জনৈক আনছারী (রাঃ) এর দালান ভাঙ্গিয়া ফেলা
‘‘এক
দিন হুজুরে পাক (ছঃ) কোথাও যাইতেছিলেন। পথিমধ্যে গুম্বুজ বিশিষ্ট একটা
উঁচু পাকা কুঠি দেখিতে পাইয়া হুজুর (ছঃ) সাথীদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে
পারিলেন যে, উহা একজন আনছারী তৈয়ার করিয়াছেন। হুজুর (ছঃ) শুনিয়া চুপ করিয়া
গেলেন। অন্য এক সময় সেই ছাহাবী হুজুরে পাক (ছঃ) এর খেদমতে আসিয়া ছালাম করা
মাত্র হুজুর (ছ) মুখ ফিরাইয়া লইলেন। হুজুর (ছঃ) হয়ত খেয়াল করেন নাই মনে
করিয়া ছাহাবী আবার ছালাম করিলেন। হুজুর (ছঃ) এইবারও উত্তর দিলেন না। লোকটি
পেরেশান এবং
ব্যতিব্যস্ত হইয়া উপস্থিত ছাহাবাদিগকে কারণ জিজ্ঞাসা করিয়া
জানিতে পারিলেন যে, হুজুর (ছঃ) তোমার সেই পাকা কোববাটা দেখিতে পাইয়া মনে হয়
তোমার উপর একটু অসন্তুষ্ট আছেন। সাহাবী তৎক্ষণাৎ বাড়ী গিয়া কোববাটা এমন
ভাবে ভাগিয়া চুরমার করিয়া দিলেন যে, উহার নাম নিশানাও বাকী রাখিলেন না অথচ
পরে আসিয়া জুহুর (ছঃ) কে ইহার সংবাদও দিলেন না। ঘটনাক্রমে হুজুর (ছঃ) ঐ পথে
আবার কোথাও যাইবার সময় ঐ কোববাটা তথায় দেখিতে না পাইয়া ছাহাবীদিগকে
জিজ্ঞাসা করিলেন যে, কোববাটা কোথায় গেল? ছাহাবারা বলিলেন, সেই দিন হুজুর
(ছঃ) এর ইহার প্রতি কিছুটা অসন্তুষ্টি ভাব লক্ষ্য করিয়া আনছারী উহাকে সমূলে
উৎখাত করিয়া দিয়াছেন। প্রিয়তম নবী করীম (ছঃ) ইহা শুনিয়া এরশাদ ফরমাইলেন,
প্রত্যেক পাকা এরামরতই মানুষের জন্য বিপদ স্বরূপ। (হিকায়াতে সহাবা ৬৭০
পৃঃ)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! এখানেও শায়খ
আগের মত হাদীসটির বরাত বা মান উল্লেখ না করে বর্ণনা করেছেন, তথাপিও আমরা
তাহক্বীক্ব করে তার সনদ বের করেছি। হাদীসটি খাববাব (রাযি.) থেকে বর্ণিত
হয়েছে (আবূ দাউদ, মিশকাত ৫১৮৩-রিক্বাক অধ্যায়) হাদীসটি যঈফ। (গৃহীতঃ
আত্-তাহরীক ২৬ মার্চ, ২০০১)। তাছাড়া সুন্দর সাজ-সজ্জার বস্তুত আল্লাহর
নিয়ামাত। তাতো আল্লাহ মু’মিনের জন্য হালাল করেছেন। তিনি বলেন :
{قُلْ
مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ
مِنَ الرِّزْقِ قُلْ هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا
خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآياتِ لِقَوْمٍ
يَعْلَمُونَ}
‘‘হে নাবী! আপনি জিজ্ঞেস করুন, আল্লাহর
যিনাত অর্থাৎ সাজ-সজ্জা যা তিনি বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র
খাদ্যসমূহকে হারাম করেছেন। আপনি বলুন, এসব নিয়ামাত আসলে পার্থিব জীবনে
মু’মিনদের জন্যে এবং ক্বিয়ামাতের দিন খালেসভাবে তাদেরই জন্য। এমনিভাবে আমি
আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্য, যারা বুঝে। (সূরা আল-আ’রাফ ৩২)
এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হল :
১। যারা আল্লাহ প্রদত্ত সৌন্দর্যের
জিনিসকে হারাম করেছে, তাদের প্রতি আল্লাহ নাখোশ। আল্লাহ স্বীয় বান্দার জন্য
যেসব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন, তা হারাম করা তিনি অপছন্দ করেন। অথচ
বান্দারা এটাকে নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছেন এবং সৌন্দর্য বা সাজ-সজ্জা
ত্যাগ করাকে সওয়াবের কাজ মনে করছে।
২। আল্লাহ তা‘আলা এটাই চান যে, তিনি তাঁর বান্দার জন্য যেসব সৌন্দর্যের জিনিস সৃষ্টি করেছেন বান্দাগণ যেন তা ব্যবহার করে এবং إن الله جميل يحب الجميل (নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে ভালবাসেন)-এর দাবী পূরণ করে।
৩। এ নিয়ামাত (সৌন্দর্য) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ঈমানদার বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যদিও দুনিয়াতে কাফিরগণ এ থেকে ফায়দা হাসিল করে।
৪। আখিরাতে এসব সৌন্দর্যের জিনিস
কেবলমাত্র ঈমানদারগণই পাবে এবং কাফিরগণ এ থেকে বঞ্চিত হবে। তবে তা যেন
অহঙ্কারবশত না হয়। নাবী (সাঃ) বলেন :
لا يدخل الجنة من كان فى قلبه مثقال ذرة من كبر
ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না,
যার মনে (বিন্দু) পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে- (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ঈমান)।
তাছাড়া নাবী (সাঃ) আরো বলেন :
من انعم الله عزوجل عليه نعمه فإن عزوجل يحب ان يراى اثر نعمته على عبد
যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিয়ামাত
দ্বারা সম্মানিত করেছেন, (তার ক্ষেত্রে) আল্লাহ তা‘আলা এটাই পছন্দ করেন যে,
তিনি তার বান্দার মধ্যে সেই নিয়ামাতের প্রকাশ (চিহ্ন) দেখেন। (আহমাদ,
বুলূগুল আমানী, এর সনদ সহীহ আলবানী মিশকাত ২/১৩৫২ পৃঃ)
No comments:
Post a Comment