা করিলেন ও শুনিলেন। তবুও হজরত ওমর (রাঃ) আবুহোরায়রার বুকে উভয় হাত দ্বারা এত জোরে ধাক্কা দিলেন যে, তিনি মাটিতে বসিয়া গেলেন। কিন্তু এতদসত্বেও হজরত ওমরের বিরুদ্ধে কোন পোষ্টার বা বিজ্ঞাপন ছাপানো হয় নাই বা প্রতিবাদ সভা করিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে কোন প্রস্তাবও পাস হয় নাই। ছাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে এখতেলাফযুক্ত হাজার হাজার মাছায়েল রহিয়াছে। তদুপরি চারি ইমামের কাছে সম্ভবতঃ এমন কোন মাছআলা নাই যাহাতে কোন মতভেদ হয় নাই। চার রাকাত নামাজের মধ্যে নিয়ত হইতে আরম্ভ করিয়া ছালাম পর্যন্ত প্রায় দুইশত মাসায়েলের মধ্যে আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে মতবি-রোধ রহিয়াছে। তদুপরি কে জানে আরো কত এখতেলাফ রহিয়াছে, কিন্তু সাধারণতঃ রফে ইয়াদাইন (অর্থাৎ উভয় হাত উঠানো) ও জোরে আমীন বলা ইত্যাদি কয়েকটি মাছায়েল ব্যতীত অন্য কোন এখতেলাফ শুনাই-যায় না।
নাবীয়ে করীম (ছঃ) বলেন- অনুপযুক্ত লোক হইতে এলেম হাসেল করা উহাকে ধ্বংস করারই নামান্তর।
শেষে লিখেছেন :  ومن يتعد حدود الله فاولئك هم الظالمون
আল্লাহ পাক বলেন-যাহারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে তাহারাই জালেম।’’ (ফাজায়েলে তাবলীগ ৩৬-৩৭ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ্য করুন, মনগড়া আরবী প্রবাদকে হাদীস বানানোর জন্য তিনি প্রাণপন চেষ্টা করেছেন। এমনকি তার জন্য সহাবায়ে কেরাম এবং আইম্মায়ে দ্বীনের ও বর্তমান উলামায়ে কেরামের মতভেদকে একাকার করে দিয়েছেন। অথচ বিংশ শতাব্দীর হাদীস বিশারদ আল্লামা নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী (রহ.) বলেন : হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়, বরং তা বাতিল এবং তার কোন ভিত্তি নেই। আল্লামা সুবুকি বলেন : বরং তা বাতিল, আমি তার কোন ভিত্তি পাইনি- না সহীহ, না যঈফ, না জাল হাদীস। সহাবায়ে কেরামের মতভেদ সম্পর্কে আল্লামা আলবানী (রহ.) বলেন :
اختلاف اصحابى لكم رحمة
‘‘আমার সহাবাদের মতভেদ তোমাদের জন্য রহমত।’’
اصحابى كالنجوم فيايهم اقتم اهتديتم
‘‘আমার সহাবাগণ তারকারাজির ন্যায় তাদের যাকেই অনুসরণ করবে হিদায়াত পেয়ে যাবে।’’ এই দু’টি বাক্যই বিশুদ্ধ নয়, প্রথমটি মারাত্মক দুর্বল, আর দ্বিতীয়টি জাল। আমি সব কয়টিকে سلسلة احاديث الضعيفة والموضوعة গ্রন্থের ৫৮-৫৯, ৬১ নম্বরে যাচাই করে দেখেছি।  (সিফাতুস সালাতুন্নাবী (সাঃ) ৪১ পৃষ্ঠা)
এবার লক্ষ্য করুন! সহাবাদের মধ্যে যে মতভেদ ছিল ও চার ইমামের মতভেদ সম্পর্কে তিনি যা লিখেছেন উপরের রেখা যুক্ত অংশে তিনি পরবর্তী যুগের আলিমদের মতবিরোধকে উম্মাতের ধ্বংসের কারণ স্বীকার করেও সহাবায়ে কেরামদের সঙ্গে তাদের তুলনা করতে চেয়েছেন। অথচ তাদের ইখতিলাফ এবং আয়িম্মাকেরামের ইখতিলাফের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে যা দু’টি বিষয়ের ভিতর দিয়ে প্রকাশ পায়। এক- মতপার্থক্যের কারণ, দুই- তার প্রতিক্রিয়া। সহাবাদের মধ্যকার মতভেদ ছিল অনিবার্য কারণ সাপেক্ষে, যা তাদের বুঝের বেলায় স্বভাবগতভাবেই সংঘটিত হয়েছিল, ইচ্ছাকৃতভাবে নয়। এর সাথে আরো কিছু বিষয় যোগ হবে