প্রচলিত তাবলীগের কাজ ‘ওয়াহী’ ভিত্তিক নয় বরং প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্নের উপর প্রতিষ্ঠিত
তাবলীগী
জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতা জনাব ইলিয়াস বলেন : ‘‘আজকাল খাবের মধ্যে আমার
অন্তরে ছহী এলেম ঢালিয়া দেওয়া হয়, কাজেই আমার যেন ঘুম বেশী বেশী হয় সেই
জন্য তোমাদের চেষ্টা করা উচিৎ। (হযরতজী বলেন, খুশ্কীর দরুণ আমি অনিদ্রায়
ভুগিতেছিলাম, ডাক্তারদের পরামর্শানুসারে মাথায় তৈল ব্যবহার করাতে এখন
কিছুটা নিদ্রা হইতেছে) তিনি আরও বলেন এই তাবলীগের তরীকা স্বপের মাধ্যমেই আমার উপর খোলা হইয়াছে। আল্লাহ পাক এরশাদ করিতেছেন :
{كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ .....الخ}
এই আয়াতের বিস্তাতির তাফছীর স্বপ্নের মাধ্যমেই আমার অন্তরে ফুটিয়া উঠিয়াছে।
অর্থাৎঃ হে উম্মতে মোহাম্মাদী!
তোমাদিগকে আম্বিয়ায়ে কেরামদের মতই মানুষের উপকারের জন্য বাহির করা হইয়াছে।
বাহির করা ইহয়াছে এই শব্দের ভিতর ইশারা রহিয়াছে যে, এক জায়গায় জমিয়া বসিয়া
থাকিলে জিম্মাদারী আদায় হইবে না বরং মানুষের দ্বারে-দ্বারে বাহির হইতে
হইবে।
তোমাদের কাজ হইল সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের
নিষেধ। অতঃপর ‘‘তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আন’’ এই কথা বলিয়া ইহা বুঝানো
হইয়াছে যে, উক্ত কাজের দ্বারা স্বয়ং তোমাদের ঈমানের মধ্যে তরক্কী হইবে,
নতুবা শুধুমাত্র ঈমান তো ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত’ এই কথার দ্বারা বুঝা
গিয়াছে। সুতরাং তোমরা অন্যের হেদায়াতের ইচ্ছা না করিয়া বরং নিজেদের ফায়দার
নিয়ত করিও। আর ‘মানুষের উপকারার্থে বাহির হইয়াছ’’ এই কথা দ্বারা আরববাসীকে
না বুঝাইয়া আরবের বাহির ওয়ালাদেরকে বুঝানো হইয়াছে। কেননা আরব ওয়ালাদের বিষয়
বলা হইয়াছে যে, আপনি তাহাদের উপর দারোগা নন, তাহাদের উপর উকিলও নন, এই সব
বলিয়া বলা হয়েছে যে, আপনি আরবদের ব্যাপারে বেশী ফিকির করিবেন না, কারণ
তাহাদের হেদায়েতের এরাদা করা হইয়াছে। আর মানুষ দ্বারা অনারবকে বুঝানো
হইয়াছে, যেমন তারপর বলা হয়েছে-
وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرً الَّلهُمْ
অর্থাৎঃ যদি আহলে কিতাব ঈমান আনিত তবে
তাহাদেরই জন্য মঙ্গল হইত। এখানে তোমাদের জন্য বলা হয় নাই। কারণ তাবলীগের
দ্বারা মোবাল্লেগের নিজের ঈমান পরিপূর্ণ হইয়া থাকে, চাই শ্রোতারা কবূল করুক
বা না করুক, শ্রোতারা তাবলীগের দ্বারা যদি ঈমান নিয়া আসে তবে তাদরে নিজস্ব
ফায়দা হইবে। মোবাল্লেখের ফায়েদা উহার উপর নির্ভর করে না। [মাল্ফুজাত- মাওঃ
ইলিয়াস ২৮-২৯ পৃঃ, মাল্ফুজাত ৫০নং]
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! উল্লিখিত তাবলীগী জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতার বাণী দ্বারা আমাদের সামনে তিনটি বিষয় ফুটে ওঠে তা হলঃ
১। প্রচলিত তাবলীগ ‘ওয়াহী’ ভিত্তিক নয়; বরং স্বপ্নপ্রাপ্ত।
২। তাবলীগের প্রচলিত চিল্লা পদ্ধতি বা তরীকা রসূল (সাঃ)-এর নয় বরং মাওঃ ইলিয়াস-এর স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে চালু করা হয়েছে।
৩। সূরা আল-‘ইমরানের ১১০ নং আয়াতের বিস্তারিত তাফসীর স্বপ্নের মাধ্যমে তার অন্তরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটি নাবী (সাঃ)-কৃত তাফসীর নয়।
এখন আমরা আপনাদের সামনে আল-কুরআন সহীহ
হাদীসের ফায়সালা তুলে ধরব এবং পাঠকগণই বিচার করবেন উল্লিখিত তাবলীগের
