৮. দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্
আখেরী
যামানায় কিয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে যমীন থেকে দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্
নামক এক অদ্ভুত জন্তু বের হবে। জন্তুটি মানুষের সাথে কথা বলবে। এটি হবে
কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অন্যতম সর্বশেষ ভয়াবহ আলামত। পশ্চিম আকাশে সূর্য
উদিত হওয়ার পর তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে এটি বের হবে। সহীহ হাদীছ থেকে
জানা যায় যে, পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠার কিছুক্ষণ পরই যমীন থেকে এই অদ্ভুত
জানোয়ারটি বের হবে। তাওবার দরজা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে-
এ কথাটিকে
চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করার জন্য সে মুমিনদেরকে কাফের থেকে নির্দিষ্ট চিহ্নের
মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মুমিনের কপালে লিখে দিবে ‘মুমিন’ এবং কাফেরের
কপালে লিখে দিবে ‘কাফের’।
এ ব্যাপারে কুরআন থেকে যা জানা যায়ঃ
কুরআন মাযীদের সূরা নামলের ৮২ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
)وَإِذَا
وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِنْ الْأَرْضِ
تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ(
‘‘যখন প্রতিশ্রুতি
(কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী
নির্গত করবো। সে মানুষের সাথে কথা বলবেঃ এ বিষয়ে যে, মানুষ আমার নিদর্শন
সমূহে বিশ্বাস করতোনা’’।
ইবনে কাছীর বলেনঃ
আখেরী যামানায় মানুষ যখন নানা পাপাচারে লিপ্ত হবে, আল্লাহর আদেশ পালন
বর্জন করবে এবং দ্বীনকে পরিবর্তন করবে তখন আল্লাহ তাআলা তাদের সামনে এই
জন্তুটি বের করবেন’’।[1] ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘‘জন্তুটি মানুষের মতই
কথা বলবে’’।[2] প্রাণীটির কাজ কি হবে এবং কি বিষয়ে মানুষের সাথে কথা বলবে- এ
ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেনঃ আয়াতে উল্লেখিত কুরআনের বাণীটিই হবে তার
কথা। অর্থাৎ (أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ)
এই বাক্যটি সে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের
পূর্বে অনেক মানুষই আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে
কিয়ামতের আলামত ও তা সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে। এমনকি আমার আগমণের বিষয়েও অনেক
মানুষ বিশ্বাস করতোনা। এখন সে সময় এসে গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি।
দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্ সম্পর্কে হাদীছ থেকে যা অবগত হওয়া যায়ঃ
১) মুসলিম শরীফে হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ
اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ فَقَالَ مَا
تَذَاكَرُونَ قَالُوا نَذْكُرُ السَّاعَةَ قَالَ إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ
حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَ الدُّخَانَ
وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا
وَنُزُولَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَيَأَجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ
وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ
نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ
‘‘একদা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট আগমণ করলেন। আমরা তখন
কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেনঃ যতদিন তোমরা দশটি
আলামত না দেখবে ততদিন কিয়ামত হবেনা। (১) ধোঁয়া (২) দাজ্জালের আগমণ (৩)
ভূগর্ভ থেকে নির্গত দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্ নামক অদ্ভুত এক জানোয়ারের আগমণ
৪) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় (৫) ঈসা ইবনে মারইয়ামের আগমণ (৬)
ইয়াজুয-মা’জুযের আবির্ভাব (৭) পূর্বে ভূমিধসন (৮) পশ্চিমে ভূমিধসন (৯) আরব
