তাবলীগী নিসাব সম্পর্কে বাহরাইন প্রবাসী এক মুসলিম ভাই’র তিক্ত অভিজ্ঞতা
‘‘সউদী
আরবে পাথিব উপার্জনের লক্ষে এসে আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে সঠিক দ্বীনের
সন্ধান পেয়েছি। পীরতন্ত্র আর তথাকথিত বুযুর্গ ও মুরববীদের পথই সঠিক পথ বলে
যে ভ্রান্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলাম, ‘উনাইযা ইসলামিক সেন্টার’-এর মুহতারাম
ওস্তাদ অধ্যাপক রশীদ আব্দুল ক্বাইয়ূম-এর দা‘ওয়াত ও একান্ত প্রচেষ্টায়
ভ্রান্ত বিশ্বাসের সেই বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেয়েছি। আল-হামদুলিল্লাহ।
মুহতারাম ওস্তাদের ছহীহ দলীলভিত্তিক আলোচনায় আমার মত শত শত যুবক পবিত্র
কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ছত্রছায়ায় এসে ধন্য হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ প্রচলিত
কয়েকটি বাতিল ফের্কা ও জামা‘আত সম্বন্ধে আলোচনার নিমিত্তই আজকের এ কলামের
অবতারণা।
আদি পিতা আদম (আঃ)-এর একমাত্র শত্রু ছিল
ইবলীস শয়তান। সেই থেকে
সে ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে শত্রুতা করে আসছে
বিভিন্ন যুগে বিভিন্নরূপে। এই ইবলীস-এর দোসর ইহুদী, নাছারা, মুশরিকরা
ইসলামের যত ক্ষতি সাধন করেছে, তার চেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে ইসলামের নামে
প্রচলিত ভিন্নি শিরকী ও বিদ‘আতী জামা‘আত ও সংগঠন।
আমাদের সমাজে শিরকী ও বিদ‘আতী বিভিন্ন
জামা‘আত রয়েছে। কবর পূজারী , মাজার পূজারী, পীর পূজারী, মুরববী পূজারী, আর
মীলাদপন্থীদের মত অসংখ্য দল আমাদের গোটা সমাজটাকে করছে কলুষিত। এসব
ফের্কাবন্দীরা একে অপরকে দেখতে পারে না। নিজে শিরকে নিমজ্জমান অথচ অপরকে
মুশরিক বলতে দ্বিধা নেই, নিজে বিদ‘আতে লিপ্ত অথচ অন্যকে বিদ‘আতী বলতে
কার্পণ্য নেই। অপ্রিয় হ‘লেও বলতে হচ্ছে যে, এসব জামা‘আতসমূহের মধ্যে
প্রসিদ্ধ একটি জামা‘আত হচ্ছে তাবলীগ জামা‘আত। এরা মুখে তাওহীদের দাওয়াতের
বুলি আওড়ালেও বস্ত্তত এদের দা‘ওয়াদ ও প্রশিক্ষণে শিরক ভরপুর। আমার মতের
স্বপক্ষে পাঠকবৃন্দের সামনে প্রমাণাদি উপস্থাপনার পূর্বে এ জামা‘আতের একটি
ধোঁকাবাজির কথা উল্লেখ করতে চাই। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশে
তাবলীগী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয়। সাউদী আরবের কতিপয় তাবলীগী ভাইয়ের সাথে
আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় আমি তাদেরকে যখন আমাদের দেশের তাবলীগী মুরববীদের
শিরকী আক্বীদার কথা বললাম, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে আমাকে জানালেন, সাউদীসহ
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তাবলীগের তা‘লীমী কিতাব হচ্ছে ইমাম নববী সংকলিত
‘রিয়াযুছ ছালেহীন’ (হাদীছের একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ)। অথচ আমাদের দেশের
