সাহাবাগণের অনুসরণ সংক্রান্ত যঈফ হাদীস
‘‘অন্য হাদীছে আছে আমার ছাহাবারা নক্ষত্রের সমতুল্য। তোমরা যাহারই অনুসরণ করিবে হেদায়াত প্রাপ্ত হইবে।’’
মোহাদ্দেছীনগণ এই হাদীছে কিছুটা আপত্তি করিয়াছেন। এবং হাদীসের তালিকাভূক্ত করিতে কাজী আয়াজের উপর অভিযোগও করিয়াছেন। কিন্তু মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন, বিভিন্ন সূত্রে রেওয়ায়েত হওয়ার দরুন হয়ত ইহা কাজী সাহেবের নিকট গ্রহণযোগ্য অথবা ফাজায়েলে আ‘মলের ব্যপারে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হাদীস ও সর্ব সম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য তাই তিনি জিকির করিয়াছেন।’’ (তাবলীগী নিসাব হেকায়াতে সাহাবার নাবী প্রেমের বিভিন্ন কাহিনী অধ্যায়-২৭০ পৃষ্ঠা)
সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
তাবলীগী নিসাবের সমানধন্য লেখক শাইখ জাকারীয়া উদ্ধৃতিহীনভাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, এই বলে যে, ‘অন্য হাদীসে আছে’ এটা কি হাদীস বর্ণনার রিতি! কোন হাদীসের কত নং পৃষ্ঠায় তার কিছুই বর্ণনা না করে তিনি একটি জাল হাদীসকে যঈফ বলে মোল্লাহ আলী কারীর নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এবং ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস চলে বলে ইজমা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। অথচ বিশ্বের সর্বশ্রেস্ঠ মুহাদ্দীস গণের মধ্যে অধিকাংশ মুহাদ্দীসগণ ফজিলতসহ অন্যন্য সকল ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস অগ্রণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তম্মধ্যে হাদীস সম্রাট ইমাম বুখারী মুসলিমগণ অন্যতম। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এই বইয়ের ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস চলে না বিষয়টি ভাল করে দেখে নিবেন। এবার লক্ষ্য করুন তাবলীগী নিসাবের বর্ণিত উল্লিখিত হাদীসটি ‘যঈফ’ না ‘জাল’!
হাদীসটি জাল। হাদীসটি সম্পর্কে ইবনু আব্দিল বার বলেন :
(নোট : যে বর্ণনা কারীর সত্ত্ব বা গুনাবলী সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না তাকেই বলা হয় ‘মাজহূল’। এইরূপ বর্ণনা কারীর হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।- লেখক)
ইবনু হাযম বলেন : এই বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের। তাতে আবূ সুফিয়ান রয়েছে, তিনি দুর্বল এবং হারিস গোসাইন হচ্ছেন ‘মাযহূল’। আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে সেগুলোর একটি।
আল্লামা আলবানী বলেন : সালাম ইবনু সুলাইমকে বলা হয় ইবনু সুলাইমান আত-তাবীল, তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে একমত। এমনকি তার সম্পর্কে ইবনু খারবাশ বলেন : তিনি মিথ্যুক।
ইবনু হিববান বলেন : ‘‘روى أحاديث موضوعة’’ তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। হারিস মাজহূল হলেও সুফিয়ান দুর্বল নয় যেমনভাবে ইবনু হাযম বলেছেন। তিনি বরং সত্যবাদী যেরূপ ইবনু হাযার ‘‘আত-তাকবীর’’ গ্রন্থে বলেছেন।
ইমাম আহম্মাদ বলেন: হাদীসটি সহীহ নয়। যেমনভাবে ইবনু কুদামার ‘‘আল-মনতাখাব’’ গ্রন্থে (১০/১৯৯/২) এসেছে।
তবে হাদীসটি জাল হওয়ার জন্য সালামই যথেষ্ট। (আল্লামাহ আলবানী, যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ ১/১০৮ পৃঃ ৫৮ নাং হাদীস)
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ করেছেন তাবলীগী নিসাবের নাম ‘ফাযায়েলে আ‘মাল’ লিখে ফযিলতের ক্ষেত্রে যঈফ বা দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য বলে যঈফের নামে জাল হাদীস চালিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র দেখলেন তো?