পদ্ধতি কি রসূল (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত সর্বশেষ ওয়াহী ভিত্তিক কি না। মহান
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর নাবী (সাঃ)-কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেন :
{يَا
أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ
لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ
النَّاسِ إِنَّ اللهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ}
অর্থাৎ হে রসূল! আপনি তাবলীগ করুন, যা
কিছু আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। আপনি যদি এরূপ না
করেন, তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের অনিষ্ট
থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন
না। (সূরা মায়িদাহ ৬৭)
আলোচ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহান
আল্লাহ তাঁর রসূল (সাঃ)-কেও তাবলীগ করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তা হল যা কিছু
তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধি-বিধান তথা ‘ওয়াহী’র তাবলীগ করার জন্য। তিনি তা
না পৌঁছালে তাঁর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেন না বলে (হুমকি) বা
সতর্ক করেছেন। বুঝা গেল ‘ওয়াহী’ বহির্ভূত কোন বিষয়ের তাবলীগ করার অনুমতি
আল্লাহ তাঁর নাবীকেও দেননি, তাহলে প্রশ্ন আসে যে, সেই সহীহ ‘ইল্মটা আবার
কোন ‘ওয়াহী’ যা তাবলীগী জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতা স্বপ্নের মাধ্যমে প্রাপ্ত
হয়েছেন। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে, মাওঃ ইলিয়াসও নাবী ছিলেন এবং তার
স্বপ্নও ‘ওয়াহী’? ‘ওয়াহী’র বহির্ভূত কোন বিষয়ের তাবলীগ করার অনুমতি যদি না
থাকে, তাহলে কথিত তাবলীগ জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্নের তাবলীগ কিভাবে
করা যেতে পারে, যা তাবলীগ জামা‘আতের সাথে সংশ্লিষ্টরা করছেন? তাহলে কি আমরা
এ কথা ধরে নেব যে, রসূলের উপর অবতীর্ণ ‘ওয়াহী’র কিছু অংশ তিনি (সাঃ) গোপন
করেছিলেন অথবা কিছু অংশ অপূর্ণ রেখে গিয়েছিলেন যা মাওঃ ইলিয়াস এসে পূর্ণ
করেছেন? অথচ উল্লিখিত আয়াতে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহ তাঁর নাবীকে তার উপর
অবতীর্ণ সব বিষয় পৌঁছে দিতে বলেছেন আর নাবী (সাঃ) সবকিছুই পৌঁছে দিয়েছেন,
কোন কিছু গোপন অথবা অপূর্ণ রাখেননি, এটাই এ আয়াতের দাবী। যা আমরা সহীহ
হাদীসের তাফসীরের মাধ্যমে জানতে পারি। উক্ত আয়াতের তাফসীরে বিশ্বনন্দিত
মুফাস্সির আল্লামা ইবনু কাসীর (রহ.) লিখেছেন : মহান আল্লাহ এখানে স্বীয়
নাবী (সাঃ)-কে ‘রসূল’-এ প্রিয় শব্দ দ্বারা সম্বোধন করে বলেছেন, তুমি
মানুষের কাছে আমার সমস্ত আহকাম পৌঁছে দাও। রসূল (সাঃ) করলেনও তাই। সহীহ
বুখারীতে রয়েছে, ‘আয়িশাহ (রাযি.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি তোমাকে বলে যে,
মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর নাযিলকৃত কোন কিছু গোপন করেছেন, সে মিথ্যা বলছে।’
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্তভাবে আছে। সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ‘আয়িশাহ
(রাযি.) হতেই বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) কুরআনের
(ওয়াহীর) কোন অংশ গোপন করতেন তবে তিনি অবশ্যই (সূরা আল-আহযাব ৩৭)
{وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ}
এ আয়াতটি গোপন করতেন। ইবনু আবি হাতিম
(রহ.) বর্ণনা করেছেন যে, একটি লোক ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.)-কে বলে, ‘‘লোকদের
