Monday, November 27, 2017

ঊনপঞ্চাশ কোটি ফযীলতের হাক্বীকাত

ঊনপঞ্চাশ কোটি ফযীলতের হাক্বীকাত


আমাদের প্রচলিত তাবলীগী ভাইদের ৬নং এর শেষ নাম্বার হ’ল ‘দাওয়াত ও তাবলীগ’ যার ফাযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে তাবলীগী ভাইদের মুখ থেকে শোনা যায়, এ রাস্তায় বের হয়ে অর্থাৎ তাবলীগী জামা‘আতের সহিত বের হলে প্রতিটি আমলের বিনিময় নাকী ঊনপঞ্চাশ কোটি সওয়াব পাওয়া যায় যেমন তারা বলে যদি কেউ তাবলীগে বের হয়ে এক রাক‘আত সলাত আদায় করে তাহলে সে ঊনপঞ্চাশ কোটি সলাত আদায় করার সওয়াব পায়। একবার ‘সুবহান আল্লাহ’ বললেও
নাকী ঊনপঞ্চাশ কোটি বার ‘সুবহান আল্লাহ’ বলার সওয়াব পাওয়া যায়। অথচ আমরা দেখতে পাই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত বায়তুল্লাহ অর্থাৎ কাবায় এক রাক‘আত সলাত আদায় করলে লক্ষ রাক‘আত সলাতের সওয়াব পাওয়া যায় আর মাসজিদে নাববীতে সলাত আদায় করলে পঞ্চাশ হাজার রাক‘আত সলাতের সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু উপরোক্ত ঊনপঞ্চশ কোটি ফযীলতের কোন সহীহ দলীল খুজে পাওয়া যায় না। তাবলীগী মুরববীদের নিকট দলীল চাইলে তারা বলেন, এটা দু’টি হাদীসের গুণ ফলের সমষ্টিকে বুঝান হয়। আমরা উল্লিখিত দু’টি হাদীস যাচাই করে দেখলাম হাদীস দু’টি বিশুদ্ধ নয় বরং য‘ঈফ বা দুর্বল হাদীস। দ্বিতীয়তঃ দু’ হাদীসে দু’রকম ফযীলাত বর্ণিত হয়েছে।
অতএব পাঠক ভাই ও বোনদের জ্ঞাতার্থে হাদীস দু’টিকে তার মানসহ তুলে ধরা হল :
১। ‘সলাত, সিয়াম ও যিকিরকে আল্লাহ রাস্তায় খরচ করার উপরে সাত শ’ গুণ নেকী বৃদ্ধি করা হয়।  (আবূ দাউদ, হা/ ২৪৭৮ ‘জিহাদ অধ্যায়’ অনুচ্ছেদ ১৪)
২। ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় টাকা প্রেরণ করল এবং নিজে বাড়ীতে অবস্থান করল সে প্রত্যেক দিরহামের বিনিময়ে সাত দিরহামের নেকী পেল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করল এবং তার পথে খরচ করল সে প্রত্যেক দিরহামের বিনিময়ে সাত লক্ষ নেকী পেল। (ইবনু মাজাহ হা/ ২৭৬১ জিহাদ অদ্যায়, অনুচ্ছেদ- ৪; মিশকাত হা/৩৮৫৭ জিহাদ অধ্যায়)
উক্ত হাদীস দু’টি দ্বারা প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আতের লোকেরা তাদের সাতে চিল্লায় বের হয়ে যেকোন সৎ আমলের নেকী গুণ করে (৭০০ × ৭,০০০০০) ৪৯,০০০০০০০ (ঊনপঞ্চাশ কোটি) বলে প্রচার করে। (তাবলীগের প্রশ্ন-উত্তর, পৃঃ ১৯, এস এম সালেহীন, ইসলামী গবেষণাগার, আল জামেয়াতুল আরাবীয় মাজেদুল উলুম দিগরাজ, মংলা, বাগের হাট- প্রকাশ ২০০৪)
অথচ উল্লিখিত উভয় হাদীসই য‘ঈফ (য‘ঈফ আবূ দাঊদ হা/২৪৯৮, যঈফ ইবনু মাযাহ হা: ২৭৬১, মিশকাত হা: ৩৮৫৭ -এর টীকা দ্রঃ)
দ্বিতীয়তঃ হাদীস গ্রন্থে তা ‘জিহাদ’ অধ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে যা আমার উপরে দেখিয়েছি। অথচ তা তাবলীগের ফাযিলতে ব্যবহার করে অনধিকারীর চর্চা করার মত দৃষ্টতা দেখানো হয়েছে যার একটি মাত্র উধারণ আমরা এখানে তুলে ধরলাম। বিজ্ঞপাঠক যদি তাবলীগে নিসাব বা ফাযায়েলে আমল অধ্যায়ন করেন তবে এমন অনেক উধারণ দেখতে পাবেন। তৃতীয়তঃ দুই হাদীসে দুই রকম ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু একত্রিত করে গুণ করার এখতিয়ার তাবলীগী মুরববীদের কে দিল? তারা কি ইয়াহূদী পন্ডিতদের মত ‘আরবাব’ হয়ে রবের স্থান দখল করল নাকী! উপরন্তঃ প্রতি নেকীর বিনিময়ে ঊনপঞ্চাশ কোটি নেকী পেলে তো রসূল (সাঃ)-ই বলে যেতেন, মনে হচ্ছে তারা নাবীর চেয়ে উত্তম কিছু দিতে চায়। দ্বীনের দাওয়াতের নামে এরূপ নোংরা বাড়াবাড়ি মহা অন্যায়। এ ধরণের মিথ্যা বয়ান দিয়ে মুর্খ মানুষকে বাগে আনার অন্ধ অপচেষ্টা মাত্র। এ সমস্ত উদ্ভট পযীলতের ধোঁকা থেকে বেঁচে থেকে সহীহ হাদীস ভিত্তিক ফযীলতের উপর আমল করার জন্য প্রত্যেক মুসলিম ভাইও বোনকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