অথচ ইমাম মুসলিম কর্তৃক তার সহীহ গ্রন্থের মুকদ্দিমাতে উল্লেখিত ভাষ্যগুলোর ( যা আমরা এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছি পাঠক যথাস্থানে দেখে নিবেন) বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, যাদের থেকে আহকামের হাদীসগুলো বর্ণনা করা হয়ে তাকে তাদের ন্যায় ব্যাক্তিদের নিকট ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে তারগীব (উৎসাহমূলক) অর্থাৎ ফযিলত সংক্রান্ত হাদীস এবং তারহীবের (ভীতিমূলক) হাদীসগুলোও বর্ণনা করা যাবে না।
আল্লামাহ আলবানী (রহ.) বলেন : আমি লোকদেরকে যে দিকে আহবান করছি তা এই যে, দুর্বল হাদীসের উপর কোন অবস্থাতেই আমল করা যাবে না, চাই ফাযায়েলের ক্ষেত্রে হোক বা মুস্তাহাবগুলোর ক্ষেত্রে হোক কিংবা অন্য কিছুর ক্ষেত্রে হোক।
কারণ বিনা মতভেদে আলেমদের নিকট দুর্বল হাদীস ধারনা বা অনুমানের অর্থ বহন করে। যেকানে আল্লাহ তা‘আলা একাধিক আয়াতে অনুমানের উপর ভিত্তি করে আমল করাকে অপছন্দ করেছেন সেখানে কিভাবে বলা যায় দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে :
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন :
সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতৃমন্ডলি লক্ষ করেছেন তাবলীগী নিসাবের লেখক শাইখ জাকারীয়া ফাজায়েলের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত যঈফ বা দুর্বল হাদীসও মুহাদ্দীসীনগণের নিকট সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে আমরা বিষয়টি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তা আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল (সাঃ) ও মুহাদ্দীসগণের ইজমা বা ঐক্যমত দেখালাম। এতো ছিল যঈফ হাদীসের ক্ষেত্রে। আর জাল হাদীসের ব্যাপারতো আরো ভায়াবহ।
মোহাদ্দেছীনগণ এই হাদীছে কিছুটা আপত্তি করিয়াছেন। এবং হাদীসের তালিকাভূক্ত করিতে কাজী আয়াজের উপর অভিযোগও করিয়াছেন। কিন্তু মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন, বিভিন্ন সূত্রে রেওয়ায়েত হওয়ার দরুন হয়ত ইহা কাজী সাহেবের নিকট গ্রহণযোগ্য অথবা ফাজায়েলে আ‘মলের ব্যপারে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হাদীস ও সর্ব সম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য তাই তিনি জিকির করিয়াছেন।’’ (তাবলীগী নিসাব হেকায়াতে সাহাবার নাবী প্রেমের বিভিন্ন কাহিনী অধ্যায়-২৭০ পৃষ্ঠা)
সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বোনেরা!
তাবলীগী নিসাবের সমানধন্য লেখক শাইখ জাকারীয়া উদ্ধৃতিহীনভাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, এই বলে যে, ‘অন্য হাদীসে আছে’ এটা কি হাদীস বর্ণনার রিতি! কোন হাদীসের কত নং পৃষ্ঠায় তার কিছুই বর্ণনা না করে তিনি একটি জাল হাদীসকে যঈফ বলে মোল্লাহ আলী কারীর নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এবং ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস চলে বলে ইজমা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। অথচ বিশ্বের সর্বশ্রেস্ঠ মুহাদ্দীস গণের মধ্যে অধিকাংশ মুহাদ্দীসগণ ফজিলতসহ অন্যন্য সকল ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস অগ্রণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। তম্মধ্যে হাদীস সম্রাট ইমাম বুখারী মুসলিমগণ অন্যতম। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এই বইয়ের ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস চলে না বিষয়টি ভাল করে দেখে নিবেন। এবার লক্ষ্য করুন তাবলীগী নিসাবের বর্ণিত উল্লিখিত হাদীসটি ‘যঈফ’ না ‘জাল’!