মধ্যে এ আলোচনা চলছে যে, আপনাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এমন কতকগুলো কথা
বলেছেন যা তিনি অন্য লোকদের নিকট প্রকাশ করেননি?’’ তখন তিনি সূরা মায়িদাহর
৬৭ নং আয়াতটি পাঠ করে বলেন : ‘‘আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে
এরূপ কোন বিশিষ্ট জিনিসের উত্তরাধিকারী করেননি।’’ সহীহুল বুখারীতে যুহরী
(রাযি.)-এর উক্তি রয়েছে, তিনি বলেন : ‘‘আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে হচ্ছে
রিসালাত। রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দায়িত্ব হচ্ছে (তা) প্রচার করা এবং আমাদের
কর্তব্য হচ্ছে মেনে নেয়া।’’ রসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহ তা‘আলার সমস্ত কথা
পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর সমস্ত উম্মাতই এর সাক্ষী। প্রকৃতপক্ষে তিনি আমানাত
পূর্ণভাবে আদায় করেছেন এবং সবচেয়ে বড় সম্মেলন তাতে সবাই এটা স্বীকার করে
নিয়েছেন। অর্থাৎ ‘হাজ্জাতুল বিদা’ বা বিদায় হাজ্জের খুৎবায় সমস্ত সহাবী এ
কথা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ তাঁর দায়িত্ব পূর্ণভাবে পালন
করেছেন এবং আল্লাহর বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। (তাফসীর ইবনু কাসীর
৪/৭ খন্ড ৮৭২ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! উল্লেখিত তাফসীর দ্বারা
প্রমাণিত হল যে, রসূল (সাঃ) তাঁর নিকট অবতীর্ণ সর্বশেষ ‘ওয়াহী’ সব কিছুরই
তিনি (তাবলীগ) প্রচার করে গেছেন, কোন কিছু বাকী রাখেননি বা গোপন করেননি যে,
(এতে অন্য কিছুর অবকাশ আছে)। সুতরাং ওয়াহীর বিধান পরিহার করে নতুন করে
মাওঃ ইলিয়াসের স্বপ্নে প্রাপ্ত ছয় উসূলের তাবলীগ করতে হবে- এ কথা কি কোন
সত্যিকারের মুসলিম বিশ্বাস করতে পারে?
শুধু তাই নয় তাবলীগের পদ্ধতিও নাকি তার
স্বপ্নে প্রাপ্ত। অথচ আমরা জানি, তাবলীগ করা একটা সর্বোত্তম নেক কাজ, আর যে
কোন নেক কাজ তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত আছে। শর্ত
তিনটি হল :
(১) ‘ইবাদাত বা ‘আমালটি হতে হবে সম্পূর্ণ
তাওহীদ ভিত্তিক অর্থাৎ খালেস ঈমান সহকারে এবং সম্পূর্ণ শির্কমুক্ত। (২)
‘আমালটি হতে হবে ইখলাসভিত্তিক এবং সকল প্রকার রিয়া তথা লৌকিকতা বা
নিফাকমুক্ত। (৩) ‘আমালটি হতে হবে রসূল (সাঃ)’র সুন্নাতী তরিকা বা পদ্ধতি
দ্বারা সমর্থিত ও সকল প্রকার বিদ‘আতমুক্ত।
উপরোক্ত শর্ত তিনটি আল-কুরআনের নিম্নের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
{وَمَنْ أَرَادَ الآ<خِرَةَ وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ كَانَ سَعْيُهُمْ مَشْكُوراً}
‘‘আর যে ব্যক্তি পরকাল কামনা করে এবং
মু’মিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা সাধনা করে, এমন লোকের চেষ্টা
গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।’’ (সূরা ইসরা ১৯)
উক্ত আয়াতে وَهُوَ مُؤْمِنٌ ‘আর
সে মু’মিন’ অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বান্দার ‘আমাল তখন কবূল হবে যখন তা
সম্পূর্ণ তাওহীদ ভিত্তিক হবে এবং সকল প্রকার শির্কমুক্ত থাকবে। আল্লাহর
বাণী {وَمَنْ أَرَادَ الآ<خِرَةَ} ‘আর
যে জন পরকাল কামনা করে’ অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বান্দার ‘আমাল কবূল
হতে হলে সম্পূর্ণ ইখলাস ভিত্তিক হতে হবে এবং সব ধরনের লৌকিকতা অর্থাৎ লোক
দেখানো ও নিফাকমুক্ত হতে হবে। আর আয়াতের অংশ {وَسَعَى لَهَا سَعْيَهَا}
