Monday, November 27, 2017

রমাযানের ফাযীলাত (প্রথম পরিচ্ছেদ)

রমাযানের ফাযীলাত (প্রথম পরিচ্ছেদ)


শায়খ সাহেব ফাজায়েলে রমজানের প্রথম পরিচ্ছেদের প্রথমেই একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তার শেষে আরবীতে মন্তব্য লিখেছেন। কিন্তু উর্দূতে তার অনুবাদ করেন নি এবং বাংলায় যিনি অনুবাদ করেছেন তিনি হলেন মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ (এম, এ রিসার্চ স্কলার) তিনিও আরবী মন্তব্যটির অনুবাদ করেন নি। আমরা তার লিখিত অনুবাদটি হুবহু তুলে ধরছি এবং হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের মতামত পাঠকের সামনে তুলে ধরছি-
‘‘হযরত ছালমান (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন,
প্রিয় নবীয়ে করীম (ছঃ) শা’বানের শেষ তারিখে আমাদিগকে নছীহত করিয়াছেন যে, তোমাদের মাথার উপর এমন একটি মর্যাদাশীল মোবারক মাস চায়া স্বরূপ আসিতেছে যাহার মধ্যে শবে ক্বদর নামে একটি রাত্রি আছে যাহা সহস্র মাস হইতেও উত্তম। আল্লাহ তা‘আলা রোজা তোমাদের উপর ফরজ করিয়াছেন এবং রাত্রি জাগরণ অর্থাৎ তারাবীহ পড়কে তোমাদের জন্য পুণ্যের কাজ দিয়াছেন। যে ব্যক্তি এই মাসে কোন নফল আদায় করিল সে যেন রমজানের বাহিরে একটি ফরজ আদায় করিল। আর যে এই মাসে একটি ফরজ আদায় করিল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করিল।
হুজুর (ছঃ) আরও বলেন, ইহা ছবরের মাস এবং ছবরের পরিবর্তে আল্লাহ পাক বেহেশত রাখিয়াছেন। ইহা মানুষের সহিত সহানুভূতি করিবার মাস। এই মাসে মোমেন লোকদের রিজিক বাড়াইয়া দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাইবে সে ব্যক্তির জন্য উহা গুনাহ মাফের ও দোজখের অগ্নি হইতে নাজাতের কারণ হইয়া দাঁড়াইবে এবং উক্ত রোজাদাদের ছাওয়াবের সমতুল্য ছওয়াব সে ব্যক্তি লাভ করিবে অথচ সেই রোজাদারের ছওয়াব বিন্দুমাত্রও কম হইবে না। ছাহাবারা জিজ্ঞাসা করিলেন হে আল্লাহ নাবী! আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই সামর্থ নাই যে সে অপরকে ইফতার করাইবে অর্থাৎ পেট ভর্তি করিয়া খাওয়াইবে, হুজুর (ছঃ) বলেন, পেট ভর্তি করিয়া খাওয়ানো জরুরী নয়, যে ব্যক্তি কাহাকেও একটি খেজুর দ্বারা ইফতার করাইবে আল্লাহ পাক তাহাকেও উক্ত ছওয়াব প্রদান করিবেন।
হুজুর (ছঃ) আরও বলেন, ইহা এমন একটি মাস যাহার প্রথম দিকে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়, দ্বিতীয়াংশে মাগফেরাত ও তৃতীয়াংশে দোযখ হইতে মুক্তি দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি উক্ত মাসে আপন গোলাম ও মজদুর হইতে কাজের বোঝা হালকা করিয়া দেয়, আল্লাহ পাক তাহাকে মাফ করিয়া দিবেন......। বাইহাকী ইবনু খুযাইমাহর বরাতে উল্লিখিত হাদীসটির শেষে ‘ফায়েদার’ মধ্যে শায়খ জাকারিয়া লিখেছেন, উক্ত হাদীছের কোন কোন বর্ণনাকারী, সম্পর্কে মুহাদ্দেসীনেগণ কিছুটা মত বিরোধ করিলেও ফজীলত সম্পর্কীয় হাদীসে ঐ সব দুর্বলতা গ্রহণযোগ্য নয়,  (ফাজায়েলে রমজান- ৪৭৪-৭৫ পৃঃ)
শাইখ স্বীকার করেছেন যে, উক্ত হাদীস সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনগণ কিছুটা মতবিরোধ করেছেন এবং দুর্বল বলেছেন। তথাপিও তিনি ফায়ায়িলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস চলে বলে কথাটি উড়িয়ে দিয়েছেন। এ বিষয় আমার পাঠকবর্গকে এই বইয়ের যঈফ হাদীস মানার শর্ত সংক্রান্ত অধ্যায় পড়ার অনুরোধ করছি এবং হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনের মতামত তুলে ধরছি।
হাদীসটি মুনকার : (মারফূ হাদীসের বিপরীতে অধিকতর দুর্বল হাদীসকে মুনকার বলা হয়। মুনকার হাদীস ত্রুটিযুক্ত) সহীহ ইবনে খুযাইমাহ ক্রমিক নং, ১৮৮৭। তাহক্বীক ড. মুহাম্মাদ মুস্তাফা আল-আযমী, তিনি হাদীসের সনদকে যঈফ বলেছেন। আলবানী ‘‘ফাতহুর রববানী’ ৯/২৩৩ গ্রন্থে বলেছেন, হাদীসটি ইবনে খুযাইমাহ তার ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন; অতঃপর বলেছেন যে, (ان صح الخبر) হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আবূ শাইখ ইবনে হিববান ‘সওয়াব’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন হাদীসের সনদে আলী ইবনে যায়েদ বিন জাদআন যঈফ রাবী। এছাড়াও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, মিশকাত ক্রমিক নং ১৯৬৫ হাতক্বীকে আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফ, ৮৭১।
আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী বলেন, হাদীসের সনদটি আলী বিন যায়েদ বিন জাদআন এর কারণে যঈফ। কেননা সে হলো যঈফ রাবী। ইমাম আহমাদ ও অন্যান্যরাও তাকে যঈফ বলেছেন। এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনু খুযাইমাহ বলেছেন, তার স্মৃতি দুর্বলতার কারণে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না।’’ (গৃহীত সহীহ ও যঈফ হাদীসের আলোকে সিয়াম ও রমাযান পৃঃ- ২৩)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