অলী-আওলীয়ার উসীলাঃ
সকল
প্রকার সুফী তরীকার লোকদের আকীদার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই যে, তারা মৃত
অলীদের উসীলা দিয়ে দুআ করে থাকেন, গুনাহ্ থেকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা
প্রার্থনা করেন। উসীলা অর্থ হচ্ছে, যার মাধ্যমে কারও নৈকট্য অর্জন করা যায়,
তাকে উসীলা বলা হয়। আর কুরআন ও হাদীছের পরিভাষায় যে সমস্ত বিষয় দ্বারা
আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা যায়, তাকে উসীলা বলা হয়। কুরআন মাযীদে আল্লাহ
তাআলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ
وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং
তাঁর নিকট উসীলা প্রার্থনা কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলকাম
হতে পার। (সূরা মায়িদাঃ ৩৫) সাহাবী, তাবেয়ী এবং পূর্ববর্তী সম্মানিত
উলামায়ে কিরাম থেকে উসীলার যে অর্থ বর্ণিত হয়েছে, তা হল ভাল আমল করার
মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। ইমাম ইবনে যারীর (রঃ) وَابْتَغُوا إِلَيْه الْوَسِيلَة
এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ আল্লাহর সন্তোষ জনক আমল করার মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর
নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা কর। ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে
বর্ণনা করে বলেন, উসীলা অর্থ নৈকট্য। মুজাহিদ, হাসান, আবদুল্লাহ ইবনে
কাছীর, সুদ্দী এবং ইবনে যায়েদ থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে। কাতাদাহ (রঃ)
বলেন, আল্লাহর আনুগত্যমূলক এবং সন্তোষ জনক কাজ করার মাধ্যমে আল্লাহর
নৈকট্য অর্জন কর। উপরোক্ত কথাগুলো বর্ণনা করার পর ইবনে কাছীর (রঃ) বলেন,
উসীলার ব্যাখ্যায় যা বলা হলো, এতে ইমামদের ভিতরে কোন মতবিরোধ নেই। কাজেই
আয়াতের মাঝে উসীলার অর্থ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। (দেখুন তাফসীরে ইবনে কাছীর,
৩/১০৩) উপরোক্ত আয়াতকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে যারা আম্বীয়ায়ে কিরাম,
আওলীয়াদের ব্যক্তিসত্বা এবং তাদের সম্মানের উসীলা দেয়া বৈধ মনে করে, তাদের
ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ বাতিল এবং কুরআনের আয়াতকে পরিবর্তনের শামিল। এমনকি
কুরআনের আয়াতকে এমন অর্থে ব্যবহার করা, যার কোন সম্ভাবনা নেই এবং যার পক্ষে
গ্রহণযোগ্য কোন মুফাসসিরের উক্তি নেই। আমাদের দেশের কিছু তথাকথিত আলেম
উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলে থাকে, আল্লাহ তায়ালা এখানে পীর ধরতে বলেছেন।
পীরই হলো উসীলা। পীর না ধরলে কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। এ ধরণের ব্যাখ্যা
সম্পূর্ণ বানোয়াট। পূর্ব যুগের গ্রহণযোগ্য কোন আলেম এ ধরণের ব্যাখ্যা করেন
নি।
No comments:
Post a Comment