‘আর তার জন্য যথাযথ চেষ্টা সাধনা করে’ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বানদার
‘আমাল কবূল হতে হলে তা রসূল (সাঃ)-এর সুন্নাত দ্বারা সমর্থিত হতে হবে এবং
সকল প্রকার বিদ‘আত থেকে মুক্ত থাকতে হবে। (দেখুন, আল্লামা আলূসী রচিত
বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর রুহুল মা‘আনী ১৫/৪৭ পৃঃ, গৃহীত কুরআন সুন্নাহর আলোকে
‘ইবাদাত ১৬ পৃঃ)
সম্মানিত পাঠক! উল্লিখিত তিনটি শর্ত
প্রচলিত তাবলীগে পাওয়া যায় না তাবলীগী নিসাবে তার ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে।
কুরআন-হাদীসের বিশেষজ্ঞ কোন আলিম তাবলীগী নিসাব গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করলে তা
প্রমাণিত হবে এ বিষয়ে সামান্য কিছু আমরা এই লেখায় অনেক স্থানে তুলে ধরেছি।
তাছাড়া এই জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতার প্রণীত মাল্ফুজাত এই তিনটি বিষয়
বহির্ভূত, কারণ একটু লক্ষ্য করলেই বিষয়টি আপনাদের সামনে স্পষ্ট হবে বলে আশা
করি। যেমন তিনি বলেছেন, ‘‘আজকাল স্বপ্নের মধ্যে আমার অন্তরে সহীহ ‘ইল্ম
ঢালিয়ে দেয়া হয়’’- এ বাক্যাংশের প্রতি লক্ষ্য করুন, তার স্বপ্নেপ্রাপ্ত
‘ইল্ম কি ‘ওয়াহী’ যার উপর তাওহীদে বিশ্বাসের মত ঈমান আনতে হবে? প্রচলিত
তাবলীগীর অধিকাংশ তার প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। আমাদের বিশ্বাস হল একক
আল্লাহর পক্ষ থেকে নাবী (সাঃ)-এর প্রতি যে ‘ইল্ম বা জ্ঞান অবতীর্ণ হয়েছে
তাই সহীহ বা হক্ব ‘ইল্ম এবং তাতে বিশ্বাসী হওয়াটাই তাওহীদবাদী মুসলিমের
ঈমানের দাবী। আর তা পরিহার করে কারো স্বপ্নে বিশ্বাস করা একক আল্লাহর
অভ্রান্ত ‘ওয়াহী’র সঙ্গে প্রতারণা বা নিফাক ছাড়া আর কি? ইলিয়াস সাহেবের
স্বপ্নেপ্রাপ্ত ‘ইলমের প্রতি বিশ্বাস করার অর্থ এই দাঁড়ায় আল্লাহর অভ্রান্ত
‘ওয়াহী’র বিধানের সঙ্গে স্বপ্নেপ্রাপ্ত বিধান সমকক্ষ দাঁড় করানোর নামান্তর
আর যা সম্পূর্ণ শির্ক। যাচাই করে দেখুন, এই জামা‘আতের বেশীর ভাগ লোক
কুরআনের তাফসীরের প্রতি অনিহা প্রকাশ করে থাকে। আমরা যা অনেকবার লক্ষ্য
করেছি। যদি কোন মাসজিদে আল-কুরআনের তাফসীর হয়, তাহলে তারা তা শুনতে চায় না
কখনো যদি বাধ্য হয়ে শুনে তারপরেও যতক্ষণ তাদের কথিত স্বপ্নেপ্রাপ্ত নিসাবের
তা’লিম না করা হয়, ততক্ষণ যেন তাদের কলিজা ঠান্ডা হয় না। এটা কি আল্লাহর
কিতাবের বিপরীতে তাদের কথিত জাল, যঈফ, মাওযূ‘ মনগড়া কিস্সা কাহিনী সম্মিলিত
কিতাবকে প্রাধান্য দেয়া নয়? ভাবখানা এমন যেমন আল্লাহ বলেছেন :
{كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ}
‘‘যখন তারা যন্ত্রণার চোটে তাত্থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে (তখনই) তাদেরকে তার ভিতরে ফিরিয়ে দেয়া হবে।’’ (সূরা হাজ্জের ২২ )
পাঠক! আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, তাদের
তাবলীগী কাজ তাওহীদ ও ইখলাস নির্ভর নয়। তৃতীয় যে বিষয়টি থেকে যায় তা হল
তাবলীগ সহ প্রতিটি ‘আমাল হতে হবে নাবী (সাঃ)-এর তরীকা অনুযায়ী। কিন্তু
তাবলীগী জামা‘আতের প্রতিষ্ঠাতা দাবী করেছেন যে, ‘‘এই তাবলীগের তরীকা
স্বপ্নের মাধ্যমেই আমার উপর খোলা হয়েছে’’। তাহলে তার স্বপ্নে পাওয়া তরীকায়
কি তাবলীগ হওয়া উচিৎ, না নাবী (সাঃ)-এর তরীকায় তাবলীগ হওয়া উচিৎ? আর নাবীর
তরীকা পরিহার করে অন্য তরীকায় তাবলীগ করা কি শির্ক ফির রিসালাত অর্থাৎ
নাবীর তরীকার সাথে অন্যের তরীকার শরীক করা কি শির্ক নয়? আর এই শির্কী
পদ্ধতি কি আল্লাহর দরবারে গৃহীত হবে? আর শির্কের পরিণাম কি জাহান্নাম নয়?