যা তাঁদের যুগে মতবিরোধকে অপরিহার্য করেছিল যা তৎপরবর্তীকালে দূর হয়ে যায়- (দেখুন- শাহ ওয়ালীউল্লাহ সাহেবের ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল ইজতিহাদি ওয়াত্তাক্বলীদ)। আর এটি এমন মতানৈক্য যা থেকে সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। উপরোক্ত আয়াত বা তার সমর্থবোধক আয়াতসমূহের নিন্দাও তাদেরকে পাবে না। কেননা এক্ষেত্রে জবাবদিহিতার শর্ত বিদ্যমান নেই। আর তা হচ্ছে ইচ্ছা বা পিড়াপিড়ি করে অটল থাকা। (যা পরবর্তী মাযহাবী মুকাল্লিদদের নীতি) কিন্তু বর্তমান যুগের অন্ধ অনুসরণকারীদের মধ্যকার মতভেদ এমন পর্যায়ের যাতে সাধারণত কোন ওযর নেই। কেননা তাদের কারো নিকট কখনও কুরআন হাদীসের এমন দলীল প্রকাশিত হয় যা সাধারণত তিনি যে মাযহাবের অনুসরণ করেন না তার সমর্থন করে তখন তিনি শুধু এজন্যই তা পরিত্যাগ করেন যে, এটি তার মাযহাবের বিপরীত অন্য কোন কারণে নয়। যার পরিণতি এই দাঁড়ায় যে, মাযহাবটাই তার কাছে যেন আসল অথবা এটাই সেই দ্বীন যা নিয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ) আগমন করেছেন, অন্য মাযহাব হচ্ছে ভিন্ন আর এক ধর্ম যা রহিত হয়ে গেছে।
পাঠক লক্ষ্য করুন, উপরোল্লিখিত অবস্থা কি বর্তমান আলিমদের ও ফিরকাবন্দী মাযহাবের নয়? সহাবাদের মতভেদ তো শেষ হয়ে যেত যখন তাদের সামনে কুরআন ও সহীহ হাদীস পেশ করা হত। মহান আল্লাহ বলেন :
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الأَ<مْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآ<خِرِ ذلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً}
‘‘হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতকে বিশ্বাস কর, তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রসূলের এবং তাদের, যারা তোমাদের ‘উলিল ‘আমর’ বা দায়িত্বশীল, কোন বিষয় তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপিত কর আল্লাহ ও রসূলের নিকট। তা-ই উত্তম এবং পরিণামের দিক দিয়ে ভাল।’ (সূরা নিসা ৫৯)
উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মতভেদের ক্ষেত্রে কুরআন ও সহীহ হাদীস পেলে সেই দিকে গিয়ে মতভেদ শেষ করতে হবে। তার ভুরি ভুরি প্রমাণ আমাদের নিকট আছে। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটি হাদীস নিসাবের লেখক শাইখুল হাদীস সাহেবের গ্রন্থ হিকায়াতে সহাবা থেকে পেশ করা হল। আল্লাহর রসূল (সাঃ) ইন্তিকালের সঙ্গে সঙ্গে যে কয়টি বড় ইখতিলাফ দেখা গিয়েছিল সহাবাগণ হাদীস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে আর মতভেদ বিদ্যমান ছিল না। দেখুন- আল্লাহর রসূল ইন্তিকাল হলে ‘উমার আত্মভোলা হয়ে ধৈর্যচ্যুত হয়ে যান। তিনি নাবী (সাঃ)-এর মুহাববাতে পেরেশান অবস্থায় উন্মুক্ত তরবারি হাতে ঘরের বাইরে এসে ঘোষণা করলেন, যে বলে আমার নাবীর ইন্তিকাল হয়েছে, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিব। তখন আবূ বাক্র (রাযি.) রসূলের কপালে চুমু দিলেন এবং খুৎবায় সকলকে সম্বোধন করে বললেন :
‘যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাঃ) -এর ইবাদত বা পূজা করতে চায় সে জেনে রাখুক, রসূলের ইন্তিকাল হয়ে গেছে। আর যে আল্লাহ তা‘আলার ‘ইবাদাত বা পূজা করতে চায় সে যেন জেনে নেয় যে, তিনি চিরন্তন ও অমর’। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন :
