Monday, November 27, 2017

ই‘তিকাফ সংক্রান্ত আর একটি যঈফ হাদীস

ই‘তিকাফ সংক্রান্ত আর একটি যঈফ হাদীস


من اعتكف عشرا في رمضان كان كحجتين وعمرتين
রসূললুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমাযানের দশ দিন ই‘তিকাফ করলো সে যেন দুই হাজ্জ ও দুই উমরাহ করলো।
হাদীসটি জাল : বায়হাকী ‘আস-শু‘আব’ গ্রন্থে হুসাইন বিন আলী (রাঃ) হতে হাদীসটি মারফূ‘ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসের সনদ দুর্বল। সনদে বর্ণনাকারীদের একজন মুহাম্মাদ বিন যাযান পরিত্যাক্ত রাবী। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন, তার থেকে কেউ হাদীস লিখবে না। সনদে আরো রয়েছে, আন্বাসা ইবনু আব্দুর রহমান। তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন, মহাদ্দিসগণ তাকে পরিত্যাগ করেছেন। ইমাম যাহাবী ‘‘আয-যেয়াফা’’ গন্থে বলেছেন: তিনি মাতরূক তাকে জাল করার দোষে দোষী করা হয়েছে।স ‘‘ফায়যুল কাদীর’’ গ্রন্থে এরূপই এসেছে। (যইফ ও জাল হাদীস সিরিজ ২য় খন্ড হা ৫১৮ পৃ: ৭৭-৭৮)
পাঠক মহোদয়!
হাদীসটিতে তো ১০ দিনে ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে, এবার লক্ষ্য করুন। শাইখুল হাদীস সাহেব তাঁর ফাজায়েলে রমজানের ৫২২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন :
‘‘আল্লামা শারানী (রহ.) বর্ণনা করেন, রমজানের ১ দিন এতেকাফ করা দুই হজ্ব ও ওমরার সমকক্ষ। এবং যে ব্যক্তি জমাতের মসজিদে মাগরিব হইতে এশা পর্যন্ত এতেকাফ করে ও জিকির এবং তেলাওয়াত করে তাহার জন্য জান্নাতে একটি বালাখানা তৈয়ার করা হয়।’’(ফাজায়েলে রমজান- ৫২২)
অবশ্য শাইখ হাদীসটির কোন সনদ বর্ণনা করেন নি এমনকি কোন কিতাবের নামও উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন নি। এটা বিশ্ব দাওয়াত ও তাবলীগের নামে যে জামা‘আত চলছে, তাদেরকে জাল হাদীসের খপ্পরে ফেলার ষড়যন্ত্র নয় তো? আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সুমতি দিন।
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
ই’তিকাফ তিন প্রকার লিখতে গিয়ে শাইখুল হাদীস সাহেব তৃতীয় নাম্বারে লিখেছেন :
‘‘তৃতীয় নফল যার জন্য কোন সময় নাই। এমন কি সারা জীবনের নিয়ত করিলেও জায়েজ অবশ্য কম সময়ের মধ্যে মতভেদ আছে। ইমাম আবূ হানিফার নিকট এক দিনের কম নাজায়েজ। ইমা মোহাম্মদের নিকট অল্প সময়ও করা চলে। উহার উপর ফতুয়া। এই জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ মসজিদে প্রবেশ করিলেই যেন এতেকাফের নিয়ত করিয়া লয়।’’(তাবলীগী নিসাব ফাজায়েলে রমজান- ৫১৭ পৃষ্ঠা)
ফাজায়েলের কিতাবে মাসায়েল লিখতে গিয়ে শাইয় লিখেছেন :
‘‘মেয়েলোকদের জন্য ঘরের কোণে নির্জন স্থানে বসিয়া এতেকাফ করিতে হইবে। মেয়েদের জন্য বড় সুবর্ণ সুযোগ। ঘরে বসিয়া অন্যের দ্বারা কাজ কর্ম ও করাইতে পারে অথচ বিরাট ছওয়াবও পাইয়া গেল। ইহা সত্বেও আমাদের নারীগণ উক্ত ছুন্নত হইতে প্রায়ই বঞ্চিত থাকে। আফছোছ। (ফাজায়েলে রমজান- ৫১৮)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! শাইখ বর্ণিত উল্লিখিত উদ্ধৃতিহীন বক্তব্যের দ্বারা বুঝা যায় যে, যে কোন সময় ই‘তিকাফ করা যায়। অর্থাৎ মাসজিদে ঢুকলেই ই‘তিকাফের নিয়ত করলেই ই‘তিকাফ হয়, তার জন্য সিয়াম অবস্থায় থাকা যরূরী নয়। তাইতো আমরা দেখি তাবলীগী ভাইগণ আদাবে মাসজিদের বয়ানে বলেন, মাসজিদে ঢুকলেই এভাবে নিয়ত করবে ‘‘নাওয়াইতুয়ান সুন্নাতাল ই‘তিকাফ মাদামতু হাযাল মাসজিদ’’ এখন লক্ষ্য করুন সহীহ হাদীসের সিদ্ধান্ত কি? ‘আয়িশাহ ˆ বলেন, ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হ’ল, সে