ফাযায়েলে আমল, না মাসায়েলে আমল?
‘‘হযরত
ছায়ীদ বিন্ মোছাইয়্যেব (রহঃ) একজন বিখ্যাত তাবেয়ী ও মোহাদ্দেছ ছিলেন।
আব্দুল্লাহ বিন আবি বেদাআ তাঁহার খেদমতে বেশী বেশী আগমন করিতেন। এক সময়
কয়েকদিন যাবত অনুপস্থিত থাকার পর হঠাৎ হাজির হওয়ায় হজরত ছায়ীদ (রহঃ)
তাঁহাকে অনুপস্থিত থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। আব্দুল্লাহ বলিলেন, আমার
বিবির এন্তেকাল হইয়া গিয়াছিল তাই বিভিন্ন ঝামেলায় ব্যস্ত ছিলাম। হজরত ছায়ীদ
বলিলেন,
আমাকে খবর দিলেই ত আমি জানাজায় শরীক হইতে পারিতাম। তারপর তিনি যখন
উঠিয়া যাইতেছিলেন হজরত ছায়ীদ জিজ্ঞাসা করিলেন, অন্য বিবাহ করিয়াছ কি?
তিনি বলিলেন হজরত! আমার আমদানী হইল মাত্র
দুই তিন আনা আমার নিকট কে বিবাহ দিবে? হজরত ছায়ীদ বলিলেন, আমি দিব। এই
বলিয়া তিনি খোত্বা পড়িয়া দশ বার আনা মোহরের বিনিময়ে আপন বেটীকে আমার নিকট
বিবাহ দিইয়া দিলেন। (ইহা তাঁহার নিকট জাযেজ ছিল, কিন্তু হানাফী মাজহাব মতে
মোহর আড়াই টাকার কম জায়েজ নাই)। (ফাজায়েলে জিকির ৪৪৪-৪৪৫)
সম্মানিত পাঠক! শাইখ ফাজায়েলের মধ্যে
মাসায়েল লিখতে গিয় যেন বিপদেই পড়েছেন। কারণ তিনি একজন হানাফী মুকাল্লিদ।
তাই একজন মুহাদ্দিসের হাদীস সম্মত ফায়সালাকে গ্রহণ করতে না পেরে দু্ই
বন্ধনীর মধ্যে যে ফাতওয়াটা দিলেন তা কুরআন-হাদীসের অনুকূলে না প্রতিকূলে তা
দেখার সুযোগও মনে হয় তার হয়নি। উল্লিখিত ফাতওয়া দেখে মনে হয় হানাফী
মাযহাবটা তার দৃষ্টিতে কুরআন-হাদীস বিরোধী। তা না হলে নিজে মুহাদ্দিস হয়ে,
একজন মুহাদ্দিসের মর্যাদাকে শিকার করে তার হাদীসের পক্ষের ফায়সালাকে কেমন
করে মাযহাবের দোহাই দিয়ে উড়িয়ে দিলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। অথচ মহামতি
ইমাম আবূ হানীফা নু‘মান বিন সাবিত (রহ.) বলেছেন :
اذا صح الحديث فهو مذهبى
অর্থাৎ হাদীস বিশুদ্ধ হলে ওটাই আমার মাযহাব বলে পরিগণিত হবে। (ইবনু আবিদ্বীন এর হাশিয়া, ১ম খন্ড, ৬৩ পৃঃ)
তিনি আরো বলেন, মানুষের মাঝে যত দিন
হাদীসের তলব থাকবে, ততদিন তাদের কল্যাণ হবে। যখনই তারা হাদীস বর্জিত জ্ঞান
চর্চা শুরু করবে তখনই তারা বরবাদ হবে। (মীযানুল কুবরা, ১ম খন্ড, ১ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! এবার লক্ষ্য করুন মোহর সক্রান্ত বিষয়ে সহীহ হাদীসের ফায়সালা কি?
সাহল ইবনে সাদ বলেন, আমি নাবী (সাঃ)’র
নিকটে লোকদের সাথে বসা ছিলাম। এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! সে
(আমি) নিজেকে বিবাহের জন্য আপনার নিকট হেবা করছি, এ সম্পর্কে আপনার মত দিন।
নাবী (সাঃ) তাকে কোন উত্তর দিরেন না। তিনবার একই প্রশ্ন করলে আল্লাহর রসূল
নিরুউত্তরে রইলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! তাকে
আমার সাথে বিবাহ দিন। নাবী (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন : তোমার কাছে কিছু আছে
কি? সে উত্তম দিল, না। নাবী (সাঃ) বললেন, যাও এবং খুঁজে দেখ, কিছু যোগাড়
করতে পার কিনা, তা লোহার একটি আংটি হলেও। লোকটি খোঁজ করল এবং ফিরে এসে বলল,
আমি কিছুই যোগাড় করতে পারলাম না, এমনকি একটি লোহার আংটিও নয়। নাবী বললেন,
তুমি কি কুরআনের কিছু মুখস্ত করেছ? সে উত্তর দিল, আমি উমুক অমুক সূরা জানি।
নাবী বললেন, যাও, তুমি যে পরিমাণ কুরআন জান তার বিনিময়ে আমি তাকে তোমার
সাথে বিবাহ দিলাম। (সহীহ আল বুখারী- কিতাবুন নিকাহ)
অন্য হাদীসে এসেছে,
عن سهل بن سعيد أن النبى صلى الله عليه وسلم قال لرجل تزوج ولو ختم من حديد
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী
(সাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি বিবাহ কর, মোহরানা হিসাবে একটি লোহার আংটির
বিনিময়ে হলেও। (সহীহ আল বুখারী- কিতাবুন নিকাহ)
No comments:
Post a Comment