তাবলীগী মরুববীগণ আপনাদের জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতার এই অসি‘আতটি মানবেন কি?
তাবলীগী
জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ইলিয়াস (র.) বলেন : হজরত থানবী (রহ.) বহুত বড়
কাজ করিয়া গিয়েছেন, আমার অন্তর চায় তালীম হইবে তাঁহার আর তাবলীগের তরীকা
হইবে আমার। এইভাবে তাঁহার তা’লীম যেন সাধারন্যে ছড়াইয়া পড়ে। (মালফুজাত,
মাওঃ ইলিয়াস, ৩৩ পৃঃ, মাঃ ৫৬)
সম্মানিত তাবলীগী মুরুববী ও মুবাল্লিগ
ভাইয়েরা! উল্লিখিত মালফুজাত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জনাব থানবীর তা’লীমকে
সাধারণ্যে ছাড়িয়ে দেয়া ইলিয়াস সাহেবের মনের বাসনা। আপনারা উক্ত বাসনা
সম্ভবত যথাযথ পূরণ করেছেন না। তার বড় প্রমাণ হল
থানবীর লিখিত অগণিত মাসআলার
বিতাব আপনারা নিসাবের অন্তর্ভুক্ত করেন নি। কারণ আপনাদের নিকট মাসায়েল
থেকে ফাযায়েলের গুরুত্ব বেশী। প্রমাণ স্বরূপ একটি মাসআলা যা থানবীর লেখা
এবং সহীহ হাদসি সম্মতও বটে। কিন্তু আপনারা তার বিরুদ্ধাচরণ করেন। দেখুন :
প্রসাবান্তে ঢিলা নিয়ে হাঁটাহাঁটি করা ঈমানের অঙ্গহানী এবং একটি বিদ‘আতী
কাজ। এ মর্মে জনাব থানবী, তার লিখিত তা’লীমুদ্দ্বীন নামক গ্রন্থে লিখেছেন,
‘‘বেহায়ার মত কুলুখ ধরে ফিরবে না’’। (তা’লীমুদ্দ্বীন বাং ৫১ পৃঃ, ইসতিবরাহ-
১ম খন্ড, ১-২ পৃষ্ঠা) অথচ তাবলীগীগণকে ও দেওবন্দি হানাফীদেরকে দেখা যায়
প্রসাবান্তে মাটির ঢিলা (যার পরিবর্তে বর্তমান টয়লেট পেপার) নিয়ে
প্রস্রাবের রাস্তায় স্থাপন করে হাঁটাহাঁটি, পা কুচি মারা, কুতমারা, কাশি
দেয় ইত্যাদি কাজে অভ্যস্ত। এমনকি আপনাদের মারকাজ ও মাদরাসাগুলোতে কুলুখ
রাখার ঘর পর্যন্ত দেখা যায়। অথচ প্রসাব হতে (তাহারাত) পবিত্রতা অর্জনের
জন্য এই প্রকার কার্যকলাপের দলীল কোন সহীহ হাদীসের নেই। পানির
দুষ্প্রাপ্যতায় সহীহ হাদীস মতে মাটির ঢিলা, পাথর ব্যবহার করা যায়, কিন্তু
তা নিয়ে হাঁটাহাঁটি, পা কুচি মারা কুত দেয়া কশি দেয়া ইত্যাদির দলীল নেই।
সহীহ হাদীস মতে কমপক্ষে ৩টা পাথর বা মাটির ঢিলা দিয়ে প্রস্রাবের দ্বার মুছে
ফেলে দেয়াই যথেষ্ট। ঢিলা ব্যবহার করলে আর পানির ব্যবহার প্রয়োজন নেই।
প্রমাণ দেখুন :
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নাবী (সাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলে আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি
কোন দিকে তাকাতেন না, আমি তাঁর নিকটবর্তী হলে, তিনি বললেন, কয়েকটি কঙ্কর
চাই। ওটা দিয়ে আমি শৌচ কাজ করর; কিন্তু হাড় কিংবা গোবর আনবে না। আমি তাঁর
জন্য কাপড়ের খুটে করে কয়েকটি কঙ্কর এনে তাঁর পাশে রেখে চলে গেলাম। তিনি
প্রাকৃতিক প্রয়োজন সমাধা করে সেগুলো ব্যবহার করলেন। (সহীহ আল-বুখারী, ১ম
খন্ড, আ. প্র.- ১০৯, পৃঃ- হাঃ ১৫২, সহীহ মুসলিম- ২য় খন্ড, ই. ফা. বাং- ৩৪
পৃঃ হাঃ ৪৯৭ ও ৪৯৮)
ঢিলা কুলুখের পর রসূলুল্লাহ (সাঃ) পুনরায় পানি ব্যবহারের কথা বলেন নি। উপরন্তু বললেন, এটাই যথেষ্ট। (আবূ দাঊদ, ই. ফা. বাং হাঃ ৪০)
রসূল (সাঃ) থেকে পানি ব্যবহারের পূর্বে
ঢিলা কুলুখ ব্যবহারের কোন প্রমাণ নেই। প্রমাণ দেখুন : আনাস ইবনু মালিক
