Monday, November 27, 2017

সলাত এবং ঢোলের শব্দ

সলাত এবং ঢোলের শব্দ


আমের বিন্ আব্দুল্লাহ বলেন, নামাজ পড়া কালে (ঘরের লোকদের) তো দূরের কথা ঢোলের শব্দও আমি শুনিতে পাই না। (তাবলীগী নিসাবের ফাযায়েলে আমলের ফাযালেলে নামাযের ১২১ পৃঃ তাবলীগী কুতুবখানা ৬০, চক বাজার ঢাকা- ১২১১, সংশোধির সংস্করণ ৫ই সেপ্টেম্বর ২০০১ ইং, মূল উর্দ্দু ফাযায়েলে নামাজ আকস ৮৪ পৃঃ, দারুল ইশাআত, উর্দ্দু বাজার করাচী- ১)
সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা এতো ছিল তাবলীগী নিসাবের সূফি বুজুরগের সলাতের অবস্থা, এখণ লক্ষ্য করুন, সকল মুসলিম নর নারীর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একমাত্র
অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব আল্লাহর সর্বশেষ নাবী রহমাতুল্লিল আলামীন জনাবে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সলাতের অবস্থা। সহীহুল বুখারীর কিতাবুল আযান باب من أخف الصلاة عند بكاء الصبي শিশুর কান্নাকাটির কারণে সলাত সংক্ষেপ করা অধ্যায় ১০/৬৫, হাদীসটি নিম্মরূপ : আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী (সাঃ) বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সলাত আদারের ইচ্ছা নিয়ে দাড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সলাত সংক্ষেপ করি। কারণ শিশুর মাকে কষ্টে ফেলা আমি পছন্দ করি না। (সহীহুল বুখারী হা/ ৭০৭, তাওহীদ প্র. পৃঃ ৩৪১, মুসলিম ৪/৩৭, হাঃ ৪৭ আহমাদ ১২০৬৭)
উল্লেখ্য যে, বুখারীতে একই মর্মে পর পর চারটি হাদীস উল্লেখ আছে মুসলিম ভাইদের উপরে উল্লিখিত বুখারীর অধ্যায় দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।
সাহাবী উবাদাহ বিন সামিত (রাঃ) বলেন, একদা আমরা নাবী (সাঃ)’র পিছনে ফজরের সলাত পড়লাম। সলাতে তাঁর কিরাআত ভারী মনে হল, সলাত হতে অবসর হয়ে জিজ্ঞাসা বরলেন, মনে হয় তোমরা তোমাদের ইমামের পিছনে থাকা অবস্থায় কিরাআত পাঠ কর? আমরা বললাম : হাঁ পাঠ করি। নাবী (সাঃ) বললেন তোমার সূরা ফাতিহা ব্যতীত আর অন্য কিছু পাঠ কর না, কেননা যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার সলাত হয় না। (আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরামিযী, সহীহ ইবনে হিববান, (হাসান) বুলুগুল মারাম ৭৩ পৃঃ, মিশকাত ৮১ পৃঃ)
আবূ দাউদের হাদীসে এসেছে : নাফে বলেন, একদা হযরত উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) বিলম্বে ফজরের সলাতের জামাআতে উপস্থিত হন। এমতাবস্তায় মুআযযিন আবূ নুআরেম (রহ) তাকবীর বলে লোকদের নিয়ে সলাত আরম্ভ করেন। তখন আমি এবং উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) উপস্থিত হয়ে আব নুআয়েমের পিছনে ইকতিদা করি। এই সময় আবূ নুআয়েম উচ্চস্বরে কিরআত পাঠ করছিলেন এবং উবাদা (রাঃ) সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। সলাতান্তে আমি উবাদা (রাঃ)-কে বলি : ইমাম আবূ নুআয়েম যখন উচ্চস্বরে কিরআত পাঠ করছিলেন, তখন আমি আপনাকে  সূরা ফাতিহা পড়তে শুনি এর- এর হেতু কি? তিনি বলেন : হাঁ, আমি সূরা ফাতিহা পাঠ করেছি। একদা রসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন এক ওয়াক্তে সলাতে আমাদের ইমামতি করেন, যার মধ্যে উচ্চস্বরে কিরআত পাঠ করতে হয়। রাবী বলেন : রসূলুলল্লাহ (সাঃ) কিরাআত পাঠের সময় আটকে যান। অতঃপর সলাতান্তে তিনি সমবেত মুসল্লীদের লক্ষ করে বলেন : আমি যখন উচ্চস্বরে কিরআত পাঠ করছিলাম, তখন তোমরাও কি কিরাআত পাঠ করেছ? জবাবে আমাদের কেউ বলেন, হ্যাঁ আমরাও কিরাআত পাঠ করেছি। তখন তিনি বলেন, এরূপ আর কখনও করবে না। তিনি আরো বলেন, কিরাআত পাঠের সময় যখন আমি আটকে যাই তখন আমি এরূপ চিন্তা করি যে, আমার কুরআন পাঠে কিসে বা কে বাধাঁর সৃষ্টি করছে? অতএব আমি সলাতের মধ্যে উচ্চস্বরে যখন কিরাআত পাঠ করি, তখন তোমার সূরা ফাতিহা ব্যতীত অন্য কিছু পাঠ করবে না। (আবূ দাউদ ই. ফা. বা. হা/ ৮২৪ পৃঃ ৪৪৫-৪৪৬)
একই মর্মে উল্লিখিত হাদিসটি তিরমিযী, নাসাঈ যুযউল কিরাআত বুখারী, যুযউল কিরাআত বাইহাকীসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে- এ হাদীসটি বর্ণিত আছে)
সম্মানিত পাঠক! মুসলিম ভাই ও বোনেরা উল্লিখিত সহীহ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, শিশুর কান্নার আয়াজ এবং সাহাবাদের কুরআনের কিরাআত পড়ার শব্দ রসূল (সাঃ) সলাতরত অবস্থায় শুনতে পেতেন। এমন কী সাহাবারাও একে অপরের সলাতের কিরাআত শুনার প্রমাণ উল্লিখিত হাদীস, দ্বারা বুঝা যায়, কিন্তু তাবলীগী নিসাবের সূফি বুজর্গ নাবী (সাঃ) ও তার সাহাবী (রাঃ) এর থেকে সলাতের খুশু ও বুজর্গীতে কতটা অগ্রসর হয়েছে যে, ঢোলের শব্দও তাদের কানে যায় না। একেই বলা হয় আকাবীরিন পূঁজা, আর মুরববী পূঁজা, আর একেই বলা হয় দ্বীনের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ী। আল-কুরআন ভাষায় এটাকেই غلو বলা হয় । যা সাধারণতঃ বিদ‘আতী আমল দ্বারা শুরু হয়, আর মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ীর ফলে শিরকে পরিণত হয়, এজন্যই غلو শব্দের ইংরেজীতে অনুবাদ করা হয়েছে ঊীপববফরহম ড়ভ ঢ়ৎড়ঢ়বৎনড়হিফং. সম্মান, মর্যাদা এবং ভক্তি শ্রদ্ধায় সীমা লঙ্ঘন শিরকের দিকে ঠেলে দেয়ার অন্যতম কারণ। বলা বাহুল্য এ জাতীয় বুজর্গদের নিয়ে অতি ভাক্তিতে বাড়াবাড়ী করার নমুনা তাবলীগী নিসাব গ্রন্থে ভরপুর। যার সত্যতা বিশুদ্ধ আকীদা বিশিষ্ট কোন পাঠক পড়লেই তার নিকট ধরা পড়বে। তাবলীগী নিসাবে দেখা যায় অতি ভক্তির কারণে কখণও ইমাম ও বুজর্গ আকাবীরীনদেরকে নাবীর উর্ধ্বে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আবার নাবীর অতিভক্তিতে তাঁকে আল্লাহর আসনে আসীন করা হয়েছে। যা মানুষকে শিরকের দিকে নিয়ে যায় এবং যার থেকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ও নাবী (সাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।  (দেখুন সূরা নিসা-১৭১, সূরা মায়েদা-৭৭)
আল্লাহর নাবী (সাঃ) বলেন :

