Monday, November 27, 2017

তাবলীগী জামা‘আতের অভিনব গাশ্ত পদ্ধতি

তাবলীগী জামা‘আতের অভিনব গাশ্ত পদ্ধতি


তাবলীগী ভাইয়েরা তাঁদের তাবলীগের ব্যাপারে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করেন। বিশেষ করে যে, মাসজিদে অবস্থান করেন, সেখান থেকে আসর বাদ কিছু মুসল্লী একসঙ্গে বের হন দা‘ওয়াত দেয়ার জন্য। যাকে তারা উমুমি গাশ্ত বলেন। এই ঘোরাফেরাকে ফারসী ভাষায় ‘গাশ্ত’ বলা হয়। তাবলীগী গশ্তের ক্ষেত্রে তাবলীগী মরুববীগণ কতিপয় নিয়ম আবিষ্কার করেছেন। যথা :
১) আমীর,
২) রাহবার বা পথপ্রদর্শক,
৩) মুতাকাল্লিম (বক্তা) নির্বাচন।
এই তিন রকম ব্যক্তি অর্থাৎ
পরামর্শের নেতা বা জামা‘আতের পরিচালক আমীর এবং পথ দেখাবার দায়িত্বশীল রাহবার ও কথা বলার দায়িত্বে মুতাকাল্লিম নির্বাচন তাঁদের মনগড়া কাজ বলে মনে হয়। কারণ কোথাও কোন দল প্রেরণের সময় নেতা একজনকেই নির্বাচন করা রসূলুল্লাহ-এর সুন্নাত। একই দলের তিনজনকে তিন রকম দায়িত্ব দেবার নিয়ম সুন্নাতে মরুববী, মুহাম্মাদী সুন্নাত নয়। তাই দ্বীন ইসলামের তাবলীগী গাশ্তের একজন আমীরের নির্বাচন হবে। যিনি বিদ্যায় ও বুদ্ধিতে যোগ্য এবং পারতপক্ষে বয়স্ক ও অভিজ্ঞ হবেন। এখন প্রশ্ন হলো যে, ঐ গাশ্ত কোথায় হবে? নিজ নিজ গ্রামে, না দেশের বিভিন্ন জেলায়, না বিদেশে? এক্ষেত্রে আমরা এখন যাচাই করে দেখব কুরআন ও হাদীস রসূল (সাঃ) কীভাবে এ কাজটি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল-কুরআন দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাবলীগের ক্ষেত্র পর্যায়ক্রমে তিন রকম হবে। যেমন আল্লাহ তার নাবী (সাঃ)-কে বলেন :

{وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ}
‘‘নিকটাত্মীয়বর্গকে সতর্ক করে দিন।’’ (সূরা আশ-শু‘আরা ২১৪)
এ আয়াত প্রমাণ করে যে, তাবলীগের প্রথম ক্ষেত্র হবে নিজের ঘর-বাড়ী ও পাড়া-প্রতিবেশী। দ্বিতীয় পর্যায় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :

{وَهَذَا كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُصَدِّقُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا}

‘‘আমি এ কল্যাণময় কিতাব নাযিল করেছি যা তার পূর্বেকার কিতাবের সমর্থক এবং যা দ্বারা আপনি মক্কাহ ও তার চর্তুপার্শ্বের লোকদের কে সতর্ক করুন।  (সূরা আল-আন‘আম ৯২)
এ আয়াত প্রমাণ করে যে, নিজের ঘর-বাড়ী ও পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে আল্লাহ ও জাহান্নাম প্রভৃতির ভয় দেখানোর পর ঐ পরিধি একটু বাড়িয়ে শহর ও শহরতলীতে বিস্তৃত হবে। তৃতীয় পর্যায় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :

{قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعاً}

‘‘হে রসূল! বলে দিন, হে মানব সমাজ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল বা দূত।    (সূরা আল-আ‘রাফ ১৫৮)

এ আয়াত প্রমাণ করে যে, প্রথম ও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তাবলীগের কাজ শেষ হলে, তবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে হবে। এটা রসূলের নায়েবদের দায়িত্ব সাধারণের নয়। সাধারণ জনগণকে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَاراً}

‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নমের আগুন থেকে বাঁচাও।’’ (সূরা আত-তাহরীম ৬)
এ আয়াতটি প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক ঈমানদারই নিজেকে এবং তার পরিবারবর্গকে দ্বীন ইসলামের তাবলীগ করবে। বর্তমানে শেষ রসূল ইহজগতে আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। তাই উপরোক্ত প্রথম দু’টি আয়াতের ভাবার্থ প্রমাণ করে যে, নায়েবে রসূল যাঁরা তাঁদের কর্তব্য হচ্ছে নিজেদের নিকটবর্তী আত্মীয় ও পাড়া-প্রতিবেশীদের আল্লাহ এবং জাহান্নামের ভয় দেখানো। এ কাজটি প্রত্যেক মাসজিদ থেকে সম্ভব হত, যদি আমাদের মাসজিদের খুৎবাহ মাতৃভাষায় দেয়া হত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কথিত কিছু গোঁড়া মৌলভীদের ফাতাওয়ার কারণে বাংলাভাষী মুসলিম জনগণ প্রতি সপ্তাহে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। তাদের বক্তব্য হল, আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুৎবাহ দেয়া যাবে না। অথচ মহান আল্লাহ সূরা ইবরাহীমের ৪ নং আয়াতে বলেন : ‘‘আমি প্রত্যেক রসূলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’’ আর আল্লাহর রসূল (সাঃ) তাঁর মাতৃভাষায় খুৎবাহ দিতেন এবং তাঁর সম্মুখের শ্রোতাদেরকে বুঝিয়ে দিতেন তাদের ভাষায়। সুতরাং আমাদেরকেও রসূলের অনুসরণে মাতৃভাষায় খুৎবার মাধ্যমে জনগণকে খুৎবার বিষয়বস্ত্ত বুঝিয়ে দিতে হবে এটাই রসূলের সুন্নাত। এজন্য দেখা যায় ৪০ বৎসর খুৎবা (ওয়াজ) শুনে জনগণ ৪টি মাসআলাও শিখতে পারে নি। অথচ খুৎবার (ওয়াজের) উদ্দেশ্যই ছিল জনগণকে সপ্তাহে একদিন দ্বীনী ‘ইলম শিক্ষা দেয়া। আল্লাহ যেন আমাদের ওলামায়ে কিরামদের সঠিক বুঝ দান করেন।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