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন প্রকৃতিক প্রয়োজনে বের
হতেন আমি ও একটি বালক পানির পাত্র নিয়ে তাঁর সাথে বের হতাম। তিনি তা দিয়ে
শৌচকার্য সমাধা করতেন।
(সহীহ বুখারী- ১ম খন্ড- আ. প্র. পৃঃ ১০৮,
হাঃ ১৪৭, ১৮৯, সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড- খন্ড- ই. ফা. বাং- পৃঃ ৩৯ হাঃ ৫১০,
৫১১, ৫১২, আবূ দাউদ- ১ম খন্ড- ই. ফা. বা- হাঃ ৪৩)
পর্যাপ্ত পানির বিদ্যমান থাকার পরও মাটির
ঢিলা ব্যবহার করা একটা অনর্থক কাজ। তাছাড়া কাপড়ের নীচে হাত রেখে সদর
রাস্তায় জনসম্মুখে হাঁটাহাঁটি, পা কুচি মারা, কুত ও কাশির মাধ্যমে অন্যের
দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত বেহায়াপনা আর কি হতে পারে। এছাড়া বলা হয়ে থাকে,
পুরুষদের প্রস্রাব করার পরও ২/১ ফোঁটা প্রস্রাব ভিতরে আটকে থাকে এবং তা
কিছুক্ষণ পর বের হয়ে শরীর ও কাপড় নাপাক করে দেয়। তাই ঢিলা নিয়ে বিভিন্ন
কায়দায় লজ্জার মাথা খেয়ে বহু কসরত করে আটকে থাকা ২/১ ফোঁটা প্রস্রাব বের
করে আনে। প্রস্রাবের পর কিছু পরিমাণ প্রস্রাব ভিতরে আটকে থাকে কি থাকে না,
পরে বের হয় কি হয় না, এটা কি আল্লাহর অজানা? আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু জেনে
শুনেই রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মারফত প্রস্রাব-পায়খানা হতে পবিত্রতা অর্জনের
বিধান আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। ঢিলা নিয়ে এই কসরত কার আদেশে করা হচ্ছে?
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রসূল (সাঃ)-এর আদেশে নয়। সাবধান! অন্যের আদেশ
মান্য করলে মুশরিক হয়ে যাবেন। মুশরিক হলে পরিত্রাণের উপায় নেই। আপনাদের
অবগতির জন্য আবারও বলছি কি পরিমাণ (নাজাসাত) অপবিত্রতা গায়ে বা কাপড়ে লাগলে
হানাফী মাযহাবের দেওবন্দি আলিমদের স্বনামধন্য আলিম আশরাফ আলী থানবীর মতে
কাপড় বা শরীর নাপাক হয় না। ‘‘পাতালা প্রবাহমান নাজাসাতের গলীযা এক দিরহাম
পর্যন্ত শরীরে বা কাপড়ে লাগলে মাফ আছে। ভুল বা অন্য কোন ওযরে যদি এক দিরহাম
পরিমাণ নাজাসাত সহ নামায পড়ে, তাহলে নামায হয়ে যাবে। কিন্তু স্বেচ্ছায়
এরূপ নাজাসাতসহ নামায পড়া মাকরূহ’’। (থানবী- বেহেশতী জেওর, নাজাসাত হতে
পাক হবার মাসায়েল, পৃঃ ১০১, মাসআলা ৬)
২/১ ফোঁটা নয়, একেবারে হাতের তালুর
মধ্যেস্থলের পরিমাণ প্রস্রাব কাপড়ে বা শরীরে লাগলেও সলাত হবে বলে আমাদের
হানাফী ফিকহের বড় বড় কিতাবেও উল্লেখ আছে।
(আল হিদায়া- ১ম খন্ড, ই. ফা. বাং, পৃঃ ৫১)
আল-মুখতাসারূল কুদূরী : আরাফাত পাবলিকেশন্স, মাদরাসার পাঠ্য- ৯ম ও ১০ম
শ্রেনী, পৃঃ ৫২, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ১ম খন্ড, পৃঃ ৯৮)
এছাড়া বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কিছু
গোড়া মৌলবাদের যুক্তি দিতে দেখা যায় এভাবে, যেমন একটি পাত্রের পানি ফেলে
দিয়ে কিছুক্ষণ উর্দমুখি করলে যেমন দুই এক ফোটা পড়ে। অনুরূপ নাকি পেশাবের
অবস্থা, তাদের উত্তরে আমি বলি তোমার পাত্র তো বারমাস নিম্ন মুখি থাকে।
সম্মানিত মুবাল্লিগ ভাইগণ! এখন আপনাদের জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতার অসীয়াতখানা একটু মানবেন কি?
No comments:
Post a Comment