উপদ্বীপে ভূমিধসন (১০) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে
সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নিবে’’।
২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ فَتَسِمُ
النَّاسَ عَلَى خَرَاطِيمِهِمْ ثُمَّ يَغْمُرُونَ فِيكُمْ حَتَّى
يَشْتَرِيَ الرَّجُلُ الْبَعِيرَ فَيَقُولُ مِمَّنِ اشْتَرَيْتَهُ
فَيَقُولُ اشْتَرَيْتُهُ مِنْ أَحَدِ الْمُخَطَّمِينَ
‘‘দাববাতুল/দাব্বাতুল
আরদ্ নামক একটি প্রাণী বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। অতঃপর
মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন যাপন করবে। প্রাণীটি সকল মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে
দিবে। এমনকি উট ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয়
করেছো? সে বলবেঃ আমি এটি নাকে দাগ ওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে ক্রয়
করেছি’’।[3]
৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ مَعَهَا
عَصَا مُوسَى وَخَاتَمُ سُلَيْمَانَ فَتَجْلُو وَجْهَ الْمُؤْمِنِ
بِالْعَصَا وَتَخْتِمُ أَنْفَ الْكَافِرِ بِالْخَاتَمِ حَتَّى إِنَّ أَهْلَ
الْخِوَانِ لَيَجْتَمِعُونَ فَيَقُولُ هَذَا يَا مُؤْمِنُ وَيَقُولُ هَذَا
يَا كَافِرُ
‘‘দাববাতুল/দাব্বাতুল
আরদ্ বের হবে। তার সাথে থাকবে মূসা (আঃ)এর লাঠি এবং সুলায়মান (আঃ)এর আংটি।
কাফেরের নাকে সুলায়মান (আঃ)এর আংটি দিয়ে দাগ লাগাবে এবং মূসা (আঃ)এর লাঠি
দিয়ে মু’মিনের চেহারাকে উজ্জল করে দিবে। লোকেরা খানার টেবিল ও দস্তরখানায়
বসেও একে অপরকে বলবেঃ হে মু’মিন! হে কাফের![4]
প্রাণীটির ধরণ কেমন হবে?
প্রাণীটি হবে মানব
জাতির কাছে পরিচিত চতুষ্পদ জন্তুসমূহের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। সেটি
মানুষের সাথে কথা বলবে। প্রাণীটি কোন শ্রেণীর হবে- এনিয়ে আলেমগণ মতভেদ
করেছেন।
১) ইমাম কুরতুবী
বলেনঃ এটি হবে সালেহ (আঃ)এর উটনীর বাছুর। যখন কাফেরেরা উটনীকে হত্যা করে
ফেলল তখন বাছুরটি পাথরের মাঝে ঢুকে পড়েছিল। এটি আল্লাহ তাআলার অনুমতিক্রমে
কিয়ামতের পূর্বে বের হয়ে আসবে। ইমাম কুরতুবী বলেনঃ এটিই বিশুদ্ধ মত।
তাঁর এ কথা
গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিনি যে হাদীছ দিয়ে দলীল গ্রহণ করেছেন তার সনদে এমন
একজন রাবী (বর্ণনাকারী) আছেন যার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।
২) কেউ কেউ বলেছেন এটি হবে দাজ্জালের হাদীছে বর্ণিত জাস্সাসা (গোয়েন্দা)।
এ মতটিও গ্রহণযোগ্য
নয়। কারণ দাজ্জালের হাদীছে যে প্রাণীটির কথা এসেছে তার নাম জাস্সাসা। আর
কিয়ামতের পূর্বে যে প্রাণীটি বের হবে তার নাম দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্ যা
কুরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩) কেউ কেউ বলেছেনঃ
এটি হলো সেই সাপ যা কা’বার দেয়ালে ছিল। কুরাইশরা যখন কা’বা ঘর নির্মাণ করার
ইচ্ছা পোষাণ করল তখন সাপটিই তাদের নির্মাণ কাজ শুরু করতে মূল বাধা হয়ে
দাঁড়িয়েছিল। একটি পাখি এসে সাপটিকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলে নির্মাণ কাজের বাধা
দূর হয়ে যায়। কিন্তু এ কথার পক্ষেও কোন দলীল নেই। এমনি আরো অনেক কথা বর্ণিত
আছে। এগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ কোন একটি মতের
স্বপক্ষে সহীহ কোন দলীল পাওয়া যায়না।
শায়খ আহমাদ শাকের
মুসনাদে আহমাদের ব্যাখ্যায় বলেনঃ ‘‘কুরআনের আয়াতে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় বলা
আছে এটি হলো দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্। দাববা অর্থ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কোন
প্রকার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই; বরং আমরা বিশ্বাস করি আখেরী যামানায় একটি
অদ্ভুত ধরণের জন্তু বের হবে। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। কুরআন ও সহীহ
হাদীছে তাঁর গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট বর্ণিত হয়েছে। আমরা তাতে বিশ্বাস করি’’।
পৃথিবীর কোন্ জায়গা থেকে প্রাণীটি বের হবে?
