যে সমস্ত জাল যঈফ হাদীস তাবললীগ জামা‘আতে বহুল প্রচারিত
সম্মানিত
পাঠক! এ প্রবেন্ধ আমরা ঐ সমস্ত জাল ও যঈফ হাদীস তুলে ধরছি যা তাবলীগ
জামা‘আতের মুরুবিব এবং তাদের মুবাল্লিগরা অহরহ বর্ণনা করে। আমার কথায়
বিশ্বাস না হলে তাবলীগী মারকায অথবা তাবলীগী ভাইদের বয়ান ও তাদের সাথে
অনন্ত তিন দিন সময় দিয়েছেন অথবা যারা এক চিল্লা তিন চিল্লা সময় জামা‘আতে
লাগিয়েছেন তারা যদি আল্লাহকে ভয় করেন তাহলে মনে হয় আমার কথা সত্য প্রামণিত
হবে এবং তা তারা অবশ্যই স্বীকার করবেন। এ সমস্ত হাদীস নামের মিথ্যা বর্ণনা
অনেকবার আমি আমার নিজ কানে তাবলীগে সময় দিয়ে শুনেছি। সম্মানিত পাঠক! আমি
নিজে তাবলীগ জামা‘আতের সাথে পাকিস্তানের রায়বন্ড থেকে (......সালের অর্থাৎ
এক সৎসর) জামা‘আতের সাথে সময় লাগাই ও নিজামউদ্দিনে এ অধম কিছু সময় অতিবাহিত
করে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার ফল আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
من عرف نفسه فقد عرف ربه
‘‘ যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পেরেছে, সে আপন প্রতিপালকের পরিচয় লাভ করেছে।’’
উপরোক্ত উক্তিটি কোন হাদীস নয়; অবশ্য এ বাক্যের অর্থ ও ভাব সঠিক বলে মনে হয়। মনে হয় এ কারণে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
{وَفِي أَنْفُسِكُمْ أَفَلا تُبْصِرُونَ}
‘‘তোমার নিজের মধ্যেও (আল্লাহর কুদরাতের নির্দেশনাবলী রয়েছে) তোমরা কি তা অনুধাবন কর না?’’ (সূরা যারিয়াত- ২১)
সুতরাং এটি কোন বিদ্বানের বাণী মাত্র; একে রসূলের হাদীস বলে চলান আদৌ ঠিক নয়। কারণ তার পরিণাম জাহান্নাম। মুত্তাফাকুন আলাইহ)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-কে উক্ত উক্তিটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এটিকে জাল আখ্যা দিয়েছে। তিনি বলেন :
ليس هذا من كلام النبى ولا هو في شيئ من كتاب الحديث ولا يعرف له إسناده
এটি রসূল (সাঃ)-এর বাণী নয়, হাদসসের কোন
গ্রন্থেও তা নেই এবং তার কোন সনদও নেই। (মাজমুউ ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া
১৬/৩৪৯, গৃহীত প্রচলিত জার হাদীস, ১৫৩ পৃঃ)
শতাব্দীর বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা
নাসিরুদ্দ্বীন আলবানী বলেছেন, হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই। বিস্তারিত দেখুন :
যঈফ জাল হাদীস সিরিজ ১ম খন্ড, পৃ: ১১৯।
اطلبوا العلم من المهد إلى اللحد
‘‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ইলম অন্বেষণ কর।’’
আমাদের তাবলীগী ভাইদের তাদের ৬ নং এর ইলম ও
যিকরের বর্ণনায় এটিকে হাদীস বলে চালিয়ে দিতে আমি অনেক বার শুনেছি। ইসলামে
ইলমে দ্বীন অন্বেষণের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ইলমের যেমন কোন শেষ নেই,
তেমনি তা শিক্ষা করার জন্য কোন সময়ও নির্দিষ্ট নেই। শৈশবকাল থেকে আমরণ ইলম
অর্জন করে যেতে হবে, এটাই ইলমের দাবী। তবে ‘‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ইলম
অন্বেষণ কর’ কথাটি একটি প্রবাদ ও হিতোপদেশ মাত্র; রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর
হাদীস নয়। যদিও অনেকের নিকট তা হাদীস হিসাবেই প্রসিদ্ধ। শাইখ আব্দুল
ফাত্তাহ আবূ গুদ্দ (রহ.) এ সম্পর্কে বলেন :
‘‘এটি হাদীসে নাবী নয়; বরং একটি প্রবাদ
বাক্যমাত্র। এটিকে রসূল (সাঃ)-এর প্রতি সম্বন্ধিত করা মোটেও বৈধ হবে না। (
যেমন শুধু তাবলীগী ভাইগণ নয়; বরং অনেকে কথিত আলেমের মুখ থেকেও শুনা যায়
রসূলের দিকে সম্বন্ধিত করতে)। কেননা তাঁর প্রতি শুধু সেটিকে সম্বন্ধিত করা
যাবে যা তিনি বলেছেন, করেছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন। যে কোন ভাল কথা ভাল
মনে হলেই তাকে হাদীসে রসূল বলা জায়িয হবে না, যদিও কথাটি সঠিক হোক না কেন।
কেননা এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সকল হাদীসে নাববীই হক তথা সত্য; কিন্তু
দুনিয়ার সকল সঠিক কথাই হাদীসে নাববী নয়। বিষয়টি ভালভাবে বুঝা উচিৎ।
(কীসাতুয যামান ইন্দাল উলামা : ৩০ টীকা, গৃহীত প্রচলিত জাল হাদীস ৮৯-৯১ পৃঃ)
اطلبوا العلم ولو بالصين
‘‘জ্ঞানের অনুসন্ধান করো যদি তা চীনে গিয়েও হয়।’’
হাদীসটি আমাদের তাবলীগী ভাইয়েরা অনেক সময়
তাদের ৬ পয়েন্টে বর্ণনা করতে দেখা যায়। এছাড়াও কথিত আলিমদেরকেও হাদীস বলে
চালিয়ে দিতে দেখা যায়।
তাই সম্মানিত পাঠক! এটি কেমন হাদীস তা লক্ষ্য করুন :
ইবনে যাওযী লিখেছেন যে, এই হাদীসের
সম্বন্ধ রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে সহীহভাবে যুক্ত হয় নি। এর একজন রাবী
হাসান বিন আতিয়াকে আবূ হাতীম রাযী যঈফ বলেছেন এবং অতঃপর মুনকার বলেছেন।
ইবনে হিববান বলেছেন, এ হাদীস বাতিল ও ভিত্তিহীন। (কিতাবুল মাওযুয়াত, জিলদ-
১, পৃঃ ২১৬)
আল্লামা আলবানী বলেন, এ হাদীস বাতিল। (যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ ১ম খন্ড হা: ৪১৬, পৃঃ ৩৬৭)
No comments:
Post a Comment