মহান আল্লাহ বলেন :
{إِنَّ
اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ
لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيداً}
‘‘ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে
ক্ষমা করেন না, এছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছে মাফ করেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর
সঙ্গে শরীক করে, সে চরমভাবে গোমরাহীতে পতিত হল।’’ (সূরা নিসা ১১৬)
আরো দেখুন- সূরা মায়িদাহ ৭২, সূরা যুমার ৬৫, সূরা আন‘আম ৮৮।
তাছাড়া মাওঃ ইলিয়াসের স্বপ্নে পাওয়া তরীকা
কি ‘ওয়াহী’ যা মুসলিম উম্মাহ মানতে বাধ্য এবং তা না মানলে কি কাফির হয়ে
যাবে? যদি তা না হয়, তাহলে বিশ্বময় তাবলীগী জামা‘আতের সাথীরা মুসলিম
উম্মাহ্কে নাবীর তরীকা পরিহার করে কোন তরীকার দিকে আহবান করছেন, তা আমাদের
ভেবে দেখা উচিৎ নয় কি? আর নাবীর তরীকা ছাড়া ভিন্ন অন্য কোন তরীকা গ্রহণ
করার নির্দেশ মহান আল্লাহ আমাদেরকে করেননি। মহান আল্লাহ বলেন :
{قُلْ
هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ
اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ }
‘‘হে নাবী! আপনি বলুন, এটিই আমার তরীকা বা
পথ। আমি এবং আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে
(সুস্পষ্ট দলীল সহকারে)। আল্লাহ মহা পবিত্র আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত
নই।’’ (সূরা ইউসুফ ১০৮)
উপরোল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়াতা‘আলা আমাদের প্রিয় নাবীকে সঠিক পথে সুস্পষ্ট দলীল সহকারে দা‘ওয়াত
দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তাঁর অনুসারীদেরকেও দলীল সহকারে দা‘ওয়াত
দেয়ার নির্দেশ করেছেন। অর্থাৎ দলীল বিহীনভাবে নয় যেমন কথিত তাবলীগীরা বলেন
মুরুববী বলেছেন বা বুযুর্গের কাছে শুনেছি। বরং অভ্রান্ত ওয়াহীর মাধ্যমে
দা‘ওয়াত দিতে নির্দেশ করেছেন। আয়াতের শেষাংশে তাওহীদের দা‘ওয়াত দানকারী
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। অথচ
উল্লিখিত জামা‘আতের নিসাবের মধ্যে দেখা যায় সহীহ আক্বীদা পরিপন্থী শির্কী
আক্বীদায় ভরপুর যা অনেকখানি আমরা এ গ্রন্থে উল্লেখ করেছি। আর নিসাব
গ্রন্থের দ্বারা রসূলের তরীকা বহির্ভূত স্বপ্নেপ্রাপ্ত ভ্রান্ত সূফীবাদী
তরীকা দিকেই তারা আহবান করছে বা দা‘ওয়াত দিচ্ছে যে দিকে আহবান করতে আল্লাহ
তাঁর রসূল (সাঃ)-কে নির্দেশ দেননি। আল্লাহ তাঁর রসূল (সাঃ)-কে নির্দেশ
করেছেন তাঁর রবের দিকে আহবান করার জন্য। কোন স্বপ্নেপ্রাপ্ত বিষয়ের দিকে
নয়। মহান আল্লাহ বলেন :
{وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلاً مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحاً وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ}
‘‘তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে
আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক ‘আমাল করে এবং এ কথা বলে যে, আমি মুসলিমদের
অন্তর্ভুক্ত।’’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩৩)
আলোচ্য আয়াতের বিষয়বস্তু হচ্ছে দা‘ওয়াত
ইলাল্লাহ (আল্লাহর দিকে ডাকা) ও দা‘ঈ ইলাল্লাহর মর্যাদা এবং দা‘ঈ ইলাল্লাহর
মৌলিক গুণাবলী। আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছেدَعَا إِلَى اللهِ (আল্লাহর