إياكم والغلو وإنما أهلك من كان قبلك الغلوا

তোমরা বাড়াবাড়ির ব্যাপারে সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন করবে। কেননা এ বাড়াবাড়ীই তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংশ করে দিয়েছে।’ (আহমদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।
সম্মানিত পাঠক এজাতীয় বাড়াবাড়ী মুলক আক্কীদাই তাবলীগী নিসাবে ভরপুর যা দেখে বিখ্যাত উর্দ্দু কবি ‘হালীর একটি কবিতাংশের কথা মনে পড়ে গেল যার মধ্যে বর্তমান প্রচলিত বাতলীগী নিসাবের আক্কীদায় বিশ্বাসী সমাজের একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ইবলিসের ধোকায় ও আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে অনেক নির্বোদ তাবলীগীরা এসব কাজ করছে যা সুস্পষ্ট শিরক। যা তাদেরকে ঈমানের গন্ডি থেকে বের দিচ্ছে, অথচ এ ব্যাপারে তাদের কোন অনুভূতিই নেই। শিরকে লিপ্ত থেকেও তারা নিজেদেরকে ভাবছে খাটি মুসলিম মুবাল্লিগ ও সাচ্চা ঈমানদার হিসেবে। এই বিষয়ের দিকে ইশারা করেই কবি বলেছেন,

اما موكا رتبه نبي سـ بـهائـ

اور نبي كو جوجاهـ خدا ﭼﺎكر دكهائـ

قبرون ر جا جا كه نذرﮮ ﮁﮌهائـ

اور ميتون سـ جاكـ مانـﮕﮯ دعائيـ

ﭘﮩراس سـ نه ايمان بـﮔﮌﮮ اور نه اسلام جائـ

‘‘নাবীর চেয়ে বেশি দেয়া হয় ইমামদের মর্যাদা, নাবীকে যে চায় বানিয়ে দেয় ইলা, মৃতদের কাছে গিয়ে জানানো হয় প্রার্থনা। এত কিছুর পরও ঈমান নষ্ট হয় না, আর ইসলামেরও কিছু আসে যায় না।
সম্মানিত পাঠক! এজাতীয় বাড়াবাড়ী মূলক ঘটনা দ্বারা তাবলীগ নিসাব গ্রন্থ ভরপুর। যার মধ্যে বুজুর্গের মর্যাদা নাবীর থেকেও বাড়ানো হয়েছে। যা লিখলে কলেবর বৃদ্ধি পাবে তাই উধারণ স্বরূপ একটি ঘটনার উল্লেখ করেই শেষ করছি।
‘‘জনৈক বুজুর্গের পায়ে বিষাক্ত ফোঁড়া হইয়া ছিল। চিকিৎসকগণ পরামর্শ দিল, পা কাটিয়া না ফেলিলে তাহার জীবন নাশের আশংকা রহিয়াছে। তাহার আম্মা বলিল, আপনারা অপেক্ষা করুন নামাজে দাঁড়াইলে তাহার পা কাটা আছান হইবে, ঐরূপ করা হইল অথচ সে টেরও পাইল না। (তাবলীগী নিসাবের ফাযায়েলে আ‘মালের ফাযায়েলে নামাজ ৯৩ পৃ: ৯ নাম্বর কাহীনি, তাবলীগী কুতুবখানা-৬০, চকবাজার, ঢাকা-১২১১ সংশোধিত সংস্করণ)

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