তাবলীগ জামা‘আতের তা‘লীমী গ্রন্থ হচ্ছে মাওলানা যাকারিয়া প্রণীত ‘তাবলীগী
নিসাব’ বা ফাযায়েলে আম’ল’। যার কথা তারা কোনদিন শোনেননি। বাংলাদেশ, ভারত,
পাকিস্তানে মনগড়া হাদীছ ও সূফীদের গল্প-কাহিনীতে ভরপুর ‘ফাযায়েল-এ আমল’
নামক গ্রন্থকে নেছাব করণের কথা কয়েকজন সউদী তাবলীগপন্থীর নিকট বললে তারা এ
শিরকী জামা‘আতের সাথে সম্পর্ক না রাখার কথা জানিয়েছেন। ফালিল্লা-হিল হামদ।
তাবলীগ জামা‘আতের প্রশিক্ষণের কিতাব হচ্ছে
‘তাবলীগী নেছাব’ নামে খ্যাত মাওলানা যাকারিয়া সাহারানপুরী প্রণীত কয়েক
খন্ড সমৃদ্ধ গ্রন্থ ‘ফাযায়েল-এ আমল’। খালেছ তাওহীদে বিশ্বাসী, পবিত্র কুরআন
ও সহীহ হাদীসে সঠিক জ্ঞানি ব্যক্তি এ কিতাব গুলি পড়লে তাবলীগীদের আসল
চেহারা তাদের নিকটে উন্মোচিত হবে। আমি পাঠকবৃন্দের খেদমতে দু’একটি নমুনা
পেশ করছি : তাবলীগীদের মুরুববী মাওলানা যাকারিয়া স্বীয় পীর রশীদ আহমাদ
গাংগুহীর একটি পত্র ‘ফাযায়েল-এ সাদাকাত’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যে
পত্রে মাওলানা গাংগুহী স্বীয় পীর এমদাদ উল্লাহ মক্কীকে সম্বোধন করেছেন, ‘হে
আমার দুই জাহানের আশ্রয়স্থল’ (ফাযায়েল-এ সাদাকাত ২/১৮৫ পৃ:) পূর্বসূরী ও
মুরববীদের যাদের উভয় জাগতের আশ্রয়স্থাল (!) তারা কিরূপ মুসলিমীন পাঠকই
চিন্তা করুন। ‘ফাযায়েল-এ সাদাকাতে’ মালেক বিন দিনার নামক এক বুযুর্গের ঘটনা
বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। এতে মালেক বিন দিানার কর্তৃক এক ব্যক্তিকে
দুনিয়াতেই বেহেশতের লিখিত সার্টিফিকেট প্রদান এবং পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির
জান্নাত লাভের ঘটনা বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে। (দেখুন : ফাযায়েলে-এ সাদাকাত
২/৩৪৫-৪৬ পৃঃ)
যে কোন খালেস তাওহীদে বিশ্বাসী মুসলমান এ
ঘটনা পড়লে গা শিউরে উঠবে। যেখানে স্বয়ং আমাদের নাবী (ছাঃ) আল্লাহর নির্দেশ
ব্যতীত কাউকে জান্নাতের সু-সংবাদ দেননি। অথচ তাবলীগীদের পূর্বসূরী মালেক
বিন দিনার অনায়াসেই জান্নাতের সার্টিফিকেট প্রদান করলেন (নাউযুবিল্লাহ)।
তাইতো তাবলীগীদের মুখে মুখে মুরববীর কথা, কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কথা নেই।
কারণ মুরববীরাই তো তাদের জান্নাতের সার্টিফিকেট (!)। তাবলীগীদের এসব মনগড়া
হাদীছ বর্ণনা, মিথ্যা কিচ্ছা-কাহিনী দিয়ে লোকদের তাবলীগে উৎসাহ প্রদান,
বিশ্ব ইজতেমাকে হজ্জের সমপর্যায়ে করণ, তাবলীগই নাজাতের পথ ঘোষণা ইত্যাদি
কার্যকলাপ সচেতন সকল মুসলমানের জানা। তাই তাদের শিরকী ও বিদ‘আতী আগ্রাসন
থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করতে খাঁটি তাওহীদে বিশ্বসী কুরআন ও ছহীহ
সুন্নাহর নিঃস্বার্থ অনুসারীদের এগিয়ে আসা একান্তা যরূরী।
No comments:
Post a Comment