দিকে ডাকা)। আল্লাহর দিকে ডাকার কুরআনী পরিভাষা হচ্ছে ‘দা‘ওয়াত ও তাবলীগ’
এবং যিনি ডাকে কুরআনে তার পরিচয় দেয়া হচ্ছে ‘দা‘ঈ’। দা‘ওয়াত মানে ডাকা বা
আহবান করা, আর ‘দাঈ’ মানে আহবানকারী। কুরআন মাজীদে রসূল (সাঃ)-কে দু’বার دعى الله ‘আল্লাহর দাঈ’ বলা হয়েছে।
{يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللهِ وَآمِنُوا بِهِ}
‘‘হে আমার জাতি! তোমরা ‘আল্লাহর দা‘ঈ (আল্লাহর তাবলীগকারীর) ডাকে সাড়া দাও এবং তাঁর প্রতি ঈমান আন।’’ (সূরা আহক্বাফ ৩১)
{وَمَنْ لاَ يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِي الأَ<رْضِ}
‘‘যে আল্লাহর দাঈর ডাকে সাড়া দেবে না সে পৃথিবীতে আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যর্থ করতে পারবে না।’ (সূরা আহক্বাফ ৩২)
সূরা আহযাবের ৪৬ নং আয়াতে তাঁকে داعى إلى الله ‘আল্লাহর দিকে আহবানকারী’ বলা হয়েছে। وداعيا إلى الله بإذنه
‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে (তিনি) তাঁর দিকে আহবানকারী।’ আল্লাহর আহবানকারী বা
আল্লাহর দিকে আহবানকারী কিসের দিকে বা কোন বিষয়ের দিকে আহবান জানাবে? (কথিত
স্বপেণপ্রাপ্ত ছয় উসূলের নীতি আদর্শের দিকে না আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের
দিকে?)
আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহর দিকে’ অর্থাৎ তাঁর পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের দিকে। অনুরূপ সূরা ইউসুফের ১০৮ নং আয়াতে إلى الله ‘আল্লাহর দিকে’ বলা হয়েছে।
قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِي
‘‘বল! এটিই আমার পথ। আমি জ্ঞানের ভিত্তিতে
‘আল্লাহর দিকে’ আহবান জানাই এবং আমার অনুসারীগণও।’’ অপরদিকে কুরআন মাজীদের
দু’জায়গায় রসূল (সাঃ)-কে তাঁর রবের দিকে ডাকতে বলা হয়েছে।
{وَادْعُ إِلَى رَبِّكَ وَلاَ تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ}
‘‘তুমি তোমার রবের দিকে আহবান কর এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’’ (সূরা আল-কাসাস- ৮৭)
অপর এক জায়গায় বলা হয়েছে- ‘‘তোমার রবের পথের দিকে ডাক’’।
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
‘‘তুমি হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তোমার রবের দিকে ডাক।’’ (সূরা নাহল ১২৫)
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতাগণ! উপরো বর্ণিত
আয়াতসমূহ এবং কুরআন হাদীসের আরো অনেক দলীল দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে,
নাবী (সাঃ) দা‘ওয়াত দিতেন আল্লাহর দিকে অর্থাৎ অভ্রান্ত ওয়াহী হিসাবে যা
কিছু নাযিল করা হয়েছে তাঁর প্রতিই তিনি দা‘ওয়াত দিয়েছেন এবং তাঁর উম্মাতকেও
সেভাবে দা‘ওয়াত দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমরা একটু
গভীরভাবে লক্ষ্য করলে বুঝতে সক্ষম হব, বর্তমান প্রচলিত তাবলীগ জাম‘আত
প্রদত্ত দাওয়াত শেষ নাবীর প্রতি অবতীর্ণ অভ্রান্ত ওয়াহীর দা‘ওয়াত নয়। বরং
এটা তাদের প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্নের তরীকার দা‘ওয়াত (যদিও লেবেল হিসাবে কুরআন-
হাদীস কিছু রাখা হয়েছে)।
তাছাড়া মালফুজাতের ৫০ নং এর শেষে যে কথা
বলা হয়েছে, তা আরো ভয়ানক এবং কুরআনের অপব্যাখ্যার শামিল যা কোন সত্যিকার
মুসলিম বিশ্বাস করতে পারে না। যেমন তিনি বলেন :
{كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ..............الخ}
‘‘এই আয়াতের বিস্তারিত তাফছীর স্বপ্নের মাধ্যমেই আমার অন্তরে ফুটিয়া উঠিয়াছে।’’
এর দ্বারা যে তাফসীর তিনি করেছেন তা কুরআনের তাফসীর বিকৃতির নামান্তর।
কারণ আমরা মনে করি এভাবে কুরআনের তাফসীর যদি স্বপ্নের মাধ্যমে করা হয় তাহলে
সকলের জন্য কুরআনের মনগড়া ব্যাখ্যা করার দ্বার উন্মুক্ত হয়ে যাবে এবং যার
ভয়াবহ পরিণতি এমন হবে যে, আল-কুরআনের (মৌলকত্ব) Originality খতম হয়ে যাবে
যা, নাবী সাহাবী-তাবিঈন ইযাম পর্যন্ত অর্থাৎ সালফে সালিহীনের কেউই এই
ধৃষ্টতা দেখাতে সাহস পায় নি। কারণ যেভাবে ওয়াহীর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তা‘আলা কুরআন মাজীদ নাযিল করেছেন ঠিক অনুরূপভাবে ওয়াহীর মাধ্যমে আল্লাহ
এর তাফসীরও অবতীর্ণ করেছেন। তিনি বলেন :
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ
‘‘এরপর বিশদ বর্ণনা (অর্থাৎ তাফসীর করার) দায়িত্ব আমারই।’’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ ১৯)
بَيَانٌ- بَانَ- يُبَيْنُ -এর মাসদার এর অর্থ যাহির (প্রকাশিত), ওয়াযিহ (স্পষ্ট) হওয়া। بيان
বলা হয় ঐ জিনিসকে যার দ্বারা কোন কিছুর বিশদ বর্ণনা বা ব্যাখ্যা-বিশেলষণ
অথবা অস্পষ্ট জিনিসের স্পষ্টকরণ বুঝায়। উল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়
যে, কুরআন মাজীদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও তাফসীরের দায়িত্ব মহান আল্লাহ
নিজেই নিয়েছেন। বুঝা গেল, তাফসীর ও ব্যাখ্যা হয়তো কুরআনে পাওয়া যাবে অথবা
হাদীসে পাওয়া যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন :
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ * أَيَّاماً مَعْدُودَاتٍ}
‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের
বিধান দেয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা
মুত্তাকী হতে পার। সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য।’’ (সূরা আল-বাক্বারাহ
১৮৩-১৮৪)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন :
{شَهْرُ
رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدىً لِلنَّاسِ
وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ
الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ}
‘‘রমাযান সেই মাস যাতে নাযিল হয়েছে কুরআন,
যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর (ন্যায় ও অন্যায়ের
মাঝে) পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে, সে এ মাসে
সিয়াম পালন করবে।’’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ১৮৫)
উপরোল্লিখিত প্রথম আয়াতে আল্লাহ যুল
জালালি ওয়াল ইকরাম সিয়ামের দিনের ব্যাখ্যা (তাফসীর) করেননি যে, তা কত দিনের
এবং কোন্ মাসে সিয়াম পালন করতে হবে। শুধু এতটুকু বলেছেন, নির্দিষ্ট কয়েক
দিন কিন্তু সেই কয়েক দিনটা কত দিন এবং কোন্ মাসে, তা আল্লাহ দ্বিতীয় আয়াতে
স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, সিয়াম হবে এক মাস এবং তা হল রমাযান মাসে। এ দু’টি
আয়াত এ কথার স্পষ্ট উদাহরণ যে, কুরআনের তাফসীর কুরআন দ্বারা হয়ে থাকে।
কুরআনের তাফসীর যদি কুরআনে না থাকে, তাহলে হাদীসে থাকবে। যেমন মহান আল্লাহ