أصحابى كالنجوم، بأيهم إقتديتم، إهتديتم
আমার সাহাবাগণ নক্ষত্রের ন্যায়, তোমরা তাদের যে কোন একজনের অনুসরণ করলে সঠিকপথ প্রাপ্ত হবে।’’হাদীসটি জাল। হাদীসটি সম্পর্কে ইবনু আব্দিল বার বলেন :
هذا إسناد لاتقوم به حجة لأن الحارث بن غصين مجهول
এ সনদটি দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয় না, কারণ এই সনদের বর্ণনাকারী হারিস ইবনু গোসাইন ‘মাজহুল’।(নোট : যে বর্ণনা কারীর সত্ত্ব বা গুনাবলী সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না তাকেই বলা হয় ‘মাজহূল’। এইরূপ বর্ণনা কারীর হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।- লেখক)
ইবনু হাযম বলেন : এই বর্ণনাটি নিম্ন পর্যায়ের। তাতে আবূ সুফিয়ান রয়েছে, তিনি দুর্বল এবং হারিস গোসাইন হচ্ছেন ‘মাযহূল’। আর সালাম ইবনু সুলাইম কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে সেগুলোর একটি।
আল্লামা আলবানী বলেন : সালাম ইবনু সুলাইমকে বলা হয় ইবনু সুলাইমান আত-তাবীল, তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে একমত। এমনকি তার সম্পর্কে ইবনু খারবাশ বলেন : তিনি মিথ্যুক।
ইবনু হিববান বলেন : ‘‘روى أحاديث موضوعة’’ তিনি কতিপয় জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। হারিস মাজহূল হলেও সুফিয়ান দুর্বল নয় যেমনভাবে ইবনু হাযম বলেছেন। তিনি বরং সত্যবাদী যেরূপ ইবনু হাযার ‘‘আত-তাকবীর’’ গ্রন্থে বলেছেন।
ইমাম আহম্মাদ বলেন: হাদীসটি সহীহ নয়। যেমনভাবে ইবনু কুদামার ‘‘আল-মনতাখাব’’ গ্রন্থে (১০/১৯৯/২) এসেছে।
তবে হাদীসটি জাল হওয়ার জন্য সালামই যথেষ্ট। (আল্লামাহ আলবানী, যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজ ১/১০৮ পৃঃ ৫৮ নাং হাদীস)
সম্মানিত পাঠক! লক্ষ করেছেন তাবলীগী নিসাবের নাম ‘ফাযায়েলে আ‘মাল’ লিখে ফযিলতের ক্ষেত্রে যঈফ বা দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য বলে যঈফের নামে জাল হাদীস চালিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র দেখলেন তো?
অথচ ইমাম মুসলিম কর্তৃক তার সহীহ গ্রন্থের মুকদ্দিমাতে উল্লেখিত ভাষ্যগুলোর ( যা আমরা এই গ্রন্থে উল্লেখ করেছি পাঠক যথাস্থানে দেখে নিবেন) বাহ্যিকতা প্রমাণ করছে যে, যাদের থেকে আহকামের হাদীসগুলো বর্ণনা করা হয়ে তাকে তাদের ন্যায় ব্যাক্তিদের নিকট ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে তারগীব (উৎসাহমূলক) অর্থাৎ ফযিলত সংক্রান্ত হাদীস এবং তারহীবের (ভীতিমূলক) হাদীসগুলোও বর্ণনা করা যাবে না।
আল্লামাহ আলবানী (রহ.) বলেন : আমি লোকদেরকে যে দিকে আহবান করছি তা এই যে, দুর্বল হাদীসের উপর কোন অবস্থাতেই আমল করা যাবে না, চাই ফাযায়েলের ক্ষেত্রে হোক বা মুস্তাহাবগুলোর ক্ষেত্রে হোক কিংবা অন্য কিছুর ক্ষেত্রে হোক।
কারণ বিনা মতভেদে আলেমদের নিকট দুর্বল হাদীস ধারনা বা অনুমানের অর্থ বহন করে। যেকানে আল্লাহ তা‘আলা একাধিক আয়াতে অনুমানের উপর ভিত্তি করে আমল করাকে অপছন্দ করেছেন সেখানে কিভাবে বলা যায় দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে :
{وَمَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَإِنَّ الظَّنَّ لاَ يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئاً}
‘‘এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমানের উপর বলে। অথচ সত্যের ব্যাপারে অনুমান মোটেই ফলপ্রসু নয়।’’ (সূরা আল-নাজম- ৫৩:২৮){إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلاَّ الظَّنَّ وَمَا تَهْوَى الأَنْفُسُ}
‘‘তারা কেবল মাত্র অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে।’’ (সূরা আন নাজম-৫৩:২৩)আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন :
إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيْثِ
‘‘তোমরা অনুমান করা হতে নিজেদের রক্ষা কর, কারণ অনুমানই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা মিথ্যা (হাদীস) কথা।’’ (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)সম্মানিত মুসলিম ভ্রাতৃমন্ডলি লক্ষ করেছেন তাবলীগী নিসাবের লেখক শাইখ জাকারীয়া ফাজায়েলের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত যঈফ বা দুর্বল হাদীসও মুহাদ্দীসীনগণের নিকট সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। অপরদিকে আমরা বিষয়টি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তা আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল (সাঃ) ও মুহাদ্দীসগণের ইজমা বা ঐক্যমত দেখালাম। এতো ছিল যঈফ হাদীসের ক্ষেত্রে। আর জাল হাদীসের ব্যাপারতো আরো ভায়াবহ।
No comments:
Post a Comment