{وَمَا مُحَمَّدٌ إِلاَّ رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللهَ شَيْئاً وَسَيَجْزِي اللهُ الشَّاكِرِينَ}
‘‘মুহাম্মাদ (সাঃ) শুধুমাত্র একজন রসূল ছিলেন। তিনি তো কোন আল্লাহ নন যে, তার মৃত্যু হতে পারে না। তাঁর আগে আরো অনেক রসূল অতীত হয়ে গেছেন। অতএব তিনি যদি মারা যান অথবা শহীদ হন, তবে তোমরা কি ইসলাম ছেড়ে দিবে? হ্যাঁ তোমরা যদি ফিরে যাও তবে আল্লাহ তা‘আলার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা যারা কৃতজ্ঞ তাদের যথোপযুক্ত প্রতিদান দিবেন।’ (আলে ইমরান ১৪৪)
এছাড়া রসূলের ইন্তিকালের পর তার দাফন কোথায় হবে তা নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে হাদীস শুনানো হল, নাবী যেখানে ইন্তিকাল করেন সেখানেই তাঁর ক্ববর হয়। ফাতেমা (রাযি.) মিরাজ দাবী করলে তাকে রসূলের হাদীস শুনিয়ে দিলেন। নাবীদের কোন উত্তরাধিকারী নেই। তাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি সদাকার মাল হিসাবে গণ্য হাদীস শুনে নাবী দুহিতা চুপ হয়ে গেলেন। খিলাফত নিয়ে যখন মতভেদ দেখা দিল তখন সিদ্দিকে আকবর হাদীস শুনালেন- ‘আল আয়িম্মাতু মিনাল কুরায়শ’ অর্থাৎ খলীফা শুধু কুরায়শদের মধ্যে হতে হবে। বুঝা গেল কুরআন হাদীস শুনলে সহাবাদের মধ্যে আর কোন মতভেদ স্থান পেত না। এখন প্রশ্ন উঠে যে, শায়খ সাহেব লিখেছেন, চার ইমামের মধ্যে এমন কোন মাসআলা ছিল না যাতে মতভেদ ছিল না। তার নজরে নাকি চার রাক‘আত সলাতে ২০০ মাসায়েলের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা দিয়েছে। আমি বলব, আপনারা যদি সহাবা ও ইমামগণের অনুসৃত নীতি অবলম্বন করতেন, তাহলে মনে হয় কোন ইখতিলাফ থাকত না। যেমন ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন :
إذا صح الحديث فهو مذهبى
হাদীস বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হলে ওটাই আমার মাযহাব বলে পরিগণিত হবে। (ইবনু আবিদ্বীন-এর হাসিয়া ১ম খন্ড, ৬৩ পৃঃ)
ইবনুল আবিদ্বীন ইবনুল হুমামের উস্তাদ ইবনুশ শাহনা আল-কাবীরের شرح الهداية থেকে উদ্ধৃত করেন :
إذا صح الحديث وكان على المذهب عمل بالحديث ويكون ذلك مذهبه ولا يخرج مقلدين عن كونه حنفيا بالعمل به صح عن أبى حنيفة إنه قال إذا صح الحديث فهو مذهبي وقد حكى ذلك الإمام أبى عبد البر عن أبي حنيفة الائمة-
অর্থঃ যখন হাদীস বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হয়ে যাবে আর তা মাযহাবের বিপক্ষে থাকবে, তখন হাদীসের উপরেই ‘আমাল করা উচিৎ হবে এবং এটাই তার ইমামের মাযহাব বলে বিবেচিত হবে। উক্ত হাদীসের উপর ‘আমাল করাটা তাকে হানাফী মাযহাব থেকে বহিষ্কার করবে না। কেননা বিশুদ্ধ সূত্রে ইমাম আবূ হানীফা থেকে এসেছে যে, হাদীস বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হলে এটাই আমার অনুসৃত পথ বলে জানতে হবে। এ কথা ইমাম ইবনু আবদুল বার ইমাম আবূ হানীফা সহ অন্যান্য ইমামদের থেকেও বর্ণনা করেন।    (সিফাতুস সলাত পৃঃ ২৪)
সম্মানিত পাঠক! ভেবে দেখুন, তাবলীগী ভাইয়েরা যদি এ নীতি অবলম্বন করেন, তাহলে কি আর মতভেদ থাকে। যেখানে আল্লাহ বার বার কুরআনে মতভেদ করতে নিষেধ করলেন :
{وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعاً وَلاَ تَفَرَّقُوا}
‘‘তোমরা সকলে মিলে একত্রিতভাবে আল্লাহর দ্বীনকে মজবুত করে ধর এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ো না।’  (সূরা আল-ইমরান ১০৩)
এখনও কি ইখতিলাফকে তাবলীগী ভাইয়েরা রহমত মনে করবেন? প্রশ্ন জাগে ইকতিলাফ যদি রহমত হয়, তাহলে ইত্তিহাদ (ঐক্যবদ্ধ) হওয়াটা কি ‘আযাব হবে? তাহলে কি আযাব দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে বললেন? পরিশেষে বলতে চাই কুরআন ও সহীহ হাদীস মেনে চলুন, গোঁড়ামী ছাড়ুন, তাহলে সলাতে ২০০ জায়গায় আর মতবিরোধ দেখা দিবে না।
হাদীস বর্ণনায় ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.)-এর সতর্কতা
‘‘শাইখুল হাদীস সাহেব তার স্বীয় গ্রন্থ হিকায়াতে সহাবা নামক প্রবন্ধের ৬৫৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ ‘‘আবূ মুছা আশআরী (রাঃ) বলেন, আমারা যখন ইয়ামন হইতে মদ্বীনায় আগমন করি তখন দীর্ঘ দিন যাবত এবনে মাছউদ (রাঃ)-কে আমরা হুজুরে পাক (ছঃ) এর পরিবারভুক্ত লোক মনে করিতে থাকি। যেহেতু তিনি এবং তাঁহার মামা আপন ঘরের মতই হুজুর (ছঃ) এর ঘরে বেশী বেশী যাতায়াত করিতেন। (বোখারী) আবু ওমর শায়বানী (রাঃ) বলেন, হুজুর (ছঃ)-এর সঙ্গে এতবড় সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও আমি দীর্ঘ এক বৎসর যাবত এবনে মাছউদ (রাঃ) এর খেদমতে থাকিয়াও কোন দিন নাবীয়ে করীম (ছঃ) বলিয়াছেন এইরূপ উক্তি শুনি নাই। তবে কখনও যদি সেইরূপ বলিয়া ফেলিতেন তাহা হইলে তাঁহার শরীরে কম্পন আসিয়া যাইত। আমর বিন মায়মুন (রাঃ) বলেন, আমি এক বৎসর যাবত প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁহার খেদমতে হাজির হইতাম। এই দীর্ঘ দিনের মধ্যে কখনও ‘‘হুজুর বলিয়াছেন’’ এইরূপ উক্তি করেন নাই। হ্যাঁ, একবার তিনি বলিয়া ফেলিলেন, ‘‘নবীজী ইহা এরশাদ করিয়াছেন’’ এই কথা বলা মাত্র তাঁহার শরীরে কম্পন আসিয়া গেল, চক্ষু অশ্রুতে ভরিয়া গেল, কপালে ঘাম দেখা দিল, শিরাসমূহ ফুলিয়া উঠিল, আবার পরক্ষণেই বলিয়া উঠিলেন, ইনশাআল্লাহ হুজুর (ছঃ) এইরূপ বলিয়াছেন অথবা ইহার কাছাকাছি কিছু বলিয়াছেন অথবা ইহার চেয়ে কিছু কম বা বেশী বলিয়াছেন। (মসনদে আহমদ)
হাদীছ বর্ণনায় ছাসাবাদের ইহাই ছিল নিদর্শন। কেননা হুজুর (ছঃ) বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হইতে কোন মিথ্যা বর্ণনা করিবে সে যেন আপন ঠিকানা জাহান্নামে ঠিক করিয়া লয়। এই ভয়েই ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) হুজুর (ছঃ) এর বর্ণিত আদেশ নিষেধ বর্ণনা করিতেন সত্য কিন্তু হুজুর (ছঃ) এইরূপ বলিয়াছেন, এই রকম স্পষ্ট ভাষা ব্যবহার করিতেন না। কেননা হয়ত অবাস্তব কোন কথা মুখ হইতে বাহির হইয়া পড়ে নাকি। এই অবস্থায় সহিত আমরা নিজেদেরকে যেন একটু যাঁচাই করিয়া লই, কেননা হাদীছ বর্ণনা করা বহুত দায়িত্বের ব্যাপার। হানাফী মাজহাবের অধিকাংশ মাছায়েল আব্দুল্লাহ বিন মাছউদ (রাঃ) এর রেওয়ায়েত হইতেই সংগৃহীত।’’ (হিকায়াতে সহাবা ৬৫৭-৬৫৮)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