বলেন :
{وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ}
‘‘(হে রসূল!) আপনার প্রতি (স্মরণিকা)
কুরআন অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত বিষয়গুলি তাদের
নিকটে (তাফসীর) ব্যাখ্যা করে দেন।’’ (সূরা আল-নাহল ৪৪)
এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে,
রসূল (সাঃ) ও কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও তাফসীর করবেন। আর এটা তাঁর উপর
আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয ছিল। যা আল্লাহ তার অন্তরদেশে অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে
যে কোন ভাবে ইশারা-ইঙ্গিতে জানিয়েছেন। আর রসূলের তাফসীরই চূড়ান্ত ও
অভ্রান্ত অন্য কারো এ অধিকার নেই। অথবা কারো সম্পর্কে আল্লাহ এমন প্রমাণ
নাযিল করেননি যে, তার স্বপ্নের মাধ্যমে পাওয়া তাফসীর মুসলিম উম্মাহ্কে
মানতে হবে। আমাদের বিশ্বাস হল কুরআন আল্লাহ নাযিল করেছেন তাঁর নাবীর উপর
এবং তার ব্যাখ্যা ও তাফসীর নাযিল করেছেন তাঁর নাবীর উপর আর সেটাই সহীহ
তাফসীর। যেমন : মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন :
{وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ}
‘‘তোমরা সলাত কায়িম কর।’’ (সূরা আল-বাক্বারাহ ১১০)
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে কোথাও বলেননি
সলাত কি জিনিস। তা কোন পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে, কোন্ সময় আদায় করতে হবে।
তবে সলাত সংক্রান্ত সমস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা তাফসীর পাওয়া যায় হাদীসে
নাববীতে। আর এই হাদীসই {وَأَقِيمُوا الصَّلاةَ} এর ব্যাখ্যা ও তাফসীর।
সম্মানিত পাঠক! এ জাতীয় উদাহরণ আমাদের
নিকট অনেক আছে যা কুরআন-হাদীসে বিদ্যমান এবং লিখতে গেলে বইয়ের কলেবর বেড়ে
যাবে। যাই হোক উক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা এটাই প্রমাণ করতে চাচ্ছি যে,
কুরআনের ব্যাখ্যাও ওয়াহী ভিত্তিক তা কারও স্বপ্নপ্রাপ্ত ব্যাখ্যা নয়। হ্যাঁ
স্বপ্ন যদি নাবী (সাঃ)-এর হয় তাহলে সেটা আমরা অকপটে নির্দ্বিধায় মেনে
নিতাম কারণ আমরা জানি যে, নাবীর স্বপ্নও ‘ওয়াহী’ হয়ে থাকে। ইলিয়াস সাহেব যত
বড় বুযুর্গ হন না কেন তিনি তো নাবী নন যে, তার স্বপ্নেপ্রাপ্ত তাফসীর
উম্মাতে মুসলিমাকে মানতে হবে। যদি কেউ তার স্বপ্নকে ওয়াহী মনে করেন, তাহলে
সে মানতে পারে। তবে মুসলিম হিসাবে নয়, অন্যকিছু ... হতে হবে তাকে।
পরিশেষে বলতে চাই, পাঠকগণ একটু লক্ষ্য
করলেই বুঝাতে পারবেন তাঁর ব্যাখ্যাটা কেমন, যা আমরা এই প্রবন্ধে ৫০ নং
রেখাযুক্ত অংশে তুলে ধরেছি। তারপরেও কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি এজন্য যে,
বিষয়টি নিয়ে আপনারা ভাববেন এবং যতগুলো তাফসীর গ্রন্থ আছে তাঁর সঙ্গে মিলিয়ে
দেখবেন আরো আমরা তুলে ধরতাম কিন্তু তাতে কলেবর বেড়ে যাবে তাই এখানে
ক্ষান্ত হলাম। এখন দেখুন সূরা আল-‘ইমরানের ১১০ আয়াতে তিনি যে অর্থ করেছেন
বা ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা হলঃ ‘‘ হে উম্মতে মোহাম্মাদী! তোমাদিগকে আম্বিয়ায়ে কেরামদের মতই মানুষের উপকারের জন্য বাহির করা হইয়াছে।’’ পাঠক শুধু রেখাযুক্ত অংশটুকু পড়ুন আর বিবেককে প্রশ্ন করুন এর অর্থ কি দাঁড়ায়?
No comments:
Post a Comment