১) এটি বের হবে
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত মসজিদ থেকে। ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ
‘‘সাফা পাহাড় ফেটে প্রাণীটি বের হবে। তিনি বলেনঃ আমি যদি চাইতাম তাহলে যে
স্থানটি থেকে বের হবে তাতে পা রেখে দেখাতে পারতাম’’।[5]
২) জন্তুটি তিনবার
বের হবে। প্রথমে বের হবে কা’বা শরীফ হতে দূরবর্তী একটি গ্রাম থেকে। অতঃপর
কিছু দিন লুকিয়ে থাকার পর আবার বের হবে। পরিশেষে কাবা ঘর থেকে বের হবে।
এ ব্যাপারে আরো কথা
বর্ণিত আছে। সব মিলিয়ে আমরা বলবোঃ মক্কা শরীফ থেকে দাববাতুল/দাব্বাতুল আরদ্
বের হবে। অতঃপর সমগ্র পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে।
প্রাণীটির কাজ কি হবে?
১) প্রাণীটি
মানুষের সাথে কথা বলবে। প্রাণীটি কি বিষয়ে মানুষের সাথে কথা বলবে- এ
ব্যাপারে আল্লামা আলূসী বলেনঃ আয়াতে উল্লেখিত কুরআনের বাণীটিই হবে তার কথা।
অর্থাৎ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَএই
বাক্যটি সে আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষকে শুনাবে। মর্ম এই যে, আজকের পূর্বে
অনেক মানুষই আল্লাহর আয়াত ও নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করেনি। বিশেষ করে
কিয়ামতের আলামত ও তা আগমণের বিষয়ে। এমনকি আমার আগমণের বিষয়েও অনেক মানুষ
বিশ্বাস করতোনা। এখন সে সময় এসে গেছে এবং আমিও বের হয়ে এসেছি।
২) সে মুমিনদেরকে
কাফের থেকে নির্দিষ্ট চিহ্নের মাধ্যমে আলাদা করে ফেলবে। মু’মিনের কপালে
লিখে দিবে ‘মুমিন’এবং কাফেরের কপালে লিখে দিবে ‘কাফের’। নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ فَتَسِمُ
النَّاسَ عَلَى خَرَاطِيمِهِمْ ثُمَّ يَغْمُرُونَ فِيكُمْ حَتَّى
يَشْتَرِيَ الرَّجُلُ الْبَعِيرَ فَيَقُولُ مِمَّنِ اشْتَرَيْتَهُ
فَيَقُولُ اشْتَرَيْتُهُ مِنْ أَحَدِ الْمُخَطَّمِينَ
‘‘দাববাতুল/দাব্বাতুল
আরদ্ বের হবে এবং মানুষের নাকে চিহ্ন দিবে। অতঃপর মানুষেরা পৃথিবীতে জীবন
যাপন করবে। প্রাণীটি সকল মানুষের নাকেই দাগ লাগিয়ে দিবে। এমনকি উট
ক্রয়কারীকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি এটি কার কাছ থেকে ক্রয় করেছো? সে বলবেঃ
আমি এটি নাকে দাগ ওয়ালা একজন ব্যক্তির নিকট থেকে কিনেছি’’।[6] নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
تَخْرُجُ الدَّابَّةُ مَعَهَا
عَصَا مُوسَى وَخَاتَمُ سُلَيْمَانَ فَتَجْلُو وَجْهَ الْمُؤْمِنِ
بِالْعَصَا وَتَخْتِمُ أَنْفَ الْكَافِرِ بِالْخَاتَمِ حَتَّى إِنَّ أَهْلَ
الْخِوَانِ لَيَجْتَمِعُونَ فَيَقُولُ هَذَا يَا مُؤْمِنُ وَيَقُولُ هَذَا
يَا كَافِرُ
‘‘দাববাতুল/দাব্বাতুল
আরদ্ বের হবে। তার সাথে থাকবে মূসা (আঃ)এর লাঠি এবং সুলায়মান (আঃ)এর আংটি।
কাফেরের নাকে সুলায়মান (আঃ)এর আংটি দিয়ে দাগ লাগিয়ে দিবে এবং মূসা (আঃ)এর
লাঠি দিয়ে মুমিনের চেহারাকে উজ্জল করে দিবে। এমনকি লোকেরা খানার টেবিলে
(দস্তরখানায়) বসেও একে অপরকে বলবেঃ হে মুমিন! হে কাফের!’’[7]
No comments:
Post a Comment