যেন কোন অসুস্থকে দেখতে না যায়, জানাযায় শরীক না হয়, স্ত্রী ম্পর্শ না করে, তার সাথে সহবাস না করে এবং ই‘তিকাফের স্থান তেকে মানবীয় প্রয়োজন ব্যতীত বের না হয়। সিয়াম ছাড়া ই‘তিকাফ হয় না। আর জামে মাসজিদ ব্যতীত অন্য জায়গায় ই‘তিকাফ হয় না। (বায়হাক্বী, সহীহ সনদে এবং আবূ দাঊদ হাসান সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। গৃহীত, আত্-তাহরীক, অষ্টোবর ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৩)। ইমাম ইবনুল কাইয়িম ‘যাদুল মা‘আ’দ গ্রন্থে বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণিত নেই যে, তিনি সিয়াম ব্যতীত ই‘তিকাফ করেছেন। বরং ‘আয়িশাহ ˆ বলেছেন, সিয়াম ব্যতীত ই‘তিকাফ হবে না। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং ই‘তিকাফকে সিয়ামের সাথেই বর্ণনা করেছেন। আর রসূলুল্লাহ (সাঃ)ও সিযামের সাথেই ই‘তিকাফ করেছেন। অতএব সওম ও ই‘তিকাফের জন্য শর্ত এটাই হল জমহূর সালাফ ও আল্লামা ইবনে তাইমিয়ার অভিমত। এ কথা উপর ভিত্তি করে বলা যেতে পারে যে, যে সলাতে আসবে, তার জন্য সে মাসজিদে থাকাকালীন ই‘তিকাফের নিয়ত করা বৈধ হবে না। শাইক ইবনে তাইমিয়াও তাই বলেছেন।  (প্রাগুক্ত, ১৩ পৃষ্ঠা)
এরপরে জনাব শাইখ লিখেছেন যে, নারীগণ নিজ গৃহের কোন ই’তিকাফ করবে। অথচা উক্ত মাসআলাটিরও কুরআন ও হাদীসের সাথে কোন মিল নেই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ই‘তিকাফ অবস্থায় মাসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না।
অর্থাৎ স্ত্রী সহবাস কর না। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, ‘মুবাশারাত’ মুআমালাত এবং ‘মাস’ সবক’টি শব্দের উদ্দেশ্য হল স্ত্রী সহবাস। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা ইঙ্গিতে বলে থাকেন। (দ্রঃ বায়হাক্বী ৪/৩২১ পৃঃ সনদ সহীহ, বাকারাহ- ১৮৭)
ইমাম বুখারী উক্ত আয়াত দ্বারা আমার যা বলছি তার প্রমাণ পেশ করেছেন। হাফিয ইবনে হাজার বলেছেন, আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করা যায় এভাবে যে, যদি ই’তিকাফ মাসজিদ ব্যতীত অন্য জায়গায় সহীহ হ’ত তাহলে স্ত্রী সহবাস হারাম হওয়কে মাসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট করত না। কারণ সর্বসম্মতিক্রমে স্ত্রী সহবাস হ‘ল ই‘তিকাফ বিনষ্টকারী। তাই মাসজিদ উল্লেখ করা একথাই বুঝায় যে, মাসজিদ ব্যতীত ই‘তিকাফ হবে না। (গৃহীত প্রাগুক্ত- ১২) তা ছাড়া দলীল হিসাবে একটি হাদীস পেশ করা হল লক্ষ্য করুন।
كان النبى الله عليه وسلم يعتكف العشر الاواخر من رمضان حتى توفاه الله ثم اعتكف ازواجه من بعده
উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ ˆ বলেন  নাবী (সাঃ) মৃত্যুর পূর্বে মুহূর্ত পর্যন্ত রমাযান মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর পর তাঁর স্ত্রীগণ (শেষ দশকে) ই‘তিকাফ করতেন। (বুখারী, মুসলিম দ্রঃ ইরওয়া হাঃ ৯৬৬)
এই হাদীসে মহিলাদের ই‘তিকাফ বৈধ হওয়ার দলীল পাওয়া যায়। এবং তা মাসজিদের হতে হবে। তবে এর জন্য তাদের অভিভাবকগণের অনুমতি থাকতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে হবে এবং পুরুষদের সাথে মেলামেশা সম্ভবনামুক্ত হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝার তাওফীক্ব দিন।

No comments:

Post a Comment

সাম্প্রতিক পোষ্ট

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার"?

"যারা facebook চালায় তারা কখনই ভাল মুসলিম হতে পারে না" "FB তো ইহুদীর আবিষ্কার" . "আপনি এত ইসলাম মানেন তাহলে f...

জনপ্রিয় পোষ্ট সমুহ